খুলনার মেয়রের ডিজিটাল মামলা
২১ এপ্রিল ২০২১ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির ব্যুরোপ্রধান জনাব মুন্সীকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতারের পর বুধবার সকালে আদালতে হাজির করে পুলিশ৷ খুলনার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) সুমী আহমেদের ভার্চুয়াল আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন৷ আবু তৈয়বের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক৷
মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক আবু তৈয়বের বিরুদ্ধে খুলনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন৷ ওই মামলার মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে খুলনা থানা পুলিশ নগরীর নূরনগর এলাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে৷
এই মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়ে সাংবাদিক আবু তৈয়বের ছেলে মাশুক ইফতেখারের কাছে জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "বাবার কাজ নিয়ে আমাদের খুব বেশি জানাশোনা নেই৷ ফলে এই বিষয়ে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা এখনেই কিছু বলতে পারছি না৷”
কেন এই মামলা করলেন? জানতে চাইলে তালুকদার আব্দুল খালেক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "উনি ২০১৮ সাল থেকেই একটা বিষয় নিয়ে আমার পেছনে লেগে আছেন৷ আমি যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০১৭ সালে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি, সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে লিখে যাচ্ছেন৷ আমি উনাকে কয়েকবার এ বিষয়ে বলেছি৷ আমি রাজনীতি করি, আমার একটা অবস্থান আছে৷ এই ধরনের লেখালেখিতে আমার কর্মী সমর্থকেরা মনে করতে পারেন, আমি হয়তো এই ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত৷ তাই আমি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছি৷ আমি শেষ পর্যন্ত লড়ব৷ প্রমান করে ছাড়ব আমি ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই৷”
কী লিখেছেন আবু তৈয়ব? ফেসবুকে সেই লেখাটি এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী লেখাটি ব্লক করে দিয়েছে৷ তবে খুলনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান মোল্লা ডয়চে ভেলেকে সেই লেখাটি পাঠিয়েছেন৷ সেখানে আবু তৈয়ব লিখেছেন, তালুকদার আব্দুল খালেকের প্রতিষ্ঠান মুনষ্টার পলিমার এক্সপোর্ট লি: শুল্ক ফাঁকি দেয়ার জন্য আড়াই কোটি টাকা অর্থদণ্ডসহ বন্ড লাইসেন্স বাতিল করে সাড়ে পাচঁ কোটি ৫৩ লাখ টাকা দাবি নামা দিয়েছে মংলা কাস্টমস হাউস কর্তপক্ষ ৷ যদিও পোস্টেও তিনি উল্লেখ করেছেন, খুলনা সিটি মেয়র এই প্রতিষ্ঠানের সাথে আগে জড়িত ছিলেন বর্তমানে যুক্ত নন বলে দাবি করেছেন৷ তবে বন্ড লাইসেন্সে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসাবে সিটি মেয়রের নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে ৷ শুল্ক বিভাগ দণ্ড ও অর্থ আদেশে এই প্রতিষ্ঠানটির আইন না মানা ও বেপরোয়া আচরণ সরকারি রাজস্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরুপ বলে উল্লেখ করেছে৷ কীভাবে এই শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত পোস্টে লিখেছেন তিনি৷
খুলনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা মেট্টোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান মোল্লা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "মেয়র অস্বীকার করলে তো হবে না৷ কাগজপত্রে তো তার নাম রয়েছে৷ সে কথাই লিখেছেন আবু তৈয়ব৷ প্রত্যেক সাংবাদিকের লেখার স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন৷ এখন তো সাংবাদিকদের অনেক রকম সমস্যায় পড়তে হয়৷ বিশেষ করে দলকানা সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে পেশাদার সাংবাদিকদের কাজ কঠিন হয়ে যাচ্ছে৷ দলীয় লেজুড়বৃত্তির কারণে পেশাদার সাংবাদিকরা বিপদে পড়ছে৷ খুলনার সাংবাদিক সমাজ এই মামলা ও গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ আমরা অবিলম্বে তার মুক্তি চাই৷ পুরো সাংবাদিক সমাজ আবু তৈয়বের পাশ আছে৷ তার মুক্তি না দিলে শিগগিরই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে৷”
মেয়র মামলা করায় কী পুলিশ একটু তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়েছে? জানতে জাইলে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিষয়টা এমন নয়৷ যে ধারায় এই মামলা করা হয়েছে, সেটি যে কেউ করলেই আসামীকে গ্রেফতার করতে হতো৷ এখন আমরা তদন্ত করে দেখব, যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি সঠিক কি-না?”