বাংলাদেশে চলতি মাসেই করোনার বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হবে৷ প্রথম পর্যায়ে এই বুস্টার ডোজ পাবেন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা৷ তবে গোপনে এরইমধ্যে কেউ কেউ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এরকম কিছু হলেও তা বিচ্ছিন্নভাবে হয়েছে৷
যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি তারা ছাড়াও সম্মুখ সারির করোনা যোদ্ধারাও এই বুস্টার ডোজ পাবেন বলে জানা গেছে৷
বাংলাদেশে এপর্যন্ত ছয় কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ৯৪০ জন নারী ও পুরুষ করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন৷ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন চার কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪৯ জন৷ তবে এর বাইরে এপর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭৫ জন শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ পেয়েছেন৷ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন দুই লাখ ৬১ হাজার ৩৮৪ জন৷
সরকার মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চায়৷ এই হিসাবে ১২ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে আগামী জুনের মধ্যে টিকা দেয়ার কথা৷ এর মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ৫২ ভাগ মানুষ আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন প্রায় ৩৫ শতাংশ৷ এখন টিকার মজুদ আছে চার কোটি৷
এই টিকা থেকেই বুস্টার ডোজ দেয়া হবে৷ ষাটোর্ধ্ব কতভাগ মানুষ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন তার বিস্তারিত হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন তৈরি করছে ৷ দুই ডোজের পরই বুস্টার ডোজের প্রশ্ন আসবে৷ কিন্তু বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু না হলেও এরইমধ্যে কেউ কেউ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷
টিকার সঙ্গে যুক্ত একজন চিকিৎসক দাবি করেছেন বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু না হলেও কেউ কেউ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন৷ যদিও তার কোনো অফিসিয়াল প্রমাণ নেই৷
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা
এটা কীভাবে সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন,"টিকার গড়ে শতকরা ১০ ভাগ বাতিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ সেভাবেই টিকার হিসাব করা হয়৷ যেমন ফাইজারের একটি ভায়েল-এ সাতটি টিকা থাকে৷ সেখানে ছয়টি হিসাব করা হয়৷ একটি টিকা ওয়েস্টেজ বিবেচনা করা হয়৷ কিন্ত আসলে এত ওয়েস্টেজ হয় না৷ আর থেকে গেলে সেই টিকা ফেরতও দিতে হয় না৷ এই থেকে যাওয়া টিকার একটি বড় অংশ এরইমধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বুস্টার ডোজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ যদিও এর কোনো অফিসিয়াল ডকুমেন্ট নাই৷ আর অফিসিয়ালি বাংলাদেশে এখনো বুস্টার ডোজ শুরু হয়নি৷”
তিনি আরো জানান,"দেখা গেছে টিকা নেয়ার ছয়-সাত মাসের মধ্যে কারো কারো অ্যান্টিবডি নিল হয়ে গেছে৷ আমার পরিচিত ষাটোর্ধ্ব এক চিকিৎসক এই সমস্যা নিয়ে আমার কাছে এসেছেন৷ যেহেতু আমার কাছে টিকা ওয়েস্টেজ হিসেবে ছিলো আমি তাকে একটা বুস্টার ডোজ দিয়ে দিয়েছি৷”
তবে এই ধরনের ঘটনা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং তাদের ঘনিষ্ঠ জনের মধ্যেই ঘটেছে৷ এর বাইরের লোক পায়নি৷ তিনি বলেন,"প্রথমে অনেকে ভয় পেয়েছেন,পরে ভয় কেটে গেছে৷ আর তাতে কারুর ক্ষতিও হয়নি৷ কারণ ওই টিকা হিসাবের বাইরে৷ আর এই ডোজের কোনো সার্টিফিকেটও নেই৷”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী মনে করেন,"সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করার আগে বুস্টার ডোজ শুরু হলে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হবে৷ তাই সবাইকে আগে টিকার আওতায় আনা প্রয়োজন ৷ টিকার সংকট না থাকলেও এখন টিকা দেয়ার ধীর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷”
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বুস্টার ডোজ চলতি মাসে শুরুর কথা থাকলেও সরকারের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে, বুস্টার ডোজ ফ্রি দেয়া হবে, না অর্থের বিনিময়ে দেয়া হবে ৷ ফ্রি দেয়া হলে সরকারের অনেক অর্থের প্রয়োজন হবে৷ কারণ শেষ পর্যন্ত সবাইকেই বুস্টার ডোজ দিতে হবে৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান," আমরা এখন বুস্টার ডোজ দেয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ এই মাসেই শুরু করব তবে কবে থেকে তার তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি৷”
তিনি জানান, ষাটোর্ধ জনগোষ্ঠীর ৬০ ভাগ এখন পর্যন্ত টিকা পেয়েছেন৷ তাদের মধ্যে যাদের দুই ডোজ নেয়ার পর ছয় মাস পার হয়েছে তারা বুস্টার ডোজ পাবেন৷ বাংলাদেশের সর্বশেষ আদম শুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬.১ ভাগ ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী৷
