বেত্রাঘাত এবং জেলের শাস্তি ইরানের মানবাধিকারকর্মীর
২৮ মে ২০২১
ইরানের এক মানবাধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ঘোষণা হয়েছে। সরব আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি।
বিজ্ঞাপন
তার দোষ, তিনি মানবাধিকার সংগঠন তৈরি করেছেন। দেশে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে সরব। তাই শাস্তি ঘোষণা হয়েছে। ৮০টি বেত্রাঘাত, ৩০ মাসের জেল এবং দুইটি জরিমানা। ইরানের মানবাধিকারকর্মী নারগেস মোহাম্মদীর এই শাস্তি নিয়ে সরব হয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠন।
হিজাব ছাড়া হাঁটলেই ‘বিপ্লব’!
নারীর মাথায় নেই হিজাব৷ এমন দিন যে আসবে ইরানে, তা এতদিন ছিল কল্পনাতীত৷ বদলালো কি রাস্তাঘাটের চিত্র, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/Ap Photo/E. Noroozi
নীতিপুলিশি চলবে...
ইরানের রাজধানী তেহরানের রাস্তায় বহাল আছে নীতিপুলিশ, যাদের কাজই হিজাবহীন নারীদের গ্রেপ্তার করা৷ ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর আইন প্রণয়ন করে ঠিক করা হয় নারীদের পোশাকনীতি৷ সেই নীতির খেলাপ হলেই গ্রেপ্তার করা হবে হিজাব না-পরা নারীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Taherkenareh
পরিবর্তন আসবেই?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী দমকলকর্মী সংবাদসংস্থা এপিকে জানান, ‘‘আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে এই আইনের কারণে আমি ভীত৷ পুলিশ আমাদের পেছনে লেগে থাকলেও আমাদের থামাতে পারবে না৷ কারণ পরিবর্তন আসবেই৷’’
ছবি: picture-alliance/Ap Photo/E. Noroozi
মধ্যপন্থার হিজাব
আইন বনাম স্বাধীনতা- এই দোটানায় সরকারের মতোই বাঁধা পড়েছেন ইরানের নারীরাও৷ বের করেছেন অভিনব উপায়৷ গোটা মাথা ঢাকা হিজাবের বদলে ‘ক্যাসুয়াল হিজাব’ বেছে নেন৷ এই হিজাবের বৈশিষ্ট্য এই যে সেটা পড়লে চুলের অল্প অংশই ঢাকা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/Ap Photo/E. Noroozi
বাজারের হিজাব
তেহরানের বৃহত্তম বাজার ‘গ্র্যান্ড বাজার’-এও আজকাল বেশি বেক্রি হচ্ছে এই ‘ক্যাসুয়াল হিজাব’, জানাচ্ছে এপি৷ নানারঙের এই আপোষের হিজাব পাওয়া যাচ্ছে তেহরানসহ অন্যান্য শহরেও৷ এপি তার প্রতিবেদনে এটাও জানিয়েছে যে বাজারের বেশিরভাগ ক্রেতা নারীই পরেছিলেন ক্যাসুয়াল হিজাব৷ খুব কম নারীদের গায়ে ছিল নিকাব বা চাদর৷
ছবি: picture-alliance/Ap Photo/E. Noroozi
হিজাব ছাড়া কতজন?
এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নয় দিনে আনুমানিক প্রায় ২৪জন নারীকে রাস্তায় দেখা গেছে কোনো রকমের হিজাব ছাড়াই৷ ২০১৮ সালের একটি গবেষণা জানাচ্ছে, ইরানের মোট ১৩ শতাংশ নারীই সম্পূর্ণ হিজাব পরেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi
ভবিষ্যতে বদলাবে কি এই আইন?
কট্টরপন্থিরা ইরানে শক্তিশালী হলেও সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে নারীদের চয়নক্ষমতার পারদ৷ ১৯৮০ সালে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী হিজাবের পক্ষে থাকলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা এসে নেমেছে ৪৫ শতাংশে৷ ফলে ভবিষ্যতে যে একেবারেই বদলাবে না ইরানে নারীদের হিজাব-ব্যবস্থা, তা নিশ্চিতভাবে এখনই বলা যাচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance/Ap Photo/E. Noroozi
6 ছবি1 | 6
৪৯ বছরের নারগেস শুধু মানবাধিকারকর্মী নন। তিনি ইঞ্জিনিয়ার, পদার্থবিজ্ঞানের গবেষক। তার দুই সন্তান আছে। নোবেল পুরষ্কারপ্রাপক শিরিন এবাদির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শিরিনও মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করেছেন। এখন তিনি জেলে। নারগেসও ২০২০ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল। দেশের বিরুদ্ধে বহির্বিশ্বে তিনি প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন, দেশ বিরোধী কাজ করছেন, এমন সব অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১০ বছরের জেল হেফাজতের শাস্তি হয়েছিল। তবে আট বছরের মাথায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ বার ফের তার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে।
নারগেস এ বিষয়ে ডিডাব্লিউকে কিছু না জানালেও, তার আইনজীবী খবরটির সত্যতা স্বীকার করেছেন। ২০২০ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে নারগেস ডিডাব্লিউকে বলেছিলেন, তাকে গ্রেপ্তার করে এবং শাস্তি দিয়ে দেশের মানুষের কাছে একটি বার্তা পৌঁছাতে চাইছে ইরানের প্রশাসন। প্রতিবাদ করলেই জেলে যেতে হবে।
নারগেসের শাস্তি ঘোষণা হওয়ার পরেই তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার। অবিলম্বে নারগেসের উপর থেকে সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই দাবি করেছে। ইরান সরকারের কাছে তাদের দাবি, নারগেসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি পুনর্বিবেচনা করা হোক। এবারও দেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।