জার্মানিতে স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে৷ ফলে বিভিন্ন কোম্পানি অফিসগুলোতে ভেগান আর ভেজেটেরিয়ান খাবার সরবরাহ করছে৷ আর তাদের বেচে যাওয়া খাবার বিক্রি করছে একটি স্টার্ট-আপ কোম্পানি৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Lubenow
বিজ্ঞাপন
‘গ্রিনগুরু' নামে একটি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রিওস প্লুটার্চোস বলেন, ‘‘বর্তমানে সবাই সব কিছু তাড়াতাড়ি চায়৷ তারা একটি বোতাম চেপেই সবকিছু পেতে চায়৷ দুপুরবেলায় এই কথাটি আরও সত্য হয়ে ওঠে, কারণ সেই সময় সবাই খুব ব্যস্ত থাকে৷''
জরিপ বলছে, জার্মানির প্রতি তিনজনের দু'জন মনে করেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরি৷ সুপারমার্কেটে বেচাবিক্রির হিসাব থেকে এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়৷ কারণ ক্রমেই সেখানে মাংস বিক্রির জায়গা নিয়ে নিচ্ছে সবজি৷ প্রতি ১০০ জার্মানের একজন এখন ভেগান৷
ফাবিয়ান শ্টাইনেকার নামের একজন ভেগান বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে ভেগানদের সংখ্যা বেশ বেড়েছে৷ ভেগানিজমের প্রতি অনেকেই আকৃষ্ট হচ্ছেন৷ একটা সময় হয়ত সংখ্যা বৃদ্ধির হারটা কমে আসতে পারে৷ তবে ভেগানিজমের একটা টেকসই ভবিষ্যৎ আছে বলেই আমি মনে করি৷''
জার্মানিতে মাংস বিক্রির জায়গা নিচ্ছে সবজি
02:57
This browser does not support the video element.
কিন্তু মাংস বিক্রেতারা বলছেন অন্যকথা৷ তাঁদের মতে, ভেগান আর ভেজেটেরিয়ানের সংখ্যা আসলে অনেক কম৷ আর মাংসের চাহিদা সবসময়ই থাকবে বলে মনে করেন তাঁরা৷ মাংস বিক্রেতা নোর্বার্ট ক্নপ বলেন, ‘‘আমাদের ক্রেতারা এখনও মাংস খাচ্ছেন৷ তাঁরা হয়ত একটু কম খাচ্ছেন, কিন্তু তাঁরা আসলে ভালো মানের মাংস চান৷''
‘গ্রিনগুরু' সার্ভিস সেন্টারে বেচে যাওয়া সালাদ ফেলে দেয়া হয় না৷ কারণ আছে স্টার্ট-আপ কোম্পানি ‘রেসকিউ'৷ তারা এই ধরনের বেচে যাওয়া খাবার বিক্রিতে সহায়তা করে৷ এভাবে তারা গত বছর প্রায় এক লক্ষ খাবার মিল ফেলে দেয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে৷ রেসকিউ কোম্পানির আনা বিকেনবাখ বলেন, ‘‘রেসকিউ একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ক্রেতারা রেস্তোরাঁ আর ক্যাফেটেরিয়া থেকে এমন সব খাবার অর্ডার করতে পারেন, যেগুলো ফেলে দেয়া হবে৷ এগুলো কম দামে কিনতে পারেন তাঁরা৷ এভাবে আমরা ইউরোপে প্রায় ৩০ হাজার কেজি খাবার নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে থাকি৷''
ভবিষ্যতে নিজের পছন্দ অনুযায়ী খাবার অর্ডার করা যাবে৷ থ্রিডি প্রিন্টারে আপনার খাবার তৈরি হবে৷ খাবারের মান, রং আর আকার আপনি ঠিক করে দিতে পারবেন৷
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার খান, শরীর ও মনোযোগ ঠিক রাখুন
আজকের এই প্রতিযোগিতার যুগে কর্মক্ষেত্রে শরীর আর মনোযোগ ঠিক রাখতে প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাবার৷ হাজারো কাজের চাপে কি তা সম্ভব? অবশ্যই, আর তারই কিছু টিপস থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Fotolia/CandyBox Images
দুপুরের খাবার জরুরি
সকালে তাড়াহুড়ো করে বের হওয়ার কারণে বেশিরভাগ কর্মজীবিরই ঠিকমতো নাস্তা করা হয়না৷ সেক্ষেত্রে দুপুরের খাবারটা খুবই জরুরি৷ অনেককেই দেখা যায় নিজের টেবিলে কাজ করতে করতেই টুকটাক খেয়ে লাঞ্চ সেরে ফেলেন৷ কেউবা মনোযোগ ধরে রাখতে কিছুক্ষণ পরপরই কফি পান করেন আবার কেউ রাতে বাড়িতে ভালো খাবেন বলে অফিসে একটা কিছু খেয়ে নেন৷ বিশেষজ্ঞদের মতে এ নিয়ম মোটেই ঠিক নয়৷
ছবি: Fotolia
প্রয়োজনে বাড়ি থেকে নিয়ে যাবেন
