বেলারুশ সীমান্তে ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা লিথুয়ানিয়ার
৩১ জানুয়ারি ২০২২
অভিবাসনপ্রত্যাশিদের অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে বেলারুশ সীমান্তজুড়ে নজরদারি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে লিথুয়ানিয়া৷
লিথুনিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে ক্যামেরুন থেকে আসা এক অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ সম্প্রতী বেলারুশ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশটিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমনের ঘটনা বাড়ছে৷ ফাইল ছবি৷ ছবি: Mindaugas Kulbis/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
গত শুক্রবার সীমান্ত পরিদর্শনকালে সরকারের এ পরিকল্পনার কথা জানান লিথুনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইনগ্রিডা সিমোনিতে৷
ইউরোপের পূর্বদিকে অবস্থিত লিথুয়ানিয়ার সীমান্তটির মোট দৈর্ঘ্য ছয়শ ৮০ কিলোমিটার৷ এর অর্ধেক অংশে ইতিমধ্যে নজরদারি ক্যামেরা বসানো আছে বলে জানা গেছে৷
প্রধানমন্ত্রী ইনগ্রিডা সিমোনিতে জানান, ইউরোপীয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় জানা গেছে সীমান্তে বেড়া স্থাপনের চেয়ে ক্যমারো বসানোয় অনেক কম খরচ পড়বে৷
উল্লেখ্য, সীমান্তের প্রস্তাবিত অংশে ক্যামেরা বসাতে প্রায় চার কোটি ইউরোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশটি৷
বেলারুশের পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়া সীমান্তে গত কয়েক মাস ধরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অবস্থান নিয়ে অচলাবস্থা চলছে৷ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ইউরোপে পৌঁছার উদ্দেশ্যে বেলারুশ সীমান্তে জড়ো হচ্ছেন৷ প্রচন্ড শীতে অস্থায়ী তাঁবুতে এবং জঙ্গলে অবস্থান করছে তারা৷ সেখানে হতাহতের ঘটনার খবরও পাওয়া গেছে৷
তবে সীমান্তের এ সংকটের জন্য বেলারুশকে দায়ী করছে ইউরোপ৷ ইউরোপের রাজনৈতিক নেতাদের দাবি, বেলারুশের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদেই এসকল অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ইউপরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়ে সীমান্তে নিয়ে আসা হয়েছে৷
অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
পাচারকারীর টাকা তুলতে ফ্রান্সে মাহমুদের সংগ্রাম
ইউরোপে স্থায়ী হতে ইরাক থেকে প্রথমে সুইডেনে যান মাহমুদ৷ সুইডেনে থাকা হয়নি৷ ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনে যাওয়াও হয়ে ওঠেনি টাকার অভাবে৷ এখন চা, স্যান্ডউইচ বিক্রি করে টাকা জমাচ্ছেন মাহমুদ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Juan Medina/REUTERS
ভাগ্যগুণে বেঁচে আছেন মাহমুদ
দাওয়ান আনোয়ার মাহমুদ৷ ৩০ বছর৷ কয়েকদিন আগে পাচারকারীকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন ফ্রান্স থেকে নৌকায় ব্রিটেনে পৌঁছে দিতে৷ কিন্তু নৌকার পরিস্থিতি দেখে আর সাহস হয়নি৷ ডুবে মরার ভয়ে পাচারকারীকে জানিয়ে দেন এই দফা তিনি যাবেন না৷ না গেলেও টাকা ফেরত পাননি৷ উল্টে পাচারকারীর লোকজন তাকে পিটিয়েছে, মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে৷ তারপর আবার আশায় বুক বেঁধেছেন মাহমুদ৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
অস্থায়ী তাঁবুতে মানবেতর জীবন
গত সপ্তাহে মাহমুদ ছিলেন ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের দুঁকির্ক অঞ্চলের রেল লাইনের কাছের জঙ্গলে গড়ে তোলা অস্থায়ী তাঁবুতে৷ শীতে এমন জায়গায় বাস করা খুব কঠিন৷ প্রচণ্ড ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টি যোগ হলে গাছের ডাল, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদি না পুড়িয়ে আগুন না পোহালে তাঁবুতে বেঁচে থাকা মুশকিল৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
বারবার নতুন ঠিকানায়
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার পরের দিনই মাহমুদ জানতে পারেন, ফ্রান্সের পুলিশ তাদের এই জায়গা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ সুতরাং আবার যেতে হবে নতুন ঠিকানায়৷ আরেক জায়গায় শুরু হবে অস্তিত্ব রক্ষার অবর্ণনীয় কষ্ট৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
ইরাক থেকে যেভাবে ফ্রান্সে...
১০ বছর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ইরাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তাকে৷ ছয় মাসের জেল হলো৷ জেলে পুলিশের নির্যাতনে একটা পায়ে স্থায়ী সমস্যা দেখা দিলো৷ ২০১৫ সালে দেশ ছাড়লেন৷ সুইডেনে চলে গেলেন বোনের কাছে৷ ছয় বছর চেষ্টা করেও সেখানে থাকতে পারেননি৷ তার অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্য্যান করে সুইডেন সরকার৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
অস্থায়ী তাঁবুতেই বাড়তি আয়
সুইডেনে থাকার সময় কুর্দিদের এক রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন মাহমুদ৷ ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এখন অস্থায়ী তাঁবুতেও বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন৷ স্যান্ডউচ, চা, কাবাব, রুটি, মুরগির কলিজা ইত্যাদি রান্না করে যা আয় হয় তা থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন৷ পাচারকারীকে টাকা দিতে হবে, পাচারকারী তাকে নিরাপদে ব্রিটেনে পৌঁছে দেবে- এই স্বপ্ন স্থায়ী হয়ে গেছে মাহমুদের মনে৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
নিরাপদ যাত্রা ব্যয়বহুল
ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য এক পাচারকারীকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন মাহমুদ৷ নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে দেখেন নৌকায় তিল রাখার জায়গা নেই৷ ছোট নৌকায় ৪৮ তম যাত্রী হওয়ার সাহস হয়নি বলে পিটুনি খেয়ে, মোবাইল হারিয়েও ফিরে এসেছেন মাহমুদ৷ তবে আশা ছাড়েননি৷ ভাবছেন ২৫০০ থেকে ৩০০০ পাউন্ড খরচ করে কম মানুষ নেয়া হয় এমন নৌকায় যাবেন৷ আরেকটু বেশি টাকা জমাতে পারলে যাবেন ট্রাকে৷ ট্রাকে যেতে চাইলে ৪০০০ পাউন্ড দিতে হবে মানবপাচারকারীকে৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
দৈনিক আয়
স্যান্ডউইচ, চা, কাবাব, রুটি ইত্যাদি বিক্রি করে দিনে ৪০ থেকে ৭০ ইউরো আয় করেন মাহমুদ৷ তবে পুরো টাকা সঞ্চয় করতে পারেন না৷ নিজের খাওয়ার খরচ তো আছেই, পাশাপাশি দুজন সহকারীকে প্রতিদিন দিতে হয় ২৫ ইউরো৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
লক্ষ্যে স্থির মাহমুদ
সুইডেনে থাকতে পারেননি৷ ফ্রান্সেও মেলেনি উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা৷ তাতে কী! মাহমুদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য একটাই এবং সেই লক্ষ্যের কথা সরাসরিই জানান সবাইকে, ‘‘আমার কাছে ফ্রান্স বা ইউকে বা জার্মানি বা বেলজিয়াম- সবই সমান৷ আমি এখানে এসেছি নতুন করে জীবন শুরু করতে৷ এখনো তা-ই চাই৷’’