বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় শুক্রবার একটি ট্রাক থেকে ১৮ অভিবাসীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে দেশটির পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
ফেলে যাওয়া ট্রাকটি থেকে ২২ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার৷
বুলগেরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, রাজধানী সোফিয়া ফেলে যাওয়া ট্রাকটিতে মোট ৪০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন৷ ট্রাকটিতে কাঠ বোঝাই করা ছিল এবং এই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা সবাই কাঠের নিচে লুকিয়ে ছিলেন৷ প্রচণ্ড ঠান্ডায় এবং অক্সিজেনের অভাবে হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, অভিবাসনপ্রত্যাশীরা সবাই আফগানিস্তানের নাগরিক বলে জানায় বুলগেরিয়া সরকার৷
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়া কতটা নিরাপদ?
02:37
দেশটির ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিভ সার্ভাস জানায়, তুরস্ক অবৈধপথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বুলগেরিয়া প্রবেশ করেছিলেন এই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ যাত্রাপথে দুইদিন ধরে তারা ট্রাকের কাঠের নিচে লুকিয়ে ছিলেন৷
উল্লেখ্যে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বুলগেরিয়াকে ইউরোপে পৌঁছানোর অন্যতম যাত্রপথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে৷
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বুলগেরিয়ার পুলিশ দেশটির সীমান্তে এক লাখ ৬৪ হাজার প্রবেশ ঠেকিয়েছে৷ ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার৷
আরআর/এডিকে (এএফপি, এপি রয়টার্স)
কাতারে কাজ করা অভিবাসী শ্রমিকদের গল্প
২০১০ সালে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে কাতারের নাম ঘোষণা করা হয়৷ এরপর সেখানকার অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করেছেন অনেক অভিবাসী শ্রমিক৷ কেমন ছিল তাদের জীবন?
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
নতুন সাত স্টেডিয়াম তৈরি
২০১০ সালে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে কাতারের নাম ঘোষণা করা হয়৷ এরপর সেখানে নতুন সাতটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে৷ একটি সংস্কার করা হয়েছে৷ এছাড়া নতুন আরও অনেক অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: JOHN SIBLEY/REUTERS
অভিবাসী শ্রমিক
কাতারের ২৮ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিক৷ সাধারণত ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ফিলিপাইন্স, কেনিয়া ও উগান্ডাসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে শ্রমিকরা সেদেশে যান কাজ করতে৷ তাদের আশা থাকে দেশের চেয়ে বেশি টাকা আয় করবেন সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কাতারের সমালোচনা
অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু এবং তাদের টাকা না দেয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে কাতারের বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে৷ গত কয়েক বছরে কাতার আইন সংস্কার করেছে এবং অভিযুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে৷ ক্ষতিপূরণ হিসেবেও শ্রমিকদের অনেক টাকা দিয়েছে৷ তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, পরিবর্তন সামান্য হয়েছে এবং অনেক দেরিতে এসেছে৷
ছবি: Igor Kralj/PIXSELL/picture alliance
শ্রাবনের বাবা মরে গেছে
ভারতের তেলেঙ্গানা থেকে কাতারে কাজ করতে গিয়েছিলেন শ্রাবন ও তার বাবা রমেশ৷ একদিন কাজ করতে গিয়ে বুকে ব্যথা উঠলে বাবা মারা যান৷ তার মৃতদেহ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর আর কাতার যাননি শ্রাবন৷ তার অভিযোগ, তাদের অনেক ঘণ্টা কাজ করতে হতো৷ এবং ওভারটাইম হিসেবে অল্প টাকা দেয়া হত৷ তার বাবা ভোর তিনটায় কাজ শুরু করে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করতো বলে জানান শ্রাবন৷ ছবিতে মায়ের সঙ্গে শ্রাবনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: NOAH SEELAM/AFP
