বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডই বহাল থাকলো জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের৷ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘আমরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের ফিরে পাবো না, তবে এই রায়ে বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে৷''
৪৩ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার উষালগ্নে বুদ্ধিজীবী হত্যা ও স্বাধীনতাকামীদের গণহত্যার দায়ে তৎকালীন আলবদর বাহিনীর প্রধান আর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ফাঁসির আদেশ দেয় ২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই৷ আর মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ প্রধানত বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে দেশের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে৷ বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন – বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী৷
মুজাহিদের ফাঁসি
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে বুধবার (১৭.০৭.১৩) ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দিয়েছেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২৷ বুধবার (১৭.০৭.১৩) দেওয়া রায়ে তাকে ‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
আমৃত্যু কারাদণ্ড
মাত্র দু’দিন আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় নব্বই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ বয়স বিবেচনায় এনে আযমকে মৃত্যুদণ্ড দেননি আদালত৷
ছবি: Nashirul Islam/AFP/Getty Images
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশ সরকারের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই লাখের মতো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ তবে আন্তর্জাতিক মহল মনে করে, মুক্তিযুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ প্রাণহানি হয়েছিল৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: AP
আলবদর কমান্ডার
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আলবদর বাহিনী গঠন করে হত্যা, গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজসহ পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে৷ ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ বর্তমানে তিনি কারাবন্দি আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer
‘‘মানুষ হত্যা করেছেন মুজাহিদ’’
যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মুজাহিদ শুধু বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং গণহত্যার পরিকল্পনাকারীই ছিলেন না, তিনি নিজেও সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন৷ ফরিদপুর এলাকায় তার নৃশংসতার সাক্ষী এখনো আছে৷’’ এই রায়ে সন্তুষ্ট বাদল৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
ফেসবুক প্রতিক্রিয়া
ওয়াসেক বিল্লাহ সৌধ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এই রায় মানি৷’’ আর শরিফুল হাসান লিখেছেন, ‘‘যে যাই বলুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আমি শতভাগ তৃপ্ত না হলেও এ পর্যন্ত যা পেয়েছি তাতেও আমি অনেক খুশি৷’’ তবে তপু হোসেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘এটা ভুয়া রায়... মানিনা মানবো না৷’’
ছবি: Reuters
‘‘এটি প্রহসনের রায়’’
জামায়াতে ইসলামী এই রায় ঘোষণার প্রতিবাদে বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে৷ মুজাহিদের আইনজীবী তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটি প্রহসনের রায়৷ রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি৷’’ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলেও জানান ইসলাম৷
ছবি: Reuters
দুই দিনে নিহত ৯
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ১৫ ও ১৬ জুলাই সহিংসতায় কমপক্ষে নয় ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে৷ জামায়াতে ইসলামী এই সময় হরতাল পালন করেছে৷ মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে চার ব্যক্তি৷ আর সোমবার পাঁচ ব্যক্তি৷ দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশ করেছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে এই রায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়৷ এর আগে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদকে ফাঁসি, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসি, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসি এবং সর্বশেষ সোমবার গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
ট্রাইব্যুনালের রায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি ঘটনায় মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আশে দেয়৷
সে সময় ট্রাইব্যুনাল বলেছিল, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজাহিদ যে অপরাধ করেছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) না দিলে সুবিচার হবে না৷'' রায়ে বলা হয়, ‘‘সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধন এবং ফরিদপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হত্যা-নির্যাতনে মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতা ছিল৷ মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করতে গঠিত আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিল এবং ঐ বাহিনীর ওপর তার নিয়ন্ত্রণ ছিল৷''
মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল থেকেছে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে৷ নিজের দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নজির আর কোনো দেশে নেই৷ কিন্তু মুজাহিদ সেই অপরাধটিই করেছে৷ আমরা যে বুদ্ধিজীবীদের হারিয়েছি, এক শতাব্দীতেও এমন বুদ্ধিজীবী তৈরি হবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘বুদ্ধিজীবীদের আমরা ফিরে পাবো না৷ তবে এটুকু সান্ত্বনা যে, বিচার পাওয়া গেল৷ এতে তাঁদের আত্মা শান্তি পাবে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আরো কিছু আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে৷''
জেগে আছে প্রজন্ম চত্বর
মূল দাবি একটাই, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’৷ এই দাবি নিয়ে পাঁচই ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান করছে তরুণ প্রজন্ম৷ তাদের সমর্থন জানাচ্ছে সবশ্রেণির মানুষ৷ ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন৷ কিন্তু এক চুল নড়েনি তারা৷
ছবি: Reuters
লাগাতার আন্দোলন
শাহবাগে অবস্থান নেওয়া তরুণ প্রজন্ম গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি ধরে লাগাতার তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় তারা৷ ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে নিয়মিত সেখানকার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাতীয় দলের আগমন
রবিবার প্রজন্ম চত্বরে এক টুকরো আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা৷ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, শাহবাগে অবস্থান নেওয়া ব্লগার, তরুণ সমাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসছেন তাঁরা৷ রবিবার সেই খবরের সত্যতা প্রকাশ পেলো৷
ছবি: REUTERS
টুইটার লড়াই
হ্যাশট্যাগ #shahbag, কেউ কেউ ব্যবহার করছেন #shahbagh - আসলে শাহবাগের ইংরেজি বানান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ উইকিপিডিয়া শেষের এইচটি বাদ দিলেও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সেটি ধরে রেখেছে৷ এই বিভ্রান্তি অবশ্য টুইটার লড়াইকে পেছনে ফেলেনি৷ বরং সমানতালে দু’টি হ্যাশটাগ দিয়েই জানানো হচ্ছে আন্দোলনের অগ্রগতি৷
ছবি: REUTERS
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ‘শোধরানোর’ চেষ্টা
শাহবাগের প্রতিবাদ কি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে না ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে? বিবিসি ইংরেজি বিভাগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনামে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল৷ টুইটারে আন্দোলনকারীদের অব্যাহত দাবির পর সেই শিরোনামে বদল এসেছে৷ ইসলামপন্থী বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধ শব্দটি জোড়া হয়েছে সেখানে৷ এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আমারব্লগ৷
ছবি: amarblog.com
‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’
প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান করছেন ‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’ দলের অনেক সদস্য৷ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির দাবিকে আরো সোচ্চার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা৷ পাশাপাশি প্রজন্ম চত্বরের সর্বশেষ পরিস্থিতিও ইন্টারনেটে তুলে ধরা হচ্ছে এদের মাধ্যমে৷
ছবি: REUTERS
‘আপনার সহায়তা প্রয়োজন’
ডয়চে ভেলের টুইটার পাতাতে আন্দোলনকারীদের কিছু বার্তা আমরা পেয়েছি৷ জিন্নাত গোনিম নামক ঢাকার এক বাসিন্দা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা কোন রাজনৈতিক দল, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নই৷ আমরা বাংলাদেশি৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাচ্ছি, আমার মায়ের হত্যাকারীর, বোনের ধর্ষকের বিচার চাচ্ছি৷ আমাদের আপনার সহায়তা প্রয়োজন৷’’
ছবি: twitter.com
এই প্রজন্মের নারী মুক্তিসেনাদের লড়াই
গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছেন লাকি আক্তার৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরুর দিন থেকে রয়েছেন শাহবাগে৷ তাঁর মতো আরো কয়েকজন নারী মুহুর্মুহু শ্লোগানে কাপিয়ে তুলছেন প্রজন্ম চত্বর৷ বিভিন্ন স্কুলকলেজের ছাত্রীরা মাঝেমাঝে হাজির হচ্ছেন আন্দোলনে৷
ছবি: REUTERS
‘ফাঁসির মঞ্চ’ প্রস্তুত
‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’ - এই হচ্ছে প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরতদের মূল দাবি৷ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করলে তা প্রত্যাখ্যান করে তরুণ প্রজন্ম৷ তারা চায় ফাঁসির আদেশ৷ শাহবাগে প্রতীকী ‘ফাঁসির মঞ্চ’ তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির অপেক্ষায় আছে ব্লগাররা৷
ছবি: Reuters
সপরিবারের শাহবাগে
শাহবাগে অনেকেই হাজির হচ্ছেন সপরিবারে৷ ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাহিত্যিক, অধ্যাপক অনেকেই এসেছেন সপরিবারে৷ এই ছবিতে এক শিশুকে দেখা যাচ্ছে শাহবাগ চত্বরে, প্রতিবাদী ব্যানার মাথায় জড়িয়ে৷
ছবি: REUTERS
ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক
