স্কুল চলাকালীন মিটিং-মিছিলে অংশ নেওয়া যাবে না৷ এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তবে আন্দোলনকারীরা মনে করেন, এভাবে আসলে প্রতিবাদের কন্ঠরোধ করতে চাইছে সরকার৷
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষকরা ন্যায্য বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন৷ গত ২৯ ও ৩০ অক্টোবর কলকাতার শহীদ মিনারে বড় আকারের সমাবেশ করে প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি সংগঠন৷ সেই সমাবেশে হাজির ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা৷ এই সমাবেশের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ এই সমাবেশের উল্লেখ না করলেও কাজের দিনে মিটিং-মিছিল করা নিয়ে যে হুঁশিয়ারি শিক্ষামন্ত্রী দিয়েছেন, তা ২৯ ও ৩০ অক্টোবরের সভা সম্পর্কে বলেই অনেকে মনে করেছেন৷
ওই সমাবেশের পর তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠনের সঙ্গে এক বৈঠকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমাবেশ করতে হলে ছুটির দিনে করুন৷ ক্লাসের সময় নয়৷'' শুধু অনুরোধেই বিরত থাকেননি শিক্ষামন্ত্রী৷ তিনি বলেছেন, ‘‘স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও পরে হাজিরা খাতায় সই করে দেবেন, ক্লাস কামাই করবেন, এসব মেনে নেওয়া হবে না৷ জেলা পরিদর্শক ও প্রশাসনকে এ বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে৷ নির্দেশ অমান্য হলে শিক্ষকদের বেতন কেটে নেওয়া হবে৷''
কার্তিক মান্না
শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে অনেকে মনে করছেন৷ বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ও অল বেঙ্গল স্টেট এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক মান্না বলেন, ‘‘এ সব বাজে কথা৷ এই বাহানা করে আন্দোলন বন্ধ করার চেষ্টা৷ এর সঙ্গে বাস্তবের কোনো সম্পর্ক নেই৷ ছুটির দিনে আন্দোলন হয় না৷ প্রশাসনিক দপ্তর বা মন্ত্রীর অফিস, সবই তখন বন্ধ থাকে৷ তাই ছুটির দিন আন্দোলন করার পরামর্শ দেওয়া যায় না৷ শিক্ষকেরা ছুটি নিয়েই আন্দোলনে যোগ দেন৷ তাঁরা স্কুল কামাই করেন, অথচ হাজিরা খাতায় সই করে দেন, এটা হয় না৷''
যে শিক্ষক সংগঠনের সমাবেশ নিয়ে এত কথা উঠছে, তার নাম ‘উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন'৷ এই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের সভার দিন দুটি সোম ও মঙ্গলবার হলেও তা পুজোর ছুটির মধ্যেই পড়েছিল৷ তখনই আমাদের সমাবেশ হয়েছিল৷ কোনো শিক্ষক স্কুল কামাই করে সমাবেশে আসেননি৷''
ওই সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী৷ তিনি তাঁদের দাবি তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও লিখেছেন৷ সুজন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সোম ও মঙ্গল হলেও পুজোর ছুটি ছিল৷ উনি যা বলেছেন, সেটা ওঁর দলই মানে না৷ যারা বিধানসভা ভাঙচুর করে, যারা চালু শিল্প নষ্ট করে, যারা প্রতিদিন একটা করে শিল্প বন্ধ করে দেয়, তাদের কাছ থেকে এসব জ্ঞানের কথা শোনার মানে হয় না৷''
দুর্লভ ছবিতে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস
বাংলাদেশে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ ও ৬৪ সালের শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ছয় দফার আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন ছাত্রসমাজের ভূমিকা অপরিসীম৷
ছবি: Journey/A. Hoque
ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা
