গত আগস্টে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন দাবি করে আবারও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন ইউরোপের ‘শেষ একনায়ক’ আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো৷ এর প্রতিবাদে দেশটিতে প্রতি সপ্তাহান্তে বিক্ষোভ হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ও বিরোধী দলের কর্মীদের আটক করা হয়েছে৷
মঙ্গলবার সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যদের বাড়িতে ২০টির বেশি অভিযান চালায় পুলিশ৷ সরকারবিরোধী বিক্ষোভ তদন্তের অংশ হিসেবে এই অভিযান বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷
যে কারণে শিরোনামে বেলারুশ
ইউরোপের বেলারুশে টানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায় আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো৷ এখন কেন শিরোনামে এই রাষ্ট্রনায়ক, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
লুকাশেঙ্কোর রাজনীতিতে প্রবেশ
সাবেক সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত থাকা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ১৯৯৪ সালের প্রথম নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় আসেন৷ ৪৫ শতাংশের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবার পর থেকেই লুকাশেঙ্কো বেলারুশের নীতিকে রাশিয়ার নিকটবর্তী করে তোলেন৷ ১৯৯৬ সালে ১৯৯জন সংসদ সদস্য সংবিধান বিরোধিতার দায়ে লুকাশেঙ্কোর অপসারণের দাবি তোলেন৷ কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি তাঁকে৷
ছবি: Reuters/M. Guchek
ক্ষমতা ধরে রাখা
১৯৯৬ সালে অপসারণের দাবির প্রেক্ষাপটে আয়োজন করা হয় একটি গণভোটের৷ সেখানে দেখা যায়, বেলারুশের জনতা বিপুলভাবে লুকাশেঙ্কোর পক্ষে রায় দিয়েছেন, যদিও এই গণভোটকে স্বীকৃতি দেয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ৷ ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর কথা তোলেন তিনি, যা আবার গণভোটে ৭৯ শতাংশের সম্মতি পায়৷ এই ভোটকেও মান্যতা দেয়নি পশ্চিমা বিশ্ব৷
ছবি: Reuters/Y. Yerchak
বেলারুশ ও লুকাশেঙ্কো
লুকাশেঙ্কোর আমলে বেলারুশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে চোখে পড়বার মতো, যদিও বিশেষজ্ঞদের মত, এই উন্নয়নের পেছনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে রাশিয়ার সাথে তাদের নিবিড় সম্পর্ক৷ রাশিয়া থেকে বাজারদরের চেয়ে সস্তায় তেল কিনে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যথেষ্ট লাভ রেখে বিক্রি করতে পারা বেলারুশের অর্থনীতির মূল চালক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
রাশিয়া ছাড়াও চীন, ভেনেজুয়েলা, ইরান, পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে বেলারুশের৷ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাথে লুকাশেঙ্কোর সম্পর্কে উন্নতি এই মুহূর্তে হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷ বিশেষ করে, লুকাশেঙ্কো ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের এই দুই অঞ্চলে চলাফেরা করার ওপর বিধিনিষেধ থাকায় এমনটা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/RIA Novosti
‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’
সাবেক জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ভেস্টারভাইলে ২০১২ সালে লুকাশেঙ্কোকে ‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেন৷ বেলারুশে তাঁর শাসনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে এমনটা বলেন তিনি৷ উত্তরে লুকাশেঙ্কোর ব্যক্তিগত জীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘(গুইডোর মতো) সমকামী হবার চেয়ে স্বৈরাচারী হওয়া ভালো’’৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
বর্তমান বিতর্ক
১৯৯৪ সাল থেকে একটানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায়৷ সব নির্বাচনে তিনিই বিপুলভাবে জয়ী হন৷ কিন্তু ২০২০ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হবার পর বেলারুশজুড়ে নেমেছে প্রতিবাদের ঢল৷ ব্যাপক দুর্নীতি করে ক্ষমতায় লুকাশেঙ্কো - এমনটা মনে করছে ইইউ, অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ক্যানাডার পাশাপাশি বেলারুশের জনতাও৷ বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যেই লুকাশেঙ্কোকে বেলারুশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বললেও পদ ছাড়ার কোনো কথা তিনি এখনও বলছেন না৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
6 ছবি1 | 6
‘বেলারুশিয়ান এসোসিয়েশন অফ জার্নালিস্টসের' প্রধান আন্দ্রেই বাস্তুনেটসের বাড়ি অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷ পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়৷
মানবাধিকার সংগঠন ভিয়াসনার অফিসেও অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছে তারা৷ এই সময় পুলিশ ফোনসহ অন্যান্য ডিভাইস জব্দ করে এবং কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায় বলে এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক মুখপাত্র পেটার সান্তো সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে অভিযানের সমালোচনা করেছেন৷ এটা ‘তাদের মৌলিক স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পুরোপুরি লঙ্ঘন' বলে ডয়চে ভেলেকে জানান তিনি৷ এমন অভিযান ‘অগ্রহণযোগ্য' বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
২০২০ সালের নির্বাচনের পর ‘এখন পর্যন্ত কয়েকশ নির্যাতনের ঘটনার তালিকা' করা হয়েছে বলে জানান তিনি৷
তবে বড় অপরাধ তদন্তের দায়িত্বে থাকা বেলারুশের ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির দাবি, ‘পাবলিক অর্ডার লঙ্ঘনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে' অভিযান চলছে৷ ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি বলছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এসব সংস্থা মানবাধিকার রক্ষার আড়ালে বিক্ষোভ আয়োজনের তহবিল যোগান দিচ্ছে৷
আগস্টের বিতর্কিত নির্বাচনের পর বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন শুরু হলে এর সঙ্গে জড়িত বেলারুশের ৮৪ জন ব্যক্তি ও সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এর প্রতিক্রিয়ায় অক্টোবরে বিদেশি সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করে দেয় বেলারুশ৷
গতবছর বেলারুশের পুলিশ মোট ৪৭৭ বার সাংবাদিকদের আটক করেছে বলে জানিয়েছে বেলারুশিয়ান এসোসিয়েশন অফ জার্নালিস্টস৷ এর মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে৷