1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেতনে লিঙ্গ বৈষম্য

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
৭ জুলাই ২০১৮

ভারতে কর্মক্ষেত্রে বেতন কাঠামোতে লিঙ্গবৈষম্য চোখে পড়ার মতো৷ একই কাজের জন্য পুরুষ যা বেতন বা পারিশ্রমিক পান, মহিলারা পান তার থেকে ২০ শতাংশ কম৷ পরামর্শদাতা সংস্থা ম্যাকেঞ্জির এক সমীক্ষায় এই তথ্যই উঠে এসেছে৷

October 27 2016 Petrapole Border India Bangladesh Border India Indian Border Security Force
ছবি: Imago/ZUMA Press

সমাজের সর্বস্তরে মহিলা নির্যাতনের হার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, সন্দেহ নেই৷ কিন্তু এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে,  কর্মক্ষেত্রে হোক বা ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে হোক, দক্ষিণ এশিয়ায় নারীদের প্রতি বৈষম্যের তালিকায় ভারতের স্থান ওপরের দিকে৷ কর্পোরেট ক্ষেত্রে চাকুরিরতা মহিলা একই কাজে বা একই দায়িত্ব বহন করা সত্ত্বেও তুল্যমূল্য হিসেবে পুরুষদের থেকে ২০ শতাংশের মতো কম বেতন পান ৫০ শতাংশ মহিলা কর্মী৷ কায়িক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে আরও কম পান৷ পরামর্শদাতা সংস্থা ম্যাকেঞ্জির রিপোর্টে উঠে এসেছে এসব তথ্য৷ রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের সুযোগ চীন, জাপান, ফিলিপাইন্স, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের থেকেও কম৷ লিঙ্গভিত্তিক বেতন বৈষম্যের মাপকাঠিতেও ভারত রয়েছে প্রথম সারিতে৷

ভারতে ৩০ শতাংশ মহিলা কর্মরত৷ অন্যদিকে আরো অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত মহিলারা৷ বেতন বৈষম্য বেশি চোখে পড়ে মূলত মিডিয়া, তথ্য প্রযুক্তি এবং ছোট ও মাঝারি মাপের শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থায়৷ মিডিয়ায় বেতন বৈষম্যের জলন্ত উদাহরণ বিবিসি৷ সেখানে কর্মরত পুরুষ কর্মীরা গড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি বেতন পান মহিলা কর্মীদের তুলনায়৷ বিবিসি কর্তৃপক্ষ স্বয়ং এই বৈষম্য স্বীকার করে তা সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছে৷ ম্যাকেঞ্জির রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭২ শতাংশ মহিলা ইন্টরনেটের সুবিধা পান যেটা জাপান, থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়ার মতো দেশের তুলনায় বেশ কম৷ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতীয় মহিলাদের অবস্থা নৈরাশ্যজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁরা মনে করেন, বিভিন্ন সংস্থা আইনের বাধ্যবাধকতার জন্য মহিলাদের কাজে নিয়োগ করে থাকে৷ ফলে বেতন বা পারিশ্রমিকে বৈষম্য থাকছে৷ মহিলাদের দিয়ে বাড়তি কাজ করানো হচ্ছে বিনা ওভারটাইমে৷ এটা নারীদের প্রতি বৈষম্যের নতুন সমীকরণ৷

লীনা গঙ্গোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

এ বিষয়ে ডয়চে ভেলের কাছে বক্তব্য রাখলেন পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়৷ তিনি বললেন, ‘‘যাঁরা এই সমীক্ষা করেছেন, তাঁরা কতটা অনুমানভিত্তিক জানি না৷ তবে হ্যাঁ, বেতন বৈষম্য কিছুটা তো আছেই৷ রাজ্য মহিলা কমিশনের তরফেও কিছু কিছু সমীক্ষা চালানো হয়৷ যেখানে বৈষম্য দেখছি, সেখানে তা দূর করার চেষ্টা করছি, বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে৷ আমরা তো জানি, মেয়েদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ভালো নয়৷ ফলে বাইরে তাঁদের কাজ করতে যেতে হয়৷ সেখানেও তাঁদের যথেষ্ট বাধা-বিপত্তি এবং হেনস্থার শিকার হতে হয়৷

