ইনটেলিজেন্ট টুল, চালাক-চতুর যন্ত্রপাতি – যারা নিজেরাই ভেবেচিন্তে একটা পথ বার করে নেবে৷ সেন্সর আর মাইক্রোচিপের কল্যাণে সবই সম্ভব, বলছেন ব্রেমেনের বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
শিগগিরই রোবটদের বুদ্ধি বাড়বে
03:11
রোবট নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের পক্ষে দুঃস্বপ্ন বৈকি! তবে শিগগিরই রোবটদের বুদ্ধি বাড়বে, তারা সেন্সরের মাধ্যমে ওভারল পরা মানুষজনকে চিনতে পারবে৷ ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই ধরনের ইন্টেলিজেন্ট টুলস বা বুদ্ধিমান যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছেন, তৈরি করছেন এমন সব রোবট, যারা তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা আঁচ করে ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা' নিতে পারে৷
ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর প্রোডাকশন অ্যান্ড লজিস্টিকস-এর পিয়ের কিরিসচি জানালেন, ‘‘একটা টুল বা যন্ত্রপাতি নিষ্ক্রিয় হতে পারে৷ আবার সেই যন্ত্রপাতিতে যদি উপযুক্ত প্রযুক্তি লাগানো যায়, যেমন একটি আরএফআইডি চিপ বা একটা মাইক্রো-প্রসেসর, যাতে এই টুল তার পারিপার্শ্বিকের তথ্য সংগ্রহ ও জ্ঞাপন করতে, এমনকি তা নিয়ে কাজ করতে পারে, তাহলে তাকে বলা হয় ইন্টেলিজেন্ট কম্পোনেন্ট বা বুদ্ধিমান যন্ত্রাংশ৷''
ইন্টেলিজেন্ট কম্পোনেন্ট ও টুল
শুধু বড় বড় কোম্পানিরাই নয়, মাঝারি সাইজের কোম্পানিগুলোরও এ ধরনের ইন্টেলিজেন্ট কম্পোনেন্টের প্রয়োজন৷ ‘কোয়াস্ট' কোম্পানিটি বিমান নির্মাণ শিল্পের জন্য হাইটেক পার্টস উৎপাদন করে থাকে৷ ভবিষ্যতে একটি ইন্টেলিজেন্ট কম্পোনেন্ট তাদের জটিল উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে৷
কোয়াস্ট প্রিসিশন টেকনিক-এর ডরিট ক্লাইনেরুশকাম্প বললেন, ‘‘খুব ভালো হত, যদি একটি নিজেই শিখতে পারে, হিসেব করতে পারে, এমন একটা ‘টুল' পাওয়া যেত – এই ধরুন বছর পাঁচেকের মধ্যে৷ যখন আমাদের প্রোডাকশন চেনে কোনো পরিবর্তন ঘটে, হয়ত কোনো পার্টসের সাপ্লাই আসেনি, তখন সেই ‘টুল' সাথে সাথে সিমুলেশন করে বলতে পারবে, গোটা উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য তার কী মানে দাঁড়াচ্ছে, ঠিকসময়ে ফিনিশ অথবা ডেলিভারি দেওয়া যাবে কিনা৷''
রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করবে রোবট?
রোবট, যন্ত্রের তৈরি মানুষগুলো শুধু যে চোখ পিটপিট তাকাতে আর শব্দ করতে পারে, তা নয়৷ চীনের বেশ কিছু রোস্তোরাঁয় আজকাল অতিথি আপ্যায়নেও কোমর বেঁধেছে তারা৷ চলুন যন্ত্রমানবের কাজ দেখতে ঘুরে আসা যাক সেরকমই একটি রেস্তোরাঁ থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Zhang
আপনার অর্ডার, প্লিজ...
শুধু প্রযুক্তিগত চমক দেখানোই নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে একেবারে সামনের সাড়িতে রয়েছে চীন৷ তবে সেই সব আধুনিক প্রযুক্তি আদৌ ব্যবহারযোগ্য কিনা – সেটা অবশ্য দেখার বিষয়৷ ছবিতে দেখুন অতিথিদের খাওয়ার অর্ডার নোওয়াসহ হাজারো কাজ নিয়ে মেতেছে রোবট৷
ছবি: picture-alliance/epa/P. Hilton
খাবার তৈরি!
