হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিকর্মী জশুয়া ওয়ং এর সঙ্গে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাসের বৈঠকের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বেইজিং, চীনে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
বার্লিনে চীনের রাষ্ট্রদূত উ কেন এবং জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেইজিংয়ে তাদের রাষ্ট্রদূতকে আনুষ্ঠানিকভাবে তলবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷
চীনে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত গত বুধবার বলেন, সম্প্রতি জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিকর্মী জশুয়া ওয়ং এর সঙ্গে বৈঠকে অত্যন্ত নেতিবাচক সংকেত পাঠানো হয়েছে৷ এরপর বেইজিং বলছে, হংকং নিয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপের যথেষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে৷
জশুয়া ওয়াংএর সঙ্গে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে উ কেন বলেন, ‘‘আমি দুর্ভাগ্যক্রমে বলতে চাই, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং চীনকে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে৷''
হংকংয়ে চলমান বিক্ষোভে বিদেশি বাহিনী জড়িত ছিল বলে দাবি করেন উ কেন৷ বিদেশি রাজনীতিবিদদের এ থেকে সরে আসারও আহ্বান জানিয়েছিল তিনি৷ উ বলেছিলেন, চীনের সার্বভৌমত্ব ও সুরক্ষার বিষয়টিকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে৷ তাই আমি রাজনীতিবিদদেরকে সহিংস অপরাধ আড়াল করা এবং হংকংয়ের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার পরামর্শ দিচ্ছি, কারণ এটি চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়৷
জশুয়া ওয়ংকে জার্মানিতে প্রবেশ না করাতে বেইজিং বারবার বার্লিনকে বলে আসছিল বলে জানান উ৷ এরপরেও সম্প্রতি ওয়ংকের সঙ্গে বৈঠক করেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
বাভারিয়াতে চীনা সেনাদের প্রশিক্ষণ
জার্মান সেনাদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি৷ জার্মানির বাভারিয়ান রাজ্যের ফেল্ডক্রিশেনে প্রশিক্ষণটি চলছে৷ মহামারীর মতো ভয়ঙ্কর অবস্থা সামাল দিতেই এই আয়োজন৷ যার নাম ‘কম্বাইন্ড অ্যাইড ২০১৯’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
বিশেষ সাঁজোয়াযান
উদ্ধার তৎপরতা জন্য বিশেষভাবে তৈরি চীনের এই সাঁজোয়াযানটি জাহাজে করে আনা হয় হামবুর্গে৷ তারপর আনা হয় অনুশীলনের মাঠে তথা ফেল্ডক্রিশেনে৷ ৯২ চৈনিক আর ১২০ জার্মান সেনাদের নিয়ে এই অনুশীলন৷ জার্মান সেনাদের মধ্যে নারীরাও রয়েছেন৷ তারা শিখছেন স্বাস্থ্যসেবার নানা কৌশল৷
ছবি: Bundeswehr / Oliver Wagner-Pikemaat, Constantin Gerk
সাধারণ অনুশীলন নয়!
জরুরি স্বাস্থ্যসেবার বিশেষ অনুশীলনটি চলবে ১৭ জুলাই পর্যন্ত৷ সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে যৌথ এই প্রশিক্ষণ জার্মান ইতিহাসের প্রথম প্রয়াস৷ তবে ২০১৬ সালে ৩৮ বুন্দেসবের সেনারা চীনে এমন একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
ভিন্নরকমের হাসপাতাল
কল্পিত এক মিশন৷ শরণার্থী ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়েছে কলেরা৷ অনেক লোক আক্রান্ত৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে চীনা সেনাদের পাঠিয়েছে জাতিসংঘ৷ নিজেদের সঙ্গে বহনযোগ্য হাসপাতাল নিয়ে আসেন চীনা সেনারা৷ সেখানেই সেবা দেয়া হবে আক্রান্তদের৷ আর এই হাসপাতালটি এমন, প্রয়োজন হলে যখন ইচ্ছে ভাঁজ করে নেয়া যাবে যেখানে সেখানে৷
ছবি: Bundeswehr / Dirk Bannert
মূহূর্তেই প্রস্তুত
বুন্দেসবেরের এক প্রতিবেদন বলছে, ‘‘চীনা সেনারা খুব দ্রুত তাদের যন্ত্রপাতিগুলো দিয়ে কাজ শুরু করতে পারে৷ যা খুবই দুর্দান্ত৷’’ চীনের আধুনিক তাঁবুগুলো মূহূর্তের মধ্যে টানানো সম্ভব৷ আর যন্ত্রপাতিগুলো সামলে নেয়ার ক্ষেত্রেও তাদের দক্ষতা অসাধারণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
স্বাস্থ্যসেবা প্রশিক্ষণ
২০১৬ সালে চীনে হয় যৌথ মহড়া৷ প্রশিক্ষণের মূল বিষয় ছিল, ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা৷ এদিকটায় চীনের অভিজ্ঞতাটা বেশ দারুণ৷ ২০০৮, ২০১০ এবং ২০১২ সালের ভূমিকম্প বিপর্যয়ের ৪০ থেকে ৫০ হাজার আহত লোকের দেখাশোনা করেছিল চীনা আর্মিরা৷ ২০১৯ সালের অনুশীলনটিও মেডিকেল স্টাফদের নিয়ে, যা দুই দেশের সামরিক সহযোগিতার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে৷
ছবি: Bundeswehr / Dirk Bannert
ইংরেজি দক্ষতা
যৌথ মহড়ায় অংশগ্রহণকারীদের কথা বলতে হবে ইংরেজিতে৷ কেউ অপরাগ হলে একজন অনুবাদক সঙ্গে রাখতে হবে৷ জার্মান সেনারা বলছেন, সীমান্তে কোনো রোগ ভয়াবহ ভাবে ছড়িয়ে গেলে তা সামাল দিতে এই অনুশীলন খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
মিলেমিশে একাকার
বেসামরিক মানুষদের রোগের হাত রক্ষা করার মিশন নিয়ে এই প্রশিক্ষণ৷ কারণ মানুষের জন্য শান্তির পৃথিবী গড়া সেনাসদস্যের কাজ৷ কম্বাইন্ড অ্যাইড ২০১৯-মহড়ার জন্য জার্মান এবং চীনের পতাকা দিয়ে একটি বিশেষ লোগোও তৈরি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
7 ছবি1 | 7
হংকংয়ের কোনো বাসিন্দা চীনে গিয়ে অপরাধ করলে তাঁর বিচারের জন্য ওই ব্যক্তিকে চীনে পাঠানো যাবে, এমন একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছিল৷ সেই বিল বাতিলের দাবিতে গত কয়েক মাস ধরে হংকংয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে৷ মাঝেমধ্যে এই বিক্ষোভ সহিংসতায়ও রূপ নিচ্ছে৷
এই অবস্থায় হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম প্রত্যর্পণ বিলটি স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে সেটিকে ‘মৃত' বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন৷ পরে ল্যাম এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘‘জনগণের উদ্বেগ প্রশমন করতে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণ বিল প্রত্যাহার করে নেবে৷''
১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের থেকে চীনের কাছে হস্তান্তরের পর হংকংয়ের ইতিহাসে গত কয়েক মাস ধরে চলা এই প্রতিবাদকে সবচেয়ে বড় আন্দোলন বলা হচ্ছে৷
চীনের কাছে হস্তান্তরের সময় যুক্তরাজ্য শহরটির স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থা অটুট রাখার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছিল৷ হংকংয়ের কারণেই চীনকে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনার' নীতিতে চলতে হচ্ছে৷