1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যভারত

বুস্টার ডোজের অপেক্ষায় ভারত

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড়
২৪ ডিসেম্বর ২০২১

বুস্টার ডোজ দেয়া এখনো শুরু হয়নি ভারতে৷ আলোচনা চলছে৷ বিশেষজ্ঞ কমিটি খতিয়ে দেখছে বিষয়টি৷

ছবি: Manjunath Kiran/AFP

ভারতের সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, দেশের সব মানুষকে আগে করোনার টিকা দেয়া শেষ করা, নাকি, এখনই বুস্টার ডোজ শুরু করে দেয়া? বিশেষ করে বয়স্ক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং গুরুতর অসুখে যারা আক্রান্ত, তাদের বুস্টার ডোজ দেয়া হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে৷ এতদিন পর্যন্ত সরকারের এই দ্বিধা ছিল না৷ তারা যতটা সম্ভব বেশি মানুষকে দ্রুত টিকা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছিল৷ ওমিক্রন সব হিসাব উল্টে দিয়েছে

ভারতে এখন করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৮৩ কোটিরও বেশি মানুষ৷ আর দুই নম্বর ডোজ পেয়েছেন ৫৬ কোটিরও বেশি মানুষ৷ সব মিলিয়ে ১৩৯ কোটি টিকা দেয়া হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার সংখ্যাটা ১৪০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে৷ কারণ, দিনে ৭০ লাখের বেশি টিকা দেয়া হচ্ছে৷ ১৩০ কোটির বিশাল দেশে সব মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার কাজ এক বিশাল কর্মযজ্ঞ৷ আপাতত সেই টিকা দেয়ার কাজে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই৷ টিকার অভাবও নেই৷

ভারতে এখনো বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হয়নি৷ দিন পাঁচেক আগে সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, তারা বুস্টার ডোজ দেয়ার চেয়ে আগে দেশের সব মানুষকে টিকা দেয়ার কাজকে অগ্রাধিকার দিতে চায়৷  কিন্তু সরকারের সব হিসাব উল্টে দিতে পারে ওমিক্রন ভাইরাস৷ করোনা ভাইরাসের এই নতুন প্রজাতি ইতিমধ্যেই ভারতে ঢুকে গেছে৷ দিল্লি, মুম্বই, কর্ণাটক, গুজরাট, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্যে ওমিক্রন রোগীর খোঁজ মিলেছে৷ যুক্তরাজ্য, জার্মানি সহ পশ্চিমা দেশগুলিতে করোনা আবার যেভাবে ছড়াচ্ছে, তারপর ভারতেও আতঙ্ক বাড়ছে৷ বুস্টার ডোজ দেয়ার প্রবল দাবি উঠেছে৷ বেশ কিছু খ্যাতনামা চিকিৎসক এই দাবি করেছেন৷ তাই সরকারও নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে৷ বুস্টার ডোজ দেয়া বা না দেয়া নিয়ে নতুন করে বিচার বিবেচনা চলছে৷

কেন বুস্টার ডোজের দবি উঠছে?

ভারতে বুস্টার ডোজ দেয়ার দাবি মূলত করছেন চিকিৎসকরা৷ দেশজুড়ে চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের মতে, দুইটি টিকার কার্যকারিতা ছয় মাসের পর থেকে কমতে থাকে৷ সেজন্য বুস্টার ডোজ প্রয়োজন৷ বিশেষ করে ওমিক্রনকে আটকাতে৷ এইমসের সাবেক চিকিৎসক এবং বর্তমানে পিএসআরআই-র চেয়ারম্যান জি সি খিলানি বলেছেন, ‘‘ইসরায়েল, ক্যানাডা, অ্যামেরিকায় গবেষণায় দেখা গেছে, ছয় মাস পর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যায়৷ তাই বুস্টার ডোজ দেয়া খুবই জরুরি৷ বিশেষ করে বেশি বয়সি, স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্য রোগ যাদের আছে, তাদের আগে বুস্টার ডোজ দেয়া উচিত৷’’

