বুধবার সিসিএস-সহ চার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডাকলেন মোদী
২৯ এপ্রিল ২০২৫
বুধবার আবার সিসিএস বৈঠক হবে৷ এছাড়া সিসিইএ, সিসিপিএ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকও ডাকলেন প্রধানমন্ত্রী নরন্দ্র মোদী৷
বুধবার আবার সিসিএস বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। হবে সিসিইএ, সিসিপিএ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকও। ছবি: DPR PMO/ANI
বিজ্ঞাপন
পহেলগামে পর্যটকদের উপর আক্রমণের পরসুরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিএস)-র বৈঠক হয়েছিল৷ সেই বৈঠকের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়৷ তারপর বুধবার আবার সিসিএস-এর বৈঠক হবে৷ সিসিএস হলো ভারতের সুরক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংস্থা৷
শুধু সিসিএস নয়, রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিপিএ), অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ) এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকও বুধবার সকালে হওয়ার কথা আছে৷
পহেলগামের ঘটনার পর সিসিএসের বৈঠক হলেও মন্ত্রিসভার বৈঠক এই প্রথমবার হবে৷পহেলগামের পর থেকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাবেক সেনা ও কূটনীতিকরা বারবার বলছেন, ভারত আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে৷
কংগ্রেস সাংসদ ও সাবেক কুটনীতিক শশী থারুর এএনআইকে বলেছেন, ‘‘উরির পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে৷ পুলওয়ামার পর বালাকোটে বিমান হামলা হয়েছে৷ আমার মনে হয়, আমরা এবার তার থেকেও বেশি কিছু দেখব৷ এটা স্পষ্ট যে আমাদের সামনে একগুচ্ছ বিকল্প আছে, কূটনৈতিক, আর্থিক, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, গোপন ও প্রকাশ্য অ্যাকশন৷ কিছু প্রকাশ্য সামরিক প্রতিক্রিয়া এড়ানো যাবে না বলেই মনে হয়৷ পুরো দেশ এটাই চাইছে ও দাবি করছে৷''
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘পহেলগামের ঘটনার পর সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে৷ গোটা দেশ সেই প্রত্যাশা করছে৷ তবে কবে হবে, কীভাবে সেটা সরকার ঠিক করবে৷''
কাশ্মীরে ৪৮টি পর্যটকস্থল বন্ধ
কাশ্মীরে নিরাপত্তার কারণে ৪৮টি পর্যটকস্থল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ এর মধ্যে আছে, দুধপাহাড়ি, আহরবাল, বাঙ্গাস, উলার, রামপোরা, রাজপোরা, খামপো, ভিজিটপ, নারানাগ, সিনথান টপ, ইউসমার্গ, শ্রুঞ্জ জলপ্রপাত, মুন্দিজ-হামাম-মারকুট জলপ্রপাত, খাদনিয়ারের ইকো পার্ক, ভেরিনাগ গার্ডেন, অষ্টানমার্গ, বাদামওয়ারি৷
কাশ্মীরে সক্রিয় প্রধান জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো
বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরে প্রধান কোন কোন জঙ্গি গোষ্ঠী সংঘাতে জড়িত? এসব গোষ্ঠীর স্থানীয় প্রভাব কেমন এবং বিশ্বব্যাপী তাদের জিহাদি সংযোগই বা কতটা?
