বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরাতে ইউরোপের চাপে বাংলাদেশ
হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৮ আগস্ট ২০২১
আনডকুমেন্টেট বা বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় বাংলাদেশের উপর নাখোশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এজন্য বাংলাদেশিদের ভিসা প্রক্রিয়ায় সাময়িক কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করেছে ইউরোপীয় কমিশন৷
বসনিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত একটি ক্যাম্পে ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশিরা৷ ছবিটি গত বছরের অক্টোবরে তোলা৷ ছবি: Arafatul Islam/DW
বিজ্ঞাপন
১৫ জুলাই ইউরোপীয় কাউন্সিলের কাছে পাঠানো এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ ছাড়াও ইরাক এবং গাম্বিয়াকেও যুক্ত করা হয়েছে৷ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈধ কাগজবিহীন (আনডকুমেন্টেড) অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার (রিঅ্যাডমিশন) ব্যাপারে দেশগুলোর সহাযোগিতা আরো জোরদার করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা৷
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তি হয়৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের আরো দ্রুত সহযোগিতা চায় ইইউ৷ এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদান-প্রদান এবং জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দিক থেকে আরো তৎপর পদক্ষেপের প্রত্যাশা তাদের৷ ইইউ অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ সরকার অনেক চিঠির জবাব দেয় না বা দিতে অনেক দেরি করে৷
ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত: শহীদুল হক
This browser does not support the audio element.
২০১৭ সালে চুক্তির পর তালিকা ও কাগজপত্র ম্যানুয়ালি বা সনাতন পদ্ধতিতে হস্তান্তর করা হতো৷ কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বরে এই ব্যবস্থা ডিজিটাল করা হয়৷ ডিজিটাল হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ ‘আনডকুমেন্টেড’ বাংলাদেশির তালিকা ও কাগজপত্র হস্তান্তর করে তারা৷ সেগুলো এখনও নিস্পত্তির অপেক্ষায় আছে৷ এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে জার্মানিতে৷ ইউরোপের এ দেশটিতে এমন ৮০০জন বাংলাদেশি রয়েছেন৷ বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বাংলাদেশির তালিকায় তারপরে রয়েছে ইটালি, গ্রিস ও মাল্টা৷
ইউরোপের ভিসায় কড়াকড়ি
২০২০ সালের ফেব্রুয়রি মাসে ইইউ তাদের ভিসা নীতিতে পরিবর্তন আনে৷ তাতে বলা হয় যেসব দেশ রিঅ্যাডমিশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে না তাদের ভিসা প্রক্রিয়া কড়াকড়ি করা হবে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জার্মানিতে আনডকুমেন্টেড তালিকার মধ্যে বাংলাদেশ ১৫০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়৷ তার মধ্যে মাত্র একজনকে ‘বাংলাদেশি আনডকুমেন্টেড’ হিসেবে চিহ্নিত করে তারা, যা জার্মানি ভালোভাবে নেয়নি৷
ইউরোপে বৈধ অভিবাসন: যে তথ্যগুলো জানা দরকার
উন্নত জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, উচ্চশিক্ষা, আশ্রয়- নানা কারণেই অনেকের স্বপ্নের গন্তব্য ইউরোপ৷ প্রতিবছর অনেক মানুষ ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে বসবাস ও কাজের সুযোগ পান৷ অন্যদিকে অবৈধভাবে আসা বড় একটি অংশকে ফেরতও পাঠানো হয়৷
ছবি: DW/Ani Ruci
অভিবাসীর সংখ্যা
দুই কোটির বেশি অভিবাসী মানুষের বসবাস ইউরোপের ২৭টি দেশে৷ এ অঞ্চলের শ্রমবাজারে নিযুক্ত রয়েছেন ৮৮ লাখ৷ ২০১৯ সালে ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে প্রথমবার রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতি পাওয়া তৃতীয় দেশের মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
কারা অনুমতি পান
৩৮ ভাগ অভিবাসী রেসিডেন্স পারমিট পেয়েছেন পরিবারের কোনো সদস্য ইউরোপে থাকার কারণে৷ কাজের সূত্রে থাকার অনুমতি পেয়েছেন ১৭ ভাগ৷ আশ্রয়াপ্রার্থী ছিলেন নয় ভাগ৷ শিক্ষাগত কারণে সুযোগ পেয়েছেন চার ভাগ৷ বাকি ৩২ ভাগ অন্যান্য৷
ছবি: Wolfgang Kumm/dpa/picture alliance
অভিবাসীদের দেশ
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো রেসিডেন্স পারমিট পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ইউক্রেনের নাগরিক৷ প্রথম দশের মধ্যে বাকিরা যথাক্রমে মরক্কো, চীন, ব্রাজিল, সিরিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও বেলারুশের নাগরিক৷
ছবি: DW/V. Muscella
কর্মসংস্থান
