বাংলাদেশে বেসকারি খাতকে জ্বালানি তেল আমাদানির অনুমতি দেয়া হবে। চাইলে তারা এলএনজিও আমদানি করতে পারবে। এখন আমদানি করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে বেসকারি খাতকে জ্বালানি তেল আমাদানির অনুমতি দেয়া হবে। চাইলে তারা এলএনজিও আমদানি করতে পারবে। এখন আমদানি করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। তবে পওয়ার প্ল্যান্টগুলো শর্ত সাপেক্ষে আমদানি করতে পারে।
বেসরকারি খাতে রিফাইনড, না ক্রুড আমদানির অনুমতি দেয়া হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। জ্বালানি তেল আমদানি, রিফাইন ও বাজারজাতকরণ কেমন হবে তাও স্পষ্ট নয়। এনিয়ে নীতিমালার খসড়া তৈরি করছে জ্বালানি বিভাগ।
লোডশেডিংয়ে রাজধানীর জনজীবন
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল ও গ্যাস সংকটে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং চাহিদার সমন্বয় করতে গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল মেনে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চালু করেছে সরকার৷ এই লোডশেডিংয়ের কেমন প্রভাব পড়ছে জনজীবনে? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mortuza Rashed/DW
এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং
সরকার দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের এলাকা এবং সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে৷এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘এলাকাভিত্তিক আমরা ঠিক করেছি৷ আগে থেকে আমরা গ্রাহকদের জানিয়ে দেবো৷ প্রথম সপ্তাহে দেখবো৷ আমরা মনে করছি যে, এক থেকে দুই ঘণ্টার মতো মেজার নেবো লোডশেডিংয়ের জন্য৷ তা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘চুরি ঠেকাতে হবে সবার আগে’
ঢাকার পীরেরবাগের ভোলা হেয়ার ড্রেসারের মালিক কার্তিক শীল বলেন, ‘‘শুনছি সারা দুনিয়াতেই সমস্যা চলতেসে৷ এখন দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকলে কী আর করা? সরকার চেষ্টা তো করছে৷ কিন্তু আসল কথা হইল, চুরি-দুর্নীতি ঠেকাইতে হবে সবার আগে৷ সরকারি লোক যে কাজেরই দায়িত্ব পায়, সেই কাজেই চুরি করে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘কারেন্ট গেলে সবারই অসুবিধা, তয় গরম বাড়লে বেচা-বিক্রিও বাড়ে’
ঢাকার গাবতলি এলাকায় শরবত বিক্রেতা আবদুর রহিমা বলেন, ‘‘আমরা যে বস্তিতে থাকি, সেখানে দিনে কয়বার কারেন্ট যায় হিসাব নাই৷ কারেন্ট গেলে সবারই তো অসুবিধা৷ তয় গরম বাড়লে আমার বেচা-বিক্রিও বাড়ে৷ একদিক দিয়া যেমন অসুবিধা হইসে, অন্যদিকে সুবিধাও হইসে কারো কারো৷ সেই হিসাবে আমি খুশি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘খালি সরকারের দোষ দিয়ে লাভ আছে?’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সবুর মিয়া বলেন, ‘‘লোডশেডিং এই এলাকায় নতুন কিছু না৷ ২৪ ঘণ্টায় কতবার কারেন্ট যায় তার কোনো হিসাব নাই৷’’ তিনি জানান, শুধু কারওয়ান বাজারেই কতশত অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ আছে তার কোনো হিসাব নেই৷ তাই তিনি একতরফাভাবে শুধু সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নারাজ৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ব্যবসা করা কঠিন’
ঢাকার পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বৌবাজারের মুদি দোকানি শাহ আজম বলেন, ‘‘আমাগো এদিকে কারেন্ট একটু কমই যায়৷ তবুও এমনে নিয়ম কইরা লোডশেডিং হইলে সবার জন্য একটু সমস্যাই৷ তার উপর আবার রাত আটটা বাজতেই দোকান বন্ধ করন লাগে৷ জিনিসপত্রের দাম অনেক বাড়তি৷ সবমিলাইয়া আমরা ব্যবসায়ীরা হিমশিম খাইতেসি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জরুরি সেবায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ
পঙ্গু হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ একাধিক সরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো লোডশেডিং নেই৷ সরকার ঘোষিত লোডশেডিং হাসপাতালে হয় কিনা জানতে চাইলে এক সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, ‘‘শুধু এখন না, আমার গত ১০ বছরের ক্যারিয়ারে আমি হাসপাতালে লোডশেডিং দেখিনি৷ এখানে অনেক মুমূর্ষু রোগী থাকেন, ইলেকট্রিসিটি না থাকলে তো অক্সিজেনের অভাবে তাদের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে যাবে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অলিগলিতে নিয়ম মানা হচ্ছে না
ঢাকার শেওড়াপাড়া-পীরেরবাগ রোডে রাত সাড়ে ৯টায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার প্রায় প্রতিটি দোকানই খোলা৷ সরকারের বিধিনিষেধ না মেনে রাত ৮টার পর দোকান খোলা রাখার কারণ জানতে চাইলে এক দোকানি বলেন, ‘‘ব্যবসাপাতির অবস্থা ভয়াবহ৷ তার মধ্যে এত জলদি দোকানপাট বন্ধ করলে ব্যবসা করবো কীভাবে?’’ অনেকেই দাবি করেন, বিদ্যুৎচালিত ফ্যান-লাইট বন্ধ করে তারা রিচার্জেবল লাইট ব্যবহার করছেন যেন বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
উৎপাদন খরচ বেড়েছে
ঢাকার মিরপুর ১৩-র জকি গার্মেন্টসের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান রাসেল আহমেদ বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবন থাকায় লোডশেডিং কম হয়৷ তবে যদি ১ ঘণ্টায় ইলেকট্রিসিটি না থাকে, আমাদের জেনারেটর চালানোর জন্য ডিজেল খরচ বাবদ ১৬ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়৷ এটা আমাদের উৎপাদন খরচকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান
সরকার গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল মেনে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার পর থেকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রিচার্জেবল ফ্যান-লাইটের মূল্য বৃদ্ধি করে অন্যায়ভাবে মুনাফা লাভের চেষ্টা করছেন৷ এ প্রচেষ্টা রোধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিতভাবে বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবসায়ীদের সতর্ক এবং জরিমানা করছেন৷
ছবি: Consumer association for Bangladesh
লোডশেডিংয়ের শিডিউল না মানার অভিযোগ
ঢাকার তেজগাঁওয়ের আজিজ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবসা পুরাপুরি কারেন্টের সাথে সম্পর্কিত৷ কারেন্ট ছাড়া আমরা পুরা বসা৷ সরকার যে ঘোষণা দিসে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা কারেন্ট থাকবে না, সেই নিয়ম তো মানা হইতেসে না৷ তাছাড়া নির্ধারিত যে সময়ে কারেন্ট যাওয়ার কথা, সে সময়েও যায় না, যায় আগে-পরে কোনো এক সময়ে৷ আমরা প্রস্তুতি রেখেও লাভ হয় না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঢাকার বাইরে ভয়াবহ লোডশেডিং
ঢাকার তালতলা কাঁচাবাজারের শাকসব্জি ব্যবসায়ী নুরুল আমিন জানান, ‘‘আমি গ্রামের বাড়িতে আমার মাকে প্রতিদিন ফোন দেই৷ ফোন দিলেই শুনি কারেন্ট নাই৷ এমনকি অনেক সময় ফোনে চার্জও দিতে পারে না কারেন্টের অভাবে৷ আবার আছে ভোল্টেজের সমস্যা, এই সমস্যার কারণে কারেন্টে চলা অনেক জিনিস নষ্ট হইয়া যায়৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সরকারি অফিস-আদালতে নির্দেশনা পালন
ঢাকার মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এয়ার কন্ডিশনার কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এর কারণ জানতে চাইলে এক কনস্টেবল বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারি অফিসে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার পর ওসি স্যার এই উদ্যোগ নিয়েছেন৷ এছাড়া প্রাকৃতিক আলো বাতাসের জন্য কক্ষে স্থায়ীভাবে লাগানো জানালাগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দাম বাড়ানোর যুক্তি
ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেট, চকবাজারসহ একাধিক পাইকারি ও খুচরা ইলেকট্রনিক্সের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রিচার্জেবল সকল পণ্যের দাম বেড়েছে দুইশ থেকে হাজার টাকা৷ যথেষ্ট মজুদ থাকার পরও দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, এটা বাজারের নিয়ম, চাহিদা বেশি থাকলে দাম বাড়বেই৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘এ সমস্যা ক্ষণস্থায়ী’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী কিন্তু জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের সংকট চলছে৷ কোভিড পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হওয়ায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আবার খুলেছে এবং তেল-গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে৷এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংকট৷ আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ এই সংকটের অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে৷’’
ছবি: Sergei Grits/AP Photo/picture alliance
14 ছবি1 | 14
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন,"আগে সিদ্ধান্ত নিতে ক্রুড, না রিফাইন অয়েল আমদানি করার সুযোগ দেয়া হবে। তারপর ঠিক করতে হবে দাম কীভাবে নির্ধারণ করা হবে। আপাতত ক্রুড অয়েল আমদানি বেসরকারি খাতে সম্ভব নয়। তাহলে তাদের রিফাইনারি স্থাপন করতে হবে যা সময়সাপেক্ষ। আর বিপিসির দামেই যদি বিক্রি হয় তাহলে ভোক্তা লাভবান হবে না।”
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত সপ্তাহে বলেছেন." কম দামে জ্বালানি নিশ্চিত করাই এখন মূল সমস্যা। তাই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও চাইলে জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারবে। সরকার দাম ঠিক করে দেবে।”
তিনি আরো জানান,"এলএনজিও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমদানি করতে পারবে। আর আগামী জুন থেকে ডিজেল চালিত সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে। এরইমধ্যে এক হাজার মেগাওয়াট ডিজেল উৎপাদিত বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।”
আলোচনায় যা আছে
বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি প্রথম সামনে আসে গত নভেম্বরে। তখন মন্ত্রিপরিষদে ‘‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২'' অনুমোদনের জন্য ওঠে। ওই বৈঠকে প্রথম বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল আমদানির অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়। তখন বেসরকারি আমদানিকারকেরা রিফাইন অয়েল আমদানি করবে, না রিফাইন করে নিজেরাই খোলা বাজারে বিক্রি করবে তা আলোচনা হয়। সরকারের কাছে বিক্রি করবে কি না সেটি আলোচনা হয়। বলা হয়, নিজেরা রিফাইন করলে এক্ষেত্রে বিএসটিআইকে মনিটরিং রাখতে হবে যাতে মান ঠিক থাকে।
বেসরকারি আমদানিকারকেরা ক্রুড অয়েল আমদানির পর বিটুমিনসহ অন্যান্য যে উপজাত পণ্য আসবে এগুলো হয় তারা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করবে অথবা বাইরে রপ্তানি করবে। বাজারজাত পদ্ধতি নিয়েও কথা হয়। তখন বলা হয় যে, এমনও হতে পারে তারা ক্রুড অয়েল আমদানির পর বিপিসির কাছে বিক্রি করবে। বিপিসি তা রিফাইন করে দেশের বাজারে বিক্রি ও রপ্তানি করবে। আমদানি করা তেলের দাম ঠিক করে দেবে সরকার। আলোচনায় বেরসরকারি পর্যায়ে রিফাইনারি স্থাপনের ওপর জোর দেয়া হয়। জানা যায়, এই বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমদানিকারকদের লাইসেন্সেরও প্রশ্ন আসবে। তবে বাংলাদেশে এলপিজি ও লুব অয়েল বেসরকারি খাতে আমদানি হয়। লুব অয়েলের বড় আমদানিকারকেরা বিপিসির সহায়তায়ই তা বাজারে দেয়। আর ছোট আমদানিকারকেরা নিজেরাই বাজারজাত করেন।
পরিস্থিতি কী?
