বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরাতে ইউরোপের চাপে বাংলাদেশ
হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৮ আগস্ট ২০২১
আনডকুমেন্টেট বা বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় বাংলাদেশের উপর নাখোশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এজন্য বাংলাদেশিদের ভিসা প্রক্রিয়ায় সাময়িক কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করেছে ইউরোপীয় কমিশন৷
বিজ্ঞাপন
১৫ জুলাই ইউরোপীয় কাউন্সিলের কাছে পাঠানো এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ ছাড়াও ইরাক এবং গাম্বিয়াকেও যুক্ত করা হয়েছে৷ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈধ কাগজবিহীন (আনডকুমেন্টেড) অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার (রিঅ্যাডমিশন) ব্যাপারে দেশগুলোর সহাযোগিতা আরো জোরদার করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা৷
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তি হয়৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের আরো দ্রুত সহযোগিতা চায় ইইউ৷ এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদান-প্রদান এবং জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দিক থেকে আরো তৎপর পদক্ষেপের প্রত্যাশা তাদের৷ ইইউ অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ সরকার অনেক চিঠির জবাব দেয় না বা দিতে অনেক দেরি করে৷
ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত: শহীদুল হক
২০১৭ সালে চুক্তির পর তালিকা ও কাগজপত্র ম্যানুয়ালি বা সনাতন পদ্ধতিতে হস্তান্তর করা হতো৷ কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বরে এই ব্যবস্থা ডিজিটাল করা হয়৷ ডিজিটাল হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ ‘আনডকুমেন্টেড’ বাংলাদেশির তালিকা ও কাগজপত্র হস্তান্তর করে তারা৷ সেগুলো এখনও নিস্পত্তির অপেক্ষায় আছে৷ এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে জার্মানিতে৷ ইউরোপের এ দেশটিতে এমন ৮০০জন বাংলাদেশি রয়েছেন৷ বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বাংলাদেশির তালিকায় তারপরে রয়েছে ইটালি, গ্রিস ও মাল্টা৷
ইউরোপের ভিসায় কড়াকড়ি
২০২০ সালের ফেব্রুয়রি মাসে ইইউ তাদের ভিসা নীতিতে পরিবর্তন আনে৷ তাতে বলা হয় যেসব দেশ রিঅ্যাডমিশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে না তাদের ভিসা প্রক্রিয়া কড়াকড়ি করা হবে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জার্মানিতে আনডকুমেন্টেড তালিকার মধ্যে বাংলাদেশ ১৫০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়৷ তার মধ্যে মাত্র একজনকে ‘বাংলাদেশি আনডকুমেন্টেড’ হিসেবে চিহ্নিত করে তারা, যা জার্মানি ভালোভাবে নেয়নি৷
ইউরোপে বৈধ অভিবাসন: যে তথ্যগুলো জানা দরকার
উন্নত জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, উচ্চশিক্ষা, আশ্রয়- নানা কারণেই অনেকের স্বপ্নের গন্তব্য ইউরোপ৷ প্রতিবছর অনেক মানুষ ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে বসবাস ও কাজের সুযোগ পান৷ অন্যদিকে অবৈধভাবে আসা বড় একটি অংশকে ফেরতও পাঠানো হয়৷
ছবি: DW/Ani Ruci
অভিবাসীর সংখ্যা
দুই কোটির বেশি অভিবাসী মানুষের বসবাস ইউরোপের ২৭টি দেশে৷ এ অঞ্চলের শ্রমবাজারে নিযুক্ত রয়েছেন ৮৮ লাখ৷ ২০১৯ সালে ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে প্রথমবার রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতি পাওয়া তৃতীয় দেশের মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
কারা অনুমতি পান
৩৮ ভাগ অভিবাসী রেসিডেন্স পারমিট পেয়েছেন পরিবারের কোনো সদস্য ইউরোপে থাকার কারণে৷ কাজের সূত্রে থাকার অনুমতি পেয়েছেন ১৭ ভাগ৷ আশ্রয়াপ্রার্থী ছিলেন নয় ভাগ৷ শিক্ষাগত কারণে সুযোগ পেয়েছেন চার ভাগ৷ বাকি ৩২ ভাগ অন্যান্য৷
ছবি: Wolfgang Kumm/dpa/picture alliance
অভিবাসীদের দেশ
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো রেসিডেন্স পারমিট পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ইউক্রেনের নাগরিক৷ প্রথম দশের মধ্যে বাকিরা যথাক্রমে মরক্কো, চীন, ব্রাজিল, সিরিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও বেলারুশের নাগরিক৷
ছবি: DW/V. Muscella
কর্মসংস্থান
