বিশ্বকাপেই দেখা গেছে: রেফারি বেল্ট থেকে ক্যান বার করে দাড়ি কামানোর সাবানের মতো ফোম দিয়ে ঘাসের ওপর দাগ কেটে দিলেন৷ ফ্রি-কিকের সময় বিপক্ষের প্লেয়ারদের সেই লছমনরেখা পার হবার উপায় নেই৷ একেই বলে ‘ভ্যানিশিং স্প্রে’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজ্ঞাপন
জার্মান ফুটবল লিগ ডিএফএল গত সোমবার ঘোষণা করেছে যে, চলতি মরশুমে বুন্ডেসলিগার সর্বোচ্চ দু'টি ডিভিশনে রেফারিরা এই ‘ভ্যানিশিং স্প্রে' ব্যবহার করবেন৷ ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ভ্যানিশিং স্প্রে-র সফল প্রয়োগই ডিএফএল-এর এই সিদ্ধান্তের কারণ, বলে জানিয়েছে ডিএফএল৷
‘ভ্যানিশিং স্প্রে' সারা বিশ্বের ফুটবলমোদীদের সামনে তার কার্যকরিতা প্রমাণ করেছে গত বিশ্বকাপে৷ ফুটবলের সঙ্গে ছেলেমানুষি কিংবা ছিঁচকে চুরির বোধহয় কোনো একটা গভীর, মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক আছে – নয়ত প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়রা থ্রো কিংবা ফ্রি-কিকের সময় প্রতিবার কয়েক গজ দূরত্ব ‘চুরি' করে কেন, সেটা কি ধরনের চালাকি কিংবা প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের নিদর্শন, তা আজ অবধি বুঝে উঠতে পারলাম না৷
পারলেন না মেসি, জয়ী জার্মানি
বিশ্বসেরা ফুটবলার হলেও দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিতে পারলেন না লিওনেল মেসি৷ বরং টিম হিসেবে খেলে জিতেছে জার্মানি৷ বদলি খেলোয়াড় গোটৎসের গোলে নিশ্চিত হয় চতুর্থ বিশ্বকাপ৷ ফাইনাল নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চতুর্থবার বিশ্বকাপ জয়
নব্বইয়ের পরে ২৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হলো৷ ব্রাজিলে বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চতুর্থবার বিশ্বকাপ জয় করেছে জার্মানি৷ যদিও অনেকের আশা ছিল চমক দেখাবেন মেসি, কিন্তু সেটা হয়নি৷ জগৎসেরা মেসি তাঁর দলকে ফাইনালে কিছুই দিতে পারেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লামের হাতে কাপ
বিশ্বকাপ হাতে জার্মান অধিনায়ক ফিলিপ লাম৷ জাতীয় দলের পক্ষে শতাধিক বার মাঠে নামা লাম এবার তাঁর সাফল্যের তালিকায় যোগ করলেন বিশ্বকাপ ট্রফি৷ ৩০ বছর বয়সি এই ফুটবলার জার্মান জাতীয় দলের অধিনায়ক৷
ছবি: Reuters
গোল্ডেন গ্লোভস নয়ার, গোল্ডেন বল মেসি
বিশ্বকাপের ‘মোস্ট আউটস্ট্যান্ডিং প্লেয়ার’ হিসেবে ‘গোল্ডেন বল’ অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন মেসি৷ আর সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন জার্মানির মানুয়েল নয়ার৷ বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images
গোটৎসের গোল
জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ ভরসা রেখেছিলেন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মিরোস্লাভ ক্লোজের উপর৷ তাই ৮৮ মিনিট পর্যন্ত মাঠে ছিলেন তিনি৷ এরপর ক্লোজের বদলে মাঠে নামেন বায়ার্নের মারিও গ্যোটৎসে৷ শেষ পর্যন্ত তিনিই জার্মানদের মুখে হাসি ফোটালেন৷ শ্যুর্লের কাছ থেকে পাওয়া পাস বুকে ঠেকিয়ে নিয়ে সেই বল পাঠিয়ে দেন আর্জেন্টিনার জালে৷
ছবি: Reuters
বান্ধবীর সঙ্গে গোটৎসে
গোটৎসের বান্ধবী আন-কাথরিন ব্র্যোমেল গ্যালারিতে ছিলেন৷ খেলা শেষে তিনি নেমে আসেন মাঠে৷ অভিনন্দন জানান সঙ্গীকে৷
ছবি: Reuters
পোডোলস্কির সেলফি
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে সেলফি তুলে বিশ্বকাপের শুরুতেই আলোচনায় আসেন লুকাস পোডোলস্কি৷ ফাইনালে খেলার সুযোগ পাননি তিনি৷ কিন্তু তাই বলে কি সেলফি তোলা বাদ থাকবে? ছবিতে সতীর্থ শোয়াইন্সটাইগারের সঙ্গে সেলফি তুলছেন পোডোলস্কি৷ মাঠে থাকতেই সেটা আবার ফেসবুকে আপলোড করেছেন তিনি৷
ছবি: AFP/Getty Images
আট বছর পর চূড়ান্ত সাফল্য
জার্মান ফুটবল দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সবচেয়ে বড় সাফল্য পেতে আট বছর সময় নিলেন ইওয়াখিম ল্যোভ৷ গত বিশ্বকাপে ফাইনালে পৌঁছাতে পারেনি তাঁর দল৷ চূড়ান্ত জয় পায়নি দুটো ইউরো কাপেও৷ এবার সমালোচকদের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP
হিগুয়াইনকে তুলে নেয়া কি ভুল ছিল?
