বেক্সিমকো ফার্মা কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ প্রশমনের ওষুধ রেমডেসিভিরের প্রথম নমুনা বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে৷
প্রতীকী ছবিছবি: Reuters/H. McKay
বিজ্ঞাপন
অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির সম্প্রতি কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এফডিএ-র অনুমোদন পেয়েছে৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালসের কর্মকর্তারা পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য তাদের তৈরি রেমডেসিভির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে তুলে দেন৷ জেনেরিক রেমডেসিভির ওষুধটির ব্র্যান্ড নাম বেক্সিমকো রেখেছে ‘বেমসিভির'৷ ১০০ মিলিগ্রাম রেমডেসিভির আইভি ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হবে৷
‘করোনাটুন’: কভিড-১৯ যখন কার্টুন
করোনা ভাইরাস ছাড়া গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আর কোন খবর নেই। আতঙ্ক এবং দুঃখ প্রকাশের জন্য কার্টুনিস্টদের কেবল কয়েকটি আঁচড় কাটতে হয়েছে। তবে কিছু কার্টুন এই সংকট শেষ হওয়ার আভাস দিচ্ছে।
ছবি: Toonpool
উহান, কোয়ারান্টিন
প্রথমে সবাই ভেবেছিল করোনা ভাইরাস কেবল চীনের সমস্যা। উহানের নামও কেউ শোনেনি। বেইজিং কর্তৃপক্ষ বিপজ্জনক এই ভাইরাস ছড়ানোর খবর গোপন রেখেছিল। এরপর উহান শহর আর হুবেই প্রদেশের মানুষকে গৃহবন্দি করে রাখে তারা। পুরো বিশ্ব এটা দেখে ভেবেছিল এই পদ্ধতি নিরাপদ।
ছবি: Toonpool
ভূ-পর্যটক
কিন্তু এই ভাইরাসকে কোন সীমান্ত আটকে রাখতে পারেনি। ডাচ কার্টুনিস্ট জির্ড রোয়ার্ডস ভূ-পর্যটকের নতুন সংস্করণ তুলে ধরেছেন। হঠাৎ করেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক মানুষ অসুস্থ হতে শুরু করে এবং অনেকে মারা যায়।
ছবি: Toonpool
কভিড-১৯ এবং মানবজাতি
পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে এই ভাইরাস অপ্রতিরোধ্য। কোন ভ্যাকসিন নেই, নেই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পাওলো স্যালেরি সেই হতাশা’র অনুভূতি ফুটিয়ে তুলেছেন তার শিল্পের মাধ্যমে।
ছবি: Toonpool
দুঃস্বপ্ন
এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে বিশ্বের আক্রান্ত দেশগুলোতে ঘরে থাকার নির্দেশ জারি হয়। কিন্তু ঘরে থাকলেও মানুষের মনে আতঙ্ক ছিলো। তুর্কি কার্টুনিস্ট মেনেকসে ক্যাম এখানে একটি ছবি এঁকেছেন যেখানে একটি মেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে এবং ভেড়া গোনার বদলে ভাইরাসের সংখ্যা গুণছে।
ছবি: Toonpool
আমি আমার দলকে চাই
সামাজিক দূরত্বের কারণে সবাই নিজেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মানুষ মনে করছিলেন। এই কার্টুনে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড দলের একজন ভক্ত তার প্রিয় বোরসিগপ্লাৎস স্কয়ার ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না, এই স্থানে ক্লাবটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। আর যেখানে অনেক শিরোপা জয়ের উদযাপন হয়েছে।
ছবি: Toonpool
সংগীত যখন যোগাযোগের মাধ্যম
ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইটালির মানুষ লকডাউনের সময় প্রতি সন্ধ্যায় বারান্দা থেকে সংগীত পরিবেশন করেছেন। কখনো কখনো অনেকে নার্স ও চিকিৎসকদের সম্মান জানাতে হাততালি দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন। বারান্দার এই সংগীত সবাইকে এই বার্তাই দিয়েছে ‘সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।“
ছবি: Toonpool
দূরত্ব বজায় রাখুন
ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে কড়া কারফিউ ছিলো। জার্মানিতে মানুষের বাইরে বের হওয়ায় বাধা ছিলো না। কিন্তু দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ ছিলো। নির্দেশ অমান্য করলে বড় ধরণের জরিমানা গুণতে হতো।
ছবি: Toonpool
যেদিকে তাকাও মুখোশ আর মুখোশ
মুখে মাস্ক পড়লে সংক্রমণের ঝুঁকি কম। তাই বেশ কয়েকটি দেশে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু যখন দোকানগুলোর সব মাস্ক বিক্রি হয়ে যায় তখন কি করার আছে? রুশ কার্টুনিস্ট সের্গেই বেলোসেরোভ তাই এতে নতুন সংস্করণ যোগ করেছেন।
ছবি: Sergei Belozerov/toonpool
হাত পরিষ্কার
হাত ধুতে থাকো, ধোও, ধুতে থাকো ধোও। করোনা প্রতিরোধ করতে প্রতিটি দেশের রাজনীতিবিদ এবং চিকিৎসকরা এই কথা বার বার বলেছেন। স্যাম চাচা সেটাই করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের উদ্ভট কথায় কান দিও না।
