বেলগ্রেডে সবুজ কমছে, গরম বাড়ছে
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪বেলগ্রেডে গ্রীষ্মের আরেকটি অসহনীয় গরম দিন৷ তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে৷ শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা শুধু ছায়ায় থাকি এবং পানি পান করি... আমি জানি না, কোনোভাবে আমাদেরকে টিকতে হবে৷''
আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমি কোনোরকমে গরম সহ্য করছি৷ পানি, ছোট্ট ফ্যান ইত্যাদি সাথে রাখি৷''
সার্বিয়ার রাজধানী ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনুভব করছে৷ ২০২৩ সাল ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে গরম বছর৷ বেশি ভবন আর কম সবুজের কারণে নিউ বেলগ্রেড জেলার দুই লাখ বাসিন্দা সবচেয়ে বেশি ভুগছেন৷
বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আইভান সিমিচ বলেন, ‘‘এখানে সবুজের অভাব রয়েছে৷ আসলে মানসম্পন্ন সবুজের অভাব, যা বায়ুমণ্ডলীয় জল শোষণ করতে পারে৷''
সিমিচ বলেছেন যে নির্মাণ কাজের জন্য সবুজ জায়গা কমে যাওয়াটার মূল কারণ হচ্ছে ‘‘বিনিয়োগকারী নগরবাদ৷'' এটা তখন ঘটে যখন জনগণের চেয়ে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ আগে দেখা হয়৷ যেমন ‘ওয়েস্ট ৬৫' হিসেবে পরিচিত আধুনিক আবাসিক এলাকায় গত সত্তরের দশকের তুলনায় এক দশমাংশ সবুজ জায়গা রাখা হয়েছে৷
ড. সিমিচ বলেন, ‘‘এসব ভবন সম্ভবত জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং নির্মাণের মানও ভালো, কিন্তু এসব দিয়ে সবুজের ঘাটতি মেটানো যাবে না৷ অবশ্যই দুটোই দরকার৷ আর তখনই পরিবেশবান্ধব বিল্ডিং কমপ্লেক্স তৈরি সম্ভব৷''
কিন্তু পৌরসভাগুলো কেন জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না? কেন অবশিষ্ট সবুজ জায়গাগুলোতেও ভবন তৈরি হচ্ছে? ডয়চে ভেলে বেলগ্রেড কর্তৃপক্ষের কাছে জবাব চেয়েও পায়নি৷
আবহাওয়াবিদ লাজার ফিলিপোভিচ মনে করেন যে ভবিষ্যতে কী হবে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ তিনি শহরের সবচেয়ে গরম এলাকাগুলোর ম্যাপ তৈরি করেছেন৷ এবং তিনি নিশ্চিত যে সবুজ জায়গার অভাবের কারণে বেলগ্রেডে বসবাস আরো কঠিন হবে৷
আবহাওয়াবিদ লাজার ফিলিপোভিচ বলেন, ‘‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে শহরের কিছু অংশে গ্রীষ্মের প্রতি নব্বই দিনের মধ্যে পঞ্চাশটির মতো রাতে বেশ গরম থাকে৷ সে রাতগুলোতে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির নিচে নামে না৷ যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় শহরগুলোর মতোই অবস্থা হবে বেলগ্রেডের৷ যেমন ২০৫০ নাগাদ বেলগ্রেডের তাপমাত্রা বর্তমানের কায়রোর মতো হতে পারে৷''
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এক্ষেত্রে পরিবেশগত সূচক একটি সমাধান হতে পারে৷ এই সূচক একটি শহরের পরিবেশগত মান নির্ধারণ করে৷ অনেক ইউরোপীয় দেশে এই পন্থা চালু রয়েছে৷
ড. আইভান সিমিচ বলেন, ‘‘এর অর্থ হচ্ছে শহরের প্রত্যেক অংশে কিংবা নির্দিষ্ট কিছু অংশে তৈরি আবাসিক বা বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের সবুজ অংশের মান এবং সংখ্যা এই সূচকের মাধ্যমে যাচাই করা হবে৷''
শহরের সবুজ অঞ্চল কী পরিমান হওয়া উচিত তা নির্ধারণে বেলগ্রেড কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট নিয়ম আছে৷ তবে কাগজে কলমে সেই নিয়মের অস্তিত্ব থাকলেও তা মানার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই৷ এধরনের নিয়ম মানার বিষয়টি বাধ্যতামূলক না হওয়া অবধি বেলগ্রেডের মানুষকে কংক্রিটের জঙ্গলে থাকতে হবে বলে মনে হচ্ছে, যেখানে তাপমাত্রা শুধু বাড়বেই৷
প্রতিবেদন: লুকা স্টোকিচ/এআই