এখন বিশবাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। কিন্তু এর আগে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং ডলার সংকটের কারণে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বলতে গেলে বন্ধ করে দেয়া হয়। মন্ত্রী নিজেও বলেছেন জুনের পর ডিজেল চালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট এক হাজার ২০৫ কোটি ৮০ লাখ বা ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮৭ কোটি ডলার। পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয় প্রায় এক হাজার ১১৯ কোটি বা ১১.১৯ বিলিয়ন ডলারের। তবে এই জ্বালানি তেল সব বিপিসি আমদানি করেনি। পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোও আমদানি করেছে। বিপিসি আমদানি করেছে ৬৬ লাখ ৭ হাজার ২২৪ টন জ্বালানি তেল। মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫৫৪ কোটি ৯০ লাখ বা প্রায় ৫.৫৫ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দেয়। এই ভর্তুতি কমিয়ে আনা তুলে দেয়ার চাপ আছে। বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল আমদানি করা হলে সেটা বাজার দরেই বিক্রি হবে। যদিও সরকার বলছে আন্তর্জাতিক বাজার দেখে তারা ভ্যাট, ট্যাক্স, আমদানি খরচ ধরে লাভসহ খুচরা বাজার দাম ঠিক করে দেবে।
বড় ধরনের রিস্ট্রাকচারিং করতে হবে: ড. ম. তামিম
যেভাবে লাভ হবে
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, "বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হলে বড় ধরনের রিস্ট্রাকচারিং করতে হবে। তবে যদি তারা আমদানি করে বিপিসির কাছে বিক্রি করে তাহলে লাভ দেখি না।”
তার কথা, "তারা যদি আমদানি করে নিজস্ব ডিষ্ট্রিবিউশন পদ্ধতিতে বিক্রি করতে পারে তাহলে বাজার প্রতিযোগিতামূলক হবে। বাজারে অনেক প্রতিযোগী থাকবে। ভোক্তা যুক্তিসঙ্গত দামে তেল পাবে। তা না হলে লাভ হবে না।”
তার এই কথা পরিশোধিত জ্বালানি তেল নিয়ে । তবে ক্রুড অয়েল আমদানির ক্ষেত্রে তিনি বলেন, "সেটা রিফাইন করার মতো ব্যবস্থা নেই। রিফাইনারি আছে সরকারের। বেসরকারি খাতে রিফাইনারি স্থাপন অনেক সময় ও বিনিয়োগের ব্যাপার। সেটা যখন করা যাবে তখন আরো সুবিধা হবে। রি-এক্সপোর্ট করা যাবে।”
আর দাম নির্ধারণে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের একটি ভূমিকা থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
দাম নির্ধারণ করবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী বলেন,"আগে জ্বালানি তেল আমদানির ব্যাপারে নীতিমালা তৈরি করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। তা না হলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে। এখন ৯৮ ভাগ এলএনজি বেসরকারি খাত আমদানি করে। দাম আমরাই ঠিক করে দিই। এলএনজি আমদানির অনুমতির সময় কেউ না বুঝতে পেরে জ্বালানি তেলও আমদানি করেন। কিন্তু তারা তা বিক্রি করতে পারেননি।”
পাকিস্তান আমলে বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল আনা হতো। তখনও দাম নিয়ে সমস্যা হয়নি।”
বেসরকারি খাতকেই তাদের মতো করে আমদানি ও বিপণন করতে দিতে হবে।”
ম. তামিম বলেন,"ভারতে বেসরকরি খাতে জ্বালানি তেল আনা হয়। তাতে ভোক্তারা লাভবান হচ্ছে, তাদের চেষ্টা থাকে কম দামে এনে কম দামে বিক্রি করার। কিন্তু এখানে যদি বেসরকারি খাতে আমদানি করে বিপিসির কাছে বিক্রি করা হয় তাতে লাভ হবে না।”
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা যেভাবে কমাবে ইউরোপ
