‘স্পেসএক্স’-এর পর অর্বিটাল সায়েন্সেস করপোরেশন নামের এক বেসরকারি সংস্থা নাসার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রসদ পাঠানোর মহড়া শুরু করছে৷
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকার স্পেস শাটল বা মহাকাশফেরির যাত্রা বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কিছু দিন৷ ফলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন – আইএসএস-এ মানুষ বা মালপত্র পাঠানোর জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে রাশিয়ার ছোট অথচ নির্ভরযোগ্য সোইয়ুজ মহাকাশযানের উপর৷ ছোট বলে বেশি মালপত্র নিয়ে যেতে পারে না সেই যান৷ অ্যামেরিকার ভাবমূর্তির জন্য এমন অবস্থা মোটেই ভালো হতে পারে না৷ এদিকে রাজকোষের অবস্থা বেশ সংকটজনক৷ মহাকাশ কর্মসূচির জন্য অর্থ আদায় করা কঠিন৷ ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রকেই ভবিষ্যতে আরও সক্রিয় হতে হবে৷
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা মোট দুটি কোম্পানিকে আইএসএস-এ রসদ পাঠানোর দায়িত্ব দিচ্ছে৷ তবে তারা বিচ্ছিন্নভাবে এই কাজ করতে পারবে না৷ নাসার সঙ্গে জোট বেঁধেই তাদের অভিযান চালাতে হবে৷ মূল অভিযানের আগে তাদের অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে৷ মহড়া সফল হলে তবেই তারা আসল অভিযান শুরু করতে পারবে৷ প্রথম সংস্থাটি মার্কিন স্পেস শাটলের কায়দায় একই যান বার বার ব্যবহার করতে চায়৷ দ্বিতীয়টি রাশিয়া বা ইউরোপের মহাকাশ কর্মসূচির আদলে শুধু রকেটে করে ক্যাপসুল মহাকাশে পৌঁছে দেবার পরিকল্পনা করছে৷
মহাশূন্যে হাত বাড়াচ্ছে ইউরোপ
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
তারা থেকে তারায়
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷ ক্যাপসুলটি প্রথমে চন্দ্র প্রদক্ষিণ করবে৷ তারপর মহাশূন্যে অবস্থান নেবে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু হিসেবে৷ হয়তো মঙ্গলগ্রহ যাত্রার পথে তা কাজে লাগবে৷
ছবি: ESA-D. Ducros, 2012
মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় অভ্যস্ত হওয়া
প্রথমে ইউরোপের নভচারীদের পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস’এ যাত্রা করার পালা৷ এসা’র অ্যাস্ট্রোনট ইটালির লুকা পার্মিতানো একটি জলের চৌবাচ্চায় স্পেস ওয়াক অভ্যেস করছেন৷ স্থান: কোলোনের কাছে ইউরোপীয় নভচারী কেন্দ্র (ইএসি)৷
ছবি: ESA/H. Rueb, 2010
আইএসএস’র জন্য তিন ইউরোপীয় নভশ্চর
লুকা পার্মিতানো আইএসএস’এ থাকবেন এ’বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস অবধি৷ ২০১৪ সালে এ’ভাবেই যাবেন জার্মানির আলেক্সান্ডার গের্স্ট৷ তারপরে যাবেন একজন মহিলা, ইটালির সামান্থা ক্রিস্টোফোরেত্তি৷
ছবি: dapd/NASA
মানুষের বদলে মাল পরিবহণ
তিন ইউরোপীয় নভশ্চর আইএসএস’এ যাবেন রুশ সোয়ুজ রকেটে চড়ে৷ এসা ইতিমধ্যে তথাকথিত অটোম্যাটিক ট্রান্সফার ভেহিকেল বা এটিভি’র মাধ্যমে আইএসএস’এ মালপত্র পাঠায়৷ পরের যাত্রা আগামী ১৮ই এপ্রিল৷ এটিভি’তে সাত টন খাদ্য ও সরঞ্জাম পাঠানো যায়৷
ছবি: ESA/S.Corvaja/dapd
চন্দ্রবাসের স্বপ্ন
চন্দ্রপীষ্ঠে এ’ধরনের একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন থেকে এসা এখনও অনেক দূর৷ সেখানে জন পাওয়া গেলে, তা’তে চাঁদের ধুলো মিশিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা যেতে পারে৷ এবং চাঁদে জল আছে কিনা, চীনের চাঙ-ই ৩ রোভার চন্দ্রযান তা এ’বছরেই জানতে পারবে৷ চন্দ্রে অবতরণের পর এসা ঐ রোভারে তথ্য পাঠানোর ভার নেবে এবং তার গতিবিধি পরিচালনা করবে৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
ডার্মস্টাট থেকে স্যাটেলাইট পরিচালনা
