বুন্ডেসলিগায় চলছে বিদেশি ফুটবলারদের দাপট৷ খেলোয়াড়দের ভোটেই তা প্রমাণিত হলো৷ এক জরিপে জার্মানির শীর্ষ ফুটবল লিগের প্রথম পর্বের সেরা হয়েছেন ফ্রাংক রিবেরি৷ আর তাঁর সতীর্থ গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার হয়েছেন বিশ্বসেরা৷
বিজ্ঞাপন
গত আগস্টেই ইউরোপের বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন রিবেরি৷ ফ্রান্স জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড বায়ার্নের হয়ে খেলছেন দুর্দান্ত৷ সেই সুবাদে আরেকটি স্বীকৃতি পেলেন তিনি৷ বুন্ডেসলিগার ২৩৮ জন পেশাদার ফুটবলারের মধ্যে এক জরিপ চালিয়েছে জার্মানির ক্রীড়া বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘কিকার'৷ সেখানে ৫৬ দশমিক ৪ ভাগ ভোট পেয়ে চলতি মৌসুমের প্রথম ভাগের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন রিবেরি৷ দ্বিতীয় সেরা বায়ার্নেরই ডাচ ফরোয়ার্ড আরিয়েন রবেন৷ তিনি পেয়েছেন ১১ দশমিক ৪ ভাগ ভোট৷ মাত্র ৬ দশমিক ৮ ভাগ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মার্কো রয়েস৷ সেরা তিনে রয়েসই শুধু জার্মান৷
দলকে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রাখতে পারলেও বায়ার্ন মিউনিখের মানুয়েল নয়ার কিন্তু বুন্ডেসলিগার প্রথম পর্বের সেরা গোলরক্ষক হতে পারেননি৷ জরিপে অংশ নেয়া খেলোয়াড়দের ৩১ দশমিক ২ ভাগ ভোট পেয়ে সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন বায়ার লেভারকুজেনের বার্ন্ড লেনো৷ জার্মান জাতীয় দলের গোলরক্ষক নয়ার ৩০ ভাগ ভোট পেয়ে হয়েছেন দ্বিতীয় সেরা৷
বুন্ডেসলিগার ৫০ বছর
এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ছিল জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ আর বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড৷ ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে ‘ট্রেবল’ জিতেছে বায়ার্ন৷ বুন্ডেসলিগার নতুন মৌসুম শুরুর আগের দিন ফিরে তাকানো যাক বুন্ডেসলিগার ৫০ বছরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম গোল
বুন্ডেসলিগা শুরু হয়েছিল ১৯৬৩ সালে৷ প্রথম আসরের প্রথম ম্যাচ৷ প্রথম গোলের জন্য এক মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়নি৷ বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ফ্রিডহেল্ম ‘টিমো’ কনিয়েটস্কা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বল জালে জড়িয়ে উল্লাসে মাতলেন৷ কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, কনিয়েটস্কা-র জীবন এবং বুন্ডেসলিগার ইতিহাসের এমন স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি কেউ কোনোদিন দেখতে পারবেন না৷ ক্যামেরা হাতে নেয়ার সময় না দিয়েই গোল করলে ছবি তোলা যায়, বলুন!
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে বাজে দল
১৯৬৫ সাল৷ খেলোয়াড়দের সঙ্গে লেনদেনে ঘাপলা ধরা পড়ায় লিগ থেকে বাদ দেয়া হয় হ্যার্টা বার্লিনকে৷ সুযোগ পায় বার্লিনের আরেক ক্লাব ‘তাসমানিয়া ১৯০০’৷ বড় আসরে খেলার সুযোগটাকে একটুও কাজে লাগাতে পারেনি দলটি৷ পয়েন্ট টেবিলের একেবারে নীচে ছিল তারা৷ মাত্র ৮ পয়েন্ট পেতে গোল করেছিল ১৫টি আর খেয়েছিল ১০৮টি৷ লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে দল বাছতে গেলে আজও তাই ‘তাসমানিয়া ১৯০০’-এর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া যায়না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পশ্চাতে কামড়!
ডর্টমুন্ড আর শালকের ১৯৬৯ সালের ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে মজার একটি কারণে৷ প্রিয় দল ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ায় রেগেমেগে মাঠে ঢুকে পড়েছিল শালকের কিছু উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক৷ পরিস্থিতি খারাপ দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোও গেল ক্ষেপে৷ সমর্থকদের দোষে শালকের খেলোয়াড় ফ্রিডেল রাউশ আর গেয়ার্ড নয়সার-কে খেতে হলো কুকুরের কামড়৷ রাউশ-এর পশ্চাৎদেশে এখনো নাকি একটি কামড়ের দাগ বিদ্যমান!
ছবি: picture-alliance/dpa
কারণ ভাঙা গোলপোস্ট...