এদেশের ভূখণ্ডের জন্মের সঙ্গে মিশে আছে ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা৷ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-র শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ’৬৬-র ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ১১ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনসহ প্রতিটি ঐতিহাসিক বিজয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি ও আন্দোলন সফল করায় তৎকালীন ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা অপরিসীম৷
ছবি: Journey/A. Hoque
তৎকালীন ছাত্রনেতারা
নূরে আলম সিদ্দিকী, আসম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন থেকে শুরু করে তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন এবং ওই সময়ের অন্যসব জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের ছাত্রনেতারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার রাজনীতি করতেন৷
ছবি: Journey/A. Hoque
ভাষা আন্দোলন
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যে ছাত্ররা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে পরবর্তীতে তারা প্রত্যেকেই এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে একেকটি পিলার হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন৷ ১৯৫২ সালে পূর্ববাংলায় বাম রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গড়ে ওঠে ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন৷
ছবি: Journey/R. Hoque
বঙ্গবন্ধু পথপ্রদর্শক
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী যে কোনো রাজনীতিবিদ ও ছাত্র সংগঠনগুলোর জন্য পথপ্রদর্শক৷ বঙ্গবন্ধু অল্প বয়স থেকে রাজনীতি ও অধিকার সচেতন ছিলেন এবং সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Journey/M. Alam
ছয়দফা কর্মসূচি
১৯৬৬ সালে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসের যুগান্তকারী ঘটনা৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচি এবং পরবর্তীকালে তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজু হলে ছয়দফা সমর্থন ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে ছাত্রদের মধ্যে এক নজিরহীন ঐক্য গড়ে ওঠে৷
ছবি: Journey/A. Hoque
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান
১৯৬৯ সালে সকল ছাত্রসংগঠন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এবং জাতীয় ও সমাজতান্ত্রিক ধারণাপুষ্ট ১১-দফা দাবিনামা উপস্থাপন করে৷ এর ফলে আইয়ুব খানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবকে মুক্তিদানে বাধ্য হয়৷ মুক্তিলাভের পর শেখ মুজিবুর রহমান এক জনসমাবেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রদত্ত ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি গ্রহণের মাধ্যমে ছাত্রদের এ প্রভাবকে স্বীকৃতি দেন৷
ছবি: Journey/R. Talukder
স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রদের ভূমিকা
১৯৭১ সালের ১ মার্চের পরে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশ জাতিসত্তার ধারণাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অগ্রসর হয়৷ ১৯৭১ সালের ২ মার্চ তারা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে৷ পরদিন তারা পল্টন ময়দানে ‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়৷ শেখ মুজিবের সাতই মার্চের ভাষণ ছিল ছাত্রদের আকাঙ্ক্ষারই বহিঃপ্রকাশ৷
ছবি: Journey/R. Talukder
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
১৯৭১ সালের পঁচিশ মার্চের মধ্যরাতে জনগণের উপর পাকবাহিনীর আক্রমণ ৩ মার্চ ছাত্রদের স্বাধীনতা ঘোষণার যৌক্তিকতা প্রমাণ করে৷ ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণা ছিল বস্তুত ৩ মার্চ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের স্বাধীনতা ঘোষণারই স্বীকৃতি৷ উল্লেখ্য, মুজিবনগর সরকার যথার্থভাবেই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জাতীয়তাবাদী অভিধাগুলি, যেমন দেশের নাম, জয় বাংলা স্লোগান, জাতীয় পতাকা ইত্যাদিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল৷
