বেশি বয়সে সক্রিয় থাকতে গেলে নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করা হয়৷ সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে এ বিষয়ে অনেক জ্ঞান অর্জন করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
নড়াচড়া ও ভারসাম্যের মধ্যে কীভাবে সংযোগ স্থাপন করা যায়, বয়স্ক এই ইঁদুর তা দেখিয়ে দিচ্ছে৷ সেটি দিনে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করে৷ অন্যদিকে সমবয়সি আরেক ইঁদুরকে সারা জীবনের জন্য এমন চক্রযান থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে৷
এই দুই বৃদ্ধ ইঁদুরের মধ্যে তুলনা করলে ভারসাম্যের উপর শরীর সঞ্চালনের প্রভাব সম্পর্কে জানা যায়৷ ইঁদুরের মতো দৌড়াতে পারলে, মানুষের আচরণও সম্ভবত একই রকম হবে৷ বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টফ হান্ডশিন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘ইঁদুরগুলি সহনশীলতা বাড়াতে ব্যায়াম করছে৷ সে ক্ষেত্রে কিন্তু তাদের সমন্বয় বা ভারসাম্যের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না৷ বরং এটি সাধারণ এন্ডিউরেন্স ট্রেনিং বলা চলে৷ এর এত শক্তিশালী প্রভাব দেখা যাবে, এমনটা আমাদের প্রত্যাশা ছিল না৷''
বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মলিকিউলার লাইফ সাইন্সে ক্রিস্টফ হান্ডশিন ও অন্যান্য গবেষকরা সক্রিয় বৃদ্ধ ইঁদুরের ক্ষমতা দেখে অবাক হয়েছেন৷ কারণ সেটিকেও শুরুতে চক্রযান থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল৷ ভারসাম্য পরীক্ষার মাত্র ৬ সপ্তাহ আগে সেটি অনুশীলন শুরু করে৷ সেই প্রক্রিয়ায় ঠিক কী ঘটেছিল?
সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় বৃদ্ধ ইঁদুর এবং কমবয়সি ইঁদুরের মেরুদণ্ড বিশ্লেষণ করে তাঁরা আসল কারণ খুঁজে পান৷ ক্রিস্টফ হান্ডশিন-এর টিম আবিষ্কার করে, যে অনুশীলনের ফলে ইঁদুরের মেরুদণ্ডে স্নায়ুকোষ বিকশিত হয়েছে৷ তথাকথিত এই মোটর নিউরন পেশি সঞ্চালন করে৷ এখানে তার রং বেগুনি হিসেবে দেখানো হচ্ছে৷ ভেস্টিবুলার নিউরনের সঙ্গে তার সংযোগস্থল সবুজ রং করা হয়েছে৷ এই স্নায়ুকোষ মস্তিষ্ক ও অন্তঃকর্ণে ভারসাম্যের অনুভূতি নিশ্চিত করে৷ হান্ডশিন বলেন, ‘‘
শরীর ও মনকে ফিট রাখার ৯ উপায়
শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ একজন মানুষকেই ফিট বলা যায়৷ সেজন্য স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম ও মনের খোরাকের দিকেই নজর দিতে হয়৷ নিজেকে ফিট রাখতে যা করবেন জেনে নিন৷
ছবি: Getty Images
মস্তিষ্ক থেকেই শুরু
মানুষের মস্তিষ্কই যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে আর সুস্থ থাকার মূল্য কোথায়? সেজন্য নিয়মিত আখরোট খান৷ এতে অনেক বেশি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা মস্তিষ্ককে রোগ থেকে রক্ষা করে৷ আর টমেটো, গ্রিন টি-তে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষগুলোকে রক্ষা করে স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে৷ সামুদ্রিক মাছ আলজইমার রোগের হাত থেকে মস্তিষ্ককে দূরে রাখে৷
ছবি: Fotolia/Printemps
হৃৎপিণ্ড বা হার্ট
যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষেজ্ঞ ডা. বেথ অলিভার বলেন, ‘‘প্রতিদিন, প্রতিবেলায় বিভিন্ন রংয়ের ফল ও সবজি এবং যথেষ্ট পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার, পানি, আপেল ও আখরোট, সূর্যমুখী ফুলের বিচি, ডাল এবং ডিমের হলুদ অংশ খান৷ এসবই হৃৎপিণ্ডের জন্য খুবই উপকারী৷’’
ছবি: Colourbox
কিডনি ঠিক রাখতে