কাঠও ঢুকে পড়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷ এক সময় গোলপোস্টগুলো ছিল কাঠের৷ তো ১৯৭১ সালে ব্রেমেনের বিপক্ষে গোল করার আনন্দে গোলপোস্টের পেছনের জাল বেয়ে উঠছিলেন ম্যোনশেনগ্লাডবাখ-এর স্ট্রাইকার হ্যারব্যার্ট লাউমান৷ কাঠ যে পচে দুর্বল হয়ে আছে বোঝেননি৷ ফলে ভেঙে পড়ল গোলপোস্ট৷ অনেক চেষ্টা হলো, কিন্তু গোলপোস্ট আর ঠিক করা গেল না৷ মাঠের এক দিকে পোস্ট না থাকায় সেদিন খেলাই পরিত্যক্ত হয়ে গেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিয়মভাঙা
তখনো ফুটবলে এত টাকার খেলা শুরু হয়নি৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সিতে তখনো কোনো বহুজাতিক কোম্পানির নাম ওঠা শুরু হয়নি৷ ১৯৭৩ সালে বুন্ডেসলিগায় আইনট্রাখট ব্রাউনশোয়াইগ ক্লাবের খেলোয়াড়দের জার্সিতে প্রথম আসে বিজ্ঞাপন৷ খেলোয়াড়দের জার্সিতে ‘ইয়েগারমাইস্টার’ মদের লোগো হরিণের কাটা মাথার ছবি দেখে চটে গিয়েছিল জার্মান ফুটবল ফেডারেশন৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সি স্পন্সর করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ১৯৮১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রেফারির কাণ্ড
ম্যাচের ৩২ মিনিটেই প্রথমার্ধ শেষ৷ সবাই অবাক৷ জানা গেল রেফারি ভেল্ফ-ডিটমার আলেনফেলডার ম্যাচের আগে বেশি করে মদ গেলায় নিজেকে ঠিক সামলাতে পারছিলেন না বলে ১৩ মিনিট বাকি থাকতেই বাজিয়ে দিয়েছেন প্রথমার্ধ শেষের বাঁশি৷ এমন কাণ্ডের সমালোচনা করায় আলেনফেল্ডার বলেছিলেন, ‘‘আমরা পুরুষ, আমরা তো ফান্টা খাইনা৷’’ ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের৷ ব্রেমেন শহরে অনেক বারে এখনো অনেকে মদের অর্ডার দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আলেনফেল্ডার আছে?’’
ছবি: picture-alliance/dpa
হায় পেনাল্টি!
১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে লিগ জিতেছিল বায়ার্ন মিউনিখ৷ কিন্তু তাদের হারাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হতো ব্রেমেন৷ ম্যাচের ৮৯ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল তারা৷ গোল করলে জয় অবধারিত৷ কিন্তু মিশায়েল কুতসুপ বল মারলেন গোলপোস্টে৷ ব্রেমেন পারলোনা চ্যাম্পিয়ন হতে৷ কুতসুপ বুন্ডেসলিগায় মোট ৪০ বার পেনাল্টি নিয়ে গোল করেছেন ৩৯টি৷ একটা মাত্র মিসের জন্য সারা জীবন আফসোস করতে হবে তাকে!
ছবি: picture-alliance/dpa
বিদেশিদের দল
অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালে৷ এনারগি কটবুস মাঠে নামিয়েছিল এমন এক দল যেখানে একজনও জার্মান নেই, এগার জনের প্রত্যেকেই বিদেশি৷ অখ্যাত দলটি আজও বিখ্যাত হয়ে আছে সে কারণেই৷ পিপলিকা, হুইদুরোভিচ, মাটিয়ুস, আক্রাপোভিচ, কোবিলানস্কি, লাতাউনজি, মিরিউটা, রেগেকাম্ফ, ভাটা, ফ্রাঙ্কলিন এবং লাবাক – সেদিনের ওই এগারোজন খেলোয়াড়ের নাম তাই খুব গুরুত্ব দিয়ে লিখে রাখা হয়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হৃদয়ে আছো তুমি.....
সেবার ১৯৫৮ সালের পর প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবার সুযোগ পেয়েছে শালকে৷ লিগের শেষ দিন৷ নিজেদের শেষ ম্যাচটা জিতে সমর্থকদের সঙ্গে বিজয়োৎসব শুরু করে দিয়েছেন শালকের খেলোয়াড়রা৷ তাঁরা জানতেন না বায়ার্ন-হামবুর্গের ম্যাচ তখনো চলছে৷ হঠাৎ জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হলো সেই খেলার ফলাফল৷ শেষ মুহূর্তে সমতা ফিরিয়ে ২০০২ সালের আসরেরও চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন! সমর্থকদের ভিড়েই কাঁদতে শুরু করলেন শালকের খেলোয়াড়রা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
বুন্ডেসলিগার ফুটবলারদের বিবেচনায় সেরা হতে না পারলেও নয়ার কিন্তু আরো বড় একটা স্বীকৃতি পেয়েছেন৷ গত মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখকে পাঁচটি শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি জাতীয় দলকে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব পেরোনোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় নয়ারকে বিশ্বসেরা গোলরক্ষকের স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফুটবল হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স (আইএফএফএইচএস)৷ ৭০টি দেশের ক্রীড়া সম্পাদক এবং বিশেষজ্ঞদের ভোটে ইটালি এবং জুভেন্টাসের অধিনায়ক জিয়ানলুজি বুফনকে বিশাল ব্যবধানে পিছনে ফেলেছেন তিনি৷ নয়ার পেয়েছেন ২১১ পয়েন্ট, বুফনের জুটেছে মাত্র ১৩৩ পয়েন্ট৷ তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম হয়েছেন যথাক্রমে চেলসির পিওতর চেক, আতলেটিকো মাদ্রিদের থিবাউট করটোইস এবং বার্সেলোনার ভিক্টর ভালদেস৷