খেলার শুরুতে কিন্তু বেশ এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা৷ একের পর এক আক্রমণে কাবু করে দিচ্ছিল জার্মানির রক্ষণভাগ৷ কিন্তু খেলার দ্বিতীয়ার্ধে হিগুয়াইনকে তুলে নেন আর্জেন্টিনার কোচ সাবেলা৷ এরপরই আর্জেন্টিনার দুর্বলতা ফুটে উঠতে থাকে৷ মেসিও হয়ে যান নিষ্প্রাণ৷ সাবেলার সিদ্ধান্ত কি ভুল ছিল?
ছবি: Reuters
গ্যালারিতে ম্যার্কেল
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে জাতীয় দলের এক নম্বর ভক্ত বলা হয়৷ এই ভক্ত ফাইনাল দেখতে উড়ে যান ব্রাজিলে৷ সঙ্গে ছিলেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাধভাঙা উচ্ছ্বাস
জার্মানির বিজয়ের খবরে আনন্দের বন্যায় ভাসছে গোটা জার্মান জাতি৷ জার্মানির বিভিন্ন শহরে গভীর রাতেও ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বিজয়োল্লাস করছেন ফুটবল ভক্তরা৷ তবে জাতীয় দলকে সংবধর্না দেয়া হবে মঙ্গলবার, বার্লিনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
কর্নারের সময় পেনাল্টি এরিয়ায় দু'পক্ষের প্লেয়ারদের মধ্যে যে ধরনের ঠেলাঠেলি, ধরাধরি চলে, তা একমাত্র কোনো পকেটমারদের কনভেনশনেই সম্ভব, বলে অনেকের মনে হতে পারে৷ আবার খেলার সাধারণ ‘ফ্লো'-র মধ্যেই সররা কিংবা লেঙ্গি মারা চলেছে, যেন প্লেয়াররা কেউ এখনো প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি ছাড়ায়নি৷ নেইমারের চোটের মতো আধা-খুনের কথা আলাদা৷ সব মিলিয়ে এ হলো ফুটবল৷
কিন্তু ছিঁচকেমোর পরাকাষ্ঠা দেখা যায় ফ্রি-কিকের সময় নয় মিটার ১৫ সেন্টিমিটার কিংবা দশ গজের দূরত্ব রাখার ব্যাপারে৷ তখন যেন ডিফেন্ডিং দলের প্লেয়াররা দম-দেওয়া টিনের পুতুলের মতো নিজের অজান্তেই এগোতে থাকেন, রেফারিকে বারংবার লাইন ঠিক করতে হয়: অথবা করতে হতো – কেননা এবার এসেছে ভ্যানিশিং স্প্রে-র লছমনরেখা৷ অপরদিকে যিনি ফ্রি-কিক করছেন, তিনি যে বল সাজানোর নাম করে বার বার বলটা আর একটু এগিয়ে নেবেন, সে পথও বন্ধ, কেননা রেফারি বলের চারপাশে গোল দাগ কেটে ‘বলবন্দি' করে দিয়েছেন৷
আহা, কাউবয় স্টাইলে কোমর থেকে ক্যান বার করে দাগ কেটে দেওয়ার মধ্যে যে কর্তৃত্ব আছে, রেফারিরা তার স্বাদ আগে পেয়েছেন কিনা সন্দেহ৷ আবার পাঠশালার পড়ুয়ার সেলেটের মতো মাঠ সাদা দাগে ভরে যাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই, কেননা এ হলো ‘ভ্যানিশিং স্প্রে', মিনিট খানেকের মধ্যেই এর আর কোনো চিহ্ন থাকে না৷ জার্মানির মতো দেশের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা অবশ্য থেকেই যাচ্ছে: যেমন খেলার সময় খুব বৃষ্টি পড়লে, কিংবা মাঠে বরফ পড়ে থাকলে (!)৷ ডিএফএল নাকি বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে সে সব সমস্যার সমাধান করছে৷
বাকি রইল শুভসূচনা: যা ঘটতে চলেছে আগামী ২২শে আগস্ট, বুন্ডেসলিগার নতুন মরশুম যেদিন শুরু হচ্ছে৷