ফ্রান্স, বেলজিয়াম বা নেদাল্যান্ডসের মতো দেশগুলোতে বোরকা নিষিদ্ধ হয়েছে অনেকদিন৷ এছাড়া ইউরোপে এমন দেশও আছে, যেখানে কিছু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নিকাব পরা নিষিদ্ধ, নিষিদ্ধ মুসলিমাদের জন্য সাঁতারের পোশাক বুর্কিনিও৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতেও শুরু হয়েছে বোরকা নিয়ে বিতর্ক৷ শোনা যাচ্ছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়িই মুখ না ঢাকা বাধ্যতামূলক করে আইন প্রণয়ন করা হবে৷ অর্থাৎ নিষিদ্ধ করে হবে বোরকা৷ না, সব জায়গায় নয়৷ তবে গাড়ি চালানোর সময়, সরকারি কার্যালয়ে, অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময়ও মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে৷ এমনকি ‘বুর্কিনি' নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন৷
জার্মানির মুসলমান সমাজ এ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিভক্ত৷ মানবাধিকার আর ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতীক ভাবা হয় যে দেশটিকে, সেখানে এমন বিধি-নিষেধ কার্যকর করার কথা কীভাবে ভাবা হচ্ছে – তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
My picture of the week | Burkini ban in Europe
01:45
যেমন ধরুন রেচেল বেগ৷ পাকিস্তানি-জার্মান এই সাংবাদিক ডয়চে ভেলেতেই কর্মরত৷ মুসলমান হলেও রেচেল নিজে বোরকা পরেন না, করেন না কোনোরকম পর্দাও৷ কিন্তু সকলেরই যে পোশাক নির্বাচনের অধিকার রয়েছে – তা তিনি বিশ্বাস করেন৷ তাই বিশ্বের সব সমুদ্র সৈকতে শুধু বিকিনি নয়, বুর্কিনিও দেখতে চান তিনি৷
তাঁর কথায়, ‘‘শরীর প্রদর্শণের যদি অধিকার থাকতে পারে, তবে শরীরকে ঢাকার অধিকার থাকবে না কেন? সমুদ্রে স্নান করার সময় কেউ চাইলে যেমন বিকিনি বা সাধারণ সুইমিং কস্টিউম পরতে পারে, তেমনি সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা বুর্কিনি পরতে পারবে না কেন? এতে অন্যদের সমস্যা কোথায়?''
যেসব দেশে বোরকা নিষিদ্ধ, যেখানে চলেছে আলোচনা
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিছু কিছু দেশে আবার পুরো মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা৷ প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা না থাকায় এসব অঞ্চলে কি জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে?
ছবি: CLAUDE PARIS/AP/dapd
ফ্রান্স
ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ, যেখানে বোরকা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়৷ ফ্রান্সে ৫০ লাখ মুসলমানের বাস৷ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়৷ বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে৷
ছবি: Getty Images
বেলজিয়াম
২০১১ সালের জুলাইয়ে বেলজিয়ামেও নেকাব নিষিদ্ধ হয়৷ অর্থাৎ কোনো নারী তার পুরো মুখ কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারবে না৷
ছবি: AP
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়৷ বিশেষ করে জনসমক্ষে, অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ছবি: AP
স্পেন
পুরো স্পেনে নয়, বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিটেন
ব্রিটেনে প্রচুর মুসলিমের বাস, তাই সেখানে কোনো ইসলামি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই৷ তবে স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়৷ ২০০৭ সালে বেশ কয়েকটি মামলার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে, স্কুলে কেউ বোরকা বা নেকাব পরতে পারবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
সুইজারল্যান্ড
২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ইটালীয় ভাষাভাষীদের এলাকা টিসিনোতে বোরকা নিষিদ্ধের ওপর ভোট হয়৷ নিষিদ্ধ করার পক্ষে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট৷ এরপর ২৬টি শহরে বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে লুগানো, লোকারনো, মাগাদিনোসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ কেউ জনসমক্ষে বোরকা পড়লে ৯ হাজার ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে তাঁর৷
ছবি: imago/Geisser
ইটালি
ইটালির বেশ কয়েকটি শহরে নেকাব নিষিদ্ধ৷ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভারা কর্তৃপক্ষ সেখানে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷ ৭০-এর দশকেই মুখ ঢেকে রাখা সব ধরনের ইসলামিক পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইটালি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
অস্ট্রিয়া
দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার প্রকাশ্য স্থানে পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছে৷ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে একমত হয়েছে সরকারের শরিক দলগুলোও৷ এছাড়া যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের মাথায় স্কার্ফ, হিজাব কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
জার্মানি
জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক রাজনীতিক স্কুল, সরকারি অফিস, আদালতকক্ষ ও গাড়ি চালানোর সময় বোরকা ও গোটা মুখ ঢাকা নিকাব পরা নিষিদ্ধ করতে চান৷ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মানও প্রকাশ্যে বোরকাধারী মহিলাদের দেখতে নারাজ৷ এমনকি সম্প্রতি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষ তাঁর সায় দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Schuh
9 ছবি1 | 9
তাই রেচেলের প্রশ্ন, ‘‘আমি কী ধরনের পোশাক পরবো, সেটা অন্য কেউ বলে দেবে কেন? এ নিয়ে আইন থাকবে কেন? কেনই বা থাকবে শাস্তি?''
