১৮ অক্টোবর হফেনহাইম আর বায়ার লেভারকুজেনের মধ্যে খেলাটি নতুন করে হবে না৷ স্টেফান কিসলিং-এর ‘ভূতুড়ে গোলটি' বৈধ, রায় দিয়েছে জার্মান ফুটবল সমিতি ডিএফবি-র ক্রীড়া আদালত৷ সেক্ষেত্রে সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে হফেনহাইমের আপিল৷
বিজ্ঞাপন
কারণ হিসেবে ডিএফবি বলেছে, রেফারি ফেলিক্স ব্রিচ-এর দেখার ভুল হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু তিনি কোনো নিয়ম ভঙ্গ করেননি৷ সেক্ষেত্রে রেফারির ‘অন-দ্য-স্পট' সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত৷ কাজেই হফেনহাইমের আপিল বাতিল করা হয়েছে৷ হফেনহাইম অবশ্য এখনও ডিএফবি-র উচ্চতর ট্রাইব্যুনালের কাছে আপিল করতে পারবে৷
লেভারকুজেনের হয়ে কিসলিং-এর গোলটি নিয়ে বিতর্ক হতো অবশ্যই, তবে এতটা উত্তেজনা বোধহয় দেখা দিতো না – যদি না খেলার চূড়ান্ত ফলাফল দাঁড়াতো ২-১ গোলে লেভারকুজেনের জয় এবং হফেনহাইমের পরাজয়৷ কিসলিং-এর হেড করা বলটি গোলের বাঁদিকে নেটের একটি ফুটো দিয়ে গোলে ঢুকে পড়ে, এবং রেফারি গোলটা দেওয়ায় লেভারকুজেন ২-০ গোলে এগিয়ে যায়৷
ফিফা-র রেফারি ব্রিচ সোমবারের শুনানিতে বলেন, ‘‘আমি ভেবেছিলাম বলটা গোলের বাইরে দিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু ঠিকমতো দেখতে পাইনি কেননা আমার সামনে অন্যান্য প্লেয়াররা ছিল৷ তারপর দেখলাম বলটা গোলের ভেতরে৷'' ব্রিচ তখন তাঁর সহকারীদের সঙ্গে পরামর্শ করেন, যাদের মধ্যে একজন নাকি মাথা দুলিয়ে ইঙ্গিত দেন যে, সত্যিই গোল হয়েছে৷ কিন্তু ব্রিচ ব কিসলিং ক্রীড়া আদালতকে বলেন, কিসলিং স্বয়ং ব্রিচকে বলেননি যে, কোনো গোল হয়নি৷ কিসলিং অপরদিকে বলেন, তিনি বলটাকে ধার দিয়ে নেটের দিকে যেতে দেখেছেন, কিন্তু তাঁরও নাকি সামনে প্লেয়ার থাকায় তিনি বাকিটা দেখতে পাননি৷ পরে তিনি দেখেন বলটা গোলের মধ্যে পড়ে রয়েছে৷ কিসলিং এ-ও বলেন, তিনি নাকি প্রথমে ভেবেছিলেন হফেনহাইমের গোলকিপার কোয়েন কাস্টেল্স একটি ‘সেমসাইড' গোল করেছে৷ বলা বাহুল্য, কিসলিং-এর এই বিবৃতিতে হফেনহাইমের ফ্যানরা প্রতীত কিংবা সন্তুষ্ট নয়৷
বুন্ডেসলিগার ৫০ বছর
এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ছিল জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ আর বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড৷ ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে ‘ট্রেবল’ জিতেছে বায়ার্ন৷ বুন্ডেসলিগার নতুন মৌসুম শুরুর আগের দিন ফিরে তাকানো যাক বুন্ডেসলিগার ৫০ বছরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম গোল
বুন্ডেসলিগা শুরু হয়েছিল ১৯৬৩ সালে৷ প্রথম আসরের প্রথম ম্যাচ৷ প্রথম গোলের জন্য এক মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়নি৷ বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ফ্রিডহেল্ম ‘টিমো’ কনিয়েটস্কা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বল জালে জড়িয়ে উল্লাসে মাতলেন৷ কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, কনিয়েটস্কা-র জীবন এবং বুন্ডেসলিগার ইতিহাসের এমন স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি কেউ কোনোদিন দেখতে পারবেন না৷ ক্যামেরা হাতে নেয়ার সময় না দিয়েই গোল করলে ছবি তোলা যায়, বলুন!
