সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কারাবন্দি ইমরান খানের দল পাকিস্তানের নির্বাচনে প্রবল চাপের মুখে৷ চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন নওয়াজ শরীফ৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠন অনিয়মের অভিযোগ করছে৷
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনি প্রচারে হাতে আস্ত বেগুন নিয়ে ভোটারদের সমর্থন চাইছেন ইসলামাবাদের নির্দলীয় প্রার্থী আমির মুগল৷ আসলে তিনি জেলবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থক৷ তার তেহরিক-ই-ইনসাফ দল বৃহস্পতিবারের সাধারণ নির্বাচনে নিজস্ব ক্রিকেট ব্যাট মার্কায় ভোট চাইতে পারছে না৷ ফলে দলের প্রার্থী ও সমর্থকরা বাধ্য হয়ে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে আসরে নেমেছেন৷ নির্বাচন কমিশনই তাদের শাকসবজির মতো বিভিন্ন চিহ্ন বরাদ্দ করে দিয়েছে৷ কিছু প্রার্থী সেগুলিকে ‘অপমানজনক' হিসেবে বর্ণনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে ‘নিরপেক্ষ' প্রশাসনও তাদের ঠিকমতো নির্বাচনি প্রচার করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে৷
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠনও ইমরান খানের দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের ‘হয়রানির প্যাটার্ন' সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে৷ সংগঠনের শীর্ষ কর্মকর্তা পাকিস্তানে মুক্ত ও অবাধ নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন৷ পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ অবশ্য যাবতীয় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ করে নির্বাচনের উপর নজর রাখার সুযোগ করে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংগঠন পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি না করার ডাক দিয়েছে৷
কিন্তু নির্বাচনের আগেই ইমরান খানের বিরুদ্ধে একাধিক কারাদণ্ডের রায় এবং তার দলের কার্যকলাপের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাধা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে৷ অতীতের মতোই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইশারায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পরিচালনার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে৷ এককালে নওয়াজ শরীফকে কোণঠাসা করতে ইমরান খানকে মদত দেবার পর সেনা কর্মকর্তারা নাকি এবার সেই নওয়াজকেই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান৷ পিপলস পার্টির বিলাওয়াল ভুট্টোও বেশ কিছু ভোট আদায় করতে পারেন৷ জনমত সমীক্ষা ও একাধিক পূর্বাভাস অনুযায়ী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে জোট সরকার গড়ার সম্ভাবনাই বেশি৷ তবে অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, সামরিক বাহিনীর সম্মতি ছাড়া আগামী সরকারের পক্ষে দেশের একাধিক চ্যালেঞ্জ সামলে কার্যকাল সম্পূর্ণ করার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ৷ উল্লেখ্য, নওয়াজ শরীফও কোনো বার তার কার্যকাল শেষ করতে পারেন নি৷
এসবি/জেডএইচ (এএফপি, এপি)
মহাসংকটে ইমরান খান
আরেকটি মামলায় সাজা হওয়ায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভবিষ্যৎ এখন বড় এক প্রশ্নের মুখে৷ কারামুক্তির পর আবার তিনি রাজনীতির ময়দানে ফিরতে পারবেন কিনা এ নিয়ে সংশয় বেড়েই চলেছে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: AKRAM SHAHID/AFP
এবার ১৪ বছরের কারাদণ্ড
গোপন তথ্য ফাঁসের মামলার পর এবার আরেক মামলাতেও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কারাদণ্ড হলো৷ এবার তার স্ত্রীকেও কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক ই-ইনসাফ (পিটিআই) জানিয়েছে, রাষ্ট্রের উপহার অবৈধভাবে বেচার অভিযোগে বুধবার ১৪ বছরের কারাবাসের শাস্তি দেয়া হয়েছে ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা খানকে৷ এই নিয়ে গত একমাসে তৃতীয়বার সাজা দেওয়া হলো ইমরানকে৷
