৩০ বছর আগে পানশালা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের মতো সর্বত্রই ধূমপান করা যেত৷ এ ব্যাপারে তখন কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না৷ সময়ের সাথে নিয়ম বদলেছে, পাল্টেছে বহুকিছু৷ সম্প্রতি ভাড়া বাড়িতে ধূমপানের বিষয়টি আদালতে উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সমীক্ষায় ৭৭ শতাংশ জার্মান নাগরিক বাড়িতে ধূমপান করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন৷ এমনকি যাঁরা ধূমপায়ী নন, তাঁদের মধ্যেও বেশিরভাগই এর সাথে এক মত৷ সমীক্ষায় বাড়িতে ধূমপান নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন মাত্র ১৭ শতাংশ৷ সমীক্ষাটি করা হয় মোট ১০২০ জন মানুষের মধ্যে৷ একথা জার্মান সংবাদসংস্থা ডিপিএ-এর অনুরোধে পরিচালিত মতামত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইউগভ' জানিয়েছে৷
বাড়িতে অতিরিক্ত ধূমপান করার কারণে এক মহিলা ভাড়াটিয়া তাঁর ফ্ল্যাট ছাড়ার নোটিস দেয়৷ এর ফলে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া মহিলার বিরুদ্ধে ড্যুসেলডর্ফ শহরের আদালতে মামলা দায়ের করে৷ সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে৷
‘ধূমপান বর্জন করুন, ক্যানসারকে দূরে রাখুন’
ফুসফুসের ক্যানসার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই ধূমপায়ী
ছবি: Fotolia/Fotowerk
ধূমপান – বিষপান
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সে কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা৷ তবে ধূমপান স্বাস্থ্যের ঠিক কতটা ক্ষতি করে, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই৷ জার্মানির ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ধূমপান করার কারণেই বছরে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়৷ আর বছরে ৩,৩০০ জন মারা যায় ধূপায়ীদের কাছাকাছি থেকে সিগারেটের ধোঁয়া গ্রহণ করার কারণে৷
ছবি: AP
ফুসফুসের ক্যানসার
ধূমপান শরীরের যে কোনো অঙ্গেরই ক্ষতি করে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফুসফুস এবং হার্ট বা হৃদযন্ত্রের৷ ফুসফুসের ক্যানসার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই ধূমপায়ী৷
একদিনে দুই কোটিরও বেশি সিগারেট
জার্মানিতে মানুষ দিনে প্রায় আড়াই কোটি সিগারেট খায়৷ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ জন নিয়মিত ধূমপান করেন, মাঝে মাঝে করেন শতকরা চারজন৷ তার মধ্যে শতকরা ৩৫ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী৷ জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি ধূমপান করেন কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ ক্ষেত্রের শ্রমিক, বাস বা ট্রাক চালক৷ আর সবচেয়ে কম ধূপায়ীদের মধ্যে রয়েছেন ডাক্তার, ফার্মেসি কর্মী এবং শিক্ষক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে
গত ২০ থেকে ৩০ বছরে জার্মানিতে মহিলাদের মধ্যে ধূমপান করার প্রবণতা অনেক বেড়েছে৷ জার্মানিতে মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি৷ তবে এখন মহিলারা যেভাবে ধূমপান করেন, তা অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের সমান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: Picture-Alliance/KEYSTONE
সিগারেটের বিজ্ঞাপন অনেকটা দায়ী
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপান উপভোগ করার চেয়ে স্মার্টনেস দেখানোই যেন বড় কথা৷ তবে সিগারেটের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনই এদের ধূমপান করতে প্রভাবিত করে থাকে৷ সুখের কথা, জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সম্মিলিত প্রচেষ্টা
ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সহজ নয়, তবে চেষ্টা করলে পারা যায়৷এর জন্য রয়েছে নানা ওষুধপত্র,গ্রুপ থেরাপি৷মনোবিজ্ঞানী, গবেষক এবং কেমনিৎস শহরের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ধূমপান বিরোধী কেন্দ্রের প্রধান প্রোফেসার স্টেফান ম্যুলিশ বলেন, ধূমপান ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমতে শুরু করে৷তিনি একটি গ্রুপ থোরাপিও পরিচালনা করেন৷তাঁর মতে, ‘একা চেষ্টার চেয়ে গ্রুপের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়ার চেষ্টায় সফলতা বেশি’৷
ছবি: Privat
ঘরের বাইরে ধূমপান
বেশ কয়েক বছর থেকে জার্মানিতে বিভিন্ন জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বা অফিস-আদালতের মতো ডয়চে ভেলেতেও অফিস ঘরে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ৷ তবে ঘরের বাইরে, অর্থাৎ বারান্দায় প্রায়ই কর্মীদের ধূমপান করতে দেখা যায়, এমনকি বাইরের তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি হলেও৷
ছবি: picture-alliance/Coleman/Photoshot.