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে বাজে দল
১৯৬৫ সাল৷ খেলোয়াড়দের সঙ্গে লেনদেনে ঘাপলা ধরা পড়ায় লিগ থেকে বাদ দেয়া হয় হ্যার্টা বার্লিনকে৷ সুযোগ পায় বার্লিনের আরেক ক্লাব ‘তাসমানিয়া ১৯০০’৷ বড় আসরে খেলার সুযোগটাকে একটুও কাজে লাগাতে পারেনি দলটি৷ পয়েন্ট টেবিলের একেবারে নীচে ছিল তারা৷ মাত্র ৮ পয়েন্ট পেতে গোল করেছিল ১৫টি আর খেয়েছিল ১০৮টি৷ লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে দল বাছতে গেলে আজও তাই ‘তাসমানিয়া ১৯০০’-এর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া যায়না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পশ্চাতে কামড়!
ডর্টমুন্ড আর শালকের ১৯৬৯ সালের ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে মজার একটি কারণে৷ প্রিয় দল ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ায় রেগেমেগে মাঠে ঢুকে পড়েছিল শালকের কিছু উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক৷ পরিস্থিতি খারাপ দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোও গেল ক্ষেপে৷ সমর্থকদের দোষে শালকের খেলোয়াড় ফ্রিডেল রাউশ আর গেয়ার্ড নয়সার-কে খেতে হলো কুকুরের কামড়৷ রাউশ-এর পশ্চাৎদেশে এখনো নাকি একটি কামড়ের দাগ বিদ্যমান!
ছবি: picture-alliance/dpa
কারণ ভাঙা গোলপোস্ট...
কাঠও ঢুকে পড়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷ এক সময় গোলপোস্টগুলো ছিল কাঠের৷ তো ১৯৭১ সালে ব্রেমেনের বিপক্ষে গোল করার আনন্দে গোলপোস্টের পেছনের জাল বেয়ে উঠছিলেন ম্যোনশেনগ্লাডবাখ-এর স্ট্রাইকার হ্যারব্যার্ট লাউমান৷ কাঠ যে পচে দুর্বল হয়ে আছে বোঝেননি৷ ফলে ভেঙে পড়ল গোলপোস্ট৷ অনেক চেষ্টা হলো, কিন্তু গোলপোস্ট আর ঠিক করা গেল না৷ মাঠের এক দিকে পোস্ট না থাকায় সেদিন খেলাই পরিত্যক্ত হয়ে গেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিয়মভাঙা
তখনো ফুটবলে এত টাকার খেলা শুরু হয়নি৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সিতে তখনো কোনো বহুজাতিক কোম্পানির নাম ওঠা শুরু হয়নি৷ ১৯৭৩ সালে বুন্ডেসলিগায় আইনট্রাখট ব্রাউনশোয়াইগ ক্লাবের খেলোয়াড়দের জার্সিতে প্রথম আসে বিজ্ঞাপন৷ খেলোয়াড়দের জার্সিতে ‘ইয়েগারমাইস্টার’ মদের লোগো হরিণের কাটা মাথার ছবি দেখে চটে গিয়েছিল জার্মান ফুটবল ফেডারেশন৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সি স্পন্সর করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ১৯৮১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রেফারির কাণ্ড
ম্যাচের ৩২ মিনিটেই প্রথমার্ধ শেষ৷ সবাই অবাক৷ জানা গেল রেফারি ভেল্ফ-ডিটমার আলেনফেলডার ম্যাচের আগে বেশি করে মদ গেলায় নিজেকে ঠিক সামলাতে পারছিলেন না বলে ১৩ মিনিট বাকি থাকতেই বাজিয়ে দিয়েছেন প্রথমার্ধ শেষের বাঁশি৷ এমন কাণ্ডের সমালোচনা করায় আলেনফেল্ডার বলেছিলেন, ‘‘আমরা পুরুষ, আমরা তো ফান্টা খাইনা৷’’ ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের৷ ব্রেমেন শহরে অনেক বারে এখনো অনেকে মদের অর্ডার দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আলেনফেল্ডার আছে?’’