শুরু হওয়ার আগেই বুস্টার ডোজ নেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন,"এধরনের কিছু হয়ে থাকলে তা বিচ্ছিন্নভাবে হয়েছে৷ তবে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি৷ আমরা বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করছি৷”
আর এই ঘটনাকে চরম অনৈতিক বলে অভিহিত করেছেন ডা. লেনিন চৌধুরী৷
ঢাকায় শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়া শুরু
স্কুল-কলেজের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের করোনার বায়োনটেক-ফাইজার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে৷ সোমবার ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক৷
ছবি: Mortuza Rashed
এক কেন্দ্র দিয়ে শুরু
উদ্বোধনী দিনে শুধুমাত্র ঢাকার মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে টিকা দেয়া হয়েছে৷ আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ঢাকার বাকি সাত কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা৷ কেন্দ্রগুলো হচ্ছে হার্ডকো স্কুল, চিটাগাং গ্রামার স্কুল, সাউথ পয়েন্ট স্কুল, সাউথ ব্রিজ স্কুল, স্কলাস্টিকা স্কুল, ঢাকা কমার্স কলেজ এবং কাকলী স্কুল৷
ছবি: Mortuza Rashed
আগ্রহ সহকারেই টিকা নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিকা আজাদ অর্চি বলেন, ‘‘টিকা নিতে পেরে আমাদের বেশ ভালো লাগছে৷ তেমন কোনো ভয় কাজ করছে না মনে৷ আমরা যারা আজকে এসেছি টিকা নিতে, সবাই নিজ আগ্রহেই এসেছি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed
মার্চের মধ্যে শতভাগ মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রত্যয়
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানান, ‘‘এখন পর্যন্ত দেশের ২৫ ভাগ মানুষ কমপক্ষে এক ডোজ টিকা পেয়েছেন৷ আমাদের লক্ষ্য মার্চের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনা৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা সেভাবেই কাজ করে চলেছি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed
সন্তানদের ভালোর জন্যই এই টিকা
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মা পাঁপড়ি খান৷ তিনি টিকাদানের উদ্যেগের ব্যাপারে বলেন, ‘‘আমি মনে করি এটি অবশ্যই সরকারের একটি ভালো পদক্ষেপ৷ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেহেতু খোলা হচ্ছে, তাই টিকা দেওয়াটা আমাদের সন্তানদের জন্য অবশ্যই ভালো কিছু আনবে বলেই আমরা আশা রাখছি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed
শুধু নিবন্ধনকৃতরাই টিকা পাবেন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা কর্মসূচির পরিচালক ডাঃ শামসুল হক জানান, শুধুমাত্র সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীরাই টিকা নিতে পারবেন৷ মোবাইলে তারিখ এবং কেন্দ্র সংক্রান্ত এসএমএস প্রাপ্তি সাপেক্ষে টিকাকেন্দ্রে আসতে হবে৷
ছবি: Mortuza Rashed
সারাদেশে ২২ জেলায় প্রস্তুতি
ডাঃ শামসুল হক বলেন, আপাতত দেশের ২২টি জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে৷ পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে৷ যেহেতু বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ফ্রিজার মেশিন লাগে, তাই সেগুলো ব্যবস্থা করতে আমাদের কিছুটা সময় লাগবে৷
ছবি: Mortuza Rashed
দেওয়া হচ্ছে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা
শিক্ষার্থীদের বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ বর্তমানে দেশে প্রায় ৭২ লাখ টিকা মজুদ আছে এবং নভেম্বরে আরও ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে৷
ছবি: Mortuza Rashed
টিকা পরবর্তী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা
টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ এজন্য কুর্মিটোলা হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দি হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা
কোভ্যাক্সের আওতায় টিকা প্রাপ্তির জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর মিলারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি৷ তারা বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা ছাড়া এ টিকা পাওয়া সহজ হতো না৷
ছবি: Mortuza Rashed
অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও টিকা নিতে পারবে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘‘ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন টিকা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে পাঁচ হাজার৷ সে হিসেবে আমরা আটটি কেন্দ্রে ৪০ হাজার ডোজ টিকা দিতে পারবো৷ কেন্দ্রগুলোতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিকা দিতে পারবেন৷’’
ছবি: Mortuza Rashed
10 ছবি1 | 10
বস্তিতে করোনার টিকা দেয়া শুরু
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বস্তিবাসীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার। আজ মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকার কড়াইল বস্তিতে এ টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Rashed Mortuza/DW
নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই
