1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৃষ্টির জমা জলে মৃত্যুফাঁদ

২৭ অক্টোবর ২০২৪

প্রবল বৃষ্টিতে জল যন্ত্রণার চেনা ছবি কলকাতা থেকে জেলায়৷ দুর্যোগের জেরে প্রাণ গেল একাধিক মানুষের৷ প্রতি বছর একই ঘটনা দেখা গেলেও মিলছে না প্রতিকার৷

ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব৷
ঘূর্ণিঝড় দানা প্রবল বেগে আছড়ে পড়েছে ভারতের ওড়িশা উপকূলে৷ পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরে প্রভাব পড়লেও কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় ঝড়ের দাপট ছিল না৷ছবি: Satyajit Shaw/DW

ঘূর্ণিঝড় দানা প্রবল বেগে আছড়ে পড়েছে ওড়িশা উপকূলে৷ পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরে প্রভাব পড়লেও শহর কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় ঝড়ের দাপট ছিল না৷ ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে প্রবেশ করার পর তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়৷ তার জেরে শুক্রবার দিনভর প্রবল বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে৷ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় আলিপুরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১৬ মিলিমিটারের বেশি৷

জল জমে শহরে

সারাদিনের বৃষ্টিপাতের ফলে কলকাতা শহরের বিভিন্ন রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে হসপিটাল রোড, ঠনঠনিয়া থেকে কৈখালি, দিকে দিকেই ছিল জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি৷

এর ফলে শহরের বিভিন্ন স্থানে যানজট তৈরি হয়। যানবাহনের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। যদিও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় শুক্রবার রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা ছিল কম। সাধারণ মানুষও কম বেরিয়েছিলেন পথে।

অনেক পাড়ায় মানুষ বন্দি হয়ে পড়েন। শুধু কলকাতা নয়, শিল্পনগরী হাওড়াতেও এই ছবি দেখা গিয়েছে। গৃহস্থের বাড়িতে জল ঢুকে পড়ে। শনিবারও অনেক জায়গা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে।

এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে জল থৈথৈ অবস্থা তৈরি হয় শুক্রবার। এর ফলে সমস্যায় পড়েন রোগীরা। একতলার কয়েকটি বিভাগে জল ঢুকে যায়। জল জমে যাওয়ায় চলাচল দুরূহ হয়ে পড়ে পাতিপুকুর, উল্টোডাঙা আন্ডারপাসে।

স্থানীয় পুর প্রশাসন বিভিন্ন জায়গায় মোটর পাম্প চালিয়ে জল বার করে দেয়ার চেষ্টা করে। যদিও সর্বত্র দিনভর বৃষ্টি চলতে থাকায় এই চেষ্টায় বিশেষ লাভ হয়নি। পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে শনিবার। এদিন সকাল থেকে আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার। বৃষ্টি তেমন হয়নি।

জমা জলে মৃত্যুফাঁদ

বৃষ্টির পরে জমা জলে পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়৷কলকাতা থেকে জেলায় ফের একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে৷

দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন ২৫ বছরের সৌরভপ্রসাদ গুপ্তা। বিহারের বাসিন্দা এই শহরে থাকতেন৷ বাবার সঙ্গে মিলে পারিবারিক ব্যবসা চালাতেন তিনি৷ সেই দোকানের যাওয়ার পথে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন সৌরভ।

শুক্রবার বিকেলে জাস্টিস দ্বারকানাথ রোডে জল জমেছিল। জলের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়ে যান সৌরভ। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, একটি বহুতল থেকে বিদ্যুৎবাহী তার ঝুলছিল নীচে। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে।

এই মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপিতে৷ ভবানীপুর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "এভাবে প্রাণ দিয়ে অপশাসনের খেসারত দিতে হচ্ছে৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রীর এলাকায় প্রশাসন সতর্ক থাকলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত৷''

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের জবাব, "মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। নিজেদের রাজ্যে বিমানবন্দর থেকে স্টেশন জলে ডুবে যায়। তারা এখানে সমালোচনা করছে।"

