ডার্কনেটকে তুলনা করা যেতে পারে অন্ধকারাচ্ছন্ন আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে, যা সার্চ ইঞ্জিনেরও আওতার বাইরে৷ অস্ত্র, ড্রাগ, পর্নোগ্রাফি – ডার্কনেট ব্যবহারকারীরা বেআইনি সাইটেও প্রবেশ করতে পারেন৷ তারা বেনামে ব্রাউজ করেন৷
বিজ্ঞাপন
ডার্কনেট বা বেনামে ইন্টারনেট ব্যবহারের অন্যতম উপায় হচ্ছে টোর নেটওয়ার্ক৷ এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বেনামে ইন্টারনেটে প্রবেশ করা যায়৷ টিলমান ফ্রশ বোখুম-এর হর্স্ট গ্যোরৎস ইন্সটিটিউট ফর আইটি সিকিউরিটি-তে কাজ করেন৷ সেখানে তিনি টোর সার্ভার দেখাশোনা করেন৷ টিলমান ফ্রশ বলেন, ‘‘আমরা মূলত গবেষণার কাজে টোর ব্যবহার করি৷''
টোর সার্ভারে প্রবেশের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রথমে একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করেন৷ এই সফটওয়্যার ব্যবহারকারীকে ক্রমাগত দুনিয়ার বিভিন্ন টোর সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত এবং বিচ্ছিন্ন করে৷ এভাবে পরিচয় গোপন করা হয়৷
স্বাভাবিকভাবেই অপরাধীদের জন্য এটি আদর্শ ব্যবস্থা হলেও অন্যরাও এটি ব্যবহার করতে পারেন৷ মার্কিন সামরিক বাহিনী, মানবাধিকার কর্মী এবং যারা রাজনৈতিক কারণে নিপীড়নের শিকার, তারাও টোর ব্যবহার করেন৷
২০১১ সালে মিশরে গণআন্দোলনের সময় টোর-এর কার্যকারিতা বোঝা গিয়েছিল৷ আরব বসন্তের সময় মুবারক সরকার ইন্টারনেটের উপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করেছিল৷ উদ্দেশ্য ছিল, তরুণ প্রজন্ম যেন ফেসবুক ব্যবহার করে আন্দোলনের আয়োজন করতে না পারে৷ তখন মিশরে টোর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়৷
বেনামে বা ছদ্মনামে ইন্টারনেট ব্যবহারের আরেকটি উপায় ফ্রিনেট৷ এই নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীরা সবাই নিজেদের কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভের কিছু অংশ দান করে দেন৷ এভাবে তাদের কম্পিউটারগুলোও বেনামি ডার্কনেটের অংশ হয়ে যায়৷ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফ্লোরঁ ডেনিয়ে এই নেটওয়ার্ক তৈরিতে সহায়তা করেছেন৷ এই ফরাসি দিনের বেলা একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সংবেদনশীল তথ্য নিরাপদে সংরক্ষণের উপায় দেখান৷ আর রাতের বেলা তিনি ফ্রিনেটের জন্য কাজ করেন৷
তথ্য গোপন রাখার সাতটি সহজ উপায়
আধুনিক প্রযুক্তির কারণে মানুষের সুযোগ-সুবিধা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তথ্য চুরির ঘটনা৷ ফোর্বস জানাচ্ছে কোন সাতটি উপায়ে আপনি খুব সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রাখুন
কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের পাসওয়ার্ড যেন কখনই এক না হয়৷ আর ব্যাংক কার্ড-এর সঙ্গে যেন এই পাসওয়ার্ডের মিল না থাকে৷ এছাড়া কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে কোনো পাসওয়ার্ড লিখে রাখবেন না৷ এর ফলে আপনার তথ্য চুরির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়৷ বাড়ির বাইরে গেলে এগুলি ‘লক’ করে যাবেন৷
