বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো আবার ভোটের ইঙ্গিত দিলেন। অন্যদিকে পাসপোর্ট ছিঁড়ে তাঁকে জোর করে ইউক্রেনে পাঠানো রুখলেন বিরোধী নেত্রী কোলেসনিকোভা।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার একটি টিভি চ্যানেলের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো ফের নির্বাচনের সম্ভাবনা খারিজ করে দেননি। তিনি বলেছেন, বোধহয় তিনি বেশিদিন ধরে প্রেসিডেন্ট পদে আছেন। তবে তিনি এটাও জোরের সঙ্গে জানিয়েছেন, তিনি ছাড়া বেলারুশকে কেউ এখন রক্ষা করতে পারবে না।
লুকাশেঙ্কো এর আগেও একবার নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর তিনি সেদিকে আর এগোননি। বরং নিরাপত্তা বাহিনীকে দিয়ে জোর করে বিক্ষোভ থামাবার চেষ্টা করেছেন। এ বার তিনি বলেছেন, ''আমি আগে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে চাই। তারপর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা যেতে পারে।''
অন্যদিকে বিক্ষোভ দেখানোর সময়ই বিরোধী নেত্রী কোলেসনিকোভাকে অপহরণ করেছিল মুখোশধারীরা। তারা মিনস্ক থেকে তাঁকে সোজা নিয়ে যায় ইউক্রেনের সীমান্তে। জোর করে তাঁকে বেলারুশ থেকে ইউক্রেনে পাঠানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু এই সাহসিনী নেত্রী সেখানে নিজের পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে দেন। ফলে তাঁকে আর জোর করে ইউক্রেন পাঠানো যায়নি। তাঁর সঙ্গে থাকা দুই অনুগামীকে অবশ্য তার আগে ইউক্রেনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোলেসনিকোভাকে আটক করা হয়েছে।
যে কারণে শিরোনামে বেলারুশ
ইউরোপের বেলারুশে টানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায় আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো৷ এখন কেন শিরোনামে এই রাষ্ট্রনায়ক, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
লুকাশেঙ্কোর রাজনীতিতে প্রবেশ
সাবেক সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত থাকা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ১৯৯৪ সালের প্রথম নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় আসেন৷ ৪৫ শতাংশের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবার পর থেকেই লুকাশেঙ্কো বেলারুশের নীতিকে রাশিয়ার নিকটবর্তী করে তোলেন৷ ১৯৯৬ সালে ১৯৯জন সংসদ সদস্য সংবিধান বিরোধিতার দায়ে লুকাশেঙ্কোর অপসারণের দাবি তোলেন৷ কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি তাঁকে৷
ছবি: Reuters/M. Guchek
ক্ষমতা ধরে রাখা
১৯৯৬ সালে অপসারণের দাবির প্রেক্ষাপটে আয়োজন করা হয় একটি গণভোটের৷ সেখানে দেখা যায়, বেলারুশের জনতা বিপুলভাবে লুকাশেঙ্কোর পক্ষে রায় দিয়েছেন, যদিও এই গণভোটকে স্বীকৃতি দেয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ৷ ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর কথা তোলেন তিনি, যা আবার গণভোটে ৭৯ শতাংশের সম্মতি পায়৷ এই ভোটকেও মান্যতা দেয়নি পশ্চিমা বিশ্ব৷
ছবি: Reuters/Y. Yerchak
বেলারুশ ও লুকাশেঙ্কো
লুকাশেঙ্কোর আমলে বেলারুশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে চোখে পড়বার মতো, যদিও বিশেষজ্ঞদের মত, এই উন্নয়নের পেছনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে রাশিয়ার সাথে তাদের নিবিড় সম্পর্ক৷ রাশিয়া থেকে বাজারদরের চেয়ে সস্তায় তেল কিনে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যথেষ্ট লাভ রেখে বিক্রি করতে পারা বেলারুশের অর্থনীতির মূল চালক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
রাশিয়া ছাড়াও চীন, ভেনেজুয়েলা, ইরান, পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে বেলারুশের৷ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাথে লুকাশেঙ্কোর সম্পর্কে উন্নতি এই মুহূর্তে হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷ বিশেষ করে, লুকাশেঙ্কো ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের এই দুই অঞ্চলে চলাফেরা করার ওপর বিধিনিষেধ থাকায় এমনটা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/RIA Novosti
‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’
সাবেক জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ভেস্টারভাইলে ২০১২ সালে লুকাশেঙ্কোকে ‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেন৷ বেলারুশে তাঁর শাসনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে এমনটা বলেন তিনি৷ উত্তরে লুকাশেঙ্কোর ব্যক্তিগত জীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘(গুইডোর মতো) সমকামী হবার চেয়ে স্বৈরাচারী হওয়া ভালো’’৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
বর্তমান বিতর্ক
১৯৯৪ সাল থেকে একটানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায়৷ সব নির্বাচনে তিনিই বিপুলভাবে জয়ী হন৷ কিন্তু ২০২০ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হবার পর বেলারুশজুড়ে নেমেছে প্রতিবাদের ঢল৷ ব্যাপক দুর্নীতি করে ক্ষমতায় লুকাশেঙ্কো - এমনটা মনে করছে ইইউ, অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ক্যানাডার পাশাপাশি বেলারুশের জনতাও৷ বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যেই লুকাশেঙ্কোকে বেলারুশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বললেও পদ ছাড়ার কোনো কথা তিনি এখনও বলছেন না৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
6 ছবি1 | 6
তবে লুকাশেঙ্কো আবার নির্বাচনের ইঙ্গিত দিলেও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। রাশিয়ার একটি রেডিও কেন্দ্রকে তিনি বলেছেন, ''এই বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্ব কে দিচ্ছেন, সেটাই তো আমি জানি না।''
রাশিয়ার সাংবাদিকদের কাছে লুকাশেঙ্কোর দাবি, বিক্ষোভের ফলে তাঁর শাসনের অবসান হলে এরপর রাশিয়াও রেহাই পাবে না। তাঁকে সরে যেতে হলে রাশিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হবে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লুকাশেঙ্কোর প্রধান প্রতিপক্ষ শ্বেতলানা একটি ভিডিও বার্তায় বিশ্বের দেশগুলির কাছে অনুরোধ করেছেন, তারা যেন বেলারুশেরপ্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তিনি বলেছেন, ''আমার দেশ, আমার দেশের লোক এখন আপনাদের কাছ থেকে সাহায্য পেতে চায়।''