তৃতীয় কোনো দেশ থেকে ইউরোপে চাকুরি নিয়ে আসা দক্ষ কর্মীরা পান ব্লু কার্ড৷ এটি নির্ভর করে চাকরির চুক্তিপত্র, পেশাগত যোগ্যতা ও বেতনের উপরে৷ ২০১৯ সালে ৩৭ হাজার বিদেশি নাগরিক ব্লু কার্ড পেয়েছেন ইউরোপে৷ এর বাইরে প্রতি বছর এক লাখের বেশি মানুষ মৌসুমি কর্মী হিসেবে বিভিন্ন খাতে কাজের জন্য আসেন৷ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানার কর্মী বা স্বনিয়োজিত কাজেও ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পান অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
পারিবারিক পুনর্মিলন
কোনো অভিবাসী ইউরোপে বৈধভাবে বসবাস ও নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদেরও আনতে পারেন৷ স্বামী বা স্ত্রী, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং কিছু ক্ষেত্রে অবিবাহিত সঙ্গী, প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীল সন্তান, নির্ভরশীল বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানিও অনুমতি পেয়ে থাকেন৷ নির্দিষ্ট দেশে পৌঁছানোর পর তাদেরকে রেসিডেন্স পারমিট নিতে হয়৷ শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ কিংবা প্রশিক্ষণও নিতে পারেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/W. Rothermel
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
এজন্য আগ্রহীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির অনুমতি, হেলথ ইন্সুরেন্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকের অনুমতি, কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করে ইউরোপের কোনো দেশে আসার আবেদন করতে পারেন৷ কিছু দেশে পড়াশোনার টিউশন ফি নেই, আছে বৃত্তির সুযোগও৷ এছাড়াও খরচ মেটানোর জন্য শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা কাজের সুযোগ রয়েছে৷ পড়াশোনা বা গবেষণা শেষে কর্মসংস্থানের জন্য মেলে নয় মাস সময়৷
ছবি: Getty Images/J. Juinen
দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্স
ইউরোপের কোনো দেশে টানা পাঁচ বছর অবস্থানের পর নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অভিবাসীরা দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন৷ এর ফলে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সহায়তা এবং পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তির মতো কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপের নাগরিকদের মতোই অধিকার ভোগ করতে পারবেন৷ তবে এক্ষেত্রে আলাদা অভিবাসন ও আশ্রয় নীতি অনুসরণ করে আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress
আশ্রয়প্রার্থী
২০১৯ সালে প্রায় সাত লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷ প্রথমবারের মতো যারা এমন আবেদন করেছেন, তাদের ১২ ভাগই সিরিয়ার নাগরিক৷ আফগানিস্তানের আট দশমিক ছয় ভাগ, ভেনেজুয়েলার সাত দশমিক এক ভাগ, কলম্বিয়ার পাঁচ ভাগ, পাকিস্তানের ছিলেন প্রায় চার ভাগ৷ ঐ বছর দুই দশমিক এক ভাগ বা ১৩ হাজার ১৯০টি আবেদন পড়েছিল বাংলাদেশিদের৷ ২০২০ সালে প্রথম দশ মাসে ইউরোপে মোট তিন লাখ ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷
ছবি: AFP
অবৈধদের ফেরত
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১৪ হাজার ৩০০ জন অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন৷ এটি তার আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে ১০ ভাগ কম৷ যারা এভাবে আসেন, তাদের একটি বড় অংশকে এক পর্যায়ে ফেরত পাঠানো হয়৷ ২০১৯ সালে চার লাখ ৯১ হাজার জনকে ইউরোপ ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷ এক লাখ ৪২ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G. Papaniko
9 ছবি1 | 9
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশিদের বিষয়টি নিস্পত্তি করতে ইইউ যদি ভিসার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে তাহলে তা মানবাধিকারের লংঘন৷ কারণ এখন যারা ইউরোপের দেশে যাওয়ার যৌক্তিক কারণ আছে তাদের ভিসা বন্ধ করতে পারে না৷ যার বৈধ ডকুমেন্ট আছে তাকে আটকানো হলে তার মানবাধিকার ক্ষুন্ন করা হবে৷ তারাই মানবাধিকারের প্রবক্তা৷ তারাই যদি এটা করে তাহলে তা হবে দুঃখজনক৷ কেউ আদালতে গেলে এর প্রতিকার পেতে পারেন৷’’
তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আজ (শনিবার) একটি বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, তারা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেছেন৷ কিন্তু যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আনডকুমেন্টেড আছেন তাদের মানবাধিকারের কী হবে?’’