ছবি: Journey
মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র সমাজ
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা ছিল অহঙ্কার করার মতো৷ গোটা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা৷ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শিক্ষার্থীদের বড় অংশ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়৷
ছবি: Journey/M. Alam
স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এবং ১৯৯১ সালে তাঁর পতন ঘটানোর ক্ষেত্রে পুনরায় ছাত্ররা ঐক্য ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে৷ ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সেনাশাসক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের পতন হয়৷ শুরু হয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রযাত্রা৷
ছবি: Journey/Y. Saad
২০০২ শামসুন্নাহার হল আন্দোলন
২০০২ সালের ২২ জুলাই রাত ১টায় অর্থাৎ ২৩শে জুলাই দিবাগত রাতে শামসুন্নাহার হলে ছাত্রীদের ওপর রাতের অন্ধকারে পুলিশের নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় গড়ে ওঠা আন্দোলনে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ ২৩ শে জুলাই সকাল থেকে ছাত্রদল ব্যতীত ক্যাম্পাসের ক্রীয়াশীল সব ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে৷ ১ লা আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন ভিসি৷
ছবি: Journey/Z. Islam
২০০৭ সালে ছাত্র আন্দোলন
২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ফুটবল খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় চার শিক্ষক ও আট শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক হন আট শিক্ষক, এক কর্মকর্তা৷
ছবি: Journey/S.-M. Gorki
ছাত্র আন্দোলনের মুখে শিক্ষকদের মুক্তি
দু’দিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত কয়েকশ জন আহত হয়৷ পরে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে দণ্ড পাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষককে ডিসেম্বরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন সরকার৷ ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে আটক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের ছেড়ে দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷
ছবি: Journey/S.-M. Gorki
13 ছবি1 | 13
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষকদের কর্মসংস্কৃতি নিয়ে অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়৷ তাঁরা প্রায়ই ক্লাসের সময়ে মিটিং-মিছিলে যোগ দেন৷ ক্লাসের পঠনপাঠনে তাঁদের আন্তরিকতা নেই বলেও অভিযোগ করেন অনেকে৷ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এই পরম্পরা৷ কিন্তু, কেন শিক্ষকদের প্রায়ই মিছিল বা সমাবেশ করতে হয়? পৃথা বিশ্বাস বলেন, ‘‘বেতন কাঠামোর সে অর্থে কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ যোগ্যতামান অর্জন করেও আমাদের ন্যায্য বেতন দেওয়া হচ্ছে না৷ শিক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় হারে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে৷ শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই এই কাঠামো প্রায় আর্ধেক৷''
