বেলজিয়ামে দুঃখজনক মৃত্যু হয়েছে দুই বছর বয়সি এক শরণার্থী শিশুর৷ বেআইনি অভিবাসীদের বহন করা একটি ভ্যানকে ধাওয়া করেছিল পুলিশ৷ তারই এক পর্যায়ে কুর্দি কন্যাশিশুটি মারা যায়৷
বিজ্ঞাপন
গত কয়েক বছরে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো বেলজিয়ামেও শরণার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে৷ বৃহস্পতিবার সে দেশের মনস শহরের রাস্তায় একটি ভ্যানকে তাড়া করে পুলিশ৷ ভ্যানটি বেআইনি অভিবাসীদের নিয়ে যাচ্ছিলো৷ পুলিশের অভিযোগ, প্রায় ৭০ কিলোমিটার তাড়া করার পরও ভ্যানটি থামানো হয়নি৷ এক সময় বরং পুলিশকেই চাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়৷ তখন বাধ্য হয়েই গুলি চালায় পুলিশ৷ তবে সরকার পক্ষের আইনজীবীর দাবি, শিশুটি পুলিশের গুলিতে মারা যায়নি৷
শরণার্থী শিশুরা ঠিকমতো শিক্ষা পাচ্ছে তো?
জার্মান স্কুলগুলিতে শরণার্থীরা কি ঠিকমতো পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে? শরণার্থীদের সমস্যাগুলো ধরতে পারছেন তো শিক্ষকেরা? সম্প্রতি এক সমীক্ষা এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে৷ শরণার্থীদের শিক্ষা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AA/M. Abdullah
সমস্যার মূল
এই মুহূর্তে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুলে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার শরণার্থী শিশু পড়াশোনা করে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তাদের ঠিক মতো শেখাতে পারছেন তো শিক্ষকেরা? তাদের সমস্যাগুলো ধরা যাচ্ছে তো?
ছবি: picture alliance/dpa/M. Skolimowska
হিংসা, ভয়, গরিবি
জার্মানির আর পাঁচজন ছাত্রের মতো শরণার্থীরা নয়৷ নিজের দেশ থেকে তাদের পালিয়ে আসতে হয়েছে৷ তারা হিংসা, ভয়, গরিবির শিকার৷ তাদেরকে মূলস্রোতে আনতে গেলে শিক্ষার অন্য মডেল তৈরি করা দরকার৷
ছবি: picture alliance/dpa/Sputnik/I. Zarembo
ড্রপ আউট
সমীক্ষা বলছে, স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে বহু শরণার্থী শিশুই মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে দিচ্ছে৷
স্পেশাল স্কুল
শরণার্থীদের জন্য বিভিন্ন অঞ্চলে স্পেশাল স্কুল তৈরি করা হয়েছে৷ কোনো কোনো সংগঠন কলেজ পড়ুয়াদের দিয়ে সেখানে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ওই শিক্ষকেরা শরণার্থীদের সমস্যা ধরতে পারছেন তো?
ছবি: picture alliance/dpa/AA/M. Abdullah
শরণার্থী শিক্ষক
কোনো কোনো স্কুলে অবশ্য শরণার্থী শিক্ষকদেরই পড়ানোর কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে৷ অনেকেই বিষয়টিকে ভালো মডেল বলে মনে করছেন৷ শরণার্থী শিক্ষকেরা শিশুদের সমস্যা অনেক সহজে বুঝতে পারেন৷ সব স্কুলেই এ ধরনের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Macdougall
মূলস্রোতে ফেরানো
শরণার্থী শিশুদের জার্মানির মূলস্রোতের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করা দরকার৷ কিন্তু তার জন্য অনেক সময় দেওয়া দরকার৷ শরণার্থী শিশুদের মন বোঝা দরকার প্রথমে৷ সেখানেই ঘাটতি থাকছে বলে অনেকের ধারণা৷
ছবি: S.Ponsford
সরাসরি কথাবার্তা
শরণার্থী ছাত্রদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে৷ প্রত্যেকের সমস্যাগুলো আলাদা আলাদা করে বোঝা দরকার৷ তাদের বোঝাতে হবে, আর ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ তারা নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
7 ছবি1 | 7
ভ্যানটি থামানোর পর ৩০ জন যাত্রীর মধ্যে দুই বছরের ওই শিশুকে মুমূর্ষু অবস্থায় পাওয়া যায়৷ সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়৷ কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়৷
মৃত্যুর সম্ভব্য কারণ
শরণার্থী কুর্দি শিশুটির মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে৷ বেলজিয়ামের সংবাদ সংস্থা বেলজা স্থানীয় তদন্তকারী ফ্রেডেরিক বারিসোকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, পুলিশের গুলিতে মেয়েটির মৃত্যু হয়নি৷ পুলিশের ধারণা, ধাওয়া খেয়ে পালাতে গিয়ে চালক খুব বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোয় শিশুটির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে৷ বিপজ্জনকভাবে ভ্যান চালানোর সময় শিশুটির মাথা গাড়ির কোনো শক্ত জায়গায় সজোরে ধাক্কা খেয়েছিল বলে আশঙ্কা তাদের৷
ব্রিটেনের যাওয়ার চেষ্টা?