প্রোফেসর ড. এলিজাবেথ পট
‘ধূমপায়ীরা মাত্র কয়েক সপ্তাহ ধূমপান থেকে বিরত থাকুন৷ নিজেরাই বুঝতে পারবেন যে আপনাদের ফুসফুস আরো ভালোভাবে কাজ করছে’৷ একথা বলেছেন প্রোফেসর ড. এলিজাবেথ পট, যিনি ১৯৮৬ সাল থেকে জার্মানির স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় দফতরের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: dapd
শেষ কথা
মানুষ তার আয়ু নিজেই নির্ধারণ করতে পারেনা তা ঠিক, তবে ধূমপান করে ইচ্ছে করে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবারও কোনো যুক্তি নেই৷ শুধু তাই নয়, যারা ধূপায়ীদের আশেপাশে থাকে তারা আক্রান্ত হয় স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যায়৷ আর সন্তানসম্ভবা মায়েরা ধূমপানের সময় ভাবুন তাদের অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের কথা৷ এমনটাই বলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
9 ছবি1 | 9
সমীক্ষাতে বেশিরভাগ মানুষ খোলা জায়গায় ধূমপান করার পক্ষে সহনশীল মনোভাব প্রকাশ করেছেন৷ যাঁদের প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মত দিয়েছেন, যেন খোলা জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করা না হয়৷ অন্যদিকে ১০২০ জনের মধ্যে এক চতুর্থাংশ খোলা জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করাকে সমর্থন জানিয়েছেন৷ তবে অনেকেই জানিয়েছেন যে, রেস্তোরাঁতে আশেপাশে কেউ ধূমপান করলে তাঁরা বিরক্ত বোধ করেন৷
শতকরা ৫৫ জন জানিয়েছেন, কোনো বদ্ধ ঘরে ধূমপান করা হলে তাঁরা অবশ্যই বিরক্ত বোধ করেন৷ তবে যাঁরা জীবনে কখনো ধূমপান করেননি, তাঁদের ক্ষেত্রে এই হিসেব বেড়ে গিয়ে দাড়িয়েছে ৮২ শতাংশে৷ এই জরিপের ফলাফলে আরো দেখা গেছে যে, ৪১ শতাংশ মানুষের আশে পাশে কেউ ধূমপান করলে কোনো সমস্যা হয় না বা তাঁরা বিরক্ত বোধ করেন না৷ এঁদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের মতে, ধূমপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা যেন ধূমপায়ীদের স্বাধীনতা সেভাবে খর্ব না করে৷
তবে ৩৯ শতাংশ মানুষ বলেন, ‘‘হ্যাঁ, পানশালা বা রেস্তোরাঁর মতো জায়গায় ধূমপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ধূমপায়ীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব করা হবে৷'' নিয়মিত ধূমপায়ীদের মধ্যে ৬১ শতাংশ এবং যাঁরা মাঝে মাঝে ধূমপান করেন তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশ এই একই মত প্রকাশ করেছেন৷
বিশেষ করে ১৮-২৪ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ধূমপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে তেমন আপত্তি নেই বলে মত দিয়েছেন৷ ৪৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সিদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ এই একই মত প্রকাশ করেছেন৷ তবে ৪৫ শতাংশ ‘ধূমপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা' – ধূমপায়ীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব করা হবে বলে মত দিয়েছেন৷
‘ইউগভ' জরিপের ফলাফলে আরো বেরিয়ে এসেছে যে, শতকরা মাত্র ২৯ জন মানুষ জীবনে কখনো ধূমপান করেননি, যেখানে ৩৫ শতাংশ নিয়মিত ধূমপান করে থাকেন বলে উঠে এসেছে৷ এছাড়া, ২৬ শতাংশ মানুষ আগে ধূমপান করতেন এবং ১০ শতাংশ বলেছেন যে, তাঁরা মাঝে মধ্যে ধূমপান করেন৷
ধূমপান সম্পর্কে বয়স্ক এবং তরুণদের মধ্যে মতের যে বেশ পার্থক্য রয়েছে, তা সমীক্ষার মধ্য দিয়ে বেশ ভালোভাবেই প্রকাশ পেয়েছে৷ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ধূমপান করেন না৷ ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সিদের মধ্যে শতকরা ২৪ জন জীবনে কখনো ধূমপান করেননি এবং ৪১ জন নিয়মিত ধূমপান করেন বলে জানা গেছে সমীক্ষাটি থেকে৷