এসা’র ইউরোপীয় মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা এসক থেকে চাঙ-ই ৩’এর আগের চীনা মহাকাশযানগুলিতে তথ্য পাঠানোয় সাহায্য করা হয়েছিল৷ চীনের আগের মহাকাশযানগুলি চন্দ্র প্রদক্ষিণ করেছে কিন্তু চন্দ্রপীষ্ঠে অবতরণ করেনি৷ এসক থেকে অপরাপর বহু গবেষণা ও যোগাযোগ সংক্রান্ত স্যাটেলাইটের যাত্রার উপর নজর রাখা হয়৷
ছবি: ESA - J. Mai
থ্রি-ডি’তে আমাদের ছায়াপথ
এ’বছরের অক্টোবর মাসে স্পেস প্রোব বা মহাশূন্য অভিযাত্রী যান ‘গাইয়া’ তার যাত্রা শুরু করবে৷ ইন্টারোফেরোমিটারের সাহায্যে আলোকতরঙ্গ থেকে আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জের একটি থ্রি-ডি ছবি তৈরি করবে এবং ‘মিল্কি ওয়ে’ ছায়াপথের অনেক রহস্য উদঘাটন করবে৷ এসা’র গবেষকরা অন্তত এক বিলিয়ন নতুন তারা আবিষ্কার করার আশা করছেন৷ এমনকি তিন বিলিয়নও হতে পারে৷
ছবি: ESA/Medialab
গ্রহাণুর সন্ধানে
রোজেট্টা স্পেস প্রোব’টি ২০০৪ সাল যাবৎ ৬৭/পি চুরজুমভ-গেরাসিমেঙ্কো ধূমকেতু অভিমুখে যাত্রা করছে৷ ২০১৪ সালের সূচনায় মহাকাশযানটি ধূমকেতুটির কক্ষপথে যোগদান করবে৷ তবে ধূমকেতু অবধি পৌঁছতে পৌঁছতে রোজেট্টা অনেক কিছু দেখবে: নাসা’র ডিপ ইমপ্যাক্ট প্রোজেক্টাইলটি কিভাবে টেম্পল ওয়ান ধূমকেতুতে আঘাত করবে৷ এচাড়া রোজেট্টা দেখবে মঙ্গলগ্রহ এবং স্টাইনস ও লুটেশিয়া নামের দ’টি অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমকেতুর উপর অবতরণ
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রোজেট্টা ফিলি নামের এই রোবোটটিকে ধূমকেতুর উপরে নামাবে৷ কোলোনে অবস্থিত জার্মান বিমান ও মহাকাশযাত্রা কেন্দ্র ডিএলআর থেকে সেই অবতরণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷ কাজটা শক্ত হবে, কেনান ধূমকেতুটির মাধ্যাকর্ষণ খুব বেশি নয়৷ রোজ্ট্টা ধূমকেতুটির রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করবে৷
ছবি: ESA/AOES Medialab
স্যাটেলাইটের রিসাইক্লিং সম্ভব নয়
অর্ধশতাব্দী ধরে মহাকাশে রকেট ও স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে৷ এক সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় প্রায় ছ’লাখ নানা ধরনের ও আকারের স্ক্র্যাপ এ’ভাবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে৷ এসা চাপ দিচ্ছে মহাশূন্যে আবর্জনা কমানোর জন্য: অকেজো স্যাটেলাইটগুলোকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিতভাবে ভূপাতিত করতে হবে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
প্রথম বেসরকারি সংস্থা হিসেবে স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস বা ‘স্পেসএক্স' নাসার বরাত পেয়েছে৷ তাদের রকেটের নাম ‘ফ্যালকন', যানের নাম ‘ড্র্যাগন'৷ ভবিষ্যতে মহাকাশচারীদের নিয়ে যেতেও এই কোম্পানি ক্যাপসুলটি ‘আপগ্রেড' করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে৷ ২০১২ সালের মে মাসে তারা একটি পরীক্ষামূলক অভিযান চালায়৷
দ্বিতীয় কোম্পানির নাম অর্বিটাল সায়েন্সেস করপোরেশন৷ তাদের ‘অ্যান্টারেস' নামের ১৩০ ফুট লম্বা একটি রকেট ‘সিগনাস' নামের ৩,৮০০ কিলোগ্রাম ওজনের একটি যানকে মহাকাশে পৌঁছে দেবে৷ বুধবার প্রথম পরীক্ষামূলক অভিযানে অবশ্য যানটির বদলে একই ওজনের একটি নকল ক্যাপসুল ব্যবহার করা হচ্ছে৷ দ্বিতীয় অভিযানে ‘সিগনাস' অংশ নেবে৷ বুধবারের অভিযানে রকেট ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২৫৮ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছানোর কথা৷ সেখানে গিয়ে ক্যাপসুল নিরাপদে আলাদা করাই হলো আসল চ্যালেঞ্জ৷ প্রায় দুই সপ্তাহ কক্ষপথে থাকার পর নকল ক্যাপসুল বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ধ্বংস হয়ে যাবে৷