বেলজার সংবাদ অনুযায়ী, ওই ভ্যানে চারটি শিশুসহ ৩০ জন শরণার্থী ছিল৷ সবাই ইরাক, আফগানিস্তান, ইরান ও কুয়েত থেকে আসা শরণার্থী৷ নিহত কুর্দি মেয়েটির পরিবারকে সম্প্রতি বেলজিয়াম থেকে জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল৷ বৃহস্পতিবার পরিবারটি বেলজিয়াম হয়ে ব্রিটেন যাওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
চোরাকারবারিদের পথ ধরে আসছেন শরণার্থীরা
ভূমধ্যসাগর পার হওয়ার ঝুঁকি না নিয়ে ক্রমেই আরো বেশি উদ্বাস্তু সীমান্তের এভ্রস নদী পার হয়ে তুরস্ক থেকে গ্রিসে আসছেন৷ কিন্তু এ পথেও বিপদ কিছু কম নয়৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
সীমান্ত বলতে এভ্রস নদী
মাত্র পাঁচ থেকে ছ’মিনিটের মধ্যে এভ্রস নদী পার হওয়া যায়৷ নদী ছোট হলেও তাতে স্রোতের কিছু কমতি নেই৷ এককালে স্মাগলাররা এই পথ দিয়ে মাল পাচার করতো৷ উদ্বাস্তুরা সে পথ ধরার পর থেকে এই রুটে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
দু’দেশের সেন্ট্রি টাওয়ার
সীমান্তে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের একাধিক সেন্ট্রি টাওয়ার খাড়া রয়েছে৷ দৃশ্যত তা সত্ত্বেও উদ্বাস্তুরা এই পথ দিয়ে গ্রিসে ঢোকার চেষ্টা করে চলেছেন৷ জার্মান ‘স্পিগেল’ পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, তুরস্ক জ্ঞাতসারে উদ্বাস্তুদের এই নতুন পথ ধরে ইউরোপে আসতে দিচ্ছে৷ এমনকি গ্রিসের দু’জন সৈন্য ভুলক্রমে সীমান্ত অতিক্রম করলে তুরস্কে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারপর থেকে গ্রিস নীরব রয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
এভ্রস পার হওয়ার পর
ভূমধ্যসাগর দিয়ে এলে গ্রিসের কোনো দ্বীপে ১৫,০০০-এর বেশি অধিবাসী সম্বলিত কোনো উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিতে হয় – তারপরেও তুরস্কে ফেরত পাঠানোর ভয় থাকে৷ এভ্রস রুট দিয়ে এলে সেখান থেকে বিনা বাধায় দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যায়৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
রেললাইন ধরে হেঁটে পাইস শহর অভিমুখে
এভ্রস উদ্বাস্তুদের গ্রিসে ঢোকার পর রেজিস্ট্রি করা হয় ও গ্রিসে অবস্থানের জন্য তিন মাসের ভিসা দেওয়া হয়৷ শুধু এপ্রিল মাসেই ২,৯০০ উদ্বাস্তু এভ্রস হয়ে গ্রিসে ঢুকেছেন৷ গোটা ২০১৭ সালেই এসেছিল মাত্র ১,৪৫০ জন৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
রেল স্টেশনে বিশ্রাম
পাইস শহরটি এভ্রস নদী থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে৷ উদ্বাস্তুরা এখানে খানিকটা জিরিয়ে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করেন৷ বিশেষ করে শিশুরা পথের কষ্ট আর অভাব-অনটনে কাহিল হয়ে পড়ে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
নি ভিসা শহরের কাছে পুলিশের অপেক্ষায়
এখান থেকে পুলিশ উদ্বাস্তুদের প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে নিয়ে যাবে৷ উদ্বাস্তুদের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে স্থানীয় কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন৷ সিরিয়া বা ইরাক যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে এভাবেই উদ্বাস্তুদের আগমন বাড়ে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
পুলিশের গাড়িতে চড়ে প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে
উদ্বাস্তুদের ফিলাকিও শহরে অবস্থিত প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ তবে সেখানেও কর্মকর্তারা বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুর আগমন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
কাঁটাতারের বেড়ার পিছনে
ফিলাকিও-র প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র দেখলে মন খুশি না হওয়ারই কথা৷ উদ্বাস্তুদের আগমন বাড়ার ফলে জায়গা ও পর্যাপ্ত কর্মকর্তার অভাব৷ এভ্রস রুট আপাতত সীমান্ত নিরাপত্তা সম্পর্কে ইইউ আর তুরস্কের চুক্তির আওতায় পড়ে না৷ এর ফলে উদ্বাস্তুরা শীঘ্রই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেয়ে যান৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
বাসে চড়ে বড় শহরে
ফিলাকিও-য় রেজিস্ট্রি করার অল্প পরেই উদ্বাস্তুদের বাসে করে এথেন্স বা থেসালোনিকিতে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু সেখানেও উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে তিলধারণের জায়গা নেই, কর্মকর্তারাও ব্যতিব্যস্ত৷