অ্যামেরিকা, ক্যানাডা-সহ একাধিক ইউরোপের দেশ আগেই বেইজিং অলিম্পিক বয়কট করেছিল। তবে জার্মানি বয়কট করছে কি না, তা স্পষ্ট করেননি চ্যান্সেলর।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি জেডডিএফ সংবাদমাধ্যমকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শোলৎস। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়, বেইজিংয়ে যে শীতকালীন অলিম্পিক শুরু হচ্ছে তাতে তিনি যোগ দেবেন কি না। শোলৎস বলেছেন, ''আপাতত কোথাও যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে আলাদা করে বেজিং অলিম্পিকে যোগ দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।'' কিন্তু কেন তিনি যোগ দেবেন না, তা স্পষ্ট করেননি চ্যান্সেলর।
খেলায় প্রতিবাদের রাজনীতি
চীনের উইগুর জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মানির জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার মেসুত ও্যজিল৷ অন্যদিকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এ বিষয়ে একেবারে চুপ৷ খেলোয়াড়দের এমন কিছু প্রতিবাদের গল্প থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Stansall
মেসুত ও্যজিল
আর্সেনালের হয়ে খেলা জার্মানির জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার মেসুত ও্যজিল সম্প্রতি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠছেন৷ গতবছর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ানের সঙ্গে ছবি তুলে বিতর্কের মুখে জার্মান জাতীয় দল থেকে পদত্যাগ করেন ও্যজিল৷ এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় উইগুরদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করে চীনের সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Stansall
এমিলি ডেভিসন
খেলার মধ্যে প্রতিবাদ জানানোর শুরুর দিককার উদাহরণগুলির একটি ছিল ১৯১৩ সালে৷ নারীর ভোটাধিকারের দাবিতে এমিলি ডেভিসনের ভয়াবহ প্রতিবাদ এ আন্দোলনকে অন্য আক মাত্রা দেয়৷ ব্রিটেনের ইপসোমে ঘোড়ার দৌড় ডার্বি চলার সময় ট্র্যাকে ঢুকে পড়েন ডেভিসন৷ রাজার ঘোড়া আনমারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লে মাথায় আঘাত পান তিনি৷ এই আন্দোলনের ফলেই পাঁচ বছর পর নারীর অধিকার আদায় হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/empics/S&G
মুহাম্মদ আলী
১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অ্যামেরিকার হয়ে লড়াইয়ে নাম লেখাতে অস্বীকার করেছিলেন মোহাম্মদ আলী৷ বক্সিংয়ের এই সুপারস্টার, যুদ্ধের বিরোধীতা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ বাধ্যতামূলক সেনাঅন্তর্ভূক্তি ফাঁকি দেয়ার শাস্তি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, পদবি ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং বক্সিংয়ের লাইসেন্সও স্থগিত করা হয়৷ ১৯৭১ সালে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আলী তিন বছরের জন্য বক্সিং রিং থেকে বাইরে ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press
ব্ল্যাক পাওয়ার স্যালুট
খেলোয়াড়দের প্রতিবাদের সবচেয়ে বড় ঘটনা সম্ভবত ১৯৬৮ সালে৷ মেক্সিকো অলিম্পিকে পুরুষদের ২০০-মিটার স্প্রিন্টের ফাইনাল শেষে টেমি স্মিথ এবং জন কার্লোস ব্ল্যাক পাওয়ার স্যালুট দেন৷ মার্কিন জাতীয় সংগীত বাজানোর সময় দুজনই মাথা নীচু করে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচু করে রাখেন৷ অ্যামেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের দাবিতে তাদের এ প্রতিবাদ অনেককে ক্ষুব্ধও করেছিল৷
ছবি: AP
আবদুল-রউফ
১৯৯৬ সালে অ্যামেরিকার বাস্কেটবল খেলোয়াড় মাহমুদ আবদুল-রউফ খেলা শুরুর আগে জাতীয় সংগীতে বাজানোর সময় দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানান৷ তিনি বলেন, মার্কিন পতাকা নিপীড়নের প্রতীক৷ ইসলামিক বিশ্বাসের দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো বিরোধপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ এ ঘটনায় এনবিএ তাকে বরখাস্ত করে এবং প্রতি ম্যাচে ৩১ হাজার ডলারেরও বেশি জরিমানা করে৷ কয়েক দিন পরই অবশ্য লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ফিরে আসেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Spencer Green
