রাষ্ট্রীয় টিভিতে ক্ষমা চাওয়ার ভিডিও প্রকাশিত হবার এক সপ্তাহের মাথায় জার্মান তরুণের মৃত্যুদণ্ড মওকুফে ভূমিকা রাখলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো৷
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বৈঠকে৷ছবি: Press Service of the President of the Republic of Belarus/REUTERS
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার বেলারুশের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানায়, প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জার্মান নাগরিক রিকো কে'কে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ জুন মাসে সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়৷
প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর প্রেস বিভাগ জানিয়েছে যে তিনি, ‘‘এই সিদ্ধান্ত নেবার আগে সকল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন৷''
পরে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেন যে, বেলারুশে এক জার্মান নাগরিকের সাজা মওকুফ হয়েছে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘এই খবর স্বস্তি নিয়ে এসেছে৷''
মঙ্গলবার বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে জার্মান তরুণের সাজার বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো৷
বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘আমি আগেও বলেছি যে, একজন প্রেসিডেন্টের জীবনে মৃত্যুদণ্ডের সাথে জড়িত এমন ঘটনাগুলি সত্যিই সবচেয়ে কঠিন৷''
কারাভোগের পর মঞ্চে ফিরলো বেলারুশের ব্যান্ড ইরডোরাথ
বিক্ষোভে কনসার্ট করার অপরাধে দুই বছরের জেল হয়েছিল ইরডোরাথ ব্যান্ডের ভ্লাদিমির এবং নাদেজ্দার। এরপর আবার সংগীতে ফিরে এসেছেন তারা, তুলে ধরেছেন নিজেদের এই অভিজ্ঞতা।
ছবি: Bernd Sonntag
প্রতিবাদে ব্যাগপাইপ বাজিয়ে গ্রেপ্তার
২০২০ সালে নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হয় গ্রেপ্তার বা নিষিদ্ধ করেন ২৬ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট লুকাশেংকো। অনেকে স্ভেতলানা টিখানোস্কায়াকে সমর্থন করেন, কিন্তু নির্বাচনের পর দেখা যায় সরকারি হিসাবে তিনি মাত্র ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। অনেক শিল্পীর পাশাপাশি ভ্লাদিমির এবং নাদেজদাও এতে অংশ নেন। এরপরই গ্রেপ্তার করা হয় তাদের, দেয়া হয় দুই বছরের জেল।
ছবি: Irdorath
রাজনৈতিক বন্দিদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হতো
'জনশৃঙ্খলা লঙ্ঘনের' অভিযোগে দুই বছরের কারাদণ্ড পাওয়াদের মধ্যে ভ্লাদিমির এবং নাদেজ্দা ছাড়াও আরো চার সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। "ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের দিকে ঝোঁক" এমন কয়েদিদের অর্থাৎ, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, শিল্পীদের হলুদ চিহ্ন পরতে হতো কারাগারে। অন্য বন্দিদের থেকে তাদের আলাদা করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। চিহ্নিত বন্দিদের আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হতো, ঘন ঘন তল্লাশি এবং অতিরিক্ত শাস্তি দেওয়া হতো।
ছবি: DW
জার্মানিতে আশ্রয়
বেলারুশের ফ্যান্টাসি-ফোক ব্যান্ড ইরডোরাথের প্রধান শিল্পী নাদেজ্দা এবং ভ্লাদিমির। বেলারুশের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে আয়োজিত এখ বিক্ষোভে গান গাওয়ার জন্য তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এক বছর আগে মুক্তি পেয়ে তারা চলে আসেন জার্মানির বার্লিনে। কিন্তু বেলারুশের কারাগারে তাদের অভিজ্ঞতা জানানোর শক্তি সঞ্চয় করতে তাদের দীর্ঘদিন লেগে গেছে।
ছবি: DW
এখনও দমনপীড়ন চলছে
পরিস্থিতি এখনও বদলায়নি বলে জানান এই দুই শিল্পী। বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এখনও কারাগারে অথবা নির্বাসনে আছেন। শাসনব্যবস্থাও একেবারেই বদলায়নি। বেলারুশ নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থা ভিয়াসনার মতে, কেবল এপ্রিলেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপরাধে আদালত অন্তত ১৬১ জনকে সাজা দিয়েছে। এই সংস্থাকেও কাজ করতে হয় বেলারুশের বাইরে, ফলে অনেক মামলা সম্পর্কে এই সংস্থাও জানতে পারে না।
ছবি: Bernd Sonntag
সংগীতেই মুক্তি
দুই বছর কারাভোগের পর ভ্লাদিমির এবং নাদেজদা একই দিনে মুক্তি পান। দেখা হওয়ার পর দুঃখ ভুলতে তারা তাদের প্রিয় ব্যাগপাইপ নিয়ে একটি হ্রদের পাড়ে চলে যান এবং বাজাতে শুরু করেন। তবে এখনও সব স্বাভাবিক হয়নি। এই দুই শিল্পী জানান, পুলিশ বরাবরই তাদের নজরদারিতে রাখতো। এরপর তারা শুরুতে পোল্যান্ড এবং পরে চলে আসেন জার্মানিতে। তাদের আশা, দ্রুতই বেলারুশে ফিরবে গণতন্ত্র, তারাও ফিরতে পারবেন জন্মভূমিতে।
ছবি: Irdorath
5 ছবি1 | 5
যে মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা
রিকো কে'র বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সব তথ্য প্রকাশ্যে না এলেও জানা গেছে যে, তিনি সংবেদনশীল সামরিক স্থাপনার ছবি তুলছিলেন ও ইউক্রেনের নিরাপত্তা বিভাগের সাথে মিলে কাজ করছিলেন৷ কিন্তু এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন৷
গত মাসে গোপন বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেলারুশের অপরাধ আইনের ছয়টি ধারায় অভিযুক্ত করা হয় ৩০ বছর বয়সি এই জার্মান তরুণকে৷
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বার্তায়অভিযুক্ত জার্মান তরুণ বলেন যে, ইউক্রেনের গুপ্তচর সংস্থা এসবিইউ তাকে এসব সামরিক স্থাপনার ছবি তুলতে ও একটি ট্রেনে বিস্ফোরক রাখতে বলেছে৷ সেই বোমা ফাটলেও কেউ আহত হয়নি বলে জানান তিনি৷
রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশ
সরাসরি রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে হামলা না করলেও বেলারুশ এই অঞ্চলে রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্র৷ ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে কিয়েভে দ্রুত পৌঁছাতে রুশ সৈন্যদের যাতায়াতের জন্য বেলারুশ তার সীমান্ত খুলে দেয়৷
ওএসসিই'র একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে ‘‘যতক্ষণ না বেলারুশের পক্ষ থেকে কোনো সহিংসতাপূর্ণ আচরণ করা হচ্ছে বা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা হচ্ছে'', ততক্ষণ পর্যন্ত বেলারুশকে এই যুদ্ধে শামিল হওয়া রাষ্ট্র বলা যাবে না৷
বেলারুশ বর্তমানে একমাত্র ইউরোপিয়ান রাষ্ট্র, যেখানে এখনও বহাল আছে মৃত্যুদণ্ড৷