আটশ টাকা নিয়ে ফেরেন বাংলাদেশের আপন মীর
সাত লাখ টাকা খরচ করে শ্রীপুরের আপন মীর ২০১৬ সালে কাতার গিয়েছিলেন৷ চার বছর পর মাত্র আটশ টাকা নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি৷ খলিফ ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম সংস্কারে কাজ করেছেন মীর৷ ফোরম্যান তাদের টাকা তুলে পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি৷ এছাড়া বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ২০২০ সালে গ্রেপ্তার করার পর তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
ঋণে জর্জরিত
বাবা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে কাতার গিয়েছিলেন মীর৷ কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা নিয়ে ফিরতে না পারায় ঋণ শোধ করতে পারেননি৷ অথচ কাতারে প্রচণ্ড গরমে দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি পরিশ্রম করেছেন৷ ‘‘রক্ত ঘাম হয়ে যেত,’’ বলে জানান তিনি৷ অনেকসময় খাবার টাকা থাকতো না৷ আর ভাড়া দিতে না পারায় বেঞ্চেও তাকে ঘুমাতে হয়েছে বলে জানান মীর৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
স্বপ্ন পূরণ হয়নি
এলাকায় একটা ভালো ঘর তৈরির স্বপ্ন নিয়ে কাতার গিয়েছিলেন মীর৷ আশা ছিল পরিবারের জীবনযাত্রার মান বাড়বে, সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়াবেন৷ কিন্তু তা পূরণ হয়নি৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
নতুন মোটরসাইকেল কিনেছেন
বাংলাদেশেরই আরেক অভিবাসী শ্রমিক আবু ইউসুফ৷ এটা তার প্রকৃত নাম নয়৷ কারণ আগামী মাসে আবার কাতার যাবেন তিনি৷ কাতারে তিনি মাসে ৭০ হাজার টাকা পেতেন৷ সেই টাকা জমিয়ে এলাকায় দুই তলা বাড়ি করেছেন৷ নতুন একটি মোটরসাইকেলও কিনেছেন৷ কাতারিরা তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে এবং তাকে অনেক সহায়তা করেছে বলেও জানান৷
ছবি: KARIM JAAFAR/AFP/Getty Images
কাতারে কাজ করতে গিয়ে দৃষ্টিশক্তি হারান শেখ
দোহায় ভবন নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে বাবু শেখ একদিন ১৪ ফুট উঁচু থেকে পড়ে যান৷ এরপর চারমাস কোমাসহ ১৮ মাস হাসপাতালে ছিলেন৷ পুরো চিকিৎসা তার পরিবারকে করতে হয়েছে৷ কাতার কর্তৃপক্ষ তার মালিকের বিচার করলেও তিনি কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি৷ কোমা থেকে ফিরে তিনি আর কিছু দেখতে পান না৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
‘ছেলে কি দেখতে আমার মতো হয়েছে?’
শেখের ছেলের বয়স পাঁচ৷ এখন বিকাল বেলায় ছেলে তাকে হাত ধরে গ্রামের বাজারে নিয়ে যায়৷ এই ছেলের জন্মের সময় কাতারে ছিলেন শেখ৷ ফলে ছেলেকে কোনোদিন দেখা হয়নি তার৷ ‘‘ছেলে কি দেখতে আমার মতো হয়েছে’ প্রশ্ন শেখের৷ তিনি এমন জীবন থেকে মুক্তি চান৷ পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন শেখ৷ তাই রাতে ঘুম হয় না বলে জানান তিনি৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
ফ্রি খাবার পেতে জেলে যেতেন
২০১২ সালে কাতার যান ফিলিপাইন্সের জোভানি কারিও৷ ২০১৮ সালে মালিক বেতন দেয়া বন্ধ করে দিলে জেলে বিনামূল্যে খাবার পাওয়ার আশায় ইচ্ছে করে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন৷ তিনি জানান, ফিলিপিনো শ্রমিকদের এটা কৌশল ছিল৷ যখই ক্ষুধা লাগতো তখন পুলিশকে মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজ দেখিয়ে জেলে যেতেন৷ ছয় বছর পর্যন্ত বেতন পেয়েছেন৷ ২০১৮ সালে মালিক দেউলিয়া হয়ে গেলে কাতারের শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে তিন মাসের বেতন পান কারিও৷ এরপর দেশে ফিরে যান৷