‘ট্র্যাইবুনালে কাদের মোল্লার প্রহসনের রায়ের বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ’ - এই শিরোনামে পাঁচ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক৷ ব্লগারদের আহ্বানে সেদিন শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ৷ এখন এই আন্দোলন আমজনতার৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শহিদ ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘এই প্রথম বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য কারুর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো৷ আর যার শাস্তি হলো সে বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন৷'' তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্য দিয়ে একটা ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি' প্রতিষ্ঠিত হলো৷ প্রমাণ হলো, তারা শুধু বাংলাদেশের অভ্যুদয় নয়, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের বিনির্মাণকেও শেষ করে দিতে চেয়েছিল৷''
ডা. নুজহাত চৌধুরীর কথায়, ‘‘আমরা কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের প্রতি, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি, বিচার বিভাগের প্রতি, সরকারের প্রতি৷ কারণ দেরিতে হলেও বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার হয়েছে৷ জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে৷ এখন রায় কার্যকর দেখার অপেক্ষায় আছি৷''
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মুনীর দাবি করেন, ‘‘একাত্তরের অক্টোবর থেকে মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলন৷ তিনি আলবদর বাহিনীতে ছিলেন না৷ এমনকি এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তের সময় মুজাহিদের নাম আলবদর বাহিনীর তালিকায় পাননি৷ তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যা কেন, একাত্তরে কোনো হত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতও ছিলেন না৷''
আপিলের রায়ের পর এই মামলার অন্যতম সাক্ষী জালাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এই রায়ে আমি খুশি৷ রায় কার্যকর হলে যদি আমার সহযোদ্ধা বদি-রুমী-আজাদ ভাই, আলতাফ মাহমুদসহ শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পায়, তাহলে আরো খুশি হবো৷''
বিচ্ছু জালান নামে খ্যাত এই মুক্তিযোদ্ধা আরো বলেন, ‘‘কুখ্যাত মুজাহিদ বলেছিল, বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নাই৷ জামায়াত শিবির বলেছিল, আমরা যুদ্ধাপরাধী না৷ আজ সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর তা তাদের মেনে নেয়া উচিত৷''
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকা
২০১৩ সালে মোট ২২টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব কথা৷
ছবি: Fotolia/lafota
চীন
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, চীনে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ তবে ব্যাপারটিকে যেহেতু চীনে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয় হিসেবে দেখা হয় তাই অ্যামনেস্টির পক্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো সম্ভব হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
তিনভাবে ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় – গুলি করে, পাথর ছুড়ে আর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে৷ ২০১৩ সালে এভাবে কমপক্ষে ৩৬৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷ সামান্য অভিযোগে সাংবাদিক সহ মানবাধিকার কর্মীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মাঝেমধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়ে দেশটি৷
ছবি: ISNA
ইরাক
সাদ্দাম হুসেনের আমলে ইরাকে বেশি সংখ্যায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটতো৷ ২০১৩ সালে ১৬৯ জনের বেশি বন্দিকে এই শাস্তি পেতে হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী৷
ছবি: picture alliance/dpa
সৌদি আরব
২০১৩ সালে ১৮ বছরের কম বয়সি তিনজন সহ কমপক্ষে ৭৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Abir Abdullah
যুক্তরাষ্ট্র
ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ ঢুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ এভাবে ২০১৩ সালে ৩৯ জনকে শাস্তি দেয়া হয়৷ অবশ্য সে বছর কমপক্ষে ৮০ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যদণ্ডের রায় দেয়া হয়৷
ছবি: CHANTAL VALERY/AFP/Getty Images
বাংলাদেশ ১৮ নম্বরে
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে আছে সোমালিয়ার নাম৷ ২০১৩ সালে সেদেশে ৩৪ জনের বেশি বন্দির প্রাণ নেয়া হয়৷ তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে ১৮ নম্বরে৷ অ্যামনেস্টির হিসেবে ঐ বছর বাংলাদেশে দু’জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
6 ছবি1 | 6
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি চতুর্থ মামলা, আপিল আদালতে যার চূড়ান্ত রায় হলো৷
এর আগে আবদুল কাদের মোল্লা, দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিলের নিষ্পত্তি হয়েছে৷ দণ্ড কার্যকর হয়েছে কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের৷ আপিল বিভাগের আরেক রায়ে দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷ আর আপিলের শুনানির আগেই জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপি নেতা আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায়, তাদের আপিল নিষ্পত্তি করা হয়েছে৷
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম সর্বোচ্চ সাজা পায় বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী মুজাহিদ৷ ২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করে৷ এরপর ২০১৩ সালের ১১ই আগস্ট ট্রাইব্যুনালের ঐ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী এই নেতা৷
ওদিকে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিবাদে বুধবার সকাল ছ'টা থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ছ'টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী৷