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ
তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তে বিস্মিত নন৷ ‘‘কারণ ২০১৬ সাল থেকেই তারা এ বিষয়ে কথা বলছে৷ এখন এই সিদ্ধান্তের ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো৷ আমাদের পোশাক শিল্পসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হতে পারে৷ যাদের প্রয়োজন তারাও ভিসা নাও পেতে পারেন৷”
তার মতে, ‘‘বাংলাদেশের দুইটি কাজ করা উচিত৷ প্রথমত, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এবং দ্বিতীয়ত তারা যে তালিকা দেয় তা থেকে যাচাই বাছাই করে টোকেন হলেও কিছু লোককে ফেরত আনা৷’’
তিনি মনে করেন, ‘‘অবৈধ অভিবাসীরা দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করছেন৷’’
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এখন সরকারি সফরে জার্মানিতে আছেন৷ তিনি বার্লিনে বাংলাদেশ-জার্মানি কৌশলগত সংলাপে বাংলাদেশ পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সেখানে ভিসা কড়াকড়ি এবং আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশি ইস্যু দুইটি বিষয় নিয়েও তিনি কথা বলবেন৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে ফোন করলে তিনি এনিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
বাংলাদেশ এ পর্যন্ত কতজন বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসী ফেরত এসেছেন তা জানা যায়নি৷ তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই সংখ্যা হাতে গোনা হবে৷ সম্প্রতি ব্র্যাকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে গত ১২ বছরে ৬২ হাজার ৫৮৩ জন বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপে গেছেন৷ আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গেছেন তিন হাজার ৩৩২জন৷ তাদের মধ্যে সর্বাধিক ৩৭ হাজার ১৯৮ জন ভূমধ্যসাগরের রুট ব্যবহার করেছে৷
অবৈধ উপায়ে ইউরোপে প্রবেশে বাধার দেয়াল
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে সীমান্তে দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলছে তুরস্ক৷ প্রাচীর নির্মাণ শেষ করেছে গ্রিস৷ বেলারুশ হয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ডও সীমান্তে দেয়াল তোলার উদ্যোগ নিয়েছে৷
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
ইরান সীমান্তে তুরস্কের প্রাচীর
পাহাড় ডিঙ্গিয়ে, বিপদসঙ্কুল পথ পেরিয়ে ইরান হয়ে তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করেন এশিয়া থেকে আসা ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ তাদেরকে বাধা দিতে ইরানের সঙ্গে ৫৩৪ কিলোমিটার সীমান্তে তিন মিটার উঁচু দেয়াল তুলছে তুরস্ক৷ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে ১৫৬ কিলোমিটারের নির্মাণ৷ আরো ৬৪ কিলোমিটার যোগ হবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ৷
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
আফগান শরণার্থী ঠেকাতে তোড়জোড়
এই পথে পায়ে হেঁটে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি বড় অংশ আফগানিস্তানের নাগরিক৷ সরকারি হিসাবে এক লাখ ৮২ হাজার আফগান রয়েছেন তুরস্কে৷ অনিবন্ধিতের সংখ্যা আরো প্রায় এক লাখ ২০ হাজার৷ তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর অনিয়মিত এই অভিবাসন আরো বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে দেয়াল তুলেই তাদের বাধা দেয়ার পরিকল্পনা তুরস্কের।
ছবি: Mesut Varol/AA/picture alliance
দুর্ভেদ্য সীমান্ত!