ছবি: Arif AliAFP
যেসব উপহার বিক্রির কারণে এই সাজা
২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ইমরান রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসাবে প্রাপ্ত প্রায় ১৪ কোটি পাকিস্তানি রুপি মূল্যের উপহার বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ৷ উপহারগুলি দুবাইতে বিক্রি করে ইমরানের সহকারীরা৷ সাবেক তথ্যমন্ত্রী এই উপহারের তালিকা প্রকাশ করে দেন৷ তালিকায় সুগন্ধী, হীরের গয়না, মূল্যবান বাসন ও সাতটি ঘড়ি রয়েছে যার মধ্যে ছ’টিই রোলেক্স৷ একটি ঘড়ির দাম সাড়ে আট কোটি পাকিস্তানি রুপি৷
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP
পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থা ও ইমরান
পাকিস্তানের একটি দুর্নীতি দমন বিষয়ক আদালতে বুধবার ইমরান ও তার স্ত্রীর ১৪ বছরের কারাদণ্ড হয়৷ রায়ে আরো বলা হয়, আগামী দশ বছর কোনো সরকারি পদ গ্রহণ করতে পারবেন না ইমরান৷ তার মিডিয়া টিম সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘‘আমাদের বিচারব্যবস্থা, যা প্রতি দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে, তার আরো একটি কালো দিন এটি৷’’
ছবি: AKRAM SHAHID/AFP
দীর্ঘ কারাবাসের আশঙ্কা
এর আগে মঙ্গলবার রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁসের অপরাধে আরেকটি আদালতে ১০ বছরের সাজা হওয়ায় ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এখন গভীর সংকটের মুখে৷ পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের বাকি মাত্র এক সপ্তাহ৷ এই নির্বাচনে যে তার অংশগ্রহণ করা হবে না তা নিশ্চিত, আগামীতেও আর কোনোদিন তার ভোটের মাঠে লড়া সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়৷
ছবি: Athar Hussain/REUTERS
ইমরানের পক্ষের বক্তব্য
ইমরান খানের মিডিয়া টিমের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘আদালতে কোনো পাল্টা সওয়াল করতে দেওয়া হয়নি, কোনো চূড়ান্ত আলোচনা হয়নি, তবুও সিদ্ধান্ত শোনানো হয়ে গেল, যেন আগে থেকেই সব ঠিক করা ছিল৷ এই হাস্যকর রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করবো৷’’
ছবি: AFP
বুশরার গ্রেফতার যে কারণে
বুশরা খান ইমরানের তৃতীয় স্ত্রী৷ তাকে ইমরান বিয়ে করেন ২০১৮ সালে৷ এর আগে, ইমরানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে সাজা ঘোষণা হলেও বুশরার নাম এই প্রথম কোনো মামলায় জড়ালো৷ পিটিআই-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আইনজীবী গওহর আলি খান একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘এই মামলার সাথে বুশরার কোনো যোগ নেই৷’’ বুশরার গ্রেফতার শুধুই ইমরানকে আরো চাপে ফেলার উদ্দেশ্যে করা, বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: Asif Hassan/AFP/Getty Images
অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ
ইমরান খানের দলের দাবি, ২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত হবার পর পিটিআই-এর সমর্থকদের সামরিক শক্তির সাহায্যে দমন করা হয়েছে৷ তাদের অভিযোগ, শয়ে শয়ে দলের কর্মী, সমর্থক ও সহকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে৷ এই অভিযোগ খারিজ করে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী, যাদের সাথে ইমরানের বনিবনা ২০২২ সালের পর থেকেই ভালো নেই৷
ছবি: Mohsin Raza/REUTERS
অতীত যা বলে...
পাকিস্তানের রাজনীতিতে এর আগেও দুর্নীতি দমন বিষয়ক আদালত, ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো, বিভিন্ন সময়ে ২০০৮ সাল থেকে প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার করে তাদের কারাবাসের সাজা শুনিয়েছে৷ সেই ধারা থেকে বাদ পড়েননি আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য জয়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও৷ ফলে পাকিস্তানে ইমরানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনো হয়ত আসেনি৷
ছবি: Arif Ali/AFP/Getty Images | Daniel Leal/AFP/Getty Images