বেলারুশের বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোলেসনিকোভাকে অপহরণ করল মুখোশ পরা কয়েকজন লোক। তাদের পরিচয় জানা যায়নি। জার্মানি অবিলম্বে বিরোধী নেত্রীর মুক্তি দাবি করেছে।
বিজ্ঞাপন
বেলারুশের রাজধানী শহর মিনস্কে তখন প্রবল বিক্ষোভ চলছে। প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে। সেখানেই ছিলেন বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোলেসনিকোভা। হঠাৎ একটি গাড়িতে করে মুখোশ পরা কিছু লোক এসে তাঁকে তুলে নিয়ে চলে যায়। রাশিয়ার সংবাদসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, বেলারুশের পুলিশ বলেছে, তারা বিরোধী নেত্রীকে গ্রেফতার করেনি।
যখন মারিয়াকে অপহরণ করা হয় তখন বেলারুশের নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করছিল। মোট ৬৩৩ জনকে তারা গ্রেফতার করেছে।
বেলারুশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠনের ক্ষেত্রে মারিয়া অন্যতম প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনিই প্রেসিডেন্ট পদে বিরোধী প্রার্থী শ্বেতলানা সহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিক্ষোভের কাজ চালিয়ে গেছেন।
জার্মানির বিদেশমন্ত্রী হাইকো মাস বেলারুশকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, তারা যেন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দমনমূলক আচরণ বন্ধ করে। বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোলেসনিকোভাকে মুক্তি দেয়। মাস জানিয়েছেন, ''বেলারুশকে আগে জানাতে হবে, বিরোধী নেত্রী কোথায় আছেন? তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।''
যে কারণে শিরোনামে বেলারুশ
ইউরোপের বেলারুশে টানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায় আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো৷ এখন কেন শিরোনামে এই রাষ্ট্রনায়ক, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
লুকাশেঙ্কোর রাজনীতিতে প্রবেশ
সাবেক সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত থাকা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ১৯৯৪ সালের প্রথম নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় আসেন৷ ৪৫ শতাংশের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবার পর থেকেই লুকাশেঙ্কো বেলারুশের নীতিকে রাশিয়ার নিকটবর্তী করে তোলেন৷ ১৯৯৬ সালে ১৯৯জন সংসদ সদস্য সংবিধান বিরোধিতার দায়ে লুকাশেঙ্কোর অপসারণের দাবি তোলেন৷ কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি তাঁকে৷
ছবি: Reuters/M. Guchek
ক্ষমতা ধরে রাখা
১৯৯৬ সালে অপসারণের দাবির প্রেক্ষাপটে আয়োজন করা হয় একটি গণভোটের৷ সেখানে দেখা যায়, বেলারুশের জনতা বিপুলভাবে লুকাশেঙ্কোর পক্ষে রায় দিয়েছেন, যদিও এই গণভোটকে স্বীকৃতি দেয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ৷ ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর কথা তোলেন তিনি, যা আবার গণভোটে ৭৯ শতাংশের সম্মতি পায়৷ এই ভোটকেও মান্যতা দেয়নি পশ্চিমা বিশ্ব৷
ছবি: Reuters/Y. Yerchak
বেলারুশ ও লুকাশেঙ্কো
লুকাশেঙ্কোর আমলে বেলারুশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে চোখে পড়বার মতো, যদিও বিশেষজ্ঞদের মত, এই উন্নয়নের পেছনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে রাশিয়ার সাথে তাদের নিবিড় সম্পর্ক৷ রাশিয়া থেকে বাজারদরের চেয়ে সস্তায় তেল কিনে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যথেষ্ট লাভ রেখে বিক্রি করতে পারা বেলারুশের অর্থনীতির মূল চালক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
রাশিয়া ছাড়াও চীন, ভেনেজুয়েলা, ইরান, পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে বেলারুশের৷ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাথে লুকাশেঙ্কোর সম্পর্কে উন্নতি এই মুহূর্তে হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷ বিশেষ করে, লুকাশেঙ্কো ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের এই দুই অঞ্চলে চলাফেরা করার ওপর বিধিনিষেধ থাকায় এমনটা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/RIA Novosti
‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’
সাবেক জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ভেস্টারভাইলে ২০১২ সালে লুকাশেঙ্কোকে ‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেন৷ বেলারুশে তাঁর শাসনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে এমনটা বলেন তিনি৷ উত্তরে লুকাশেঙ্কোর ব্যক্তিগত জীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘(গুইডোর মতো) সমকামী হবার চেয়ে স্বৈরাচারী হওয়া ভালো’’৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
বর্তমান বিতর্ক
১৯৯৪ সাল থেকে একটানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায়৷ সব নির্বাচনে তিনিই বিপুলভাবে জয়ী হন৷ কিন্তু ২০২০ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হবার পর বেলারুশজুড়ে নেমেছে প্রতিবাদের ঢল৷ ব্যাপক দুর্নীতি করে ক্ষমতায় লুকাশেঙ্কো - এমনটা মনে করছে ইইউ, অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ক্যানাডার পাশাপাশি বেলারুশের জনতাও৷ বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যেই লুকাশেঙ্কোকে বেলারুশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বললেও পদ ছাড়ার কোনো কথা তিনি এখনও বলছেন না৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
6 ছবি1 | 6
মাস বলেছেন, ''কোলেসনিকোভা যেভাবে উধাও হয়ে গেছেন, তাতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমরা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না।'' বেলারুশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, ''বিরোধী নেত্রীর অপহরণে সরকার কোনোভাবেই জড়িত নয়।''
কিন্তু মাসের হুমকি, ''লুকাশেঙ্কো তাঁর পথ বদল না করলে তঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'' ইইউ ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। ইইউ-র বিদেশ বিষয়ক প্রধানও অবিলম্বে কোলেসনিকোভার মুক্তি দাবি করেছেন। যুক্তরাজ্যের বিদেশ সচিব ডমিনিক রাব বলেছেন, বেলারুশ সরকারকে তাঁর নিরাপত্তা ও ফিরে আসার ব্যাপারে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বিরোধীদের সঙ্গেও তাঁদের আলোচনা শুরু করতে হবে।
বেলারুশের বিরোধী নেতা ম্যাক্সিম ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''কোলেসনিকোভা এই ঝুঁকির কথাটা জানতেন। তিনি তার জন্য প্রস্তুতও ছিলেন। এর ফলে বিক্ষোভ থামবে না। বরং আরো প্রবল হবে।''