ক্যাথি ফ্রিম্যান
১৯৯৪ সালের কমনওয়েলথ গেমসে ২০০ মিটার এবং ৪০০ মিটার স্প্রিন্ট জয়ের পর দুটি পতাকা হাতে দৌড়ান ক্যাথি ফ্রিম্যান৷ তার এক হাতে ছিল অস্ট্রেলিয়ান, অন্যহাতে আদিবাসী পতাকা৷ এজন্য গেমসের আয়োজকদের তিরষ্কার শুনতে হয়েছিল তাকে৷ কিন্তু ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের পর আবার একইভাবে উদযাপন করেন ফ্রিম্যান৷
ছবি: picture-alliance/EMPICS
কেভিন-প্রিন্স বোয়াটেং
গ্যালারিতে থাকা সমর্থকদের বর্ণবাদী স্লোগানের প্রতিবাদ জানিয়ে ২০১৩ সালে মাঠেই প্রতিবাদ জানান জার্মান বংশোদ্ভূত ঘানাইয়ান ফুটবলার কেভিন-প্রিন্স বোয়াটেং৷ ইটালির চতুর্থ স্তরের দল প্রো প্যাট্রিয়ার বিপক্ষে ছিল সে ম্যাচ৷ প্রো প্যাট্রিয়া সমর্থকদের একটি অংশ তৎকালীন এই এসি মিলান মিডফিল্ডারকে লক্ষ্য করে বর্ণবাদী আক্রমণ করে৷ বোয়াটেংবল তুলে ভিড়ের দিকে লাথি দেন৷ ২৬ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Pizzoli
লেব্রন জেমস
২০১৪ সালে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ যুবক এরিক গার্নারকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে এক পুলিশ কর্মকর্তা৷ মৃত্যুর আগে তার বলা শেষ কথা ’শ্বাস নিতে পারছি না’ লেখা টিশার্ট পরে বাস্কেটবল ম্যাচ খেলতে নামেন তারকা খেলোয়াড় লেব্রন জেমস এবং তার সহযোগী কিরি ইরভিং, জারেট জ্যাক এবং কেভিন গারনেট৷ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে এই প্রতিবাদ৷
ছবি: imago/UPI Photo
ফেয়িসা লাইলেসা
অলিম্পিকে ম্যারাথনে রৌপ্যজয়ী অ্যাথলিট ফেয়িসা লাইলেসা ২০১৬ সালের রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকে অন্য একটি কারণে সংবাদের শিরোনাম হন৷ ফিনিশিং লাইন পেরোনোর সময় মাথার ওপর হাত তুলেন লেইলেসা৷ ইথিওপিয়ায় আশ্রয়প্রার্থী অরোমো গোষ্ঠীর সঙ্গে সংহতি জানিয়েই এই ভঙ্গি করেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Morin
কলিন কেপার্নিক
জাতিগত বৈষম্য এবং বন্দুক সহিংসতার প্রতিবাদে ২০১৬ সালে এক ম্যাচে মার্কিন জাতীয় সঙ্গীত চলার সময় হাঁটু গেড়ে বসে প্রতিবাদ জানান ফুটবলার কলিন কেপার্নিক৷ এরপর প্রতিবাদের এই স্টাইল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়৷ প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ ঘটনায় কেপার্নিকের তীব্র সমালোচনা করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. J. Sanchez
গোয়েন বেরি এবং রেস ইম্বোডেন
মার্কিন সমাজের নানা সমস্যা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আবারও জাতীয় সঙ্গীতের সময় হাঁটু গেড়ে বসে প্রতিবাদ জানিয়ে সবশেষ আলোচনায় এসেছেন অ্যাথলিট গোয়েন বেরি এবং রেস ইম্বোডেন৷ ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী এই অ্যাথলিটরা প্রতিবাদ জানান ডনাল্ড ট্রাম্পের নানা বিতর্কিত নীতির৷
এর আগে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফায়জার জানিয়েছিলেন ব্যক্তিগত কারণে তারা বেইজিং অলিম্পিকে যোগ দেবেন না। কিন্তু তারাও প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাননি।
বেইজিং অলিম্পিক নিয়ে কূটনৈতিক মহলে বেশ কিছু দিন ধরেই নানা আলোচনা চলছে। অ্যামেরিকা প্রথম জানিয়েছিল, বেইজিং অলিম্পিকে মার্কিন অ্যাথলিটরা যোগ দিলেও প্রশাসনের কোনো কর্তা সেখানে অংশ নেবেন না। কূটনৈতিকভাবে অ্যামেরিকা অলিম্পিক বয়কট করছে। এরপর একে একে ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াও একই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। সম্প্রতি ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডসও একই কথা জানিয়েছে। সরকারিভাবে জার্মানি কোনো অবস্থানের কথা জানায়নি। সকলেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বেইজিং অলিম্পিকে যোগ দেবেন না বলে জানাচ্ছেন।
চীনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পশ্চিমা দেশগুলির। বিশেষ করে উইগুর মুসলিমদের উপর চীন অত্যাচার চালাচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই সরব পশ্চিমা দেশগুলি। সে কারণেই কূটনৈতিক দিক থেকে অলিম্পিক বয়কট করছে অধিকাংশ দেশ।