বিদ্যুতের শক দিয়ে মাছ মারা প্রচলিত নেদারল্যান্ডসে৷ কিন্তু পরিবেশবাদী ও মৎস্যজীবীদের একাংশের প্রতিবাদে গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে নিষিদ্ধ হচ্ছে এই প্রক্রিয়া৷
বিজ্ঞাপন
পালস ফিশিং বা বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ মারা নেদারল্যান্ডসে প্রচলিত একটি ধারা৷ বলা হয়, এভাবে মাছ ধরলে অপ্রয়োজনীয় জিনিস জালে উঠে না৷ পাশাপাশি, মাছ ধরার জাল সাগরের তলদেশে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না৷
কিন্তু ফ্রান্সের মৎস্যজীবীদের একটি অংশ ও ইউরোপের বেশ কিছু পরিবেশবাদীদের মত, এতে ক্ষতি হচ্ছে মৎস্য সম্পদের৷ পালস ফিশিং করা হয় পানিতে ইলেক্ট্রোড বা বৈদ্যুতিক লাঠি ডুবিয়ে, যা মাছের গায়ে শক দিয়ে তাকে ভাসিয়ে তোলে৷ কিন্তু এতে করে মাছের সংখ্যা ব্যাপক হারে কমার সম্ভাবনা থাকায় এর বিরোধিতা করছেন অনেকে৷
পরিবেশের সপক্ষে না বিপক্ষে
২০১৯ সালে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট ও ইইউ কাউন্সিল এই ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা এই বছরের জুনমাস পর্যন্ত কার্যকর ছিল৷
নেদারল্যান্ডস এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে লুক্সেমবুর্গের ইইউ কোর্ট অফ জাস্টিসে আপিল করে৷ তাদের মত, সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বৈজ্ঞানিক সব দিক বিবেচনা করা হয়নি৷ বিশেষ করে, পালস ফিশিং ও সাধারণভাবে প্রচলিত লোহার জাল দিয়ে মাছ ধরার ‘বিম ট্রলিং', এই দুই প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনটি পরিবেশের জন্য বেশি ক্ষতিকর, তা বিবেচনা করা হয়নি বলে নেদারল্যান্ডসের মত৷
কিন্তু আদালতে এই দাবি গ্রাহ্য হয়নি৷ ইইউ কোর্ট অফ জাস্টিস জানায়, ‘‘ইইউ সংসদের এবিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের যথেষ্ট এক্তিয়ার রয়েছে এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে শুধু বৈজ্ঞানিক বা প্রায়োগিক মতামত গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা নেই৷ যদিও বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ ধরা নিয়ে নানা মত রয়েছে, কিন্তু কোনো গবেষণাতেই নেদারল্যান্ডসের দাবির প্রতি সমর্থন নেই৷ কোনো গবেষণাই বলে না যে এই প্রক্রিয়ার কোনো নেতিবাচক প্রভাব পরিবেশের ওপর নেই৷''
এসএস/এফএস (রয়টার্স)
মাছের বদলে জাল ‘শিকার’
ছেঁড়া জালের কি আর কদর থাকে? পরিত্যক্ত মাছ ধরার জাল তাই ফেলে দেয়া হচ্ছে সমুদ্রেই৷ প্রতি বছর কয়েক লাখ টন ছেঁড়া জালের স্তূপ জমা হয় সমুদ্রপৃষ্ঠে৷ উত্তর গ্রিসে পরিত্যক্ত জাল তুলে আনতে চলছে অভিযান৷ এ যেন মাছের বদলে জাল শিকার!
ছবি: Reuters/C. Kuyvenhove
অভিযান
সম্প্রতি উত্তর গ্রিসের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই টন প্লাস্টিকের জাল সরিয়ে নেওয়ার কাজ করেন গ্রিক ও ডাচ ডুবুরিরা৷ ‘হেলদি সিস’ নামক সংগঠনের উদ্যোগে চালানো হয় এই অভিযান৷ ২০১৩ সাল থেকে এ ধরনের ৪৫৩ টন পরিত্যক্ত জাল উদ্ধারের কথা জানিয়েছে সংগঠনটি৷
ছবি: Reuters/C. Kuyvenhove
লিফটিং ব্যাগে উঠে আসে জাল
পানির নীচ থেকে জাল তুলে আনার জন্য ডুবুরিরা ব্যবহার করে থাকেন লিফটিং ব্যাগ৷ সমুদ্রতলে গিয়ে সেই লিফটিং ব্যাগ পরিত্যক্ত জালের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেন তাঁরা৷ জাল উপরে উঠে এলে টেনে তোলা হয় ক্রেন দিয়ে৷
ছবি: Reuters/A. Kominou
ঝুঁকির মুখে বিপন্ন প্রাণী
প্লাস্টিকের তৈরি অপচনশীল জাল সমুদ্রপৃষ্ঠে থেকে যেতে পারে শত শত বছর৷ এমনিতে চোখে না পড়লেও সামুদ্রিক প্রাণী এতে সহজেই আটকা পড়তে পারে৷ গ্রিসের স্ট্রাটোনি এলাকায় আবাস রয়েছে সামুদ্রিক কচ্ছপ, সীল আর ডলফিনের মতো প্রাণীর৷ জালের কবলে ঝুঁকির মধ্যেই থাকতে হয় বিপন্ন প্রজাতির ওইসব প্রাণীকে৷
ছবি: Reuters/A. Kominou
প্রতি বছর জমে ৬ লক্ষ ৪০ হাজার টন জাল
‘হেলদি সিস’ সংগঠনের গবেষণা বলছে, প্রতি বছর সমুদ্রের তলদেশে ৬ লক্ষ ৪০ হাজার টন পরিত্যক্ত জাল জমা হয়, যা পৃথিবীর নানাপ্রান্তে সমুদ্রতলের পরিবেশ আর জীববৈচিত্র্যকে ঝুঁকির মুখে রাখছে প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Reuters/A. Kominou
রিসাইক্লিংয়ে হবে মূল্যবান পণ্য
স্ট্রাটোনি এলাকার এসব পরিত্যক্ত জালকে রিসাইক্লিংয়ের পর মূল্যবান পণ্যে রূপান্তর করা হবে৷ অভিযান পরিচালনাকারী ‘হেলদি সিস’ জানিয়েছে এগুলোকে প্রথমে সুতায় রূপান্তর করা হবে, এরপর তৈরি হবে মোজা, কার্পেট, খেলাধুলা ও সাঁতারের পোশাকসহ বিভিন্ন মূল্যবান পণ্য৷