খেলাধুলা, হাঁটাচলা, ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে ডায়াবেটিস রোধ করে৷ কারণ ডায়াবেটিস থেকেই কিডনির নানা সমস্যা দেখা দেয়৷ ফলমূল, শাকসবজি, ফাইবার ইত্যাদি খেয়ে ওজন ঠিক রাখা প্রয়োজন৷ লবণ যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত, কারণ অতিরিক্ত লবণ কিডনির ক্ষতি করে৷ কিডনি পরিষ্কার রাখতে দিনে দেড় থেকে দু’লিটার পানি পান করা প্রয়োজন৷
ছবি: Colourbox
হাড়ের যত্ন
হাড় শক্ত রাখতে নিয়মিত শরীর চর্চা বা বিশেষ ধরনের ব্যায়াম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে৷ হাড় নরম বা ভেঙে যাওয়ার জন্য শুধু বয়স বাড়াই একমাত্র কারণ নয়৷ থাইরয়েড, পেটের ক্রনিক সমস্যা বা পাকস্থলির অসুখের কারণেও হাড় নরম বা ক্ষয় হতে পারে৷ আর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার না খাওয়া ও অতিরিক্ত ধূমপান ও নানা ধরনের ওষুধপত্র সেবন হাড়কে নরম করতে পারে৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
পেট বা অন্ত্র ঠিক রাখুন
মানুষের শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ অন্ত্র বা পেট যা লম্বায় প্রায় ৮ মিটার৷ শরীরের গ্রহণ করা খাবারগুলো সহজপাচ্য বস্তুতে পরিণত করে অন্ত্র৷ সেখানে সমস্যা দেখা দিলে সবই ওলট-পালট মনে হয়৷ সেকথা মনে হয় কমবেশি সকলেই জানি৷ তাই শরীরকে ফিট রাখতে হলে অবশ্যই পেট ঠিক রাখতে হবে৷ তাই হাঁটাচলা, শষ্যদানা, বিচি, সাদা দই, শাকসবজি, ফলমূল ও সুষম খাবার গ্রহণ খুবই দরকার৷
ছবি: DW
অতিরিক্ত রোদ নয়!
তারুণ্য ধরে রাখতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের জুড়ি নেই৷ ফাস্ট ফুড, স্ট্রেস, অতিরিক্ত টেনশন, ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি ত্বক নষ্ট করে৷ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ তাই রোদ থেকে দূরে থাকা উচিত৷ শরীর ও মন ভালো এবং ফিট রাখার জন্য শরীরের ভেতরের মতো শরীরের ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো থাকা প্রয়োজন৷ ল্যুবেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিকের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. বিরগিট কালে বলেন এসব কথা৷
ছবি: picture alliance/Friedel Gierth
হেঁটে পায়ের যত্ন
আমাদের শরীরের সমস্ত ভার বহন করে আমাদের পা দুটো৷ তাই পায়ের স্বাস্থ্য খুব জরুরি৷ পায়ের মাংসপেশি শক্ত করতে ও ফিট থাকতে হাঁটাহাঁটির কোনো বিকল্প নেই৷ হাঁটা যে-কোনো মানুষকে ফিট রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
ব্যায়াম
শরীরচর্চা বা ব্যায়াম ছাড়া শারীরিকভাবে সুন্দর হওয়া সম্ভব নয়৷ তাছাড়াও শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট থাকার জন্য বছরে অন্তত একবার ‘মেডিকেল চেকআপ’ করিয়ে নেওয়াও অত্যন্ত দরকারি৷
নারীপুরুষ
একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষের সুস্থ সুখী জীবনের জন্য খাওয়া-দাওয়া আর ব্যায়ামের মতো প্রয়োজন সুস্থ যৌনজীবন৷ যৌনজীবনকে সুখকর করতে বিভিন্ন বীজ, তরমুজ, বেদানা, ডুমুর, ডিম ইত্যাদি খাবার বিশেষ ভূমিকা রাখে বলে বিভিন্ন সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা গেছে৷ তাছাড়া অ্যামেরিকার টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির মতে, তরমুজ শরীরে যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে৷
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