তুরস্কের ইরান সীমান্তবর্তী ভ্যান প্রদেশের গভর্নর রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমরা গোটা পৃথিবীকে দেখাতে চাই যে আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করা অসম্ভব৷’’ তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকর দেয়ালের কাজ পরিদর্শনে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা থার্মাল ইমেজিংসহ অন্ধকারে কাজ করতে সক্ষম এমন যন্ত্রপাতি সজ্জিত এক হাজার নজরদারি যান দিয়ে কাজ করছি৷’’
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
৮০ দিনের পদযাত্রা
এরপরও কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে এই পথে তুরস্কে প্রবেশ করছেন৷ গত ২১ আগস্ট ভ্যান শহরে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনী৷ তাদের বেশিরভাগই আফগান নাগরিক। গ্রেপ্তারকৃতদের একজন ২০ বছর বয়সি জায়নুল্লাহ জানান, ৮০ দিন পায়ে হেঁটে তিনি তুরস্ক সীমান্তে পৌঁছান৷
ছবি: Mesut Varol/AA/picture alliance
গ্রিসের সীমান্ত প্রাচীর
তুরস্কের বাধা পেরিয়ে কেউ গ্রিস সীমান্তে এলে তাকে আরেক দেয়ালের মুখোমুখি হতে হবে৷ ৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই প্রাচীরের নির্মাণ কাজ সম্প্রতি সম্পন্ন করেছে গ্রিস সরকার৷ একে হাইটেক ওয়াল হিসেবে অভিহিত করে কর্তৃপক্ষ বলছে দেয়ালটিতে স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক নজরদারি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Sakis Mitrolidis/AFP
গ্রিসের নিরাপদ সীমান্ত!
দেয়াল নির্মাণে গ্রিসের তোড়জোড়েরও বড় কারণ আফগান শরণার্থী স্রোতের আশঙ্কা৷ ছয় বছর আগে সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থী ঢলকে ইঙ্গিত করে দেশটির অভিবাসনমন্ত্রী নটিস মিটারাখি বলেছের, গ্রিসকে তারা ইউরোপের অনিয়মিত অভিবাসনের প্রবেশ দুয়ার হিসেবে আর ব্যবহার করতে দেবেন না৷ দেশটির নাগরিক সুরক্ষামন্ত্রী মিখালিস ক্রিসকোডিস আশা করছেন, দেয়াল নির্মাণের ফলে গ্রিস এখন ‘নিরাপদ ও অনতিক্রম্য৷
ছবি: Sakis Mitrolidis/AFP
দেয়াল তুলছে পোল্যান্ডও
পূর্ব ইউরোপ হয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে উদ্যোগ নিচ্ছে পোল্যান্ড৷ ২৩ আগস্ট দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেলারুশ সীমান্ত জুড়ে দেয়াল তোলার ঘোষণা দেন, যার উচ্চতা হবে আড়াই মিটার বা আট দশমিক দুই ফুট। নজরদারি বাড়াতে সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে বলেও জানান তিনি৷ ছবিতে পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে এখনকার কাঁটাতারের বেষ্টনী দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Kacper Pempel/REUTERS
লিথুয়ানিয়ার ৫০০ কিলোমিটার প্রাচীর
লিথুয়ানিয়া জানিয়েছে, তারাও বেলারুশ সীমান্তে ৫০৮ কিলোমিটার বিস্তৃত দেয়াল তুলবে৷ তিন মিটার বা দশ ফুট উচ্চতার এই বাধা নির্মাণে ব্যয় হবে ১৫ কোটি ইউরোর বেশি৷ কাজ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিতে লিথুয়ানিয়ার একটি ক্যাম্পে অবস্থানরত শরণার্থীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Mindaugas Kulbis/AP/picture alliance
লুকাশেঙ্কোর প্রতিশোধ!
লিথুয়ানিয়া জানিয়েছে, চলতি বছর ৪১৪১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী বেলারুশ অতিক্রম করে অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করেছেন, যেখানে আগের বছর এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৪৷ একই পরিস্থিতি লাটভিয়া ও পোল্যান্ডেরও৷ তাদের অভিযোগ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঠেলে দিচ্ছে বেলারুশ৷ ইইউর অবরোধের জেরে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো নিজেও জানিয়েছেন তার দেশ আর ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সীমান্ত অতিক্রমে বাধা দেবে না।