সন্দেহভাজনদের গতিবিধির উপর নজর রাখা এবং দ্রুত অপরাধীদের সনাক্ত করতে দেশজুড়ে ফেস রিকগনিশন সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে ভারত৷
ছবি: Imago/J. Tack
বিজ্ঞাপন
অধিকারকর্মী এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা গোপনীয়তার ঝুঁকি এবং বাড়তি নজরদারির এই উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনা করলেও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত জাতীয় অপরাধ রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) এই সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে৷ এজন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে দরপত্রও চেয়েছে তারা৷
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, অল্প পুলিশের দেশটিতে এই প্রযুক্তিটি বিশেষ প্রয়োজন৷ জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ভারতে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য ১৪৪ জন পুলিশ রয়েছেন৷
আর এনসিআরবি বলছে, পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকীকরণ এবং সহজে তথ্য সংগ্রহ, অপরাধ সনাক্ত ও যাচাইকরণের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷
এনসিআরবি বলছে, ফেস রিকগনিশন সিস্টেমের মাধ্যমে অপরাধী, হারানো শিশু বা ব্যক্তির খোঁজ করা, অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহ সনাক্ত ছাড়াও পরিচয়হীন মানুষদের সনাক্ত করা হবে৷ এছাড়া অপরাধীদের ছবির ডাটাবেসও করা হবে৷ আর একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তারা অপরাধীদের তালিকার সঙ্গে সন্দেহভাজনদের মিলিয়ে দেখতে পারবেন৷
জার্মানিতে ভিডিও নজরদারি বিতর্ক
বিভিন্ন দেশে নিরাপত্তার খাতিরে ভিডিও নজরদারি যন্ত্র ব্যবহার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী৷ জার্মানিতেও স্বল্পমাত্রায় চালু আছে এমন ব্যবস্থা৷ কিন্তু চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে কি যাবে না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
ভিডিও নজরদারি
জার্মানির বিভিন্ন রেল স্টেশনে ভিডিও নজরদারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে অনেক দিন থেকেই৷ তবে তার পরিসর বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার৷ ২০২৪ সালের মধ্যে প্রধান সব রেল স্টেশনগুলোকে এই ধরনের নজরদারির আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ শুধু সিসি ক্যামেরা দিয়েই নয় তার সাথে চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিও যোগ করতে চান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schreiber
চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি
বার্লিনের সুডক্রয়েজ রেল স্টেশনে সম্প্রতি চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তির একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প শেষ হয়েছে৷ এই স্টেশন ব্যবহারকারী ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী এক বছরের জন্য তাদের চেহারা শনাক্ত করার অনুমতি দেয় সরকারকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schreiber
যেভাবে শনাক্ত করা হয়
প্রকল্পটি শুরুর আগে স্বেচ্ছাসেবীদের ছবি পুলিশের ডেটাবেজে দেয়া হয়েছে৷ ট্রেন স্টেশনে বসানো ক্যামেরা যখনই তাদের চিহ্নিত করে সেই তথ্য পুলিশের কাছে চলে যায়৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
কতটা সঠিক?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রযুক্তিটি ৮০ ভাগ সঠিক তথ্য দিতে সক্ষম হয়েছে৷ অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি ৫ জনের চারজনকে শনাক্ত করতে পারছে সিস্টেমটি৷ অন্যদিকে এক হাজার জনে একজনকে ভুলভাবে শনাক্ত করেছে এই সফটওয়্যার৷
ছবি: DW/J. Chase
ভুলের মাশুল
প্রযুক্তিটির ভুলের সংখ্যা কম হলেও তা নিয়ে উদ্বেগ আছে৷ কেননা শতভাগ নির্ভুল না হলে যেকোন একজন নিরপরাধী ব্যক্তিও হয়রানির শিকার হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আগ্রহী পুলিশ
জার্মানির পুলিশ চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে৷ ফেডারেল পুলিশ বিভাগের প্রধান ডিয়েটার রোমান মনে করেন, এর ফলে বিশেষ পুলিশি অভিযান ছাড়াই দ্রুত অপরাধীকে সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে, যা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় অর্জন হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Sparta
আইনি বাধা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আগ্রহ থাকলেও জার্মানিতে এখনই চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার চালু করা সম্ভব না৷ কেননা এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির ভিডিও নজরদারি ব্যবস্থা চালুর জন্য এখনও আইনী কাঠামো নেই দেশটিতে৷
ছবি: picture-alliance/picturedesk/H. Ringhofer
আদালতের রায়
আইনি কাঠামো না থাকলেও আদালতের সাম্প্রতিক একটি রায় অবশ্য পুলিশের পক্ষে গেছে৷ গত বুধবার হামবুর্গের প্রশাসনিক আদালত ২০১৭ সালে জি টুয়েন্টি সম্মেলনের বিক্ষোভে অংশ নেয়াদের ছবির বিতর্কিত তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণের অনুমতি দিয়েছে পুলিশকে৷ স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেহারা শনাক্তকরণ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ঐ ঘটনায় সহিংসতায় জড়িতদের চিহ্নিত করে৷
ছবি: picture-alliance /dpa/B. Thissen
উদ্বেগও আছে
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন নেতারা এ ধরনের প্রযুক্তির পক্ষে যেমন আছেন তেমনি বিপক্ষে থাকা রাজনীতিবিদের সংখ্যাও কম নয়৷ পুলিশ ও গোয়ান্দা বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট ছবি অনুসন্ধানের বিষয়ে গত জুলাইতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে বেসরকারি সংগঠন সোসাইটি ফর সিভিল রাইটস৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
ডাটাবেসে সোশাল মিডিয়া, সংবাদপত্র, সিসিটিভি ক্যামেরা, পাসপোর্ট, প্রকাশ্যস্থান, অপরাধমূলক রেকর্ড থেকে ছবি যুক্ত করা হবে৷ এছাড়া সন্দেহভাজনদের আঁকা স্কেচগুলোও সেখানে রাখা হবে৷
গত জুলাই মাসে ভারতের কয়েকটি বিমানবন্দরে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি চালু করা হয়েছিল৷ এর কয়েক দিনের মধ্যে প্রায় তিন হাজার নিখোঁজ শিশুদের সনাক্ত করার কথা জানায় দিল্লি পুলিশ৷
তবে সরকারের এই উদ্যোগ নিয় মানবাধিকারকর্মী এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তারা বলছেন, এই সিস্টেমটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে এবং এটি বাস্তবায়ন হলে কর্তৃপক্ষের জন্য বর্ধিত নজরদারি চালাতে সহজ হবে৷
ওপেন-ইন্টারনেট অ্যাডভোকেসি গ্রুপের পরিচালক রমন জিত সিং চিমা বলেন, "এ বিষয়টি তারা (এনসিআরবি) কোনো নীতিগত পরামর্শ ছাড়াই করছে এবং এনিয়ে কোনো নীতিমালাও নেই৷ তারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে কোন সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য নেই৷''