আগামী বুধবার তৃতীয়বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজ্ঞাপন
দেরি না করে আগামী বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে পরপর তিনবার।
সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ তৃণমূল পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে উত্তরবঙ্গের কয়েকজন নবনির্বাচিত বিধায়ক উপস্থিত থাকতে পারেননি। বাকিরা ছিলেন। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে মমতা নেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। বৈঠকের পর তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী ৫ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন। নবনির্বাচিত বিধায়করা শপথ নেবেন ৬ মে থেকে।
মমতা এবার নন্দীগ্রাম থেকে হেরে গেছেন। তবে তারপরেও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে তার কোনো অসুবিধা হবে না। নিয়মানুযায়ী তাকে ছয় মাসের মধ্যে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। তবে মমতা এদিন আবার নন্দীগ্রামে পুনর্গণনার দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, কেন কমিশন পুনর্গণনা করবে না। নন্দীগ্রামে কারচুপির আশঙ্কা করছেন তিনি। সব ইভিএম সিল করে রাখার দাবি করেছেন।
মমতার দাবি, পুনর্গণনা হলে প্রাণনাশের আশঙ্কা করছিলেন রিটার্নিং অফিসার। এসএমএস দেখিয়ে এই অভিযোগ করেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গে জয়ের প্রতিক্রিয়া, হারের সাফাই
পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করবে তৃণমূল। তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর কে কেমনভাবে হার বা জয়ের প্রতিক্রিয়া দিলেন?
ছবি: AP Photo/picture alliance
বাংলা পারে, বললেন মমতা
মমতা-ঝড়ে উড়ে গেছে মোদী-শাহের বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ''বাংলা পারে। এটা বাংলার জয়।'' পরে বললেন, ''এই জয় বাংলার মানুষকে বাঁচিয়ে দিল।'' নন্দীগ্রামের খবরে মমতা বললেন, ''আমরা পুনর্গণনা চাই।'' আদালতে যাওয়ার কথাও বললেন। তবে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, এখন বিজয় উৎসব নয়। এখন প্রথম কাজ, করোনার মোকাবিলা করা। তাই সকলের জন্য বিনা পয়সায় মোদীর কাছ থেকে টিকা চেয়েছেন। না দিলে ধরনার হুমকিও।
ছবি: AFP/Getty Images
মোদীর টুইট
পশ্চিমবঙ্গের ফল বেরনোর পর টুইট করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে মোদী বলেছেন, বিধানসভায় তাদের উপস্থিতি বিপুলভাবে বেড়েছে। বিজেপি এখন রাজ্যের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাবে। অমিত শাহও বলেছেন, বিজেপি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসাবে রাজ্যের মানুষের স্বার্থে ও উন্নতির জন্য কাজ করবে।
ছবি: Kuntal Chakrabarty/IANS
দিলীপ ঘোষের সাফাই
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, তারা যে লক্ষ্য নিয়েছিলেন, সেই তুলনায় তাদের সাংগঠনিক শক্তি ছিল না। তাদের আরো লড়াই করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫ বছর লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছেন। বিজেপি-কেও রাজ্যে অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
অধীরের যুক্তি
অধীর চৌধুরী বলছেন, ''সাম্প্রদায়িক প্রচারের কাছে হেরেছি। মমতা সাম্প্রদায়িক প্রচার করলেন। মোদীকে ঠেকাতে দিদিকে ভোট দাও। কংগ্রেস যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মোদীর বিরুদ্ধে লড়ছে, লড়বে সেই ভরসা মুসলিমরা রাখতে পারলেন না। আমরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মুসলিমরা মারা গেলেন। প্রচার হলো, মোদী মুসলিমদের মারবে। এর মোকাবিলা আমরা করতে পারলাম না।''
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
হার স্বীকার রাহুল গান্ধীর
ভোটে বিপর্যয়ের পর রাহুল গান্ধী বলেছেন, ''আমরা সবিনয়ে হার স্বীকার করে নিলাম। আমাদের নেতা ও কর্মী, যারা কাজ করেছেন এবং লাখ লাখ মানুষ যারা আমাদের সমর্থন করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আমাদের মতাদর্শ ও মূল্যবোধের লড়াই চালিয়ে যাব।''
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
বিমান বসুর বক্তব্য
জন্মলগ্নের পরে এই প্রথম বামেদের কোনো প্রতিনিধি বিধানসভায় থাকবেন না। বাম জোটের তরফে বিমান বসু বলেছেন, ''জনগণ বিজেপি-কে পরাস্ত করতে চেয়েছিলেন। তাই তৃণমূল লাভবান হয়েছে। আমরা যৌথ পর্যালোচনা করব। এই হার থেকে শিক্ষা নেব। আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল।''
ছবি: UNI
আইএসএফ চুপ
ভোটের কিছুদিন আগে দল গঠন করেছিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। তারা হাত মেলায় বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে। জোটের হয়ে একমাত্র জয় আব্বাসের ভাই নওসাদ সিদ্দিকির। কিন্তু এরপর প্রতিক্রিয়া দেননি আব্বাস। তবে দিল্লিতে কংগ্রেস মুখপাত্র বলেছেন, আইএসএফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভালো হয়েছে না ভুল হয়েছে, তা পরে পর্যালোচনা করা হবে।
ছবি: Naushad Bhai
পিকে-র প্রতিক্রিয়া
তৃণমূলকে জেতানোর পিছনে তার কৌশলও কাজ করেছে। সেই প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-র প্রতিক্রিয়া, ''কঠিন লড়াই ছিল। নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা আছে বলে বিজেপি সব লড়াই জিতবে তার কোনো মানে নেই।'' পিকে দাবি করেছিলেন, বিজেপি একশ ছুঁতে পারবে না। সেটা মিলেছে। তারপরেও পিকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছেন, ''আমাদের প্রচার করতে অসুবিধা হচ্ছিল।'' তবে এই জয়ের পর তার ঘোষণা, আর কোনো দলের হয়ে কাজ করবেন না তিনি।
ছবি: Hindustan Times/Imago Images
8 ছবি1 | 8
তবে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতার শপথগ্রহণ নিয়ে কোনো বড় অনুষ্ঠান হবে না। আর পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রোটেম স্পিকার হবেন। আর গতবারের বিদায়ী বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ই আবার স্পিকার হচ্ছেন।
পরে রাজ্যপালের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, এখন তার প্রধান কাজ করোনা মোকাবিলা করা। তাই কোনো বিজয়োৎসব হবে না।