বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে আগেই বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত। রোববার বাধ্য হয়েই দেশ ছাড়লেন।
বিজ্ঞাপন
বেলারুশের ফরাসি দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত ছিলেন নিকোলাস দে ল্যাকোস্টে। রোববার বেলারুশ ছেড়ে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। লুকাশেঙ্কোর সরকারও তার উপর দেশ ছাড়ার জন্য চাপ তৈরি করেছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সম্প্রতি নিজের কাজের গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোকে না দেখিয়ে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখিয়েছিলেন। লুকাশেঙ্কো যে বিষয়টিকে অপমান হিসেবে দেখেছেন। দ্বিতীয়ত, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বেলারুশের একটি নিষিদ্ধ এনজিও-র কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন।
ষষ্ঠবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেলারুশের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো। কিন্তু অভিযোগ, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। দেশের ভিতর তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বহু দেশ লুকাশেঙ্কোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। যার মধ্যে ফ্রান্স অন্যতম। লুকাশেঙ্কো বিষয়টি গোড়া থেকেই ভালোভাবে দেখছেন না। অ্যামেরিকা, জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার বিরুদ্ধে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেশের বিরুদ্ধে একের পর এক নেতা তার বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ করেছেন। লুকাশেঙ্কো সেই সমস্ত কিছুই অত্যন্ত শক্ত হাতে দমন করছেন। প্রায় সমস্ত বিরোধী নেতাকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে যে রাষ্ট্রগুলি স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে লুকাশেঙ্কোর অভিযোগ, ওই রাষ্ট্রগুলি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে প্ররোচনা দিচ্ছে।
বেলারুশ : গণতন্ত্রের দাবিতে নারীদের আন্দোলন
গণতন্ত্রের দাবিতে কয়েক মাস ধরে বেলারুশের নারীরা আন্দোলন করছেন৷ রাজধানী মিনস্কে চলমান আন্দোলনের ছবি নিয়ে লিথুয়ানিয়ায় শুরু হয়েছে এক প্রদর্শনী৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Iryna Arakhouskaya
ফুল ও কানের দুল নিয়ে আন্দোলন
‘দ্য ফিউচার অব বেলারুশ, ফুয়েল্ড বাই উইমেন’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া এই ছবিতে আন্দোলনরত কয়েকজন নারীকে ফুল হাতে পুলিশের মুখোমুখি হতে দেখা যাচ্ছে৷ কানে দুলও পরেছেন তারা৷ পুলিশের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার নারীর নাম নাদিয়া৷
ছবি: Iryna Arakhouskaya
২৬ বছরের পুরোনো পোশাক
লিথুয়ানিয়ার ভিলিনিয়াস শহরের প্রদর্শনীতে মিনস্কে আন্দোলনরত তিন নারীর ছবি৷ ফুল আর প্ল্যাকার্ড হাতে তারাও জানাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোর পদত্যাগ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি৷একেবারে ডানে মায়ের বিয়ের পোশাক পরে দাঁড়ানো নারীর নাম আনা৷ আনার মা ২৬ বছর আগে এই পোশাক পরে বিয়ে করেছিলেন আর ২৬ বছর ধরেই ক্ষমতায় আছেন লুকাশেঙ্কো৷
ছবি: Nadia Buzhan
একদিনে ৩০০জন গ্রেপ্তার