এখানে বাম দিকে কমবয়সি এক ইঁদুরের ছবি দেখা যাচ্ছে৷ মোটর নিউরনও দেখা যাচ্ছে৷ সেগুলির সঙ্গে ভেস্টিবুলার নিউরনের অনেক সংযোগস্থলও স্পষ্ট৷ # মাঝে এক বৃদ্ধ ইঁদুরের ছবি রয়েছে, যেটি কোনো অনুশীলন করে নি৷ সেখানে সবুজ বিন্দুর সংখ্যা অনেক কম৷ # ডানদিকে সেই বৃদ্ধ ইঁদুরের ছবি, যেটি অনুশীলন করেছে৷ এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি সবুজ বিন্দু চোখে পড়ছে৷ অনুশীলন করার কারণে বৃদ্ধ ইঁদুরকে কমবয়সি ইঁদুরের মতো দেখতে লাগছে৷''
ফলে এটা স্পষ্ট, যে এমনকি বেশি বয়সেও পেশি সঞ্চালন সবকিছু স্থির করে৷ ক্রিস্টফ হান্ডশিন মনে করেন, ‘‘বেশি বয়সেও অনুশীলন শুরু করে যে ফল পাওয়া যায়, আমরা সেটা দেখাচ্ছি৷ মানুষের ক্ষেত্রেও এমন গবেষণা হয়েছে৷ কিছু না করার তুলনায় সবকিছুই ভালো৷ কখনোই বলা চলে না, যে অনেক দেরি হয়ে গেছে৷''
ইয়োসেফ বিশফব্যার্গার-এর টিম সক্রিয় এক ইঁদুরের মস্তিষ্কে এখনো সক্রিয় কোষ পরীক্ষা করেছেন৷ এই সব কোষ সবে তৈরি হয়েছে৷ একটি বিষয় তাঁদের চোখে পড়েছে৷ তাঁর মতে, আশেপাশের পুরানো কোষের তুলনায় এই নতুন কোষকে অনেক সহজে উদ্দীপিত করা যায়৷
তাছাড়া সেগুলি পুরানো কোষের তুলনায় অনেক সহজে অন্যান্য কোষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে৷ সক্রিয়, তাজা কোষ স্মৃতিশক্তির জন্যও আদর্শ৷
মস্তিষ্কে নতুন ও তাজা কোষের কল্যাণে সক্রিয় ইঁদুরের স্মৃতিশক্তি আরও নিখুঁত হয়৷ তবে গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি সমস্যা রয়েছে৷ ইয়োসেফ বিশফব্যার্গার বলেন, কাজে না লাগালে সেই কোষ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মরে যায়৷
অর্থাৎ শুধু খেলাধুলার মাধ্যমে ইঁদুর বা মানুষ আইনস্টাইন হয়ে উঠতে পারে না৷
বিড়ালের সঙ্গে যোগব্যায়াম
মানুষ অনেক সময়ই বাড়তি কিছু চায়৷ বোনাস, পুরস্কার, বিনোদন যা-ই হোক, বাড়তি আনন্দ দেবে এমন সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে চায় না৷ যোগব্যায়ামের ক্লাসেও ‘বোনাস’ হয়ে ঢুকে পড়েছে বিড়াল!
ছবি: Reuters/J. Moon
বিড়ালের সঙ্গে যোগব্যায়াম!
পশুপ্রেমীদের অনেকে এ কথা শুনলেই নড়েচড়ে বসবেন৷ মানুষ তো কত ধরনের প্রাণী পোষে৷ কেউ কুকুর, কেউ বিড়াল, কেউ পাখি, আরো কত কি! নিজের ঘরের বাইরেও প্রিয় পশুকে দেখতে চান, তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাতে চান পশুপ্রেমীরা৷ তাই যোগব্যায়ামেও ঢুকেছে কুকুর, সেই ‘ইয়োগা’র নাম হয়েছে ‘ডগা’, ছাগলের সঙ্গে যোগ ব্যায়ামের নাম ‘গোটা’...৷ এখন ‘ক্যাট ইয়োগা’-র বাজারও রমরমা৷
ছবি: Reuters/J. Moon
দেখতেও ভালো লাগে
যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনের ক্যাট ক্যাফেতেও চলছে যোগ ব্যায়ামের ক্লাস৷ ক্লাসে নানা রঙের, নানা আকারের বিড়ালের অবাধ চলাচল৷ ঘাম ঝরানোর সময় তাই আনন্দেও ভাসেন ব্যায়াম করতে আসা তরুণীরা৷ সবার এক কথা – তুলতুলে বিড়ালগুলো দেখলেও ভালো লাগে, আদর করতে পারলে তো কথাই নেই!
ছবি: Reuters/J. Moon
আদর
যোগব্যায়ামে মগ্ন কারো সামনে দিয়ে মিঁউ মিঁউ করে হেঁটে যায় কোনো বিড়াল৷ বিড়াল ভালোবাসেন, কিন্তু তখনও ব্যায়াম ভুলে হাত বাড়িয়ে একটু আদর করে দেবেন না, তা কী হয়!
ছবি: Reuters/J. Moon
বিজ্ঞ বিড়াল!
কখনো কখনো রাজ্যের গাম্ভীর্য নিয়ে দূর থেকে ব্যায়াম দেখে বিজ্ঞ বেড়াল৷
ছবি: Reuters/J. Moon
কাছে থাকো...
অনেক সময় ইয়োগার ম্যাটে হাঁটতে হাঁটতে টুক করে গায়ে উঠে পড়ে৷ কে তাড়াবে তাকে! যোগাসনের চেয়ে তখন খুদে বন্ধুর কোমল উষ্ণতাই যে বেশি ভালো লাগে!
ছবি: Reuters/J. Moon
বিড়ালের আদর
পায়ে আদর করে দিচ্ছে এক বিড়াল৷ বিড়ালপ্রেমীদের কাছে এমন স্পর্শের অনুভূতি অতুলনীয়৷ তাই তো ৬ ডলার দিয়ে সদস্য হয়ে প্রতি ক্লাসের জন্য অন্তত ২০ ইউরো খরচ করতে বাধে না কারো৷