1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেপরোয়া নগরায়ণে তপ্ত কলকাতা, হুমকিতে বাংলাদেশ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিশ্বের বিভিন্ন শহর ও এলাকার মধ্যে কলকাতা শহরে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে৷ এর মূল কারণ হলো অপরিকল্পিত নগরায়ণ৷

ছবি: Payel Samanta/DW

 

ফলে বিপদের মুখে ‘সিটি অফ জয়'৷ কলকাতার তাপমাত্রার এমন বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনেও৷ ইতিমধ্যে সেখানকার সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে৷

গত ৭০ বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের পর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ৷ আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশের এমন বিপর্যয়ের মাশুল দিতে হতে পারে  বাংলাদেশকেও৷

রাষ্ট্রসংঘের অধীন ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) বিশ্বের ২০টি শহর ও এলাকার উপর সমীক্ষা চালিয়েছে৷গত সাত দশকের জলবায়ু পর্যবেক্ষণের পর এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়৷ হিসেব অনুযায়ী, ১৯৫০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্বের নিরিখে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কলকাতা মহানগরের৷ এসময়ে শহরটির তাপমাত্রা বেড়েছে ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ কলকাতার পরে রয়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান৷ সেখানে ভূপৃষ্ঠের উপরে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়েছে ২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ তৃতীয় অবস্থানে আছে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো৷ সেখানে এই বৃদ্ধি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷

তাপমাত্রা বাড়ছে কেন?

সমীক্ষা অনুযায়ী, কলকাতায় এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ দায়ী লাগামছাড়া নগরায়ণ৷ ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের পাশাপাশি শিল্পোন্নত দেশের উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা থেকে মিশর কিংবা চীন, জাপানের বিভিন্ন শহর ও এলাকার জলবায়ুর উপর গবেষণা চালিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের প্যানেল৷

‘কলকাতার তাপমাত্রা ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত হতে পারে না’

This browser does not support the audio element.

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্য অনেক উন্নত দেশের চেয়েও কলকাতা শহরকে নগরায়ণের খেসারত বেশি দিতে হচ্ছে৷৷

ভূপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়ার একাধিক কারণ দেখানো হয়েছে প্রতিবেদনে৷ বলা হচ্ছে, উঁচু উঁচু বাড়ি কাছাকাছি থাকায় বায়ুমণ্ডল তাপ মুক্ত হতে পারছে না, আটকে থাকছে ভূপৃষ্ঠের আশপাশে৷ তাছাড়া বহুতল নির্মাণে ব্যবহৃত সামগ্রী তাপমাত্রা ধরে রাখছে৷

পরিবেশবিদ্যার গবেষক ও অধ্যাপক ডঃ তড়িৎ রায়চৌধুরি বলেন, ‘‘এই তাপমাত্রা মানুষের কার্যকলাপের ফলশ্রুতি৷ এই অপরিকল্পিত শহরে অল্প পরিসরে বহু মানুষ রাস্তাঘাটে জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে, অটোমোবাইল বা বিদ্যুতের ব্যবহার করে প্রচুর তাপ উৎপাদন করে৷’’

অর্থাৎ সাধারণ মানুষের গতিবিধির ফলে তাপ বেরিয়ে মিশছে বাতাসে৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞানের (উপকূল এলাকা) অধিকর্তা অধ্যাপক তুহিন ঘোষ বলেন, ‘‘শহরতলির তুলনায় শহরে তাপমাত্রা অনেক বেশি৷ যেহেতু কলকাতায় শক্তির ব্যবহার বেশি হয়, সবুজও কম আর দূষণও অত্যাধিক সে কারণে কলকাতার উপরেএকটা কুয়াশার স্তর থাকে৷ আর তাই তাপমাত্রা ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত হতে পারে না৷ শহরতলি এলাকায় যে তাপমাত্রা তৈরি হা তা বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়৷ কলকাতায় তা হচ্ছে না৷ ফলে তৈরি হচ্ছে হিট আইল্যান্ড৷’’

উষ্ণায়নের ফল কী

এমন অবস্থা চলতে থাকলে চলতি শতকের শেষে কলকাতার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়৷ অনুমান করা হচ্ছে, বছরে ১৫০ দিন অর্থাৎ পাঁচ মাস শহরের তাপমাত্রা থাকবে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে৷

এদিকে এমন উষ্ণায়নের ফলে শুধু কলকাতা নয়, বিপন্ন হয়ে পড়ছে সুন্দরবনও৷ জাতিসংঘের প্রতিবিদেন প্রস্তুতকারকদের একজন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক সইফুল ইসলামের মতে, পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনলে সুন্দরবন এলাকা আরও দুর্যোগের মধ্যে পড়বে৷ যার ফল কলকাতার পাশাপাশি ভুগতে হবে বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলকেও৷

পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে সমুদ্রের জলস্তর ইতিমধ্যেই বেড়েছে৷ এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ভূমিক্ষয় হবে, বাড়বে প্লাবনের প্রবণতা৷ রিপোর্টে আশঙ্কা করা হয়, এই শতকের শেষে সুন্দরবন লাগোয়া সমুদ্রের জলস্তর ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে৷ বার বার হানা দেবে ঘূর্ণিঝড়৷

অধ্যাপক তুহিন ঘোষের বক্তব্য, ‘‘অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলার ফলে নদীর তাপমাত্রা বাড়ে৷ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাছ ও অন্যান্য প্রাণী, পরোক্ষভাবে ম্যানগ্রোভ৷ বর্জ্য সুন্দরবনের নদী দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে৷ এতে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে, ফলে আঞ্চলিকভাবে নিম্নচাপের সৃষ্টি হচ্ছে৷’’

‘বাসস্থানের অভাব এবং তাপমাত্রা দুটোর কারণে কমে যাচ্ছে ছোট ছোট পাখিও’

This browser does not support the audio element.

সংকটে জীববৈচিত্র্য

তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় কলকাতায় প্রাণীদের বাসস্থান সঙ্কটে পড়ছে৷ ফলে জীববৈচিত্র্যে প্রভাব পড়ছে৷

পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অশোককান্তি সান্যাল বলেন, ‘‘জলাশয় ও মাটিতে বসবাসকারী কীট-পতঙ্গগুলো সমস্যায় পড়বে৷ মানুষের শরীরের ওপর প্রভাব পড়বে বেশি৷’’

কলকাতায় এখন চার-পাঁচ শতাংশ সবুজ এলাকা৷ সেটা আগে ছয়-সাত শাতংশ ছিল৷ সবুজ এলাকা এভাবে কমে যাওয়ার ফলে ‘হিট আইল্যান্ড' তৈরির সম্ভাবনা বাড়ছে৷

এমনটাই মনে করেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যার প্রাক্তন অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র সাঁতরা৷ তিনি বলেন, ‘‘কংক্রিটের রাজত্বে তাপমাত্রা যদি এভাবেই বাড়তে থাকে, তাহলে বড়সড় পরিবর্তন চোখে পড়বে৷ পরিযায়ীরা এমনিতেই আসা কমিয়ে দিয়েছে৷ বাসস্থানের অভাব এবং তাপমাত্রা দুটোর কারণে কমে যাচ্ছে ছোট ছোট পাখিও৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