ছবি: Sergey Nivens - Fotolia.com
নামে ‘গুগল অ্যালার্ট’ ব্যবহার করুন
এটা খুব সহজ পন্থা, আপনি যদি দেখতে চান ইন্টারনেটে আপনার সম্পর্কে সবাই কী বলছে৷ সোজা এই ঠিকানায় যান – http://www.google.com/alerts এবং আপনার নাম লিখুন৷ তারপর আপনার নামের বিভিন্ন ধরন লিখে, তার আগে ও পরে ‘কোটেশন মার্ক’ জুড়ে দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ব্যবহারের পর লক্ষ্য রাখা
আপনি যদি অন্য কারো কম্পিউটার বা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন, তবে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন৷ আপনার পর যিনি সেটা ব্যবহার করবেন, তিনি যাতে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারে – সেটা খেয়াল রাখুন৷ আপনি যদি এটা করতে ভুলে যান, তাহলে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ফোন, ই-মেল বা জিপ কোড ব্যবহার করতে না দেয়া
অচেনা কোনো মানুষ এই নম্বরগুলো জানতে চাইলে, আপনারা দেবেন না৷ দেখা যায় কোনো অফিস তাঁর কর্মীর কাছ থেকে এ সব তথ্য চাইলে, অনেকেই সেচ্ছ্বায় তা দিয়ে দেয়৷ বহু অফিস এ নিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করে৷ আপনার কিন্তু এ সব তথ্য না দেয়ার অধিকার আছে৷ তাই আপনি যদি এতে স্বাচ্ছ্বন্দ্যবোধ না করেন, তবে দেবেন না৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কার্ড নয় ক্যাশ
আপনি যদি চান আপনি যে পণ্যটি কিনছেন, সেই কোম্পানি আপনারা পরিচয় না জানুক, তবে নগদ অর্থে জিনিস কিনুন৷
ছবি: AP
ফেসবুকে নিরাপত্তার জন্য ‘ফ্রেন্ডস’ ব্যবহার করুন
ফেসবুকে সবসময় ‘সিকিউরিটি’ বা নিরাপত্তা পরীক্ষা করুন৷ পোস্ট করার পর লক্ষ্য রাখুন আপনি আপনার ছবি বা মন্তব্য ‘ফ্রেন্ডস’ করে রেখেছেন, নাকি ‘পাবলিক’ করেছেন৷ আপনি যদি ‘স্পেশ্যাল’ নির্বাচন করেন এবং ঠিক করে দেন কে কে আপনার পোস্ট দেখতে পাবে, তবে সেটা আপনার তথ্য নিরাপত্তার জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Bozoglu
‘হিস্ট্রি’ এবং ‘কুকিস’ মুছে ফেলুন
আপনি সবশেষ কবে এটা করেছেন? আপনি যদি নিশ্চিত না হন, ব্রাউজারে গিয়ে এটা পরিবর্তন করুন৷ ব্রাউজারের ‘প্রাইভেসি সেটিংস’-এ যান, সেখানে ‘নেভার রিমেমবার হিস্ট্রি’ নির্বাচন করুন৷ এর ফলে ইন্টারনেটে আপনাকে ‘ট্র্যাক’ করাটা হ্যাকারদের জন্য কঠিন হবে৷ এছাড়া আপনি ‘অ্যাড অন’-ও ব্যবহার করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
7 ছবি1 | 7
ফ্লোরঁ ডেনিয়ে বলেন, ‘‘ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য একটি সেন্সরমুক্ত, নিরাপদ এবং বেনামি নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা করাই ছিল ফ্রিনেটের উদ্দেশ্য৷''
আর এটাই ফ্রিনেটকে জনপ্রিয় করে তুলেছে, বিশেষ করে ফাইল শেয়ারকারীদের মধ্যে৷ পরিচিত ফাইল শেয়ারিং ওয়েবসাইটগুলো ইন্টারনেটে সহজেই দেখা যায়৷ কিন্তু ফ্রিনেটে তারা গোপন থাকতে পারে৷ অনেক ফাইল শেয়ারিং ওয়েবসাইটে অবৈধ পাইরেটেড কন্টেন্ট রয়েছে৷ কিন্তু এটা ফ্রিনেটের স্রষ্টাদের জন্য কোনো সমস্যা নয়৷ তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা৷