ছবি: picture-alliance/dpa
হায় পেনাল্টি!
১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে লিগ জিতেছিল বায়ার্ন মিউনিখ৷ কিন্তু তাদের হারাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হতো ব্রেমেন৷ ম্যাচের ৮৯ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল তারা৷ গোল করলে জয় অবধারিত৷ কিন্তু মিশায়েল কুতসুপ বল মারলেন গোলপোস্টে৷ ব্রেমেন পারলোনা চ্যাম্পিয়ন হতে৷ কুতসুপ বুন্ডেসলিগায় মোট ৪০ বার পেনাল্টি নিয়ে গোল করেছেন ৩৯টি৷ একটা মাত্র মিসের জন্য সারা জীবন আফসোস করতে হবে তাকে!
ছবি: picture-alliance/dpa
বিদেশিদের দল
অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালে৷ এনারগি কটবুস মাঠে নামিয়েছিল এমন এক দল যেখানে একজনও জার্মান নেই, এগার জনের প্রত্যেকেই বিদেশি৷ অখ্যাত দলটি আজও বিখ্যাত হয়ে আছে সে কারণেই৷ পিপলিকা, হুইদুরোভিচ, মাটিয়ুস, আক্রাপোভিচ, কোবিলানস্কি, লাতাউনজি, মিরিউটা, রেগেকাম্ফ, ভাটা, ফ্রাঙ্কলিন এবং লাবাক – সেদিনের ওই এগারোজন খেলোয়াড়ের নাম তাই খুব গুরুত্ব দিয়ে লিখে রাখা হয়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হৃদয়ে আছো তুমি.....
সেবার ১৯৫৮ সালের পর প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবার সুযোগ পেয়েছে শালকে৷ লিগের শেষ দিন৷ নিজেদের শেষ ম্যাচটা জিতে সমর্থকদের সঙ্গে বিজয়োৎসব শুরু করে দিয়েছেন শালকের খেলোয়াড়রা৷ তাঁরা জানতেন না বায়ার্ন-হামবুর্গের ম্যাচ তখনো চলছে৷ হঠাৎ জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হলো সেই খেলার ফলাফল৷ শেষ মুহূর্তে সমতা ফিরিয়ে ২০০২ সালের আসরেরও চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন! সমর্থকদের ভিড়েই কাঁদতে শুরু করলেন শালকের খেলোয়াড়রা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
ডিএফবি-র ক্রীড়া আদালতের বিচারক হান্স লোরেনৎস নিজেই স্বীকার করেছেন যে, আদালতের সিদ্ধান্ত খেলাধুলায় ন্যায্যতার দিক থেকে সন্তোষজনক না হলেও, এই সিদ্ধান্ত নিয়মকানুনের অনুবর্তী৷ যদিও এই সিদ্ধান্তের জন্য তিনি তাঁর নিজের বান্ধবী এবং ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে গাল শুনবেন – রসিকতা করে বলেছেন লোরেনৎস৷ তবে ফিফা-র চাপেই ডিএফবি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, লোরেনৎস এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন৷
অপরদিকে লোরেনৎস তাঁর নিজের মনোভাব আরো স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন এই বলে যে, ‘‘আমরা যদি গোল-লাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারতাম, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না৷ কিন্তু (সেই ধরনের প্রযুক্তি) আসছে এবং আমি তার সপক্ষে৷'' এক্ষেত্রে ফিল্ড হকি ফুটবলের থেকে এগিয়ে আছে বলে লোরেনৎস অভিমত প্রকাশ করেন৷ তবে তাঁর চিন্তার কোনো কারণ নেই৷ স্বয়ং ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার বুধবার টুইট করেছেন: ‘‘গোল লাইন প্রযুক্তি আর এখন কোনো বিকল্প নয়, ওটা অত্যাবশ্যক৷''