এই ছোট্ট হিউম্যানয়েড রোবটগুলো খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী৷ এদের সুবিধা হলো এই যে, এরা ক্লান্ত হয় না আর কাজ করতেও কোনো ঝামেলা করে না৷ বরং ওরা শুধুই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে জানে৷ অবশ্য রোবটের পরিবেশিত খাদ্য খেতে অতিথিদের কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটা ভিন্ন ব্যাপার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
শেফকুক রোবট
রোবট শুধু অতিথিদের অর্ডারই নেয় না, তারা উনুনের সামনে দাঁড়িয়ে খাবার গরমও করে৷ ছবিতে দেখুন আগে থেকে তৈরি করা খাবার গরম করছে রোবট৷ তবে তরকারি কাটাবাছা বা এ ধরনের কাজগুলো মানুষ সহকর্মীদেরই আগে থেকে করে দিতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
নানা ধরনের রোবট
তবে সব রেস্তোরাঁর রোবট কিন্তু এই গ্যালারির ছবিগুলোর মতো দেখতে যন্ত্রমানবের মতো নয়৷ এখানে যে কাজটা করা হচ্ছে, সে অংশটুকুই দেখানো হচ্ছে৷ অর্থাৎ শুধু মাথাটাই দেখানো হচ্ছে, হাত বা পা নয়৷ রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের রোবটগুলো, অর্থাৎ যে রোবটগুলো রেস্তোরাঁর অতিথিদের সামনে যায় না, সেগুলো এরকমই হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিনোদনেও রোবট
সাংহাই-এর কাছে এই রোবট-রেস্তোরাঁতে খাবারের চেয়ে কিন্তু বিনোদন অনুষ্ঠানই বেশি আনন্দদায়ক৷ ইন্টারনেটে করা মন্তব্য থেকে অন্তত এ তথ্যই জানা যায়৷ অর্থাৎ এই রেস্তোরাঁয় অতিথিরা খাবারের চেয়ে বিনোদনটাই বেশি উপভোগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Robichon
5 ছবি1 | 5
শেষমেষ হয়ত এমন একটা কারখানা তৈরি হবে, যা নিজেই নিজেকে চালাতে পারে৷ ব্রেমেনের গবেষকরা একটি ফ্লাডলাইট তৈরির প্রোডাকশন লাইন তৈরি করেছেন – অবশ্যই নমুনা হিসেবে৷ এখানে কোথাও একটা পার্টস কম পড়লে প্রোডাকশন কন্ট্রোল নিজে থেকেই অন্য পন্থা বেছে নেয়৷ তবে প্রোডাকশনে এখনও কর্মীর দরকার পড়ে৷
মানুষকে বাদ দিয়ে নয়
ইনস্টিটিউট ফর প্রোডাকশন অ্যান্ড লজিস্টিকস-এর মারিউস ফাইগ্ট-এর মতে, ‘‘প্রোডাকশন থেকে মানুষজনকে বাদ দেওয়া এর লক্ষ্য নয়৷ সেটা কয়েক বছর আগেই চেষ্টা করা হয়েছে, আর পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে৷ সেটা আমাদের প্রচেষ্টাও নয়৷ আমাদের লক্ষ্য হলো, প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে সাহায্য করা, যাতে অপচয় বন্ধ করা যায়, উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরো উপযোগী করে তোলা যায়৷''
ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে তা করা সম্ভব, যখন সেন্সর আর মাইক্রোচিপ গোটা উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখবে৷ আজ হয়তো সেটা স্বাভাবিক নয় – যেমন আজ থেকে ৩০ বছর আগে কেউ ভাবতে পারেনি যে, একদিন সকলের হাতে স্মার্টফোন থাকবে৷ ফাইগ্ট বলেন, ‘‘স্মার্টফোন, সেটা আবার কী? আমি তো ভাবতেই পারি না, এক একটি মানুষের জন্য স্মার্টফোন, যার দাম অতো বেশি৷ আজ সেই স্মার্টফোনই হাতে হাতে৷ প্রোডাকশনেও ঠিক তেমনই হবে৷ আজ যা বড় বেশি খরচ বলে মনে হচ্ছে, দশ বছর পরে সেটাই স্ট্যান্ডার্ড হয়ে দাঁড়াবে৷''
পুরোপুরি স্বনিয়ন্ত্রিত, স্বপরিচালিত কারখানা তৈরি হতে এখনও কিছু সময় লাগবে৷ বুদ্ধিমান যন্ত্রপাতিকে ধীরে ধীরে শিল্পের জগতে নিজেদের জায়গা করে নিতে হবে৷
জীবন বাঁচাবে বাংলাদেশের রোবট