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা এলাকায় এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। গাছ উপড়ে পড়েছিল ঝড়ে। তার মধ্যেই পড়েছিল বিদ্যুতের তার। বিদ্যুৎ লেগে মৃত্যু হয় ১৬ বছরের শুভজিৎ দাসের। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।

একই ঘটনা বারবার

বেআইনিভাবে নেয়া বিদ্যুতের সংযোগ কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পড়ে থাকা খোলা তার, এমন কারণে মাঝেমধ্যেই সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায় না।

চলতি মাসের গোড়ায় উত্তরবঙ্গের দুই কিশোরী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। চা বাগানে কাজ করত তারা। পিকআপ ভ্যানে করে দুজন কর্মস্থলে যাচ্ছিল। সেই সময় উপর থেকে ঝুলতে থাকা তারে ছোঁয়া লাগতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তারা৷

গত আগস্টে স্নাতকোত্তর স্তরের এক পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে খুবই হইচই হয়েছিল। হাওড়ার মালিপাঁচঘরা এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ২২ বছরের সৌরভী দাস মারা যান। অল্প বৃষ্টিতে এই ছাত্রীর পাড়ায় হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যায়। এই অবস্থায় বেরিয়েছিলেন তিনি। বিদ্যুতের তারে ছাতা স্পর্শ হয়ে মৃত্যু হয় ছাত্রীর।

এই ঘটনায় একটি নির্মীয়মান বাড়ির প্রোমোটারের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে। প্রতিবাদে স্থানীয়রা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তারা প্রশ্ন তুলেছিলেন বেহাল নিকাশি নিয়ে।

অনেক ক্ষেত্রেই অবৈধভাবে নেয়া বিদ্যুতের সংযোগ প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়। মাসখানেক আগে জলপাইগুড়ির গজলডোবায় হুকিংয়ের তারে বিদ্যুৎ লেগে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়। প্রশ্ন ওঠে, বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা কেন এসব বেআইনি সংযোগ বন্ধের জন্য নিয়মিত অভিযান চালায় না?

অবৈধ সংযোগ

সাধারণ মানুষের একাংশের অবৈধ কাজকর্মের জন্য অনেকের মৃত্যু হয়। শুক্রবার ভবানীপুরে যে তারের জন্য যুবকের মৃত্যু হয়েছে, সেটি অবৈধভাবে বিদ্যুতের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

অভিযোগ, বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা থেকে শুরু করে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেয় না বলে দিনের পর দিন চলে বিদ্যুৎ চুরি। এর ফলে জমা জলে খোলা তারে নিরপরাধ মানুষের প্রাণ যায়।

নালা সংস্কারের কাজ চালিয়ে যেতে হবে: বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

কলকাতা ও জেলায় নিকাশি বেহাল থাকায় প্রবল বৃষ্টিতে জমা জলের সংকট তৈরি হয়। তাতে খোলা বিদ্যুতের তার প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। তবে জল জমার সমস্যা সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব নয়। যদিও নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷

কলকাতার সাবেক মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "কলকাতা অনেক পুরনো শহর। সেভাবে পরিকল্পনা করে গড়ে ওঠেনি। শুধু কলকাতা নয়, দেশের যে কোনো শহরেই প্রবল বৃষ্টিতে জল জমবে। কিন্তু পুর প্রশাসনের দায়িত্ব, নিকাশি ব্যবস্থা ঠিকঠাক রাখা, যাতে জমা জল বেরিয়ে যায়।"

মেয়র থাকাকালীন বাম পুরবোর্ডের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ''আমরা প্রশাসনে থাকাকালীন ভূগর্ভে প্রয়োজনীয় কাজ করেছি। শহর যখন গড়ে ওঠে তখনকার তুলনায় জল পরিবহন ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। সেটাকে আরো বাড়াতে হবে। সংযুক্ত এলাকায় নর্দমা তৈরি হয়েছে। এই নালা সংস্কারের কাজ চালিয়ে যেতে হবে ধারাবাহিকভাবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