1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেড়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ মে ২০২০

বাংলাদেশে করোনার মধ্যে ‘বিতর্কিত' ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার বাড়ছে৷ আর এই আইনটি এই সময়ে সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়দের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে৷

ফাইল ফটোছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

সর্বশেষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১১ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় চারজনকে এপর্যন্ত চার জনকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন: তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য মো. দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী মোস্তাক আহম্মেদ, কার্টুনিস্ট আহম্মেদ কবির কিশোর এবং ডিএসই'র পরিচালক ব্যবসায়ী মিনহাজ মান্নান৷ মিনহাজ মান্নান কয়েক বছর আগে জঙ্গিদের হাতে নিহত জুলহাজ মান্নানের ভাই৷ 

‘তিনি কাউকে অপমান করেননি, গুজব ছড়াননি’

This browser does not support the audio element.

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন: প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও সাহেদ আলম, সায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ ও প্রবাসী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন৷ 
তাদের বিরুদ্ধে মোটা দাগে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা হলো: তারা ‘আই অ্যাম বাংলাদেশি' নামে একটি ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও করোনা ভাইরাস নিয় গুজব ছড়িয়েছেন৷ তারা সরকারবিরোধী পোস্ট ও সরকার দলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়েও গুজব ছড়িয়েছেন৷ আর এটার মাধ্যমে তারা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন৷ এই অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনের ২১/২৫১)(খ)/৩১/৩৫ ধরায় মামলা হয়েছে৷
কিন্তু এইসব অভিযোগের বিস্তারিত কিছু নেই মামলার এজাহারে৷ আর কিভাবে তারা এই ‘অপরাধ' করলেন ও তার ফলাফল কি তাও সুনির্দিষ্ট নয়৷

আটক কার্টুনিস্ট আহম্মেদ কবির কিশোরের ভাই সাংবাদিক আহসান কবির বলেন, ‘‘আমার ভাই রাষ্ট্র বা সরকারবিরোধী কোনো কাজ করেননি৷ তিনি যে কার্টুন আঁকেন তাতে সমাজের চিত্র ফুটে ওঠে৷ তিনি স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে যেমন কার্টুন এঁকেছেন, তেমনি এখন দেশের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে কার্টুন আঁকছেন৷ তিনি কাউকে অপমান করেননি৷ গুজব ছড়াননি৷'' 

তিনি বলেন, ‘‘দেশের ১৭ কোটি মানুষ দুর্নীতি করে না৷ দুর্নীতি করে ক্ষুদ্র একটি অংশ৷ ওই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কথা বললে দেশের বা দেশের মানুষের অসম্মান হয় কিভাবে!''

তার মতে এখন এই আইনটি, ‘‘জনগণকে কোনো নিরাপত্তা দিচ্ছেনা৷ দুর্নীতিবাজরা তাদের রক্ষায় আইনটি ব্যবহার করছে৷''

আর দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়ার ভগ্নিপতি জাকির চৌধুরী বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে দেশের মানুষকে নিরাপত্তাহীন করা হচ্ছে৷ দিদার একজন আইটি স্পেশালিষ্ট৷ দেশের বাইরে পড়াশুনা করে দেশে ফিরে মানুষের জন্য কাজ করছেন৷ করোনায় তাদের সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার মাধ্যমে অভাবী মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘দিদারের কাজ রাষ্ট্রবিরোধী নয়৷ সে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়৷ সে রাষ্ট্র ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছে৷ আমরা তার মুক্তি চাই৷''

বাক স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আর্টিকেল নাইনটিন-এর তথ্য, ২০১৮ সালে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকসহ মুক্তচিন্তার চর্চাকারীদের বিরুদ্ধে ৭১টি মামলা হয়েছে৷ ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় ৬৩টি৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪৫টি মামলা হয়েছে৷ যার অধিকাংশই সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে৷

আর লকডাউনে এপ্রিল মাসে সারাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ১০টিরও বেশি মামলা হয়েছে জিজিটাল নিরাপত্তা আইনে৷ মত প্রকাশের জন্য স্বাধীনতার জন্য কাজ করা ‘মুক্ত প্রকাশ' নামে একটি সংগঠন এই তথ্য দিচ্ছে৷ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সালিম সামাদ বলেন, ‘‘লকডাউনের প্রথম মাসে ২০ জন সাংবাদিক মামলা, গ্রেপ্তার ও হামলার শিকার হয়েছে৷ এরা ত্রাণ চুরি, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিগৃহীত হয়েছেন৷ পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে কোনো কিছু নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘অন্য আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি তেমন সহজ নয় বলে এখন জিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হচ্ছে৷ কারণ এই মামলায় জামিন পাওয়া যায়না৷ আর করোনার সময় এই আইনে মামলা বেড়ে যাচ্ছে৷''

সর্বশেষ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনাকে তিনি সরকারের নিজের ওপর আস্থাহীনতার প্রকাশ বলে মনে করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন আর দুর্নীতি, অব্যবস্থা, অনিয়মের কথা কেউ বললে সহ্য করতে তারা পারেনা৷ তাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে৷ মাস্ক চুরির কথা বললে গ্রেপ্তার করা হয়, চাকরি চলে যায়৷'' 

‘বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করা কোনোভাবেই কাম্য নয়’

This browser does not support the audio element.

প্রশ্ন উঠেছে, এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কাদের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে? এতে কারা লাভবান হবে? আর এই সময়ে এই আইনের ব্যবহার কেন বাড়ছে? জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও আইনের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা উদ্বেগের সাথ এই সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার বাড়ার বিষয়টি লক্ষ্য করছি৷ আর তা বেশি ব্যবহার হচ্ছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এটা আসলে আমাদের আতঙ্কিত করে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই সময়ে ত্রাণ নিয়ে কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে৷ করোনা প্রতিরোধে কোথায় বাধা আছে এগুলো সরকারের জানা দরকার৷ সাংবাদিকেরাই তা জানাচ্ছেন৷ কিন্তু তা করতে গিয়ে তারা যদি মামলা গ্রেপ্তারের শিকার হন তাহলে তো দুর্নীতিবাজেরা সুবিধা পাবে৷ এটা তো হতে পারে না৷''

তার মতে, ‘‘করোনা প্রতিরোধে সমন্বয়হীনতার কথাতো আমরা মন্ত্রীদের মুখেও শুনছি৷ তাহলে সাংবাদিক বা সচেতন নাগরিকরা তা বলতে পারবেন না কেন? ডিজিটাল আইন দিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করা কোনোভাবেই কাম্য নয়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