বেসিক ব্যাংকে নিয়োগে অনিয়ম, সংসদীয় কমিটির তদন্ত
৩ জানুয়ারি ২০২২
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকের নিয়োগ নিয়ে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের বিশেষ সরকারি নিরীক্ষায় অনিয়মের ঘটনা প্রকাশ পায়৷ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মোট ৭২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে আপত্তি দেওয়া হয়৷ এসব নিয়োগ ও পদোন্নতি সবই বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর সময়ে হয়েছে৷
সম্প্রতি জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব কমিটিতে অডিট আপত্তিগুলো নিষ্পত্তির জন্য উঠলে সংসদীয় কমিটি এসব অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে৷
অভিযোগুলো আরও খতিয়ে দেখতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি হিসাব কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজী জানিয়েছেন৷
তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বোর্ড চাকরি দেওয়ার অধিকার রাখে৷ কিন্তু এখানে কিছু অনিয়ম হয়েছে৷ অনেকের যোগ্যতা ছিল না, বয়স বেশি ছিল৷ পদোন্নতিতেও অনিয়ম হয়েছে৷
"আপত্তির অনেক জায়গা মোটাদাগে করা হয়েছে৷ সংসদীয় কমিটি এই অনিয়মগুলো আরও খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দিয়েছে৷ এই কমিটি অভিযুক্ত প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিষয় আলাদাভাবে খতিয়ে দেখবে৷ দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে৷ প্রতিবেদনের তার ভিত্তিতে সংসদীয় কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে৷”
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে জানা গেছে, অনেকে চাকরির জন্য আবেদন না করে, জীবন বৃত্তান্ত ও পরীক্ষা না দিয়েও চাকরি পেয়েছেন আবার অনেকে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পরে৷
এসব আপত্তির বিষয়ে জবাব না পেয়ে অডিট অধিদপ্তর ২০১৫ সালে বেসিক ব্যাংককে তাগাদা দিয়ে চিঠি দেয় এবং একই বছর আধা সরকারি পত্র জারি করা হয়৷
২০২১ সালের জুনে তারা জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক ছিল না৷ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ-পদোন্নতি দেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার দায় দায়িত্ব নির্ধারণসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিয়োগকারী অথবা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর কাছ থেকে বেতন ভাতা বাবদ পরিশোধ করা অর্থ আদায় করা এবং নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে৷
দুটি উদাহরণ
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ক' নামের ব্যক্তি বিদেশে রেস্তোরাঁয় কর্মরত ছিলেন৷ তিনি কখনও ব্যংকে চাকরি করেননি৷ কোনো পরীক্ষা ছাড়া ৫২ বছর বয়সে তিনি বেসিক ব্যংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ পান৷ তিনি ২০১৯ সালে চাকরী থেকে অবসরে গেছেন৷
অথচ ব্যাংকের নিজস্ব নিয়োগবিধি ২০০৭ অনুযায়ী, সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদে নিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ বয়স সীমা ৪২ বছর এবং ব্যাংকিং খাতে ১২ বছরের পূর্ব অভিজ্ঞতা প্রয়োজন৷
২০১১ সালে ‘খ' নামের একজনকে সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়৷ বয়স ৪৩ বছর৷ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না৷ বেসিক ব্যাংকে চাকরির জন্য আবেদনও করেননি৷ তিনি ২০১৬ সালে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন৷
সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার পাঁচ বছরে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হয় বলে অভিযোগ ওঠে৷ ২০০৯ সালের ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৫ শতাংশ, আর ২০১৪ সাল শেষে তা দাঁড়ায় ৬৮ শতাংশে৷
সরকার ২০০৯ সালে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চুকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ
দেয় ৷ ২০১২ সালে নিয়োগ নবায়ন করা হয়৷ ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠায় ২০১৪ সালে চাপের মুখে বাচ্চু পদত্যাগ করেন৷
নিরীক্ষায় যা বলা হয়েছে
২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবন বৃত্তান্ত দেওয়ার আগেই নিয়োগপত্র দেওয়ায় প্রমাণিত হয় যে, ব্যাংকের নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ও সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷
যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে ঢাকা জেলার ২৪৮ জন এবং ২৪২ জন বাগেরহাট জেলার৷ সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুও বাগেরহাটের৷
নিয়োগের নীতিমালায় ছিল সহকারী অফিসার, অফিসার পদে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে সব পাবলিক পরীক্ষায় ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণী সম্মানসহ স্নাতকোত্তর পাস হতে হবে৷ নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষাজীবনে এক বা একাধিক তৃতীয় শ্রেণী পাওয়া ব্যক্তিকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ কোনো বিজ্ঞাপন ছাড়াই ২৯ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ সাত জন কর্মকর্তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ছিল ভূয়া৷ এছাড়া বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বয়স ছিল নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়সসীমার চেয়ে বেশি৷
ব্যাংকের কৃতিত্বপূর্ণ বা অসাধারণ কাজের ক্ষেত্রে ‘এক্সিলারেটেড প্রমোশন' দেওয়া যায়৷ কিন্তু কৃতিত্বপূর্ণ কাজের কোনো নজির না থাকলেও এমন ৩০ জনকে পদোন্নতি দিয়েছে বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)