ছবি: Toonpool
ভয়াবহ লড়াই
সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই। গবেষণাগারগুলো ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে। যতদিন না ভ্যাকসিন পাওয়া যায় ততদিন মানবজাতির সঙ্গে এই ভাইরাসের লড়াইকে কার্টুনের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ফিলিপাইন্সের শিল্পী জাখ। তিনি বলছেন এই সংগ্রাস চলবে। এর ফলাফল অনিশ্চিত।
ছবি: Toonpool
দৈত্যের পূর্বাভাস
নিজের নাগরিকদের বাঁচাতে বিশ্ব নেতারা লকডাউন জারি করেন, যার ফলে অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক কোম্পানি ঋণে জর্জরিত। ত্রাণ কার্যক্রম চালু হলেও লাখ লাখ মানুষ জানেন না কীভাবে তারা বাড়ি ভাড়া দেবেন বা খাবারের অর্থ জোগাড় করবেন। চীনের রডরিওগো’র কাছে ভাইরাসের চেয়েও বড় দৈত্য অর্থনৈতিক সংকট।
ছবি: Toonpool
ইতিহাসের পাতায়
স্প্যানিশ ফ্লু এর মত একদিন এই মহামারি ইতিহাস হবে। দাদা-নানারা তাদের নাতি নাতনিদের গল্প করবেন কীভাবে তারা খাবার জমা করে রেখেছিলেন। আর দোকানে যখন টয়লেট পেপার শেষ হয়ে গিয়েছিল, তখন কি দুর্দশা হয়েছিল তাদের।
ছবি: Toonpool
12 ছবি1 | 12
ওষুধের প্রথম ব্যাচ হস্তান্তরের সময় বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘‘সব সরকারি হাসপাতালে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে৷ এ কারণে আমরা সরকারি হাসপাতালগুলোতে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য বিনামূল্যে বেমসিভির সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷''
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রেমডেসিভির অ্যামেরিকাতে কেবল ইমারজেন্সি রোগীদের জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে৷ বেক্সিমকো ওষুধটি আমাদের অঞ্চলে তৈরি করতে পেরেছে৷
‘‘ওষুধটি দেওয়া হবে মুমূর্ষু ও ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের৷ তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এক্সপার্ট ও ডাক্তাররা৷ আশা করি মানুষ উপকার পাবে, হয়ত জীবন রক্ষা পাবে৷''
নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গসহ নতুন করোনা ভাইরাস নিরাময়ে কার্যকর কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি৷ তবে উপসর্গ নিরাময়ে প্রচলিত কিছু ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন দেশে৷ এগুলোর মধ্যে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, ফ্যাভিপিরাভির ও রেমডেসিভির পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করতে স্কয়ার ফার্মা, এসকেএফ, বীকন, বেক্সিমকো, জিসকা ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস সরকারের অনুমতি পেয়েছে৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সব ওষুধই কিছু না কিছু কাজ করে৷ তবে কোনো ওষুধই শতভাগ কাজ করে না৷ ডাক্তাররা তাদের প্রটোকলে কিছু ওষুধ নিয়েছেন৷
‘‘আশা করি, এ ওষুধটাও তারা নিয়ে যাবেন৷''
প্লাজমা দিন জীবন বাঁচান
02:32
This browser does not support the video element.
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে ওষুধ হস্তান্তরের পর বেক্সিমকো ফার্মার পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারাই প্রথম বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের কাছে রেমডেসিভির তৈরির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে৷ ওষুধের অনুমতির জন্য প্রযোজ্য সকল বিধি বিধান অনুযায়ী আবেদনের সকল ধাপ পূরণের পর পর্যালোচনা শেষে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ২১ মে জরুরি ব্যবহারের জন্য বেক্সিমকো ফার্মাকে রেমডিসিভির ইঞ্জেকশন উৎপাদনের চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে৷
তবে ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী বেক্সিমকো ফার্মা এখন শুধু কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতাল সমূহেই রেমডেসিভির (বেমসিভির) সরবরাহ করতে পারবে৷ কোনো ফার্মেসিতে ওষুধটি সরবরাহ করবে না বলে জানান নাজমুল হাসান৷ তিনি বলেন, ‘‘অনুমোদন পাওয়ার প্রথম দিনেই বেক্সিমকো ফার্মা বিপুল পরিমানে রেমডেসিভির (বেমসিভির) কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য অনুদান হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে৷''