1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনছেন পেরুর আদিবাসীরা

৩ এপ্রিল ২০১৯

পেরুর আন্দেস পর্বতে প্রাচীন ইনকা সভ্যতার সময় প্রকৃতি সংরক্ষণের যে উদ্যোগ দেখা যেত, বিগত শতাব্দীতে তা সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছে৷ গাছপালা, জঙ্গল ধ্বংসের প্রবণতা বন্ধ করতে একদল মানুষ নতুন উদ্যোগ শুরু করেছেন৷

ছবি: Getty Images/B. Stirton

বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ

পেরুর আন্দেস পর্বতে বাৎসরিক কেনা রায়মি নামের বৃক্ষরোপণ উৎসব চলছে৷ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ২০০ মানুষ সেই উপলক্ষ্যে মিলিত হয়েছেন৷ তারপর তাঁরা সপরিবারে চারাগাছ, যন্ত্রপাতি, রসদ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন৷ সঙ্গে গৃহপালিত লামাও থাকে৷

প্রায় ৪,০০০ মিটার উচ্চতায় সেই যাত্রা শেষ করতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে৷ তাঁদের ইনকা পূর্বপুরুষরাও একই পথে যাত্রা করতেন৷ তাঁরা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে জীবনযাপন করতেন৷ প্রকৃতির কাছ থেকে যা পাওয়া গেছে, আজ তারই কিছু ফিরিয়ে দেবার পালা৷ 

গত কয়েক শতাব্দী ধরে গাছ কাটার ফলে প্রায় সব জঙ্গল সাফ হয়ে গেছে৷ নতুন করে গাছ লাগানোও হয়নি৷ এই প্রথম কোনো প্রজন্মের উপলব্ধি হয়েছে, যে এভাবে আর চলতে পারে না৷ গ্রামের অন্যতম বয়স্ক এক মানুষ হিসেবে এরমোগেনেস কিসপে সপরিবারে এই উদ্যোগের অংশ হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে মাটিতে গর্ত করা অত্যন্ত কঠিন৷ পাথর পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ খুব সাবধানে কাজ করতে হয়৷ এখানে আর কোনো গাছ অবশিষ্ট নেই৷ জ্বালানি হিসেবে কাঠ পাওয়া যায় না, কিছুই নেই৷ তাই এখন গাছ লাগাতে পেরে আমরা খুব খুশি৷ আমার বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই এই কাজে হাত লাগাতে এসেছে৷''

পরিবেশ বাঁচানোর উদ্যোগ

কনস্টানটিনো আউকা-র মাথায় এই প্রকল্পের আইডিয়া এসেছিল৷ তিনি একোয়ান নামের এনজিও গড়ে তোলেন৷ শিকড় যাতে শুকিয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে তাঁদের দেরি করার উপায় নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘গাছপালা না থাকলে পাহাড় থেকে পানি সরাসরি উপত্যকায় বয়ে যায়৷ ফলে ভূমিধসের আশঙ্কা থাকে৷ তারপর পানি সমুদ্রে গিয়ে পড়ে৷ আমরা নতুন গাছ লাগাচ্ছি, যা প্রকৃতির সৃষ্টি করা আর্দ্রতা, অর্থাৎ বৃষ্টি ও কুয়াশা শুষে নিতে পারে৷ গাছপালাই পানি জমা করার একমাত্র পথ৷''

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় হিমবাহ আন্দেস পর্বতে পানির একমাত্র উৎস৷ কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সেই হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে৷ অতীতে পাহাড়ের একটা বড় অংশে তথাকথিত পলিলেপিস গাছে ভরা ছিল৷ একমাত্র দক্ষিণ অ্যামেরিকায় এমন গাছ পাওয়া যায়৷ পলিলেপিস অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি ও আবহাওয়ার চরম তারতম্যও সহ্য করতে পারে৷ শীত ও গ্রীষ্মে রাতে তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারে৷ তাই অত্যন্ত ধীরে ধীরে এই গাছ বড় হয়৷

একোয়ান সংস্থার জীববিজ্ঞানীরা ১০ বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছেন৷ ডারউইন মিরান্ডা তাঁদেরই একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ এখানে এসে বড় জঙ্গল, ৩ থেকে ৪ মিটার উঁচু গাছপালা দেখার আশা করেন৷ এত উঁচু গাছ, যা আকাশ ঢেকে দেয়৷ তবে মনে রাখতে হবে, এখানে আমরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪,৪০০ মিটার উপরে রয়েছি৷ অনেক জায়গায় ৩,৫০০ মিটার উচ্চতায় কোনো গাছপালা দেখা যায় না৷ এখানে সেটা সম্ভব৷'' 

চার হাজার মিটার উচ্চতায় বৃক্ষরোপণ উৎসব

05:28

This browser does not support the video element.

প্রকৃতির সার্বিক উন্নতি

আরও বনায়নের অর্থ, পানির প্রবাহের চক্রে আরও আর্দ্রতা যোগ হওয়া৷ এর ফলে কোনো এক সময়ে আবার হিমবাহ বেড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ডারউইন মিরান্ডা বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলে পানি যাতে মাটির মধ্যে তলিয়ে না যায়, গাছপালা তা নিশ্চিত করে৷ সেই পানি শিকড় ও চারিদিকের শেওলার মধ্যে জমা হয়৷ বিশেষ করে সূর্যের আলো পড়লে পানি শুকিয়ে গিয়ে বাতাসের মাধ্যমে দূরে চলে যেত৷''

পাহাড় থেকে পানি আরও ধীরে নেমে গেলে তা সারা বছর ধরে উপত্যকার গ্রামগুলিতে আরও বেশি সময় থাকে৷ এখন বর্ষাকাল হলেও বৃষ্টির পরিমাণ কমে চলেছে৷ স্থানীয় মানুষ পানির অভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে

গ্রামগুলিতে নার্সারি গড়ে তোলা পুনর্বনায়ন প্রকল্পের একটি অংশ৷ এরমোগেনেস-এর গ্রামেও এমনটা করা হয়েছে৷ সেখানে এক বছর ধরে চারাগাছ পরিচর্যা করা হয়৷ তারপর বড় হলে সেগুলি মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়৷ প্রায় ৯০ শতাংশ চারাগাছ টিকে থাকতে শুরু করেছে৷ একোয়ান স্থানীয় মানুষকে গাছের জন্য অর্থ দেয়৷ ব্যক্তিগত চাঁদার মাধ্যমে এই এনজিও অর্থ সংগ্রহ করে৷ এর মধ্যে কয়েকটি নার্সারিতে গাছের আরও সুরক্ষার জন্য নতুন গ্রিনহাউস গড়ে তোলা হয়েছে৷

প্রতিবেদন: ক্লাউডিয়া লাসচাক/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