রাতে যখন বাড়িতে রান্না হচ্ছেই সেখান থেকে সামান্য খাবার কর্মস্থলে নিয়ে গেলেই আর কোনো সমস্যা থাকেনা৷ আজকাল অনেক সুন্দর বক্স পাওয়া যায় বাজারে যাতে খাবার তাজা এবং গরম থাকে৷ আর অফিসে মাইক্রোওয়েভ থাকলে তো কথাই নেই৷ তাছাড়াও এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো ঠান্ডা অবস্থায়ও খেতে মন্দ লাগেনা৷ যেমন নুডলসের সাথে টমেটোর সস, ঠান্ডা মুরগি টুকরো,সাথে সালাদ৷বাড়ি থেকে নেওয়া খাবারে অন্তত জানা থাকে আপনি কী খাচ্ছেন৷
ছবি: DW/M. Krishnan
স্বাস্থ্যসম্মত স্যান্ডউইচ
মানুষের শরীরে দিনে কমপক্ষে ১০০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার প্রয়োজন৷ তাই ভুষি বা দানাযুক্ত রুটির ভেতরে মুরগীর মাংসের স্লাইস, মাছ,শষা,টমেটো, সালাদ পাতা দিয়ে তৈরি করে ফেলুন স্বাস্থ্যসম্মত স্যান্ডউইচ, যা খেতে মজা সহজে হজম হবে,পেটকে রাখবে পরিষ্কার আর রুটিতে থাকা শর্করা যোগাবে শক্তি৷ টমেটো এবং সালাদ থাকায় তাজা ভাব আসবে শরীরে৷ ছবিতে জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে দুপুরে স্যান্ডউইচ খেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Küstermann
ভিটামিনযুক্ত তাজা সালাদ
জার্মানিতে দুপুরে অনেকেই শুধু সালাদ খেয়ে থাকেন৷ সুন্দর করে কাটা এসব সালাদে থাকে নানারকম সালাদ পাতা, টমেটো, গাজর, বিট, আপেল৷কেউ দেন মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ বা অন্যান্য ফলের বীজ৷ কেউবা দেন একেবারে চিকন করে কাটা কয়েক স্লাইস হালকা ভাজি করা মুরগির মাংস৷ আর সালাদটি রসালো করতে ছড়িয়ে দেন লেবু, দই, অলিভওয়েল বা তিলের তেল, সামান্য লবন আর চিনি৷ ক্লান্তি দূর করে ভিটামিনে ভরপুর এই সালাদ যে কাউকে করবে তরতাজা৷
ছবি: Fotolia
কর্মক্ষেত্রে ভেবে খাবেন
অফিসে হঠাৎ করে খুব খিদে পেলে তখন অনেকেই ঝটপট বিস্কুট, কেক বা এধরনের কিছু খেয়ে ফেলেন৷ এসব খাবারে কিছুক্ষণের জন্য পেট ভরলেও খুব তাড়াতাড়িই এনার্জি নীচের দিকে চলে যায়৷ বরং কিছু বিভিন্ন ধরণের বাদাম, শুকনো ফল, ইত্যাদি একটি কোটাতে ভরে অফিসে রেখে দিলে এসব পরিস্থিতে খাওয়া যায়৷ প্রোটিনের উৎস বাদামের মধ্যে আখরোটে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ব্রেনকে নানা রোগ থেকে দূরে রাখে৷
ছবি: Fotolia/Stephanie Eckgold
ফল বা সবজির জুস
সাথে নিতে পারেন ফল বা গাজর, টমেটোর মতো সবজির জুস৷ বা একসাথে সব মিশিয়ে হতে পারে এক মজার জুস৷ রঙিন ফল বা সবজিতে থাকে লাইকোপেন, যা শরীর খুব সহজে গ্রহণ করতে পারে এবং দেহে এনে দেয় এক তরতাজাভাব, পূরণ করে শরীরের ভিটামিন এ, বি ১২ এবং সি-এর অভাব৷ শুধু জুস নয়, দিনে একটি আপেলও খেতে পারেন অফিসে বসে৷ আপেলে রয়েছে মিনারেল, আয়রন এবং প্রচুর ভিটামিন, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন৷
কফি, তবে বেশি নয়!
অফিসে কফি পান একেবারেই স্বাভাবিক৷ কফি কিছুক্ষণের জন্য মস্তিস্ককে চাঙ্গা করে ঠিকই তবে যারা বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে চান তাদের জন্য পরামর্শ, দিনে যত ইচ্ছে সবুজ চা পান করুন৷ সবুজ চা’য়ে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, তাছাড়া শরীরে পানির অভাবও পূরণ করবে৷ তাছাড়া অফিসে দিনে অন্তত এক লিটার পানি পান করা উচিত৷
ছবি: Fotolia/Dan Race
বিশ্রামের সময় মনকে ঘুরিয়ে দিন
সময় নেই ভেবে কম্পিউটারে কাজ করার সময় কখনো খাবেন না, কারণ এতে ব্রেনের কোনো বিশ্রাম হয়না৷ কিছুক্ষণের জন্য কাজ একদম বাদ দিয়ে ধীরে সুস্থে খান, সুন্দর কিছু ভাবুন৷ ইচ্ছে করলে সহকর্মীদের সাথে খেতে পারেন, হালকা কোনো আলাপ করুন৷ মনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেই কেবল পুরোপুরি বিশ্রাম সম্ভব৷ বিশ্রামের সময় কম হলেও তা হয় সুন্দর এবং অর্থবহ৷ ওপরের পরামর্শগুলো দিয়েছেন কোলনের ডাক্তার ক্লাউস ইয়োর্গেন শ্ল্যুইটার৷