শিল্প শিবির
৩ জুলাই ২০১২দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশেদের জোট আসিয়ান-এর সদস্য ভিয়েতনাম, কাম্বোডিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারতের কয়েকটি প্রদেশ থেকে শিল্পীরা এসেছিলেন৷ সংখ্যায় মোট ২০ জন৷ ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ কালচারাল রিলেশনস' এদেরকে নিয়ে সাত দিনের একটি শিল্প শিবিরের আয়োজন করেছিল পাহাড়ি শহর দার্জিলিংয়ে৷ উদ্দেশ্য ছিল, শিল্পীরা যাতে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারেন, তাঁদের শিল্পভাবনার আদান-প্রদান ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত যদি সামগ্রিকভাবে একটা এশীয় শিল্প-ধারণা জন্ম নেয়৷
এই শিল্প শিবিরে অংশ নিতে এসেছিলেন মালয়েশিয়ার শিল্পী দাতো চু৷ দাতো একজন প্রাক্তন কূটনীতিকও বটে, কর্মজীবনের শেষদিকে ভারতে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতও ছিলেন৷ হাসতে হাসতে জানালেন, এই নিয়ে ৩৫ বার কলকাতায় এলেন তিনি৷ কাজেই যে সব শিল্পীরা আগে কখনও ভারতে আসেননি বা যাঁরা পাহাড়ের রানী দার্জিলিংয়ের সৌন্দর্যে মোহিত, দাতো চু-র উচ্ছ্বাস তাঁদের থেকে কম৷ কাজেই প্রশ্নটা তাঁকে করাই ঠিক মনে হল যে এই শিল্প শিবিরে কি সত্যিই কোনও অভিন্ন শিল্প-ধারণার উদ্ভব হল৷
দাতো বললেন, ‘‘ভারতীয় শিল্প, যেমন ধরা যাক এম এফ হুসেনের ছবি, তার নিজস্ব শৈলী আছে৷ একটা নির্দিষ্ট পরিচিতি আছে৷ তেমনই, আমার আদিবাসী শিল্প ভালো লাগে৷ এবার ধরা যাক, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী শিল্পের সঙ্গে চিনা শিল্পকলার একটা মিশেল হল৷ ব্যক্তিগতভাবে খুব অখুশি হব আমি৷ কারণ, আমি নিজস্বতাকে সম্মান করি৷ এবং মনে করি, বিভিন্নতার মধ্যেও এক ধরণের ঐক্য থাকে৷ আর সেরা শিল্প সেটাই, শিল্পীর সময় এবং সংস্কৃতির মধ্যে থেকে যার উদ্ভব হয়৷''
দাতো চু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বললেন যে, একজন শিল্পী হিসেবে তাঁর মনে হয়, প্রত্যেক শিল্পীর নিজস্বতা, স্বকীয়তা ধরে রাখাই ভালো৷ এই ধরনের শিল্প শিবির থেকে প্রতিবেশী দেশের শিল্পীদের শিল্পভাবনায় ঋদ্ধ হওয়া যায়, প্রকৌশলের দিক দিয়ে হয়তো নতুন কিছু শেখাও যায়, কিন্তু শিল্পীদের মধ্যে যে বিভিন্নতা, সেটাই বরং বজায় থাকুক৷ কারণ, দাতোর মতে, সেটাই এশীয় দেশেদের বর্ণময় বৈচিত্রের পরিচয়৷
আর একজন শিল্পী হিসেবে, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশেদের এই আসিয়ান জোটের ভবিষ্যৎকে কীভাবে দেখেন দাতো৷ তিনি বললেন, ‘‘নৈরাজ্যের মধ্যে শিল্প সৃষ্টি হতে পারে না৷ যদি ইতিহাস দেখেন, শান্তি এবং উন্নয়নের সময়ই শিল্পের বিকাশ ঘটেছে৷ শিল্পীর সময় যদি অশান্ত হয়, তা হলে তাঁর জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, তাঁর মানসিক শান্তি নষ্ট হয়৷ কাজেই আমি চাইব, আমার চতুর্দিকে সুখ আর শান্তি বিরাজ করুক৷''
সব শিল্পীদের, শুধু শিল্পীদেরই নয়, সমস্ত মানুষের মনের কথা বললেন দাতো যে, শান্তি বজায় থাকুক৷ কারণ শান্তিই পারে সমস্ত মহতি শিল্পের ধাত্রী হতে৷ একমাত্র সুখ-শান্তি থেকেই শিল্পের জমি উর্বর হয়৷
অদ্ভুত ব্যাপার, দার্জিলিংয়ের শিল্প শিবিরে শিল্পীরা যে ছবি এঁকেছেন, তার অনেকগুলিই সেখানকার বৌদ্ধ মন্দির এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের ছবি৷ ওদের শান্ত জীবন কোথাও নিশ্চই ছুঁয়ে গিয়েছে শিল্পীদের হৃদয়কে৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