এর বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন হচ্ছে না কেন? ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘একেবারেই যে হচ্ছে না, তা নয়৷ হচ্ছে৷ আমি নিজে এনজিওর সঙ্গে যুক্ত৷ বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে আমরা রিপোর্ট পাই৷ সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা মনিটরিং করি৷ আমাদের এক্তিয়ারে আছে এমন কিছু কিছু বৈষম্য আমরা দূর করতে পেরেছি৷ গোটা দেশের কথা অবশ্য বলতে পারবো না৷''

‘‘আজকের যুগে মহিলারা কোনো অংশে পুরুষের তুলনায় কম নয়৷ তা সে রাষ্ট্র পরিচালনা হোক, শিক্ষা জগতে হোক বা চাষবাসে৷ কাজেই বৈষম্য থাকাটা মোটেই অভিপ্রেত নয়৷ তবে হ্যাঁ, এত বড় দেশ, এত বেশি সামাজিক কাঠামো, এতদিন ধরে চলে এসেছে যেটা, একদিনে তা বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ তবে যাঁরা বৈষম্যের বলি, তাঁরা যদি এগিয়ে আসেন, আরো সক্রিয় হন, তাহলে কাজ হবে৷ কিন্তু সেটা হচ্ছে না৷ মহিলা কমিশন তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁরা বিরক্তবোধ করেন৷ বলেন, জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করা যায় না৷ মানসিকতা খানিকটা এই রকমই৷ তবে এর ব্যতিক্রমও আছে৷ অনেক মহিলা তাঁদের প্রতি অবিচারের অভিযোগ নিয়ে কমিশনে আসেন৷ আমরা তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই৷ অনেক শিক্ষিকা সরকারি নতুন আইন অনুসারে ৩৬ সপ্তাহ সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি নিলে তাঁর চাকরি আর থাকে না৷ আমরা সেখানে হস্তক্ষেপ করি৷ আইন থাকলে তা প্রণয়ন করতেই হবে,'', ডয়চে ভেলেকে এমনটাই বললেন পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়৷

ম্যাকেঞ্জির সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ৭০ শতাংশ ভারতীয় মনে করেন, কর্মরত মহিলাদের সন্তানরা অবহেলিত৷ এই ছবি সামাজিক সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে৷ এর পেছনে পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতাকেই দায়ী করছেন বিশেষরা৷ সন্তান প্রতিপালনে মা এবং বাবার সমান দায়িত্ব না থাকলে এটা রোধ করা সম্ভব নয়৷ এর জন্য একটা ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷ সংসার ও শিশু সন্তান সামলানোর ফলে মেয়েদের কাজের পরিসর সীমিত হয়ে পড়ছে৷ কাজের বাজারে অংশগ্রহণ কম হওয়ায় বেতন নিয়ে মহিলারা দরাদরি করার সুযোগ পাচ্ছেন না৷ সরকার সম্প্রতি মেটারনিটি লিভ বা মাতৃত্বকালীন সবেতন ৩৬ সপ্তাহ ছুটি বাধ্যতামলক করার আইন করেছেন৷ এটা বাণিজ্যিক স্বার্থে বেসরকারি নিয়োগকর্তাদের পছন্দ নয়৷ তাই মেয়েদের নিয়োগ সীমিত রাখতে চান তাঁরা৷ কর্মস্থলে ৪০ শতাংশ মহিলা হেনস্থার শিকার৷ বিশেষজ্ঞদের এক সমীক্ষায় মহিলাদের জন্য সব থেকে বিপজ্জনক দেশ নাকি ভারত৷ শুধু বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা কেন? ভারত সরকারের তথ্য বলছে, ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মহিলাদের উপর ৮৩ শতাংশ অপরাধ বেড়েছে৷ প্রতি ঘন্টায় এখানে চারটি ধর্ষণের খবর আসে৷ শুধু ধর্ষণ বা যৌন হিংসাই নয়, মেয়ে পাচার, যৌন নির্যাতন, কন্যাভ্রুণ হত্যা ও লেখাপড়া ছাড়িয়ে জোর করে নাবালিকা বিয়ে সমানে ঘটছে৷ সেদিক থেকে দেখতে গেলেও ভারতের ছবিটা শঙ্কাজনক৷ তখন মোদী সরকারে ‘বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও' শ্লোগান শূন্যগর্ভ মনে হয়৷

আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