তৃতীয় কোনো দেশ থেকে ইউরোপে চাকুরি নিয়ে আসা দক্ষ কর্মীরা পান ব্লু কার্ড৷ এটি নির্ভর করে চাকরির চুক্তিপত্র, পেশাগত যোগ্যতা ও বেতনের উপরে৷ ২০১৯ সালে ৩৭ হাজার বিদেশি নাগরিক ব্লু কার্ড পেয়েছেন ইউরোপে৷ এর বাইরে প্রতি বছর এক লাখের বেশি মানুষ মৌসুমি কর্মী হিসেবে বিভিন্ন খাতে কাজের জন্য আসেন৷ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানার কর্মী বা স্বনিয়োজিত কাজেও ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পান অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
পারিবারিক পুনর্মিলন
কোনো অভিবাসী ইউরোপে বৈধভাবে বসবাস ও নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদেরও আনতে পারেন৷ স্বামী বা স্ত্রী, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং কিছু ক্ষেত্রে অবিবাহিত সঙ্গী, প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীল সন্তান, নির্ভরশীল বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানিও অনুমতি পেয়ে থাকেন৷ নির্দিষ্ট দেশে পৌঁছানোর পর তাদেরকে রেসিডেন্স পারমিট নিতে হয়৷ শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ কিংবা প্রশিক্ষণও নিতে পারেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/W. Rothermel
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
এজন্য আগ্রহীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির অনুমতি, হেলথ ইন্সুরেন্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকের অনুমতি, কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করে ইউরোপের কোনো দেশে আসার আবেদন করতে পারেন৷ কিছু দেশে পড়াশোনার টিউশন ফি নেই, আছে বৃত্তির সুযোগও৷ এছাড়াও খরচ মেটানোর জন্য শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা কাজের সুযোগ রয়েছে৷ পড়াশোনা বা গবেষণা শেষে কর্মসংস্থানের জন্য মেলে নয় মাস সময়৷
ছবি: Getty Images/J. Juinen
দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্স
ইউরোপের কোনো দেশে টানা পাঁচ বছর অবস্থানের পর নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অভিবাসীরা দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন৷ এর ফলে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সহায়তা এবং পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তির মতো কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপের নাগরিকদের মতোই অধিকার ভোগ করতে পারবেন৷ তবে এক্ষেত্রে আলাদা অভিবাসন ও আশ্রয় নীতি অনুসরণ করে আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress
আশ্রয়প্রার্থী
২০১৯ সালে প্রায় সাত লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷ প্রথমবারের মতো যারা এমন আবেদন করেছেন, তাদের ১২ ভাগই সিরিয়ার নাগরিক৷ আফগানিস্তানের আট দশমিক ছয় ভাগ, ভেনেজুয়েলার সাত দশমিক এক ভাগ, কলম্বিয়ার পাঁচ ভাগ, পাকিস্তানের ছিলেন প্রায় চার ভাগ৷ ঐ বছর দুই দশমিক এক ভাগ বা ১৩ হাজার ১৯০টি আবেদন পড়েছিল বাংলাদেশিদের৷ ২০২০ সালে প্রথম দশ মাসে ইউরোপে মোট তিন লাখ ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷
ছবি: AFP
অবৈধদের ফেরত
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১৪ হাজার ৩০০ জন অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন৷ এটি তার আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে ১০ ভাগ কম৷ যারা এভাবে আসেন, তাদের একটি বড় অংশকে এক পর্যায়ে ফেরত পাঠানো হয়৷ ২০১৯ সালে চার লাখ ৯১ হাজার জনকে ইউরোপ ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷ এক লাখ ৪২ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G. Papaniko
9 ছবি1 | 9
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশিদের বিষয়টি নিস্পত্তি করতে ইইউ যদি ভিসার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে তাহলে তা মানবাধিকারের লংঘন৷ কারণ এখন যারা ইউরোপের দেশে যাওয়ার যৌক্তিক কারণ আছে তাদের ভিসা বন্ধ করতে পারে না৷ যার বৈধ ডকুমেন্ট আছে তাকে আটকানো হলে তার মানবাধিকার ক্ষুন্ন করা হবে৷ তারাই মানবাধিকারের প্রবক্তা৷ তারাই যদি এটা করে তাহলে তা হবে দুঃখজনক৷ কেউ আদালতে গেলে এর প্রতিকার পেতে পারেন৷’’
তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আজ (শনিবার) একটি বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, তারা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেছেন৷ কিন্তু যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আনডকুমেন্টেড আছেন তাদের মানবাধিকারের কী হবে?’’
