বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এ যাবতকালের বৃহত্তম ধর্মঘটে নেমেছেন ব্রিটেনের স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাজারো নার্স ও অ্যাম্বুলেন্সকর্মী যোগ দিয়েছেন এই ধর্মঘটে।
বিজ্ঞাপন
তারা পৃথকভাবে গতবছরের শেষ দিক থেকেই ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। সোমবার থেকে তারা একযোগে আন্দোলনে নেমেছেন।
বৃহস্পতিবার ফিজিওথেরাপিস্টরাও এতে যোগ দিতে পারেন। ব্রিটেনে ন্যাশনাল হেলথ্ সার্ভিসের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এরকম আন্দোলন এই প্রথম।
ব্রিটেনের শীর্ষ চিকিৎসক সি্টফেন পোয়িস মনে করেন, এই ধর্মঘটের ফলে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে।
চার দশকের মধ্যে ব্রিটেনে যখন সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে, তখন বেতনবৃদ্ধির দাবি তুলেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সরকার বলছে, দাবি মেনে নেওয়ার সামর্থ্য এখন তাদের নেই। এছাড়া বেতন বাড়ানো হলে দ্রব্যমূল্য আরো বাড়বে, ঋণের সুদের হার এবং জামানতের অঙ্কও (মর্টগেজ পেমেন্ট) বাড়বে।
ব্রিটেনে গত গ্রীষ্মকাল থেকেই স্বাস্থকর্মীদের আন্দোলন চলছে। প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী এতে অংশ নিচ্ছেন যাদের বেশিরভাগই সরকারি চাকরিজীবী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্টিভ বার্কলে তাদের প্রতি জরুরি স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে গঠননমূলক ও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলেও এক বিবৃতিতে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ইউনিয়নের নেতা শ্যারন গ্রাহাম জানান, তারা চান ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও আলোচনায় যোগ দিন। তাদের দাবি না মেনে সরকার মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলছে বলেও মনে করেন তিনি।
গত সপ্তাহে এক টিভি অনুষ্ঠানে সুনাক বলেছেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বাড়াতে পারলে তিনি খুবই খুশি হতেন। তবে তাদের কাছে আপাতত আর কোনো পথ খোলা নেই। ন্যাশনাল হেলথ্ সার্ভিসের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও অ্যাম্বুলেন্স কেনায় অনেক অর্থ চলে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, কোভিড মহামারির সময় থেকে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওপর চাপ তৈরি হয় এবং এখনও তা চলছে। অস্ত্রোপচার বা জরুরি সেবা পাওয়ার জন্য হাজারো মানুষকে ওয়েটিং লিস্টে থাকতে হচ্ছে।
এদিকে ব্রিটেনের রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং (আরসিএন) জানায়, কম বেতনের কারণে গত এক দশকে হাজারো নার্স চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। গতবছরই এই সংখ্যা ছিল ২৫ হাজারের ওপরে। স্বাস্থকর্মী কমে যাওয়ার বিষয়টিও স্বাস্থ্যসেবায় ক্ষতিকর প্রভাব রেখেছে। আরসিএন মূল্যস্ফীতির কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন পাঁচ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানায়। তবে সরকার ও আন্দোলকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা এ বিষয়ে একমত হতে পারেনি।
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে অ্যাম্বুলেন্সকর্মীরা ধর্মঘটে নামলেও তারা জানিয়েছে, জরুরি সেবা চালু থাকবে।
এসএফ / এসিবি (রয়টার্স)
যুক্তরাজ্যে দাবি আদায়ের লড়াইয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবীরাও
যুক্তরাজ্যে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গণধর্মঘটে শিক্ষক, পড়ুয়া, সরকারি পেশাজীবীরাও যোগ দিয়েছেন। এক দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে বড় এই ধর্মঘটের সমর্থনে বুধবার পথে নামেন পাঁচ লাখের কাছাকাছি শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী এবং ট্রেন চালক।
ছবি: Toby Melville/REUTERS
আন্দোলন চলবে
লন্ডনের রাস্তায় প্রতিবাদী শিক্ষকের ঢল বুঝিয়ে দিচ্ছে বেতন বৃদ্ধির দাবি এবং সুস্থ কাজের পরিবেশের দাবিতে এই আন্দোলনকে সহজে দমন করা যাবে না।
ছবি: Toby Melville/REUTERS
নতুন প্রজন্ম