ছবি: Saqib Majeed/ZUMAPRESS/picture alliance
দ্য় রেজিসট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)
২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়। এর পরই গড়ে ওঠে দ্য় রেজিসট্যান্স ফ্রন্ট- টিআরএফ। 'কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স' নামে সাম্প্রতিক পহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করেছে গ্রুপটি। টিআরএফ নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন দাবি করলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা মনে করে। টিআরএফ-কে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়েছে ভারত।
ছবি: Nasir Kachroo/NurPhoto/picture alliance
লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি)
পাকিস্তান-ভিত্তিক ইসলামপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা- এলইটি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের অবসান। ২০০২ সালে পাকিস্তান নিষিদ্ধ করলেও সংগঠনটি এখনও সক্রিয়। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলাসহ ভারতে বেশ কয়েকটি হামলায় দায়ী করা হয় এলইটি-কে। এলইটি নানা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা করে এবং যোদ্ধাদের পাকিস্তান সরকারকে লক্ষ্যবস্তু করা থেকে নিষেধ করে।
ছবি: Rahat Dar/dpa/picture alliance
হিজবুল মুজাহিদীন (এইচএম)
১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হিজবুল মুজাহিদিন- এইচএম একসময় কাশ্মীরের সবচেয়ে সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠী ছিল। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই গোষ্ঠীর প্রভাব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে ২০১৬ সালে বুরহান ওয়ানি এবং ২০১৭ সালে তার উত্তরসূরি সাবজার আহমেদ ভাটসহ প্রধান কমান্ডারদের মৃত্যুর পর থেকে এর কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমে গেছে।
ছবি: picture-alliance/ dpa
জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম)
একটি হাইজ্যাক করা বিমানের ১৫৫ জিম্মিকে মুক্তির বিনিময়ে ভারতীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান উগ্র ইসলামপন্থি মাসুদ আজহার। ২০০০ সালে পাকিস্তান-ভিত্তিক সুন্নি ইসলামপন্থি জেইএম প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তান ছাড়াও জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ জইশ-কে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেছে। এর লক্ষ্য কাশ্মীরকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা। এলইটি, তালেবান এবং আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে জেইএম-এর।
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee
আল বদর
১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে হিজবুল মুজাহিদিন থেকে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী হিসেবে গঠিত হয় আল বদর (যার অর্থ 'পূর্ণিমা')। এই সংগঠনের অনেক সদস্য আগে আফগান মিলিশিয়া কমান্ডার গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের হিজব-ই-ইসলামির সাথে কাজ করেছেন। এই গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিক জিহাদি নেটওয়ার্কের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং ভারত-পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষে লিপ্ত বলে জানা গেছে। তবে, এই তথ্যগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা কঠিন।
ছবি: NurPhoto/picture alliance
আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দ (এজিএইচ)
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দ- এজিএইচ কাশ্মীর সংঘাতে আল-কায়েদার প্রতিনিধিত্ব করে। ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার একটি শাখা হিসেবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত। শরিয়া আইনের অধীনে কাশ্মীরে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য এজিএইচ এর। এর প্রতিষ্ঠাতা জাকির মুসা ছিলেন হিজবুল মুজাহিদিনের সাবেক কমান্ডার। আদর্শগত পার্থক্যের কারণে পদত্যাগ করে বিশুদ্ধবাদী জিহাদি গোষ্ঠী হিসেবে এজিএইচ গড়ে তুলেন।
ছবি: Saqib Majeed/ZUMAPRESS/picture alliance
6 ছবি1 | 6
কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় এখন অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী৷ গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের স্লিপার সেল এখনো সক্রিয়৷ তাই এখন আর কোনো ঝুঁকি নেয়া হয়নি৷
পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা মুহম্মদ আসিফের এক্স অ্যাকাউন্টও ভারত ব্লক করলো৷ ভারতে কেউ এই অ্যাকাউন্টে যেতে গেলেই বার্তা আসছে, এই অ্যাকাউন্ট আইনি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আটকে দেয়া হয়েছে৷
পহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসীদের আক্রমণের পর খোয়াজা আসিফের বেশ কিছু মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হয়েছে৷ যুক্তরাজ্যের একটি টিভি চ্যানেলে তিনি বলেছেন, পাকিস্তান বহু দশক ধরে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করে আসছে৷
রাহুল গান্ধীর চিঠি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য অবিলম্বে সংসদের জরুরি অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছেন বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী৷