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ
This browser does not support the audio element.
তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তে বিস্মিত নন৷ ‘‘কারণ ২০১৬ সাল থেকেই তারা এ বিষয়ে কথা বলছে৷ এখন এই সিদ্ধান্তের ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো৷ আমাদের পোশাক শিল্পসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হতে পারে৷ যাদের প্রয়োজন তারাও ভিসা নাও পেতে পারেন৷”
তার মতে, ‘‘বাংলাদেশের দুইটি কাজ করা উচিত৷ প্রথমত, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এবং দ্বিতীয়ত তারা যে তালিকা দেয় তা থেকে যাচাই বাছাই করে টোকেন হলেও কিছু লোককে ফেরত আনা৷’’
তিনি মনে করেন, ‘‘অবৈধ অভিবাসীরা দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করছেন৷’’
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এখন সরকারি সফরে জার্মানিতে আছেন৷ তিনি বার্লিনে বাংলাদেশ-জার্মানি কৌশলগত সংলাপে বাংলাদেশ পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সেখানে ভিসা কড়াকড়ি এবং আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশি ইস্যু দুইটি বিষয় নিয়েও তিনি কথা বলবেন৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে ফোন করলে তিনি এনিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
বাংলাদেশ এ পর্যন্ত কতজন বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসী ফেরত এসেছেন তা জানা যায়নি৷ তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই সংখ্যা হাতে গোনা হবে৷ সম্প্রতি ব্র্যাকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে গত ১২ বছরে ৬২ হাজার ৫৮৩ জন বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপে গেছেন৷ আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গেছেন তিন হাজার ৩৩২জন৷ তাদের মধ্যে সর্বাধিক ৩৭ হাজার ১৯৮ জন ভূমধ্যসাগরের রুট ব্যবহার করেছে৷
অবৈধ উপায়ে ইউরোপে প্রবেশে বাধার দেয়াল
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে সীমান্তে দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলছে তুরস্ক৷ প্রাচীর নির্মাণ শেষ করেছে গ্রিস৷ বেলারুশ হয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ডও সীমান্তে দেয়াল তোলার উদ্যোগ নিয়েছে৷
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
ইরান সীমান্তে তুরস্কের প্রাচীর
পাহাড় ডিঙ্গিয়ে, বিপদসঙ্কুল পথ পেরিয়ে ইরান হয়ে তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করেন এশিয়া থেকে আসা ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ তাদেরকে বাধা দিতে ইরানের সঙ্গে ৫৩৪ কিলোমিটার সীমান্তে তিন মিটার উঁচু দেয়াল তুলছে তুরস্ক৷ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে ১৫৬ কিলোমিটারের নির্মাণ৷ আরো ৬৪ কিলোমিটার যোগ হবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ৷
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
আফগান শরণার্থী ঠেকাতে তোড়জোড়
এই পথে পায়ে হেঁটে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি বড় অংশ আফগানিস্তানের নাগরিক৷ সরকারি হিসাবে এক লাখ ৮২ হাজার আফগান রয়েছেন তুরস্কে৷ অনিবন্ধিতের সংখ্যা আরো প্রায় এক লাখ ২০ হাজার৷ তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর অনিয়মিত এই অভিবাসন আরো বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে দেয়াল তুলেই তাদের বাধা দেয়ার পরিকল্পনা তুরস্কের।
ছবি: Mesut Varol/AA/picture alliance
দুর্ভেদ্য সীমান্ত!
