মুসলিম নারীদের জন্য তৈরি সাঁতারের পোশাক ‘বুর্কিনি'-র ওপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছে ফ্রান্সের আদালত৷ তবে সিসকোর মেয়র জানিয়েছেন, তিনি আদালতের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও তাঁর এলাকায় ঐ নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখবেন৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সই সবার আগে মুসলিম নারীদের সম্পূর্ণ মুখ-চোখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করে৷ ২০১০ সালে আইন প্রণয়ন করেই এই নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগ নেয়া হয়৷ সে বছরের অক্টোবরে আইন প্রণয়ন করা হয় আর আইনের প্রয়োগ শুরু হয় ২০১১ সালের এপ্রিল মাস থেকে৷ তারপর থেকে প্রকাশ্যে সম্পূর্ণ মুখ-চোখ ঢাকা কিংবা শুধু চোখ দেখানো বোরকা পরা বন্ধ করতে বেশ কঠোর অবস্থান নেয় ফরাসি প্রশাসন৷
Burkini creator on court decision
05:49
সম্প্রতি মুখ দেখা যায় এমন পোশাক ‘বুর্কিনি' পরাও নিষিদ্ধ করা হয় ফ্রান্সের ভিলনভ-লুবে শহরে৷ এই নিষেধাজ্ঞার কয়েকদিনের মধ্যে উদার গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে পরিচিত ফ্রান্স আরো কয়েকটি শহর এবং সমুদ্র সৈকতেও এমন পোষাক পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে৷
মুসলিম নারীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার এক ফ্যাশন ডিজাইনারের তৈরি এই সাঁতারের পোশাকের ওপর ফ্রান্সে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ায়, বিশ্ব জুড়ে শুরু হয় বিতর্ক৷ এই নিষেধাজ্ঞাকে মানুষের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করে নিষেধাজ্ঞাটি প্রত্যাহারের দাবি জানায় বিশ্বের অধিকাংশ মানবাধিকার সংস্থা৷ লন্ডন-বার্লিনসহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে নামে প্রতিবাদের মিছিল৷
এরপর শুক্রবার, ফ্রান্সের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত বুর্কিনির ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়৷ এক বিবৃতিতে আদালত বলে, এ নিষেধাজ্ঞা ভয়ংকরভাবে মানুষের (কোনো স্থানে) যাওয়া-আসার মৌলিক স্বাধীনতা, কিছু বিশ্বাস করার স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা লঙ্ঘন করেছে৷
এভাবে সমালোচনা করে বুর্কিনির ওপর নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিলেও নর্দান করর্সিকায় অবস্থিত সিসকোর মেয়র জানিয়েছেন, তিনি তাঁর অঞ্চলে বুর্কিনির ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখবেন৷
এসিবি/ডিজি (এপি, এএফপি)
আপনি বুর্কিনি ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পক্ষে না বিপক্ষে? আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷
যেসব দেশে বোরকা নিষিদ্ধ, যেখানে চলেছে আলোচনা
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিছু কিছু দেশে আবার পুরো মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা৷ প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা না থাকায় এসব অঞ্চলে কি জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে?
ছবি: CLAUDE PARIS/AP/dapd
ফ্রান্স
ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ, যেখানে বোরকা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়৷ ফ্রান্সে ৫০ লাখ মুসলমানের বাস৷ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়৷ বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে৷
ছবি: Getty Images
বেলজিয়াম
২০১১ সালের জুলাইয়ে বেলজিয়ামেও নেকাব নিষিদ্ধ হয়৷ অর্থাৎ কোনো নারী তার পুরো মুখ কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারবে না৷
ছবি: AP
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়৷ বিশেষ করে জনসমক্ষে, অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ছবি: AP
স্পেন
পুরো স্পেনে নয়, বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিটেন
ব্রিটেনে প্রচুর মুসলিমের বাস, তাই সেখানে কোনো ইসলামি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই৷ তবে স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়৷ ২০০৭ সালে বেশ কয়েকটি মামলার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে, স্কুলে কেউ বোরকা বা নেকাব পরতে পারবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
সুইজারল্যান্ড
২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ইটালীয় ভাষাভাষীদের এলাকা টিসিনোতে বোরকা নিষিদ্ধের ওপর ভোট হয়৷ নিষিদ্ধ করার পক্ষে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট৷ এরপর ২৬টি শহরে বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে লুগানো, লোকারনো, মাগাদিনোসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ কেউ জনসমক্ষে বোরকা পড়লে ৯ হাজার ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে তাঁর৷
ছবি: imago/Geisser
ইটালি
ইটালির বেশ কয়েকটি শহরে নেকাব নিষিদ্ধ৷ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভারা কর্তৃপক্ষ সেখানে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷ ৭০-এর দশকেই মুখ ঢেকে রাখা সব ধরনের ইসলামিক পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইটালি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
অস্ট্রিয়া
দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার প্রকাশ্য স্থানে পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছে৷ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে একমত হয়েছে সরকারের শরিক দলগুলোও৷ এছাড়া যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের মাথায় স্কার্ফ, হিজাব কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
জার্মানি
জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক রাজনীতিক স্কুল, সরকারি অফিস, আদালতকক্ষ ও গাড়ি চালানোর সময় বোরকা ও গোটা মুখ ঢাকা নিকাব পরা নিষিদ্ধ করতে চান৷ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মানও প্রকাশ্যে বোরকাধারী মহিলাদের দেখতে নারাজ৷ এমনকি সম্প্রতি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষ তাঁর সায় দিয়েছেন৷