বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা ফ্রি নয়
৩ জুন ২০২০তবে করোনা ডেডিকেটেড দুইটি হাসাপাতাল জানিয়েছে, সরকার শুরুতে চুক্তি করলেও এখন আর চুক্তি নাই৷ তাই তারা চিকিৎসা খরচ নিতে বাধ্য হচ্ছে৷ আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কথা, ‘করোনা যেহেতু দীর্ঘায়িত হচ্ছে তাই বেশি দিন বেসরকারি হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা সম্ভব নয়৷’
বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুর রহমান করোনা পজেটিভ নিয়ে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি হন ২৩ মে৷ চিকিৎসার পর ৩১ মে তিনি করেনা পজেটিভ হন৷ এরপরদিন তাকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা বিল দেয়া হয়৷ তিনি তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালেই রাখা হয়৷ ২ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ওই বিল থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করলে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়৷
তিনি জানান, ‘‘আমরা জানতাম ওই হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা সরকার ফ্রি করে দিয়েছে৷ সেটা জেনেই ভর্তি হয়েছি৷ ভর্তির সময়ও আমাকে বলা হয়নি যে চিকিৎসার জন্য টাকা লাগবে৷
হাসপাতালে থাকার সময় আমার দুইবার ব্লাড টেস্ট হয়েছে এবং দুইটি এক্সরে করা হয়েছে৷ ওষুধ যা দরকার নিজেই কিনে দিয়েছি৷ আর চিকিৎসার সময় আমাকে কেবিনে রাখা হয়৷ আমার আগে আরো ৫ জন ছাড়া পেয়েছেন তাদের কাছ থেকেও একই রকম বিল নেয়া হয়েছে৷ তারা দিতে বাধ্য হয়েছেন৷’’
ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা নেয়া আরেকজন কোভিড রোগী মো. হুমায়ূন কবিরের বিল করা হয়েছিল দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা৷ ৩ জুন সকালে বিল কমিয়ে ২০ হাজার ৭০০ টাকা করা হয়৷ ফকিরাপুলের ওই ব্যবসায়ী জানান, তিনি ১৭ মে ভর্তি হন৷ তিন দিন পর তিনি করোনা পজেটিভ হন৷ ওই তিন দিনের জন্য আলাদা ৭৫ হাজার টাকা বিল নিয়ে তাকে করোনা বেডে নেয়া হয়৷ তিনি জানান, ‘‘করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে আমাকে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা বিল দেয়া হয়৷ ফ্রি বলে বিল কেন? জানতে চাইলে জানানো হয় যে তাদের হাসপাতাল আবার প্রাইভেট হয়ে গেছে৷ বিল পরিশোধ না করতে পেরে রাতে আমি হাসপাতালেই থাকি৷ আজ (বুধবার) সকালে আমাকে আবার আগেরটা বাদ দিয়ে ২০ হাজার ৭০০ টাকার বিল দেয়া হয়৷ আর বলা হয় সরকারে চাপের কারণে বিল কমানো হয়েছে৷ দুই দিনের প্রাইভেট হাসপাতালের বিল রাখা হচ্ছে৷’’
সাইফুর রহমানকেও বুধবার বিকেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেকে নিয়ে এক লাখ ১৫ হাজার ৯৯৫ টাকা ফেরত দিয়েছে৷ তারও শেষ পর্যন্ত দুই দিনের বিল রাখা হয়েছে৷
এনিয়ে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. এহতেশামুল হক জানান, ‘‘সরকারের সাথে আমাদের চুক্তি ছিলো ১৬ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত৷ এই সময়ে আমরা ভাগাভাগি করে খরচ চিকিৎসা খরচ দিয়েছি৷ ৩১ মের পর আর চুক্তি নেই৷ যারা বিল করেন তারা ভুল করে তাই পুরো সময়ের প্রাইভেট বিলই করেছিল৷ কিন্তু পরে নজরে আসার পর আমরা দুই দিনের বিল রেখে বাকিটা বাদ দিয়ে দিয়েছি৷ আমরা এখনো কোভিড হাসাপতাল হিসেবেই কাজ করবো৷ তবে প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায়৷’’ এই হাসাপতালটি এখন পর্যন্ত ৩০০ করোনা রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে৷
এদিকে আরেকটি প্রাইভেট ডেডিকেটেড কোভিড হাসাতাল রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহেদ জানান, তারাও এখন প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা দিচ্ছেন৷ সরকার এখন আর সহায়তা দিচ্ছে না৷ সরকারে সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে গেছে৷ তাই রোগীদের কাছ থেকে তারা চিকিৎসা খরচ নিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এনিয়ে সরকারের নীতিমালা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন৷ মানুষ জানে কোভিডের চিকিৎসা ফ্রি কিন্তু বাস্তবে তা নয়৷ সরকার কতটুকু খরচ এখন বহন করবে তা জানালে আমরাও কতটুকু ছাড় দিতে পারব সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারি৷’’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং কোভিড -১৯ বিষয়ক মিডিয়া সেলের প্রধান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছে৷ তবে আমরা এখনো তাদের আবেদন গ্রহণ করিনি৷ আর রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ ভাগাভাগি করে দেয়া হতো৷ ‘‘এখন আমাদের সর্বশেষ নির্দেশনা হচ্ছে দেশে কোভিড, নন কোভিড সব উপযুক্ত হাসপাতালই (৫০ বেড বা তার বেশি) করোনার চিকিৎসা করবে৷ সরকারি হাসপাতালে তো ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হয়৷ আর বেসরকারি হাসপাতালগুলো যুক্তিসঙ্গত চিকিৎসা খরচ নেবে৷ আসলে আমরা কখনোই বেসরকারি হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসার কথা ওরকম বলিনি৷ সরকার ও বেসরকারি হাসপাতাল এতদিন খরচ ভাগাভাগি করে বহন করত৷ করোনা তো দীর্ঘায়িত হচ্ছে৷ তাই বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষে ফ্রি চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়৷’’
অন্যদিকে করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড না এমন বেসরকারি হাসাপতাল ইচ্ছেমত চিকিৎসা খরচ আদায় করছে বলে অভযোগ আছে৷ টেস্ট এবং আইসোলেশন সেন্টারের নামে তারা করোনার চিকিৎসা দিচ্ছে৷ চিকিৎসা খরচের ব্যাপারে কোনো নীতিমালা দেয়া হয়নি৷