আপনি কি রেচেল বেগের সঙ্গে একমত? আপনার স্ত্রী বা কন্যাকে সাঁতার কাটার সময় কোন ধরনের পোশাকে দেখতে চান আপনি? জানান আমাদের, লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
ডিজি/এসিবি
বাই, বাই, ‘বিকিনি’ – ফিরছে ‘ওয়ান-পিস’ সুইমসুট
বিকিনি হয়ত বড় সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিল, তাই হালের সুইমওয়্যার শো’গুলোতে হঠাৎ অনদূর অতীতের সেই অনুগ্র ওয়ান-পিস সুইমসুট উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেছে...
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Ebener
উগ্র নয়, নম্র
সুইমসুটের আসল মজা তার কাপড়ে৷ ফ্যাশন ডিজাইনাররা চান নরম কাপড়, যা কিনা বাতাসে বা রোদ্দুরে খুব তাড়াতাড়ি শুকোবে৷ ২০১৫ সালের মরশুমের রঙচঙে ওয়ান-পিস সুইমসুট বিকিনিদের অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/P. Le Segretain
সুইমসুটের সূচনা
মহিলাদের জন্য স্নান করার এবং সাঁতার কাটার পরিধান প্রথম বের হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে – সেই সঙ্গে পুরুষদের জন্যও সর্বাঙ্গ ঢেকে জলে নামার পরিধেয়৷ মোটা পশম কিংবা তুলোর এই সব কাপড় জল শুষে নিতো, যার ফলে তা শুকোতে বহু সময় লাগত৷ নারী-পুরুষের একত্রে জলে নামা ছিল নিষিদ্ধ৷ স্নান করতে হতো আলাদা জায়গায়৷
ছবি: picture alliance/IMAGNO
বেলাভূমি
বিংশ শতাব্দীর সূচনায় ছুটিছাটায় সমুদ্রতীরে গিয়ে স্নান ও সূর্যস্নানের প্রথা শুরু হয়৷ ততদিনে সুইমসুট আর একটু বেশি ‘টাইট’ হয়েছে, কাপড়ের সঙ্গে জুটেছে ইলাস্টিক৷ হ্যাট-এর মতো দেখতে ‘বেদিং ক্যাপ’ বা চান করার টুপির আসল কাজ ছিল মাথায় যা-তে বেশি রোদ না লাগে, তার ব্যবস্থা করা৷ ফুল-বডি বা পুরো শরীর ঢাকার এ ধরনের সুইমসুট পুরুষ ও মহিলা, সকলের জন্যেই তৈরি হতো – সালটা ধরুন ১৯১০, যেমন এই ছবিতে৷
ছবি: ullstein bild - Zander & Labisch
উচ্ছল বিশের দশক
সুইমওয়্যার অবশেষে আধুনিক হয় বিশের দশকে৷ ছোটো বেল্ট, সোনালি বোতাম, চুমকি ইত্যাদি লাগানো সুইমসুটকে মহিলাদের মনপসন্দ করে তোলা হয়৷ সেই আমলে সুইমসুট শুধুমাত্র ছোট সাইজগুলোয় পাওয়া যেত৷
ছবি: Getty Images
জলপরী
