1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফিচার অফ দ্য উইক

আশীষ চক্রবর্ত্তী৪ জানুয়ারি ২০১৩

আজহারুল ইসলাম বুলবুলের কাছে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের গান খুব প্রিয়৷ তাই প্রবাসজীবনে ইউটিউবে গড়েছেন নিজের একটা জগত, নাম দিয়েছেন ‘বুলবুল কি পসন্দ’৷

মা রেডিওতে শুনছেন ‘বাঁশি বাজে ওই দূরে চেনা কি অচেনা সুরে...'৷ শুয়ে শুয়ে সন্তানও শুনছে৷ শুনতে শুনতেই ঘুম৷

৪৮ বছর পর সেই ছেলেটির জার্মানিতে ঘুম ভাঙায় বাংলাদেশের একজনের ফোন৷ ভদ্রলোক বলছেন, ‘‘ইউটিউবে ‘বাঁশি বাজে' গানটি দিয়েছেন বলে অনেক ধন্যবাদ৷ সেই ছোটবেলায় শোনা গান, ইউটিউবে শুনে মনটা ভরে গেল!''

ষাটের দশকে নারায়ণগঞ্জে যে ছেলেটি রেডিওতে গান শুনতো, সাইকেল চালাতে চালাতে সেই গান গাইতে গাইতে ঘুরে বেড়াতো এ পাড়া ও পাড়া, সেই আজহারুল ইসলাম বুলবুল জার্মানিতে প্রবাসজীবন কাটিয়ে ফেলেছেন প্রায় ৩২ বছর৷ ফ্রাংকফুর্টে আসার পর ব্যস্ততার মাঝেও গানকে ছাড়েননি, দেশের প্রতি টান কমেনি একটুও৷ শুরুর দিকে বন্ধুদের নিয়ে নেমে পড়েছিলেন পত্রিকা প্রকাশের কাজে৷ তখন ছাপানো সম্ভব ছিল না বলে হাতে লিখেই বের করেছিলেন ‘মাসিক আজকাল'৷ নানা সমস্যার কারণে পত্রিকাটি আর চালিয়ে যেতে পারেননি৷

অবসর সময় কাটতো গান শুনে৷ বাংলাদেশের গান, ভারতীয় বাংলা, হিন্দি, গজল সবই তাঁর পছন্দ৷ দিনে দিনে ফ্রাংকফুর্টের বাড়িতেই গড়ে ওঠে বেশ বড় এক সংগ্রহশালা, ছয় বছর আগ পর্যন্ত যা ছিল শুধু নিজের অবসর বিনোদনেরই অবলম্বন৷ কিন্তু নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ছোট বোন এবং প্রিয় ‘নিয়াজুল ভাই'-এর কারণে এক সময় মনে হলো, এতকাল ধরে আগলে রাখা পছন্দের জগতে দেশ-বিদেশের সব সংগীতপ্রেমীদেরও আমন্ত্রণ জানানো উচিত৷ তিন বছর আগে সেই ভাবনা থেকেই শুরু করেন ইউটিউবে ‘বুলবুল কি পসন্দ' নামে অ্যাকাউন্ট খুলে গান জমানো৷ অ্যাকাউন্টে সঞ্চয় এখন আটশ ছাড়িয়েছে! বাংলাদেশের পুরোনো দিনের দুষ্প্রাপ্য কিছু গান আছে সেখানে৷ চাইলেই যেমন ‘এত সুখ সইবো কেমন করে' শুনতে পারবেন, তেমনি মনটাকে স্মৃতিমেদুর কোনো দিনে নিয়ে যেতে পারবেন, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল' শুনে৷ 

সব রুচির গানই আছে ‘বুলবুল কি পসন্দ'-এ৷ বাংলাদেশের মা-বাবাদের কাছে শিশুসন্তানের জন্য চিরকালীন পছন্দ ‘খোকনসোনা বলি শোনো' আছে, আছে হুমায়ূন আহমদের মৃত্যুর পর সাড়া জাগানো, ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বরষায়'-ও৷ ছোটবেলায় বুলবুল পড়েছিলেন ‘সফদার ডাক্তার মাথাভরা টাক তার', এ যুগের  ছোট্টসোনাদেরও তাই সেটা উপভোগ করতে দিয়ে দিয়েছেন ছড়া গান হিসেবে৷  