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে রোবট নিয়ে কাজ হচ্ছে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা এক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন৷
ছবি: RoboticsBD
আগুন নেভাবে রোবট
তৈরি পোশাক কারখানা সহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা প্রায় ঘটে৷ এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে৷ আগুন নেভাতে ছুটে যান দমকল বাহিনীর কর্মীরা৷ ভবিষ্যতে হয়ত তাদের সঙ্গে যোগ দেবে রোবট৷ বাংলাদেশেই এ ধরনের রোবট তৈরির কাজ চলছে বলে জানান শিবলী ইশতিয়াক৷ রোবট তৈরির উপকরণ পাওয়া যায় এমন একটি ওয়েবসাইট রোবটিক্সবিডি ডটকমের অ্যাডমিন তিনি৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
স্বয়ংক্রিয় বা রিমোট কন্ট্রোল
ইশতিয়াক বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অনেক ফ্যাক্টরি আছে যেগুলো অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ততটা ভালো না৷ তাই কিছু কিছু রোবট ডেভেলপ করার চেষ্টা চলছে যেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নেভানোর কাজ করবে৷ অথবা সেগুলো রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে চালানো যেতে পারে৷'' এ ধরনের রোবটকে কোথায়, কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: RoboticsBD
কোয়াডকপ্টার
ইশতিয়াক বলেন, বর্তমানে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠান নির্মাণকাজে কিংবা সরাসরি কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে বাংলাদেশে তৈরি কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করছে৷
ছবি: Getty Images
সাগরে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা
কোয়াডকপ্টারের আরেকটি সম্ভাব্য ব্যবহারের কথাও জানান ইশতিয়াক৷ সাগরে ডুবে যাচ্ছে এমন কোনো ব্যক্তির কাছে কোয়াডকপ্টারের মাধ্যমে লাইফ জ্যাকেট ও ভেস্ট পাঠিয়ে তাঁর প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে৷
ছবি: RoboticsBD
ঘরের কাজে রোবট
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সহ ঘরের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন সব রোবট ডেভেলপ করতে গবেষণা করছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: AP
অনলাইনে রোবট তৈরির যন্ত্রপাতি
রোবটিক্সবিডি ডটকমে (http://store.roboticsbd.com/) গেলে রোবট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো পাওয়া যাবে৷ আগে এসব বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো৷
ছবি: store.roboticsbd.com
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে
ইশতিয়াক জানান, সাইট চালুর শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০১২ সালে তেমন একটা ব্যবসা করতে না পারলেও পরের দুই বছরে বিক্রি বেড়েছে প্রায় দুইশো শতাংশ৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আজকাল শিক্ষার্থীরা ইউটিউব সহ অন্যান্য মাধ্যমে বিদেশে রোবট নিয়ে যেসব কাজ হচ্ছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছে৷ ফলে তারাও এ বিষয়টির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে৷’’
ছবি: RoboticsBD
প্রশিক্ষণ
যারা রোবট বানানোর চেষ্টা করছেন তাদের আরেকটু সহায়তা করতে রোবটিক্সবিডি বেশ কিছু কোর্সও পরিচালনা করে থাকে৷