সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে হত্যার চক্রান্তের দায়ে এক ইরাকিকে গ্রেপ্তার করলো এফবিআই। ইরাক-যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল ওই ব্যক্তি।
বিজ্ঞাপন
২০০৩ সালে সেসময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ইরাক-যুদ্ধ শুরু করেন। প্রচুর মানুষ মারা যান। ইরাকের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। তার প্রতিশোধ নিতে জর্জ বুশকে হত্যার ছক কষেছিল এক ইরাকি। অ্যামেরিকায় আশ্রয় চেয়েছিল সে।
ওহিওর আদালতে এফবিআই একটি মামলা দায়ের করেছে। মঙ্গলবার ওই ইরাকিকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ৩০ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ ডলার জরিমানা হতে পারে।
এফবিআইয়ের বক্তব্য
৫২ বছর বয়সি ওই ইরাকি কলম্বাসের বাসিন্দা। সে এফবিআইয়ের এক চরকে জানায়, মেক্সিকো থেকে চারজন ইরাকিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে হবে। তারা হত্যায় সাহায্য করবে। ওই ইরাকি এফবিআইয়ের চরকে জানায়, তারা সাবেক প্রেসিডেন্টকে হত্যা করতে চায়। কারণ, তারা মনে করে, বুশই প্রচুর নিরাপরাধ ইরাকির হত্যার জন্য দায়ী। তাছাড়া পুরো ইরাক ওই যুদ্ধের ফলে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
ইরাকে পঙ্গুদের একটি গ্রাম
যুদ্ধের পর পড়ে থাকা স্থলমাইনের আঘাতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়েছেন ইরাকের জুরফ আল-মিল গ্রামের শতশত বাসিন্দা৷ ফলে গ্রামটি এখন পঙ্গুদের গ্রাম নামে পরিচিত৷
ছবি: Reuters/E. Al Sudani
যুদ্ধের পরিণতি
১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত যুদ্ধে লিপ্ত ছিল ইরাক আর ইরান৷ সেই সময় হতাহতের ঘটনা তো ঘটেছেই৷ তবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে৷ হারাতে হয়েছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ৷
ছবি: Reuters/E. Al Sudani
পরিচিতি
ইরাকের বসরা শহরের পূর্বের একটি গ্রাম জুরফ আল-মিল৷ তবে সেখানে অঙ্গপ্রত্যঙ্গহীন মানুষের সংখ্যা এত বেশি যে, স্থানীয়ভাবে সেটি ‘আল বিট্রান’ নামে পরিচিত পেয়েছে৷ আল বিট্রান মানে হচ্ছে পঙ্গু৷
ছবি: Reuters/E. Al Sudani
কারণ স্থলমাইন
যুদ্ধের সময় ইরানিরা বিমান থেকে ঐ গ্রামে বোমাবর্ষণ করলে অনেকে পালিয়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলেন৷ পরে ফিরে আসেন৷ তবে তাঁরা জানতেন না যে, তাঁদের গ্রামের আশেপাশে স্থলমাইন পোঁতা আছে৷ ফলে অনেক গ্রামবাসী মেষ চড়াতে গিয়ে এসব মাইনের বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন৷ ছবিতে এক পঙ্গু দম্পতিকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/E. Al Sudani
সামরিক সরঞ্জামের অংশবিশেষ
যুদ্ধের পর গ্রামবাসীরা তাঁদের এলাকায় বেশ কিছু সামরিক কামান, বন্দুক ইত্যাদি পড়ে থাকতে দেখেন৷ ১৯৯১ সালে কুয়েত দখল করার কারণে ইরাকের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা নেমে এলে দারিদ্র্য দেখা দেয়৷ তখন গ্রামবাসীরা পড়ে থাকা ঐ সামরিক সরঞ্জামাদির অংশবিশেষ সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করে জীবন চালাতেন৷ কিন্তু তা করতে গিয়েও অনেকে হাত-পা হারান৷
ছবি: Reuters/E. Al Sudani
আন্তর্জাতিক সহায়তা
দক্ষিণ ইরাকে পঙ্গুদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সহায়তায় ১৯৯৫ সালে সেখানে কৃত্রিম হাত-পা তৈরির একটি ওয়ার্কশপ চালু হয়৷ সেখানে আল বিট্রান গ্রামের পঙ্গু ছাড়াও অন্যান্য কারণে পঙ্গু হওয়াদের জন্যও কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বানানো হয়৷
ছবি: Reuters/E. Al Sudani
মাইন সরানো শুরু হয়েছে
অবশেষে শিয়া একটি আধা সামরিক বাহিনী বুলডোজার ও অন্যান্য বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আল বিট্রানের আশেপাশের এলাকা মাইনমুক্ত করার কাজ শুরু করেছে৷
ছবি: Reuters/E. Al Sudani
6 ছবি1 | 6
বুশ প্রশাসন সেসময় জানিয়েছিল, ইরাকের হাতে এমন অস্ত্র আছে, যা দিয়ে ধ্বংসলীলা চালানো সম্ভব। পরে দেখা গেছে, ওরকম কোনো অস্ত্র ইরাকের হাতে ছিল না।
এফবিআইয়ের অভিযোগ, ওই চক্রান্তকারী আইএসের সঙ্গে যুক্ত। সে ডালাসে গিয়ে বুশ যেখানে থাকেন, সেই জায়গাটি দেখে এসেছিল। কীভাবে বন্দুক, সরকারি ইউনিফর্ম ও গাড়ি জোগাড় করা যাবে তা নিয়েও সে এফবিআইয়ের চরের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
ওই ইরাকি ২০২০ সালে ভিজিটার্স ভিসা নিয়ে অ্যামেরিকায় আসে। মে মাসে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করে। এই আবেদনের পরেই এফবিআইয়ের চর তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।