আইএলবিএস হাসপাতালের ডিরেক্টর এস কে সারিন এএনআই-কে বলেছেন, আমার মতে, বুস্টার ডোজ দিতেই হবে৷ কারণ, তিন থেকে ছয় মাস পর থেকে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যায়৷ বুস্টর বা তৃতীয় ডোজ নেয়া থাকলে করোনা মারত্মক আকার নিতে পারবে না৷ হাসপাতালেও ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন কমবে৷

দেশজুড়ে অন্য যারা বুস্টার ডোজ দেয়ার পক্ষে, তাদের যুক্তি মোটামুটি একই৷ বুধবারের হিসাব দেশে এখন ২১৩ জন ওমিক্রন ভাইরাসে আক্রান্ত৷ ডেল্টার থেকে ওমিক্রন অনেক দ্রুত ছড়ায়৷ ডেল্টার তাণ্ডব দেখেছে দিল্লি সহ গোটা ভারত৷ সেই সময়ের কথা মনে পড়লে এখনো ঠান্ডা স্রোত শরীরে বইতে থাকে৷ আতঙ্ক ও মৃত্যুমিছিলের ছবি সামনে চলে আসে৷ করোনায় কেউ আক্রান্ত হলে  একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করাও ছিল তখন বিশ্বের কঠিনতম কাজ৷

ভারতে যখন করোনা প্রথম আসে, তখন তার মোকাবিলায় শিথিলতা ছিল৷ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখিয়ে দিয়েছিল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বেহাল দশা৷ গঙ্গা দিয়ে ভেসে আসা মৃতদেহের সারি৷ ব্রিজের উপর থেকে নদীতে মৃতদেহ ফেলার ছবি৷ শ্মশান, কবরস্থানে দীর্ঘ লাইন৷ আর সেই অবস্থা হোক তা কেউই চান না৷ সেকারণেই বুস্টার ডোজ নিতে আগ্রহীদের সংখ্যা বাড়ছে৷ মানুষ জানতে চাইছেন, কবে শুরু হবে এই বুস্টার ডোজ দেয়া৷ জাতীয় টিভি-তে বুস্টার ডোজ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলেছবি: privat

নৈতিক দ্বন্দ্ব

এ অবস্থায় শুরু হয়েছে ওই নৈতিক দ্বন্দ্ব৷ প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের মতো মরালিস্টরা এরকম পরিস্থিতিতে বলবেন, আগে সব মানুষকে টিকা দেয়া হোক৷ তারপর বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হোক৷ এটাই নৈতিকতা৷

সন্দেহ নেই, আদর্শ নৈতিক অবস্থান এটা৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাতে বেশি দেরি হয়ে যাবে না তো? করোনায় প্রচুর চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীকে হারিয়েছি আমরা৷ বহু প্রবীণ মানুষ ও কো-মর্বিডিটি থাকা মানুষকে কেড়ে নিয়েছে করোনা৷ ওমিক্রন যদি ছড়াতে থাকে, তাহলে তো আবার সেই ছবিটা দেখা যেতে পারে৷ সকলকে টিকা দিয়ে তারপর বুস্টার ডোজ শুরু করলে দেরি হয়ে যাবে৷ তার চেয়ে দুটোই একসঙ্গে চলতে পারে৷ যাদের এখনো টিকা দেয়া বাকি, তাদের তা দেয়ার কাজ চলুক৷ সেই সঙ্গে বুস্টার ডোজ দেয়াও শুরু হোক৷ তাতে যারা টিকা পাননি, তাদের টিকা দেয়ার কাজে সামান্য দেরি হতে পারে মাত্র৷

সরকার যা বলছে

নীতি আয়োগের সদস্য(স্বাস্থ্য) ভি কে পাল বলেছেন, ‘‘বুস্টার ডোজ দেয়া হবে কিনা, তা বিজ্ঞানসম্মতভাবে ঠিক হবে৷ ঠিক করবেন বিশেষজ্ঞরা৷ এখন যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন আছে৷ আমাদের বিজ্ঞানীরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন৷ তাদের উপর আস্থা রাখুন৷ তারা যথেষ্ট দক্ষ৷’’

তাই এখন অপেক্ষায় আছে ভারত৷ কবে বুস্টার ডোজ শুরু হয় তার জন্য অপেক্ষা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