বেসরকারি হাসপাতালের পর এবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ সম্প্রতি কলকাতার একেবারে প্রথম সারির বেশ কয়েকটি স্কুল অধ্যক্ষ এবং প্রশাসনিক প্রধানদের তলব করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আপনার স্কুলে নাকি যারা বাংলায় কথা বলে, তাদের সবাইকে একটা আলাদা সেকশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়?’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যাঁকে প্রশ্নটা করছেন, তিনি কলকাতার অন্যতম সেরা স্কুল ‘লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ’-এর অধ্যক্ষ৷ একটু অপ্রতিভ হয়ে তিনি দাবি করলেন, ভাষার ভিত্তিতে এমন কোনও বিভাজন তাঁরা করেন না৷ সব ছেলে একসঙ্গেই মিলেমিশে থাকে৷
মুখ্যমন্ত্রীর পরের প্রশ্ন, ‘‘আপনাদের স্কুলে ভর্তি হতে কত টাকা লাগে? ২ লক্ষ ৪৭ হাজার? কেন, এত টাকা লাগে কেন!’’
‘‘তা হলে প্রতি মাসে কত দিতে হয়?’’ মুখ্যমন্ত্রীর পরের প্রশ্ন৷ তারপর নিজেই বললেন, অন্য কোনও কারণে না, নিজের কৌতূহল মেটাতে টাকার অঙ্কটা জানতে চাইছেন৷
কলকাতার তাবড় বেসরকারি স্কুলের প্রধানদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই সওয়াল-জবাব সরকারি ব্যবস্থাপনাতেই সরাসরি দেখা গেল টিভিতে৷ সেখানে মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার বোঝালেন, তাঁর সরকার নজর রাখছে৷ বেসরকারি বলেই লাগামহীন ফি নেওয়া, নিজেদের ইচ্ছেমতো চলা যাবে না৷ অবশ্য তার জন্য কোনও সরকারি বিধি-নিষেধ এসব বেসরকারি স্কুলের ওপর চাপিয়ে দেননি মুখ্যমন্ত্রী৷ বরং তাঁর প্রস্তাবে একটি সেল্ফ রেগুলেটরি কমিটি তৈরি হয়েছে, রাজ্যের শিক্ষাসচিব এবং প্রথম সারির স্কুলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে৷ নিয়মিত বৈঠক করবে এই কমিটি, বিভিন্ন অভাব, অভিযোগ খতিয়ে দেখবে৷ এভাবেই স্বনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা হবে৷
খামোকা কিছু হইচই, শোরগোল হবে, কাজের কাজ কিছু হবে না: সাবেক বামফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী
কিন্তু এমন একটা কমিটির কি প্রয়োজন ছিল? অথবা স্বশাসিত স্কুলগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কতটা কার্যকর হবে এমন কমিটি? পশ্চিমবঙ্গের পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী, অধ্যাপক সুদর্শন রায়চৌধুরী অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বললেন, হতেই পারে যে এই স্কুলগুলির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ সরকারের কাছে জমা পড়েছিল৷ এবং অনেক স্কুলের পরিচালন পর্ষদ তাদের যে জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তার বিধি-নিষেধ মেনে চলে না৷ এ কারণে, অতীতে বামফ্রন্ট সরকারও একবার বেসরকারি স্কুলগুলিকে নিয়ন্ত্রণের একটা চেষ্টা করেছিল৷ তবে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর মতে, বর্তমান সরকার যা করল, তাতে খামোকা কিছু হইচই, শোরগোল হবে, কাজের কাজ কিছু হবে না৷ নিয়ন্ত্রণের ভান থাকবে মাত্র, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ কিছু হবে না৷
একাধিক নামী বেসরকারি স্কুলের অধ্যক্ষ অবশ্য কলকাতার টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা এই বৈঠক থেকে বেরিয়ে বলেছেন, এমন একটা উদ্যোগ অবশ্যই দরকার৷ এবারের ক্লাস টেন এবং ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষায় অত্যন্ত ভালো ফল করা ‘হেরিটেজ স্কুল’-এর অধ্যক্ষা এমন কথাও বললেন, যে অবশ্যই, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার পেছনে আজকাল যে বিপুল পরিমাণ খরচ হয়, সেটা কেন হয়, কোন খাতে হয়— তা জানার অধিকার অভিভাবকদের অবশ্যই আছে৷ এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে তাঁরা সম্পূর্ণ একমত৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে...
পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা ব্যবস্থা
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী জনতাকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ভার কেন্দ্রের নয়, রাজ্য সরকারের৷ পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চিকিৎসার সমান্তরালে বিকল্প ব্যয়বহুল পরিষেবা থাকলেও, সিংহভাগ মানুষ সরকারি পরিষেবার ওপরই নির্ভরশীল৷
ছবি: The Week/Gunjan Sharma
মাত্র দু’টাকায় চিকিৎসা
দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষরা চিকিৎসার জন্য মূলত সরকারি হাসপাতালের ওপরই নির্ভরশীল৷ হাসপাতালের বহির্বিভাগে মাত্র দু’টাকার বিনিময়ে চিকিৎসার পাশাপাশি কম খরচে পেসমেকার স্থাপন, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, আল্ট্রাসাউন্ড বা ইসিজির মতো পরিষেবাও পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/P. Samanta
চেতনা বাড়াতে টিভি
প্রসূতির দেখাশোনা বা নবজাতকের প্রতিপালনের নিয়ম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হাসপাতালের সরকারি হাসপাতালের ন্যাটাল ওয়ার্ডে এখন হাজির টিভি৷ তাতে মেগা সিরিয়ালের বদলে সচেতনামূলক অনুষ্ঠান দেখানো হয়!
ছবি: DW/P. Samanta
সর্বক্ষণের চিকিৎসক
রাতবিরেতে অসুখ-বিসুখে সরকারি হাসপাতালই ভরসা৷ এখানে আপৎকালীন পরিষেবা ছাড়াও ২৪x৭ চিকিৎসক পাওয়া যায়৷ সারা পশ্চিমবঙ্গেই বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় এই ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতাল অনেকটা এগিয়ে৷
ছবি: DW/P. Samanta
উন্নতমানের পরিষেবা
সম্প্রতি সরকারি হাসপাতালে সংকটাপন্ন রোগী ও শিশুদের বিশেষ পরিচর্যার জন্য এসএনসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ চালু করা হয়েছে, যা এতদিন ছিল কেবল বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমেই৷ উপকৃত হয়েছে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার৷
ছবি: DW/P. Samanta
ন্যায্য মূল্যে ওষুধ
ব্র্যান্ডের থাবা থেকে ওষুধ মুক্তি পেতেই মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে৷ চিকিৎসক জেনেরিক নামে ওষুধ লেখার ফলে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে৷ এ সব দোকানে ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় মেলে৷
ছবি: DW/P. Samanta
নাগালে আধুনিক পরিষেবা
সরকারি হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স-রে, ইউএসজি, সিটি স্ক্যানের মতো আধুনিক পরিষেবা পাওয়া যায়৷ তবে রোগীর চাপে অনেক সময়েই এসব যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন বিকল হয়ে পড়ে থাকে৷
ছবি: DW/P. Samanta
নানারকম প্রকল্প
পশ্চিমবঙ্গে সরকারি স্তরে স্বাস্থ্য পরিষেবায় নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে৷ জননী শিশু সুরক্ষার মতো প্রকল্প এখন বেশ জনপ্রিয়৷ এর সাহায্যে মায়ের প্রসবকালীন মৃত্যুর হারও কমিয়ে ফেলা গেছে৷
ছবি: DW/P. Samanta
সরকারি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ
বেশিরভাগ সময়েই তিল ধারণের জায়গা থাকে না৷ তবুও পরিষেবার খোঁজে দৈনিক কত না মানুষের জমায়েত হয় সরকারি হাসপাতালে! তৃতীয় বিশ্বের জনবহুল দেশে এটাই দস্তুর৷
ছবি: DW/P. Samanta
অতিথি দেবঃ ভব
সরকারি হাসপাতাল আগের থেকে পরিচ্ছন্ন হয়েছে, সুলভে মিলছে পরিষেবা: কিন্তু কিছু ছবি এখনও বদলায়নি: যেমন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চারপেয়েদের অবাধ বিচরণ৷
ছবি: DW/P. Samanta
স্বাস্থ্য যখন পণ্য
যাঁদের হাতে টাকা রয়েছে, তাঁরা সরকারি হাসপাতালে ভিড় এড়াতে বেসরকারি পরিষেবার সুযোগ নেন৷ যদিও কলকাতার এমন বেসরকারি ক্লিনিকেও এখন ভালো ভিড় নজরে পড়ে৷
ছবি: DW/P. Samanta
যেখানে বিশ্বাস
অ্যালোপ্যাথির পাশাপাশি এ রাজ্যে হৈ হৈ করে হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদ চিকিৎসাও চলছে৷ এর খরচ কম, তাছাড়া ব্যয়সাপেক্ষ পরীক্ষার ঝামেলা থাকে না বলে অনেকেই এ সবের উপর আস্থা রাখেন৷
ছবি: DW/P. Samanta
নার্সিংহোম দিকে দিকে
এখন পশ্চিমবঙ্গে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু হয়েছে৷ তবুও নার্সিংহোমের রমরমা কিন্তু কমেনি৷ সার্জারি, ডায়ালিসিস ইত্যাদির জন্য মানুষ এখনও এদের ওপর নির্ভরশীল৷
ছবি: DW/P. Samanta
বহুরূপে সম্মুখে
কলকাতা সহ সর্বত্রই রক্তসহ নানা পরীক্ষাগার বা প্যাথোলজি ল্যাব গজিয়ে উঠেছে৷ গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দিব্যি তারা লাভজনক ব্যবসা করছে৷ উল্টোদিকে গ্রামীণ এলাকায় অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান নেই৷