বাবার কাঁধে চেপে ধর্মঘটের সমর্থনে লন্ডনের রাস্তায় দেখা গিয়েছে এই খুদেকে। তার হাতের পোস্টারে লেখা, 'আমার ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করুন। শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন দিন।'
ছবি: Toby Melville/REUTERS
শিক্ষকদের মূল্য
প্রতিবাদীদের মাথায় মাথায় বুধবার ঢেকে গিয়েছিল লন্ডনের রাস্তাঘাট। সেখানেই শিক্ষকদের হাতে পোস্টারে লেখা ছিল, শিক্ষকতা এমন একটা পেশা যা অন্য পেশার ভিতও তৈরি করে দেয়। প্রায় তিন লাখ শিক্ষক ধর্মঘটে অংশ নেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ছবি: Peter Cziborra/REUTERS
পড়ুয়াদের জন্য
পড়ুয়াদের কথা ভেবে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ করুক সরকার। শিশুদের আরো ভালো ভবিষ্যতের জন্য এটা জরুরি। এমনই নানা পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছিল প্রতিবাদ সমাবেশ।
ছবি: Peter Cziborra/REUTERS
প্রতিবাদ স্কটল্যান্ডেও
পাবলিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল সার্ভিস ইউনিয়নের (পিসিএস) সদস্যরা স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে মোউন্ডে একটি সমাবেশে যোগ দেন। কর্মস্থলে অতিরিক্ত চাপ ও স্বল্প মজুরিতে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেয়ে যুক্তরাজ্যের নানা প্রান্তের হাজারো কর্মীরা পথে নামেন।
ছবি: Russell Cheyne/REUTERS
আরো পড়াতে চাই
ব্রিটেনে মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও বেতন বেড়েছে নিতান্তই স্বল্প হারে। ফলে, অ্যাম্বুলেন্স কর্মী, ট্রেন চালক, শিক্ষক, ডাককর্মী প্রত্যেকেই রীতিমতো ক্ষুব্ধ। কিন্তু নিজেদের কাজকে ভালবাসেন তারা। এই পেশায় থাকতে চান বলেই বেতন বৃদ্ধির দাবিতে প্রতিবাদ জানান অনেকে। তরুণী এক শিক্ষিকার হাতের পোস্টারেও সে কথাই লেখা। আরও ৩০ বছর শিক্ষকতা করতে চান, এমনটাই লেখা তার পোস্টারে।
ছবি: Toby Melville/REUTERS
প্রতিবাদ ওয়েলসে
ওয়েলসের টিইউসির সাধারণ সম্পাদক শাভ তাজ কার্ডিফ হাই স্কুলের বাইরে শিক্ষকদের প্রতিবাদের সময় নিজের মেয়েদেরও সঙ্গে এনেছেন। শিক্ষকদের তারা ভালবাসেন এমনটাই লেখা রয়েছে কিশোরী কন্যার পোস্টারে।
ছবি: Natasha Hirst/REUTERS
ভবিষ্যতের ভার
পেশাজীবীরা যতই ধর্মঘট করুন, দেশ ও বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যে স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে তাতে অনড় থাকার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী জিলিয়ান কেগান। ধর্মঘটে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে শিক্ষকদের দাবি, ভবিষ্যতের শিক্ষা গড়ে তোলার সময় এখন। তাই আন্দোলন চলবেই।
ছবি: Toby Melville/REUTERS
সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন
স্কটল্যান্ডের ক্ল্যাকম্যানানশায়ারের অ্যালোয়ার কাউন্সিল সদর দপ্তরের বাইরেও প্রতিবাদ সমাবেশ দেখা গিয়েছে। ব্রিটিশ সরকার সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন-ভাতার বিষয়ে বেশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকারের দাবি, তারা বেতন বাড়ানোর যে দাবি করছে তা পূরণ করা হলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। চাকুরিজীবীরা জানিয়েছেন, সরকার সিদ্ধান্ত না বদলালে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
ছবি: Russell Cheyne/REUTERS
আরো বড় জমায়েত
ধর্মঘটী শিক্ষকদের অনেকে নানা প্রান্ত থেকে লন্ডনের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিতে হ্যামারস্মিথের টিউব ট্রেনে পোস্টার হাতে বসে রয়েছেন শিক্ষকরা।
ছবি: Kevin Coombs/REUTERS
বেতন বাড়াতেই হবে
লাখ লাখ মানুষের ভিড়ই প্রমাণ করে দিয়েছে সহজে কেউই হাল ছাড়বেন না। ধর্মঘটের কারণে যুক্তরাজ্যজুড়ে স্কুল বন্ধ রাখা হয়। ট্রেন চলাচলও অনেক জায়গায় বন্ধ ছিল। সীমান্তে নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য সেনাবাহিনীকে মোতায়েন রাখা হয়। অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যেতে চাইছেন কেউ কেউ। যা শিক্ষক সংগঠনকে চিন্তায় ফেলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, সবমিলিয়ে সুনাক সরকারের উপর চাপ বাড়ছে আরো।