ঢাকার বনানীস্থ কড়াইল মাঠের পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়ের টিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় বস্তিবাসীদের দীর্ঘ লাইন। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই, নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই। বারবার বলার পরেও কেউ কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বলে জানান কর্তব্যরত একাধিক স্বেচ্ছাসেবক।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
সপ্তাহব্যাপী চলবে টিকাদান কার্যক্রম
কড়াইলের পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়ে কতদিন টিকা কার্যক্রম চলবে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এটি আসলে ঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। আমরা সাত থেকে ১০ দিন এ কর্মসূচি চালাবো। তবে বস্তির প্রায় তিন লাখ বাসিন্দাকে টিকা দিতে যতদিন প্রয়োজন, ততদিনই এ টিকাদান চলবে।’’
ছবি: Rashed Mortuza/DW
ভোর থেকে অপেক্ষা
ঢাকার কড়াইল বস্তিতে থাকেন আজিমন নেসা। তিনি জানান, ভোর ৬টা থেকে তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছেন কোলে বাচ্চা নিয়ে। বেলা ১১টা বাজলেও টিকা দিতে পারেননি। তার বাচ্চা ক্ষুধায় কান্নাকাটি করছে, তবু কিছু করার নেই, টিকা না নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
পুরুষদের উপস্থিতি কম
কড়াইল মাঠের একটি টিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুরুষের তুলনায় নারী দ্বিগুনেরও বেশি। পুরুষদের উপস্থিতি এত কম কেন জানতে চাইলে টিকা নিতে আসা আসগর আলী বলেন, “আমরা সকালে কামে বাইর হয়া যাই। টিকার জন্য প্যাট তো আর বন্ধ থাকবো না। তাই যারা কামে গেসে, তারা আইতে পারে নাই। মহিলারা বাড়িতে থাকে, হ্যারা আইসে।“
ছবি: Rashed Mortuza/DW
বয়স্ক ও অসুস্থদের অগ্রাধিকার
পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে ষাটোর্ধ্ব অনেকেই এসেছেন টিকা নিতে। মোছাম্মাত আমিরন বেগমের বয়স ৮০-র বেশি। তিনি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না দেখে একজন স্বেচ্ছাসেবক তাকে ধরে লাইনে সবার আগে দাঁড় করিয়ে দিলেন। জানা গেল, টিকাকেন্দ্রে বয়স্ক, অসুস্থ, গর্ভবতীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘আমি কি টিকা দিতে পারুম?’
টিকাকেন্দ্রে এসেছেন মোছাম্মাত জুলেখা আক্তার। একজন স্বেচ্ছাসেবককে দেখে তিনি জানতে চাইলেন, “আমার দুই বছরের বাচ্চা আছে ভাই, বুকের দুধ খায়। আমি টিকা দিলে কি বাচ্চা দুধ খাইতে পারবো?” স্বেচ্ছাসেবক ‘হ্যাঁ’ বলার পর তিনি পুনরায় লাইনে গিয়ে দাঁড়ান।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
স্পট রেজিস্ট্রেশন
টিকাদানের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, যারা সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারেননি, তারাও এ কর্মসূচিতে টিকা দিতে পারবেন। যাদের টিকা রেজিস্ট্রেশন কার্ড নেই, তাদের ভোটার আইডি কার্ড অথবা জন্মনিবন্ধনের সনদ লাগবে। আপাতত এ দুটির একটিও না থাকলে টিকা দিতে পারছেন না তারা।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
যে টিকা দেওয়া হচ্ছে
কড়াইল বস্তিবাসীদের কোন টিকা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে রেড ক্রিসেন্টের নাফিস আহমেদ খান নামের একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, সবাইকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হচ্ছে।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
টিকার লক্ষ্যমাত্রা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত ১৫ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ টিকা নিতে পারছেন এখন। আমরা মোট আট কোটির বেশি ভ্যাক্সিন দিয়ে ফেলেছি। জানুয়ারির মধ্যে আমাদের ইচ্ছা আছে দেশের ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’’
ছবি: Rashed Mortuza/DW
একটু ভয়...
কড়াইলের পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়ে টিকা নিতে এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রিপন মিয়া। টিকা নেওয়ার পর বিদ্যালয়ের একটি খালি কক্ষে কিছুক্ষণ বসেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যদিও লাখ লাখ মানুষ টিকা নিতাসে সারা দুনিয়ায়, তা-ও একটু ভয় তো লাগতাসেই। তাই কিছুক্ষণ বইছি এহানে, যদি কোনো সমস্যা হয়, হেগোরে জানামু।“
ছবি: Rashed Mortuza/DW
বয়সের সীমাবদ্ধতা
বস্তিবাসীদের টিকা নেওয়ায় বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কিনা জানতে চাইলে কর্তব্যরত একজন কর্মকর্তা জানান, এখানে ১৮ বছরের বেশি বয়সের যে কেউ এ টিকা নিতে পারবেন।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘সরকার এত কষ্ট কইরা টিকা দিতাসে, লমু না কেন?’
ঢাকার কড়াইল বস্তিতে গিয়ে কথা হলো মুদি দোকানি আবুল কালামের সাথে। টিকা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি এখনো টিকা নেননি, তবে কাল-পরশুর মধ্যে নিয়ে নেবেন। বস্তিবাসীদের টিকাগ্রহণে আগ্রহ কেমন জানতে চাইলে তিনি জানান, শুরুতে সবাই ভয় পেলেও এখন সবাই আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘‘সরকার এত টাকাপয়সা খরচ করে আমাদের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করছে, আমরা কেন টিকা নিবো না?’’