প্রায় ঊনিশ মাস অপেক্ষার পর জার্মানির দুই শীর্ষ ডিভিশনের খেলা চলাকালে মাঠ আবার দর্শকে পূর্ণ হতে শুরু করেছে৷
‘‘আমরা দীর্ঘসময় ধরে এই মুহূর্তের অপেক্ষা করছিলাম৷ ৫৭০ দিন পর আমরা আবার ভেসারস্টাডিয়নের ওস্টক্যুর্ভে ফিরতে পারবো হাইডেনহাইমের বিপক্ষে খেলার সময়,'' জানিয়েছে ভেরডার ব্রেমেনের কট্টরপন্থি সমর্থকগোষ্ঠী ইনফেমাস ইয়ুথ, কাইলারা এন্ড আল্ট্রা বয়েস ব্রেমেন৷
বায়ার্ন মিউনিখ, লেভানডোভস্কি কিংবা মুলার- এই নামগুলোর বাইরেও বুন্ডেসলিগার রয়েছে চমৎকার ঐতিহ্য আর অনবদ্য সব রেকর্ড৷ ছবিঘর থেকে জানতে পারেন ইউরোপের অন্যতম লিগটি সম্পর্কে ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stacheবহু আলোচনার পর ১৯৬০-এর দশকে জার্মানির জাতীয় লিগের যাত্রা শুরু হয়৷ তখন বুন্ডেসলিগা অবশ্য পশ্চিম জার্মানিতেই সীমাবদ্ধ ছিল৷ ১৯৬৩ সালে প্রথম আয়োজনে ছিল ১০ টি দলের অংশগ্রহণ৷ ১৯৯১ সালে দুই জার্মানির একত্রীকরণের পর ক্লাবের সংখ্যা বেড়ে হয় কুড়ি৷
ছবি: picture-alliance/dpaশুরুটা হয়েছিল কোলনকে দিয়ে৷ প্রথম সাতটি আয়োজনে একে একে পেয়েছিল সাত নতুন চ্যাম্পিয়ন৷ পরের এক দশক লড়াইটা হয়ে যায় বায়ার্ন আর গ্লাডবাখ-এর৷ ধীরে ধীরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে বায়ার্ন মিউনিখ৷ ডেভিড আলাভা, টোমাস মুলার আর ফ্রাঙ্ক রিবেরি- এই তিনজনই নয়টি বুন্ডেসলিগা শিরোপার সাক্ষী হয়েছেন দলটির হয়ে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simonবুন্ডেসলিগায় ৪২৭ টি ম্যাচ খেলেছন গ্যার্ড মুলার৷ ৩৬৫ টি গোল করেছেন বায়ার্নের এই খেলোয়াড়৷ তার রেকর্ড আজো কেউ ভাঙতে পারেননি৷ তালিকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্লাউস ফিশার৷ ১৮৬০ মিউনিখ, শালকে, কোলন আর বোখুমের হয়ে তিনি ২৬৮ বার বল জালে জড়িয়েছেন৷ তাকে ধরার দৌড়ে এগিয়ে আছেন এখনকার গোল মেশিন লেভানডোভস্কি৷ ৩২১ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ২৩৬ টি৷
ছবি: picture-alliance/empicsবুন্ডেসলিগা মানেই গোলের দেখা৷ ম্যাচ প্রতি এত গোল হয় না ইউরোপের আর কোনো লিগেই৷ ২০১৯/২০ মৌসুমে ৩০৬ ম্যাচে গোল হয়েছে ৯৮২ টি৷ গড়ে প্রতি ম্যাচে ৩.২১ টি৷ যেখানে ইটালির সিরি আ-তে ৩.০৪, ইংলিশ প্রিমিয়ারে ২.৭২ স্পেনের লা লিগায় ২.৪৮ আর ফ্রান্সের লিগ ওয়ানে ছিল ২.৫২টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Meissnerলাইসেন্সের বিধি অনুযায়ী ক্লাবগুলোর নিজস্ব অ্যাকাডেমি রয়েছে৷ অনুর্ধ্ব-১৬ আর অনুর্ধ্ব-১৯ এর ৬০ ভাগ খেলোয়াড়কে চুক্তির অধীনে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ এ কারণে বুন্ডেসলিগা আর জার্মানির জাতীয় দলের পাইপলাইনে কখনো খেলোয়াড় সংকট হয় না৷ ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে জার্মানিকে জেতানো লাম, শোয়েনস্টাইগার, টোমাস মুলার, নয়ার, ওজিল, খেদিরাদের মতো তরুণ তুর্কিরা এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Bergmannসাফল্য, গোল আর সবকিছুর উপরে টিকেটের সাশ্রয়ী মূল্য, এসবের কারণে বুন্ডেসলিগা সবসময়ই পেয়েছে স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক৷ ২০১৯/২০-এ প্রতি ম্যাচে গড়ে দর্শক ছিল ৪০ হাজার, যা প্রিমিয়ার লিগের চেয়ে দুই হাজার আর ফরাসী লিগের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি৷ প্রতি টিকেটের গড় মূল্য ছিল ১১ ইউরো যা বাজারে ছাড়ার পরমুহূর্তেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল৷ এর সঙ্গে স্থানীয় গণ পরিবহনের ফ্রি যাতায়তের সুযোগও ছিল৷ আর কী চাই!