বাংলাদেশের গান, ভারতীয় বাংলা, হিন্দি, গজল সবই বুলবুলের পছন্দছবি: Azharul Islam Bulbul

নিজের পছন্দের জগতে হাস্যরসাত্মক গান এবং কৌতুকও রেখেছেন বুলবুল৷ বাংলাদেশ বিমানের সেবার মান নিয়ে কটাক্ষ, বরিশালের ভাষায় প্রেমপত্র, ‘সিলেটি বনাম বরিশাইল্যা' এবং ‘বরিশাইল্যা বনাম নোয়াখাইল্যা'-র লড়াই যে কোনো শ্রোতাকেই আনন্দ দেবে৷

বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানের অনেক শিল্পীর গান আছে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলটিতে৷ তারপরও ‘বুলবুল কি পসন্দ'-কে শুধু গানের সংগ্রহশালা ভাবলে ভুল হবে৷ বাংলা এবং হিন্দি ছবিও আছে সেখানে৷ আছে জনসচেতনতা বাড়ানোর কিছু উদ্যোগ৷ ‘বুলবুল কি পসন্দ'-এ ঢুকলে জানতে পারবেন, ‘জাল টাকা চেনার উপায়', জানা যাবে কাবা শরীফ সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্যও৷ দেখতে পাবেন বর্ণবাদ নিয়ে জার্মান শর্ট ফিল্ম ‘শোয়ার্সফারার'৷ কিছু কবিতা আবৃত্তিও আছে৷ রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে নিয়ে তসলিমা নাসরিনের লেখা কবিতার আবৃত্তি অনেকেরই হয়ত ভালো লাগবে৷

তা এত কিছু, বিশেষ করে এত গান কিভাবে সংগ্রহ করলেন? বুলবুল জানালেন, ‘‘জার্মানিতে আসার সময় প্রচুর ক্যাসেট সঙ্গে এনেছিলাম৷ তাছাড়া বাংলাদেশে যখনই যেতাম ফেরার সময় পুরোনো দিনের ক্যাসেট নিয়ে আসতাম৷ পরিচিত কেউ জার্মানিতে আসবে জানলে বলতাম, আমার জন্য কিছু পুরোনো দিনের গান নিয়ে আসবেন৷ এভাবেই গানগুলো সংগ্রহ করেছি৷''

Week 1/13 Feature of the Week: Bulbul ki pasand : what Bangladesh missing now... - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

২০১০ সালে সেই সংগ্রহশালা থেকেই গান ইউটিউবে তোলা শুরু৷ শুরুতে যাঁর কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েছিলেন সেই নিয়াজুল হকও এখন ‘বুলবুল কি পসন্দ'-এ মুগ্ধ৷ মুগ্ধতার কারণ জানাতে গিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বললেন, ‘‘যেসব গান আমরা ৩০-৪০ বছর আগে শুনতাম, দুষ্প্রাপ্য সেই গানগুলো উনি আপলোড করেছেন৷''

বাংলাদেশে তো ইউটিউব বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ৷ তাতে কি সমস্যা হচ্ছে না? উপসচিব নিয়াজুল খুব হতাশা নিয়েই বললেন, ‘‘হ্যাঁ, এ কারণে আমরা অনেকেই এখন ভালো ভালো গান শোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি৷ ''

নিয়াজুল হকের মতো অনেকেই তাঁর উদ্যোগটার সঙ্গে যে এভাবে আছেন, এটাই বুলবুলের আনন্দ৷ তবে ছোট্ট একটা দুঃখও আছে৷ খুব কষ্ট করে যে গানগুলো সংগ্রহ করে ইউটিউবে দিয়েছেন, অনেকে তার জন্য তাঁকে সামান্যতম স্বীকৃতিটুকুও দেন না বলেই দুঃখ৷ বড় আক্ষেপ নিয়েই বলছিলেন, ‘‘একসময় বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়েও টু-ইন ওয়ান নিয়ে গিয়েছি৷ গান রেকর্ড করে এনেছি নিজে কষ্ট করে৷ আপলোড করার পর দেখি সেই গানগুলো অনেকে ব্যবহার করেছেন, কিন্তু আমার নামটাও কোথাও লিখেননি৷  খারাপ লেগেছে৷ মনে হয়েছে একটু লিখলে কী হতো, এ জন্য তো তাঁর পয়সা খরচ হতো না!''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