তুরস্কের ইরান সীমান্তবর্তী ভ্যান প্রদেশের গভর্নর রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমরা গোটা পৃথিবীকে দেখাতে চাই যে আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করা অসম্ভব৷’’ তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকর দেয়ালের কাজ পরিদর্শনে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা থার্মাল ইমেজিংসহ অন্ধকারে কাজ করতে সক্ষম এমন যন্ত্রপাতি সজ্জিত এক হাজার নজরদারি যান দিয়ে কাজ করছি৷’’
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
৮০ দিনের পদযাত্রা
এরপরও কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে এই পথে তুরস্কে প্রবেশ করছেন৷ গত ২১ আগস্ট ভ্যান শহরে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনী৷ তাদের বেশিরভাগই আফগান নাগরিক। গ্রেপ্তারকৃতদের একজন ২০ বছর বয়সি জায়নুল্লাহ জানান, ৮০ দিন পায়ে হেঁটে তিনি তুরস্ক সীমান্তে পৌঁছান৷
ছবি: Mesut Varol/AA/picture alliance
গ্রিসের সীমান্ত প্রাচীর
তুরস্কের বাধা পেরিয়ে কেউ গ্রিস সীমান্তে এলে তাকে আরেক দেয়ালের মুখোমুখি হতে হবে৷ ৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই প্রাচীরের নির্মাণ কাজ সম্প্রতি সম্পন্ন করেছে গ্রিস সরকার৷ একে হাইটেক ওয়াল হিসেবে অভিহিত করে কর্তৃপক্ষ বলছে দেয়ালটিতে স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক নজরদারি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Sakis Mitrolidis/AFP
গ্রিসের নিরাপদ সীমান্ত!
দেয়াল নির্মাণে গ্রিসের তোড়জোড়েরও বড় কারণ আফগান শরণার্থী স্রোতের আশঙ্কা৷ ছয় বছর আগে সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থী ঢলকে ইঙ্গিত করে দেশটির অভিবাসনমন্ত্রী নটিস মিটারাখি বলেছের, গ্রিসকে তারা ইউরোপের অনিয়মিত অভিবাসনের প্রবেশ দুয়ার হিসেবে আর ব্যবহার করতে দেবেন না৷ দেশটির নাগরিক সুরক্ষামন্ত্রী মিখালিস ক্রিসকোডিস আশা করছেন, দেয়াল নির্মাণের ফলে গ্রিস এখন ‘নিরাপদ ও অনতিক্রম্য৷
ছবি: Sakis Mitrolidis/AFP
দেয়াল তুলছে পোল্যান্ডও
পূর্ব ইউরোপ হয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে উদ্যোগ নিচ্ছে পোল্যান্ড৷ ২৩ আগস্ট দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেলারুশ সীমান্ত জুড়ে দেয়াল তোলার ঘোষণা দেন, যার উচ্চতা হবে আড়াই মিটার বা আট দশমিক দুই ফুট। নজরদারি বাড়াতে সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে বলেও জানান তিনি৷ ছবিতে পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে এখনকার কাঁটাতারের বেষ্টনী দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Kacper Pempel/REUTERS
লিথুয়ানিয়ার ৫০০ কিলোমিটার প্রাচীর
লিথুয়ানিয়া জানিয়েছে, তারাও বেলারুশ সীমান্তে ৫০৮ কিলোমিটার বিস্তৃত দেয়াল তুলবে৷ তিন মিটার বা দশ ফুট উচ্চতার এই বাধা নির্মাণে ব্যয় হবে ১৫ কোটি ইউরোর বেশি৷ কাজ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিতে লিথুয়ানিয়ার একটি ক্যাম্পে অবস্থানরত শরণার্থীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Mindaugas Kulbis/AP/picture alliance
লুকাশেঙ্কোর প্রতিশোধ!
লিথুয়ানিয়া জানিয়েছে, চলতি বছর ৪১৪১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী বেলারুশ অতিক্রম করে অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করেছেন, যেখানে আগের বছর এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৪৷ একই পরিস্থিতি লাটভিয়া ও পোল্যান্ডেরও৷ তাদের অভিযোগ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঠেলে দিচ্ছে বেলারুশ৷ ইইউর অবরোধের জেরে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো নিজেও জানিয়েছেন তার দেশ আর ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সীমান্ত অতিক্রমে বাধা দেবে না।