শিক্ষক সংগঠনগুলির মধ্যে অবশ্য বেতন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে পরস্পরবিরোধ রয়েছে৷ পৃথা যা মনে করছেন, তার সঙ্গে পুরোপুরি একমত নয় শাসকদলের শিক্ষক সংগঠন৷ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু বিষই বলেন, ‘‘দাবি তোলার অধিকার সকলেরই আছে৷ কিন্তু অন্যায় দাবি করা উচিত নয়৷ কেন্দ্রীয় সরকারের স্কেল অনুযায়ী বেতন দেওয়া সম্ভব নয়, রাজ্য সরকারের সীমাবদ্ধতার কথাও বুঝতে হবে৷ তার থেকে বড় কথা, বেতন কমিশন কাজ করছে৷ তারা শিক্ষকদের বেতনের বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে৷ আশা করি, ইতিবাচক কিছু হবে৷'' তাঁর মতে, ‘‘স্কুল চলাকালীন শিক্ষকদের সভা-সমাবেশ করা ঠিক নয়৷ এতে পঠনপাঠনের ক্ষতি হয়৷ ছাত্রদের স্বার্থে পড়াশোনার সময় আন্দোলন করা অনুচিত৷ শিক্ষামন্ত্রী যা বলছেন, তা ভেবেচিন্তেই বলছেন, এটা বলার অধিকার তাঁর আছে৷ দল থেকে আমাদের পরিষ্কার নির্দেশ দেওয়া আছে, শনিবার স্কুল ছুটির পর সভা করা যেতে পারে৷''
সংশ্লিষ্টদের মতে, শিক্ষকদের মনে অনেকদিন ধরেই নানা বিক্ষোভ জমা হয়েছে৷ তা সে ডিএ বৃদ্ধি হোক বা স্পোর্টসের অনুদান হোক, সব ক্ষেত্রেই শিক্ষকেরা বঞ্চিত৷ তবে পৃথা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা রাজনীতির মধ্যে নেই৷ প্রায়ই যে মিছিল বা সভা করি, এমনটা নয়৷ এটা আমাদের শুধু বেতনের ব্যাপার নয়, সম্মানেরও ব্যাপার৷''
শিক্ষামন্ত্রীর বেতন কেটে নেওয়ার বার্তা শুনে কার্তিক মান্না বলেন, ‘‘ছুটি নিয়ে আন্দোলনে গেলে বেতন কাটার প্রশ্ন আসে না৷ তাহলে পরিষ্কার করেই বলুন যে, আন্দোলন করতে দেবো না৷ সে কারণেই বেতন কাটার প্রশ্ন আসছে৷ আসলে এটা যে জবরদস্তি আন্দোলন বন্ধ করার চেষ্টা, সেটা বোঝা যাচ্ছে৷''
আগামী ২৫ নভেম্বর কনভেনশনের ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি৷ দিনটি রবিবার৷ সরকারপন্থি শিক্ষকেরা শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ অনুসরণ করছেন৷ এটিকে আগের জমায়েতের পালটা হিসেবেই দেখা হচ্ছে৷ তাহলে কি শুধু রবিবারই আন্দোলনের কর্মসূচি নিতে হবে? সুজন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাগলের মতো কথা বলছে৷ দাদাগিরি ও চোখ রাঙানোই একমাত্র কাজ তৃণমূলের৷ স্কুলের চৌকাঠ যারা মাড়ায়নি, তারা স্কুল-কলেজের শিক্ষা নিয়ে মাতব্বরি করবে, শিক্ষকদের হুমকি দেবে, এটাই আমাদের রাজ্যে দস্তুর৷''
সুজন চক্রবর্তী
বাম নেতার ক্ষোভ, ‘‘ভারতের মধ্যে সবচেয়ে কম বেতন পান পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকেরা৷ সে ফুলটাইম হোক বা পার্টটাইম, প্যারাটিচার হোক বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক, এসএসকে হোক বা শিক্ষাবন্ধু — যে সরকার টাকা দেয় না, কর্মচারী- মাস্টারমশাইদের টাকা লুঠ করে মেলা-খেলা করে, তাদের এই হুমকি মেনে নেওয়া যায় না৷''
শিক্ষকরা যে দীর্ঘদিন ধরেই ক্লাসের সময়েই মিটিং মিছিল করেন, এটা অসংখ্য অভিভাবকের অভিজ্ঞতা৷ বারাসতের সঞ্জয় বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা আজকের কাল্ট নয়, বহুযুগ আগের৷ ছুটির দিন বাড়িতে থাকবেন শিক্ষকরা৷ স্কুলের দিন মিছিল করবেন৷ বাম আমল থেকেই এটা ছিল৷ শিক্ষামন্ত্রীর কথায় ভুল নেই, তবে হঠাৎ কী উদ্দেশ্যে তিনি এটা বললেন, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়৷ তবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাবে বলে মনে হয় না৷''
সব দেশেই শিক্ষার ধরণ আলাদা
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই শিক্ষকরা চক দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে লেখেন – এ দৃশ্য তাই সবারই জানা৷ কিন্তু তারপরও দেশ ভেদে এর পার্থক্য রয়েছে, বিশেষকরে আজকের এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে৷
ছবি: Getty Images
সব স্কুল কি এক রকম?