২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আন্দোলনরত এক নারীকে পুলিশের ধরে নিয়ে যাওয়ার ছবি৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সেদিন নারীদের মিছিল থেকে ৩০০ জনকে ধরে নিয়ে যায় বেলারুশের পুলিশ৷
ছবি: Iryna Arakhouskaya
পতাকার রং
বেলারুশের সাদা-লাল পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্দোলনকারীদেরও দেখা যায় সাদা এবং লাল রঙের পোশাক পরতে৷ সব বয়সের নারীই অংশ নিচ্ছেন আন্দোলনে৷
ছবি: MO Museum/Rytis Seskaitis
চাপের মুখে নীরব
এক নারী বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদে মুখে কাপড় বেঁধেছেন৷
ছবি: Volha Shukaila/TUT.BY
নির্বাসিত নেত্রীর বার্তা
প্রদর্শনীকে সমর্থন জানাতে আয়োজকদের বার্তা পাঠিয়েছেন বেলারুশের নির্বাসিত বিরোধী নেত্রী স্ভেৎলানা তিখানোভস্কায়া৷ সেখানে তিনি বলেছেন,‘‘এই প্রদর্শনী বেলারুশের নারীদের উৎসর্গ করা হয়েছে৷ আমাদের সবার একটাই লক্ষ্য- বেলারুশে স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা৷ সংগ্রামের অগ্রভাগে রয়েছেন নারীরা৷ অন্য অনেক নারীর মতো এই আন্দোলন আমার জন্যও ব্যক্তিগত লড়াইয়ের মতো৷’’
ছবি: Volha Shukaila/TUT.BY
করোনাকালে উন্মুক্ত প্রদর্শনী
করোনা সংক্রমণ রোধে লিথুয়ানিয়াতেও এখন লকডাউন চলছে৷ এর মাঝেই ভিলনিয়াসের এমও জাদুঘরের বাইরের দেয়ালে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে চলছে বেলারুশের আন্দোলনের ছবি দেখানো৷ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছবি দেখতে তাই অসুবিধা হচ্ছে না কারো৷
ছবি: MO Museum/Rytis Seskaitis
গণতন্ত্রের জন্য চুমু
আন্দোলনরত দুই নারীর এই চুমুর ছবিটিসহ প্রদর্শনীর সব ছবিই তুলেছেন নারী সাংবাদিক নাদিয়া বুঝান, দারিয়া বুরাকিনা, ইরিনা আরাখোস্কায়া,ভোলহা শুকাইলা এবং ভিয়ালেতা সাউচিতস৷
ছবি: MO Museum/Rytis Seskaitis
অন্যরকম এক প্রদর্শনী
নারীদের তোলা নারীদের আন্দোলনের ছবির এ প্রদর্শনী চলবে আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত৷ প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সেখানে ছবি তো দেখা যাচ্ছেই, সঙ্গে প্রতিটি ছবির গল্পও শোনা যাচ্ছে আলোকচিত্রীদের কাছে৷
ছবি: MO Museum/Rytis Seskaitis
9 ছবি1 | 9
ফ্রান্স লুকাশেঙ্কোকে স্বীকৃতি না দিলেও বেলারুশে নিজেদের দূতাবাস খুলে রেখেছিল। কিন্তু ফরাসি রাষ্ট্রদূত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করছিলেন না। ফলে গোড়াতেই লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে তার বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কিছুদিন আগে বেলারুশের এনজিও গভরি প্রাভদুর (অর্থ সত্য কথন) প্রধান আন্দ্রে ডিমিট্রিভের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। গতবছর নির্বাচনে তিনিও লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন। যার ফলে ক্ষমতায় এসে ডিমিট্রিভের এনজিও-টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন লুকাশেঙ্কো। ফরাসি রাষ্ট্রদূত সেই এনজিও-র প্রধানের সঙ্গে দেখা করায় ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেয় বেলারুশ প্রশাসন। তার আগেই রাষ্ট্রদূত দেশে ফিরে গেছেন।
ফরাসি দূতাবাসের ওয়েবসাইট জানিয়েছে, সোমবার রাষ্ট্রদূতের একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করা হবে ওয়েবসাইটে। সেখানে বেলারুশের মানুষের জন্য কথা বলেছেন রাষ্ট্রদূত।
এদিকে ফরাসি রাষ্ট্রদূত ফিরে যাওয়ার পরে বেলারুশও তাদের রাষ্ট্রদূতকে ফ্রান্স থেকে ফিরিয়ে এনেছে।