ছবি: imago images/MISবুন্ডেসলিগার সংবিধান অনযায়ী ক্লাবকে ৫০ ভাগ এবং তার সঙ্গে কমপক্ষে এক ভাগ শেয়ার মালিক হতে হবে৷ এই নিয়মটি পরিচিত ৫০+১ নামে৷ এর মাধ্যমে মূলত ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ সদস্য আর ফ্যানদের হাতেই থাকে৷ যেমন, বায়ার্নের ৭৫ ভাগ শেয়ারের মালিক এফসি বায়ার্ন মুনশেন৷ বাকিটার মালিকানা আডিডাস, আউডি আর আলিয়ান্সের৷ এই ব্যবস্থাটি সমর্থকদেরকে ক্লাবের আরো আপন করে তুলেছে৷
ছবি: imago/MISলিগা বা লিগ সবার কাছে পরিচিত হলেও বুন্ডেস মানেটি হয়তো অনেকেরই অজানা৷ এর অর্থ ফেডারেল৷ কাজেই আক্ষরিক অনুবাদ করলে শব্দটির মানে দাঁড়ায় ফেডারেল লিগ৷ বুন্ডেসলিগার আগের সংস্করণটির নাম ছিল ওবারলিগাস বা শীর্ষ লিগ৷ এর নীচে আছে বেৎসির্কসলিগা বা শহরকেন্দ্রিক লিগ, গাওলিগাস বা আঞ্চলিক লিগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stacheপ্রযুক্তি বুন্ডেসলিগাকে পরিণত করেছে বিশ্বের সর্বাধুনিক আর উদ্ভাবনী ফুটবল আয়োজনে৷ যদিও গোল লাইন প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছিল ২০১৫/১৬ সালে বৈশ্বিক অনুমোদনের তিন বছর পরে৷ তবে ইউরোপীয় লিগে তারাই প্রথম ২০১৭/১৮-তে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্স রেফারি ব্যবহার শুরু করে৷ ২০১৮ সাল থেকে তারা ভার্চুয়াল বিজ্ঞাপন চালু করে৷ ২০১৯ সালে ফাইভ জি প্রযুক্তি ব্যবহারের ঘোষণা দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpaবুন্ডেসলিগার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরো মজার সব রেকর্ড৷ লিগে সবচেয়ে বয়সি খেলোয়াড় (ক্লাউস ফিখটেল) আর গোলদাতার (পিসারো ) রেকর্ডটি বুন্ডেসলিগার৷ ২০০৫ সালে অভিষিক্ত হওয়া ১৬ বছরের নুরি শাহীন লিগে সুযোগ পাওয়া সবচেয়ে কম বয়সি খেলোয়াড়৷
ছবি: Imago Images ‘‘মাঠে আসার আগে অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করে আসবেন৷ শুক্রবার দেখা হবে,'' লিখেছে গোষ্ঠীগুলো৷
শুধু ব্রেমেন একা নয়, স্টুটগার্ট, ম্যোনশেনগ্লাডবাখ এবং হামবুর্গের সেন্ট পাওলিসহ অনেক স্থানেই ফুটবলপ্রেমীদের উচ্ছ্বাস আবারো দেখা যাচ্ছে৷ গ্যালারিতে সমর্থকরা পতাকা ওড়াচ্ছেন, গোলের পেছনে ভক্তদের সমর্থন বাড়ছে, মাঠে উড়ছে উচ্ছ্বাসের রঙ্গিন কাগজের টুকরো৷ সবমিলিয়ে ফুটবল মাঠের সেই চিরচেনা, বর্ণিল চিত্র আবারো ফিরতে শুরু করেছে৷
তবে, বিভিন্ন ক্লাবের কট্টর সমর্থকগোষ্ঠীর মাঠে ফেরায় আরো একটি বিষয় ঘটছে৷ তাহচ্ছে, ফুটবল মাঠকে নানা মতামত আর রাজনৈতিক প্রতিবাদেরও কেন্দ্রে পরিনত করা৷
‘‘সবধরনের ইহুদবিদ্বেষের বিরুদ্ধে'' লেখা ব্যানার দেখা গেছে মাইন্স ০৫ এর কট্টরপন্থি সমর্থকদের স্টান্ডের সামনে৷ তারা এভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে মাকাবি হাইফার বিপক্ষে ইউনিয়ন বার্লিনের কনফারেন্স লিগের ম্যাচে ঘটে যাওয়া ইহুদিবিদ্বেষমূলক ঘটনার বিরুদ্ধে৷
শুধু ইহুদিবিদ্বেষের বিরোধিতাই নয়, করোনা ভ্যাকসিনের পক্ষে-বিপক্ষে নানা চিত্রও দেখা যায় সমর্থকদের স্লোগান ব্যানারে৷ জার্মানিসহ ইউরোপের ফুটবল মাঠে ভক্তদের রাজনৈতিক, সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলা স্বাভাবিক চিত্র৷ তবে সেটা যাতে মাত্রা না ছাড়ায় সেটাও নজর রাখতে হয় কর্তৃপক্ষকে৷
এআই/কেএম