সারা বিশ্বের ছাত্ররা একইভাবে পড়ালেখা শেখে? না, তবে প্রায় সব দেশেই শিক্ষকরা চক দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে লেখেন – এ দৃশ্য তাই সবারই জানা৷ কিন্তু তারপরও দেশ ভেদে এর পার্থক্য রয়েছে৷ কোনো দেশে ছাত্র-ছাত্রীরা খোলা আকাশের নীচে মাটিতে পা মুড়ে বসে লেখাপড়া করে, কোথাও আবার স্কুল বেঞ্চে বসে৷ আবার কোনো কোনো দেশের ছাত্রদের রয়েছে নিজস্ব ল্যাপটপ৷
ছবি: AP
ডিজিটাল স্কুলের বই
দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ডিজিটাল সিস্টেমে চলে৷ প্রতিটি ক্লাস রুমেই রয়েছে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট৷ সরকারের ইচ্ছে সব স্কুল বই পুরোপুরিই ই-বুকে রূপান্তরিত করার৷ ডিজিটাল সিস্টেমে লেখাপড়া করতে কোনো ছেলে-মেয়ের যেন অসুবিধা না হয় এবং ডিজিটাল বইয়ের অভাবে যেন কারো লেখাপড়া বন্ধ না হয়, সেজন্য সরকার বিনা মূল্যে তাদের ট্যাবলেট এবং কম্পিউটার দিয়ে থাকে৷
ছবি: AP
গ্রামের স্কুলে যাওয়ার অসুবিধা
অন্যভাবেও পড়াশোনা চলতে পারে৷ কোনোরকমে ঝুলানো একটি ব্ল্যাকবোর্ড এবং কয়েকটি কাঠের বেঞ্চই আফ্রিকার ঘানার এই স্কুলটির জন্য যথেষ্ট৷ এই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে লেখা পড়া করা যায়, যদিও কাগজে কলমে রয়েছে ক্লাস নাইন পর্যন্ত লেখপড়া বাধ্যতামূলক৷ পড়াশোনার মাধ্যম ইংরেজি হওয়ায় গ্রামের ছাত্রদের অনেকেরই লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন হয়৷
ছবি: Fotolia/Living Legend
টাচপ্যাডের মাধ্যমে লেখা শেখা
তবে জার্মানির এই স্কুলটি ব্যতিক্রম৷ কাগজ, পেন্সিল ছাড়া ছাত্ররা পুরোপুরি স্মার্টবোর্ড এবং নেটবুকের মাধ্যমে লেখা শেখে৷ ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং-এর ছাত্রদের যোগাযোগের কাজে সাহায্য করে এবং কর্মদক্ষতা বাড়ায়৷ জার্মানিতে এখনো দুই মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ লিখতে পড়তে পারেন না, যদিও পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে জার্মানির সবাই লেখাপড়া জানেন৷
ছবি: AP
শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ছোটবেলা থেকেই সুবিধা
শিল্পোন্নত দেশ মানেই সে দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের অন্যদেশের চেয়ে লেখাপড়ায় অনেক বেশি এগিয়ে থাকা৷ এমনকি ছোট বাচ্চাদেরও সেভাবেই তৈরি করা হয়, যেমন অ্যামেরিকার এই স্কুলটিতে৷ শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ছোটবেলার শিক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং ৭০ শতাংশ বাচ্চাই প্রাইমারি স্কুলে যাওয়ার আগে অনেককিছু শিখে ফেলে৷ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ১০ জনের মধ্যে হয়ত তিনজন কিন্ডারগার্টেনে যাওয়ার সুযোগ পায়৷
ছবি: AP
যেখানে শিক্ষা অর্থের জন্য বাঁধাগ্রস্থ
কেনিয়াতে সব ছাত্রই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়তে পারে৷ তারপরও অনেকে তার আগেই স্কুল ছেড়ে দেয়৷ স্কুল ড্রেস, বই, খাতা, জুতো ইত্যাদি জোগাড় করা অনেক বাবা মায়ের জন্য কষ্টকর হয় দাঁড়ায়৷ সেখানে ছাত্রের সংখ্যা অনেক বেশি এবং পড়াশোনার মানও নিম্ন৷ যাঁদের সামর্থ রয়েছে সে রকম অনেক বাবা-মা তাঁদের বাচ্চাদের প্রাইভেট স্কুলে পাঠান৷