২০২৭ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর থেকে তাদের জ্বালানির নির্ভরতা শূন্যে নামিয়ে আনতে চাইছে৷ গত বুধবার এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় এই জোট৷
ছবি: Jean-Francois Badias/AP/picture alliance
রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা
এখন পর্যন্ত রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ ভাগ গ্যাস ও ২৭ ভাগ তেলের চাহিদা মেটাচ্ছে৷ ইউরোপজুড়ে এই জ্বালানি ঘর গরম রাখতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং শিল্পে ব্যবহৃত হয়৷ এতটা নির্ভরশীলতা হুট করে কমানো সম্ভব নয়৷ তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ইউরোপকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে৷ অবশ্য এই নির্ভরশীলতা কাটাতে অন্তত আরো পাঁচ বছর প্রয়োজন৷
ছবি: Kremlin Pool/ZUMAPRESS/picture alliance
নবায়নযোগ্যে ভরসা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল৷ কিন্তু ইউরোপীয় কমিশন সেই পরিকল্পনাকে আরো ত্বরান্বিত করতে চাইছে এখন৷ আগের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্যের পরিকল্পনাকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করতে চাইছে তারা৷ ২০২০ সালের হিসেবে, তাদের ২২ শতাংশ জ্বালানি আসে বায়ু, সৌর ও জৈবশক্তি থেকে৷
ছবি: picture alliance / Zoonar
আইনে পরিবর্তন
লক্ষ্যে পৌঁছাতে ইউরোপীয় কমিশন আইনে পরিবর্তন আনার ঘোষণাও দিয়েছে৷ কড়া বিধিনিষেধের কারণে অনেক প্রকল্প পাস হতে সময় লাগে৷ সেগুলো কিছুটা শিথিলের উদ্যোগ নেয়া হবে৷ এছাড়া বড় বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনগুলোর ওপর সৌর প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করার নিয়মও করা হবে৷
ছবি: Philip Reynaers/BELGA/dpa/picture alliance
জ্বালানি সাশ্রয়
কমিশন ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি সাশ্রয়ও ১৩ ভাগ কমাতে চায়৷ আগের প্রস্তাবে তা ছিল ৯ শতাংশ৷ এর জন্য অনেক ভবনকে সংস্কার করা হবে, যেন সেগুলোতে কম জ্বালানি খরচ হয়৷ তাদের হিসেব বলছে, মানুষ চাইলে নিজ উদ্যোগে তাদের জ্বালানি খরচ কমাতে পারে৷ এতে করে অন্তত পাঁচ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা কমানো সম্ভব৷
ছবি: David McNew/Getty Images
গ্যাসের নতুন অবকাঠামো
ইউরোপ রাশিয়া থেকে বছরে ১৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আমদানি করে থাকে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও জ্বালানি সাশ্রয় করে এর বিকল্প তৈরি সম্ভব৷ কিন্তু স্বল্পমেয়াদে ইউরোপ এখন সেই গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজছে৷ সেক্ষেত্রে হাইড্রোজেন গ্যাস এর বিকল্প হতে পারে৷ কিন্তু এর অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে৷ কারণ যে-কোনো সময় রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বিপদ তৈরি হবে, যেমনটি তারা পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ার ক্ষেত্রে করেছে৷
ছবি: Joerg Boethling/imago images
অর্থায়ন
সবমিলিয়ে জ্বালানি খাতে ২০২৭ সালের মধ্যে ২১০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করতে চায় ইইউ৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৩০০ বিলিয়ন হবে৷ এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ৮৬ বিলিয়ন, হাইড্রোজেন অবকাঠামোর জন্য ২৭ বিলিয়ন ইউরো, ২৯ বিলিয়ন ইউরো বিদ্যুৎ গ্রিড উন্নয়নে ও ৫৬ বিলিয়ন ইউরো জ্বালানি সাশ্রয় অবকাঠামো ও হিট পাম্প তৈরিতে খরচ হবে৷
ছবি: Christoph Hardt/Geisler-Fotopress/picture alliance