এস্থার উইলিয়াম্স ছিলেন অলিম্পিক সাঁতারু৷ একটি ‘ওয়াটার শো’-তে অংশগ্রহণ করা সময় তিনি হলিউড এজেন্টদের নজরে পড়েন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দরুণ ১৯৪০ সালের অলিম্পিক বাতিল করা হয়৷ কিন্তু এস্থারের রোজগারপাতির অভাব হয়নি, কেননা তিনি তখন চিত্রতারকা৷ ‘নেপচুন্স ডটার’ ছবিতে তিনি ছিলেন বেদিং বিউটি৷ পরে হলিউডের সবচেয়ে ধনি অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন হয়েছিলেন৷
ছবি: picture alliance/United Archives/IFTN
মেরিলিন মনরো
সুইমসুট পরিহিতা মেরিলিন: এর বেশি বলার প্রয়োজন পড়ে না৷ চল্লিশের দশকে তিনি মডেল হিসেবেই কাজ করেছেন, অভিনেত্রী হিসেবে নাম করেন তার অনেক পরে৷ ছবিতে তিনি প্রখ্যাত পিরেলি বর্ষপঞ্জীতে ক্যালেন্ডার গার্ল হিসেবে পোজ দিচ্ছেন৷ লক্ষণীয়: ওয়ান-পিস সুইমসুট৷
ছবি: picture alliance/Heritage Images
মিস জার্মানি
পঞ্চাশের দশকে জার্মানির সেরা সুন্দরী বাছা হতো বিকিনি ছাড়াই৷ অপরদিকে যে সব মহিলার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে, তাঁদের প্রতিযোগিতায় যোগদান করতে দেওয়া হতো না৷ তবে হাইহিল জুতো থেকে আঁটসাঁট সুইমসুট, বাকি সবই চলত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে দৃশ্য না থাকলেই নয়
ষাটের দশকে নায়িকাকে একবার না একবার সুইমসুটে দেখা দিতেই হবে৷ সেই সঙ্গে মাথায় বেদিং ক্যাপ: এগুলো ছিল রবারের, যা-তে চুল না ভেজে৷ ছবিতে জিনা লোলোব্রিজিডা-কে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বন্ড-খ্যাত সন কনারি-র সঙ্গে৷
ছবি: picture alliance/United Archives/IFTN
বে-ওয়াচ
সুইমওয়্যারের ইতিহাসে ‘বে-ওয়াচ’ ইতিহাস সৃষ্টি করে গিয়েছে৷ বে-ওয়াচ-এর মহিলারা অত্যন্ত হাই-কাট সুইমসুট পরে নব্বই-এর দশকে সারা দুনিয়ায় সেই ফ্যাশন চালু করে দেন – বিশেষ করে অভিনেত্রী প্যামেলা অ্যান্ডারসন৷ সিরিয়ালটি প্রদর্শিত হয় ১৪৪টি দেশে৷
ছবি: Getty Images
কম-বেশি
সুইমসুট ডিজাইন করার সময় ফ্যাশন ডিজাইনারদের সবার আগে ভাবতে হয়: কতটা রাখব আর কতটা ফেলব৷ বিকিনি-র চেয়ে সুইমসুটে বেশি লজ্জা ঢাকার কথা, কিন্তু হালফ্যাশনে সে সীমা সব সময় বজায় থাকে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G.I. Rothstein
আমরা সকলে তো এক নই
পোষা কুকুরকে নিয়ে জলে নামতে কার না ইচ্ছে করে! এই মহিলাও নেমেছেন৷ অপরদিকে বড় সাইজের সুইমসুট তৈরি করা ডিজাইনারদের পক্ষে একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ অনেক ক্ষেত্রে দু’পরত কাপড় দিয়ে জমি শক্ত করতে হয়৷ আগে ফ্যাশন, পরে সাইজ, এই হল নীতি৷ সুইমসুটের ক্ষেত্রেও তাই৷