ছবি: DW/J.Bruck
স্কুল ড্রেস পরে লেখাপড়া
ইংল্যান্ডে স্কুল ড্রেস ছাড়া কেউ স্কুলে যায় না৷ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্কুল ড্রেস পরা বাধ্যতামূলক৷ কারণ স্কুল ড্রেস যার যার স্কুলের পরিচয় বহন করে এবং পড়াশোনার প্রতি উৎসাহী করে৷ দরিদ্র পরিবাররের ছেলে-মেয়েরা স্কুল ড্রেসের জন্য স্কুল থেকে টাকা পেয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
খোলা আকাশের নীচে ক্লাসরুম
একটি পাবলিক পার্কে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে পাকিস্তানের একটি স্কুলে৷ গরিব বাবা-মায়েরা পয়সার অভাবে এমন স্কুলেই তাঁদের সন্তানদের পাঠিয়ে থাকেন৷ পাকিস্তানে শিক্ষা খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে, কারণ সরকার শিক্ষার চেয়ে সামরিক খাতে বেশি খরচ করে৷ যা ছাত্ররাও বুঝতে পারছে৷
ছবি: AP
কমপক্ষে মৌলিক শিক্ষা থাকতে হবে
আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ ও নানা সমস্যার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত৷ বিশেষকরে মেয়েদের ক্ষেত্রে একথাটি বেশি প্রযোজ্য৷ প্রতি দশজনের একজন লিখতে পড়তে পারে সেখানে৷ তবে এ হার পুরুষদের ক্ষেত্রে শতকরা ৪০ জন৷ তাছাড়া স্কুলগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট স্কুলও নেই, অভাব রয়েছে শিক্ষক এবং শিক্ষার সরঞ্জামেরও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত
আফগানিস্তানের মতো প্রায় একই অবস্থা দক্ষিণ সুদানেও৷ এদেশেও মেয়েদের প্রতি পাঁচজনের একজন লিখতে ও পড়তে পারে৷ সেজন্যই বিদেশি সাহায্য সংস্থাগুলো সুদানের মেয়েদের শিক্ষার দিকে বিশেষ নজর দিয়ে থাকে৷ বহু বছরের গৃহযুদ্ধ সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ঘুণ ধরিয়ে দিয়েছে৷ অনেক স্কুলেই বই-খাতা এবং টেবিল-বেঞ্চও ঠিকমতো নেই৷
ছবি: dapd
কো-এডুকেশন পছন্দ নয়
কো-এডুকেশন? না, ইরানে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ ছেলে এবং মেয়ে আলাদাভাবে পড়াশোনা করে ইরানে৷ এমন কি এই ইহুদি স্কুলেও ইসলামিক স্কুল ড্রেস পরা বাধ্যতামূলক৷ এখানে মেয়েরা যে ধর্মেরই হোক না কেন সবাইকেই চুল ঢেকে রাখতে হবে, অর্থাৎ হিজাব পরতে হবে৷
ছবি: AP
ধনী-গরিবের পার্থক্য
ব্রাজিলের গ্রামাঞ্চলের ছাত্রদের জন্য লেখাপড়া করা বেশ কঠিন৷ কারণ সেখানকার স্কুলগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই৷ যেমন মন্টে আলেগ্রের এই স্কুলটির মতো ৷ যদিও ব্রাজিল শিল্পোন্নত দেশগুলোর একটি, তারপরও এদেশে গরিব এবং ধনীদের মধ্যে অনেক পার্থক্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশের অবস্থা অনেকটা একই রকম
বাংলাদেশের গ্রামের স্কুল এবং রাজধানী ঢাকা শহরের স্কুলের মধ্যে বিশাল পার্থক্য৷ বড় শহরগুলোতে ছাত্ররা কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে৷ আর গ্রামের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কম্পিউটার ব্যবহার করার ইচ্ছা – এখনো স্বপ্ন!
ছবি: Getty Images
13 ছবি1 | 13
পায়েল সামন্তের এই লেখাটা আপনার কেমন লাগলো? জানান নীচের ঘরে৷