প্রতি বছর অবৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশ করছেন শত শত বাংলাদেশি৷ দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের৷ অথচ একই টাকা খরচ করে বৈধ উপায়েই এসব দেশে আসার সুযোগ আছে৷
বিজ্ঞাপন
একজন বাংলাদেশির গল্প শোনাই আপনাদের৷ ধরুন তার নাম তরুণ৷ সুইজারল্যান্ডে গিয়ে পরিচয় হয় তরুণদার সঙ্গে৷ ওনার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে৷ দেশ ছেড়েছেন আজ থেকে ২২ বছর আগে৷ চার বছর আগে বৈধ কাগজপত্র হয়েছে তার৷ কিন্তু এই সময়ে বাবা-মা মারা গেছেন, মারা গেছেন বড় এক ভাই৷ অথচ বৈধ কাগজ না থাকায় দেশে ফেরা হয়ে ওঠেনি তার৷ ২২ বছর আগে ভারতের এক দালালের মাধ্যমে নরওয়েতে এসেছিলেন জানুয়ারি মাসে৷ ১২ লাখ টাকায় ভারতের পাসপোর্ট-ভিসাসহ সব কিছুর ব্যবস্থা করেছিল দালালটি৷ তাদের দলে ছিল ৭ জন৷ তিনি এইচএসসি পাস করে পড়ালেখায় মন বসাতে পারেননি৷ তাই ইউরোপে আসার স্বপ্ন দেখেছিলেন৷ বাবা-র কাছ থেকে অনেকটা ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল’ করে টাকা আদায় করেছিলেন৷ তার দলে বাকিরা বেশ শিক্ষিত৷ কেউ অনার্স পাস করেছে, কেউবা ডিগ্রি৷ এর মধ্যে ভারতের ছেলে রতনের সঙ্গে তার ভাব হয়ে যায়৷ তারা একই ফ্লাইটে পাশাপাশি বসে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে নরওয়েতে পৌঁছান৷
ইউরোপে বৈধ অভিবাসন: যে তথ্যগুলো জানা দরকার
উন্নত জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, উচ্চশিক্ষা, আশ্রয়- নানা কারণেই অনেকের স্বপ্নের গন্তব্য ইউরোপ৷ প্রতিবছর অনেক মানুষ ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে বসবাস ও কাজের সুযোগ পান৷ অন্যদিকে অবৈধভাবে আসা বড় একটি অংশকে ফেরতও পাঠানো হয়৷
ছবি: DW/Ani Ruci
অভিবাসীর সংখ্যা
দুই কোটির বেশি অভিবাসী মানুষের বসবাস ইউরোপের ২৭টি দেশে৷ এ অঞ্চলের শ্রমবাজারে নিযুক্ত রয়েছেন ৮৮ লাখ৷ ২০১৯ সালে ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে প্রথমবার রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতি পাওয়া তৃতীয় দেশের মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
কারা অনুমতি পান
৩৮ ভাগ অভিবাসী রেসিডেন্স পারমিট পেয়েছেন পরিবারের কোনো সদস্য ইউরোপে থাকার কারণে৷ কাজের সূত্রে থাকার অনুমতি পেয়েছেন ১৭ ভাগ৷ আশ্রয়াপ্রার্থী ছিলেন নয় ভাগ৷ শিক্ষাগত কারণে সুযোগ পেয়েছেন চার ভাগ৷ বাকি ৩২ ভাগ অন্যান্য৷
ছবি: Wolfgang Kumm/dpa/picture alliance
অভিবাসীদের দেশ
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো রেসিডেন্স পারমিট পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ইউক্রেনের নাগরিক৷ প্রথম দশের মধ্যে বাকিরা যথাক্রমে মরক্কো, চীন, ব্রাজিল, সিরিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও বেলারুশের নাগরিক৷
ছবি: DW/V. Muscella
কর্মসংস্থান
তৃতীয় কোনো দেশ থেকে ইউরোপে চাকুরি নিয়ে আসা দক্ষ কর্মীরা পান ব্লু কার্ড৷ এটি নির্ভর করে চাকরির চুক্তিপত্র, পেশাগত যোগ্যতা ও বেতনের উপরে৷ ২০১৯ সালে ৩৭ হাজার বিদেশি নাগরিক ব্লু কার্ড পেয়েছেন ইউরোপে৷ এর বাইরে প্রতি বছর এক লাখের বেশি মানুষ মৌসুমি কর্মী হিসেবে বিভিন্ন খাতে কাজের জন্য আসেন৷ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানার কর্মী বা স্বনিয়োজিত কাজেও ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পান অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
পারিবারিক পুনর্মিলন
কোনো অভিবাসী ইউরোপে বৈধভাবে বসবাস ও নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদেরও আনতে পারেন৷ স্বামী বা স্ত্রী, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং কিছু ক্ষেত্রে অবিবাহিত সঙ্গী, প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীল সন্তান, নির্ভরশীল বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানিও অনুমতি পেয়ে থাকেন৷ নির্দিষ্ট দেশে পৌঁছানোর পর তাদেরকে রেসিডেন্স পারমিট নিতে হয়৷ শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ কিংবা প্রশিক্ষণও নিতে পারেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/W. Rothermel
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
এজন্য আগ্রহীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির অনুমতি, হেলথ ইন্সুরেন্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকের অনুমতি, কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করে ইউরোপের কোনো দেশে আসার আবেদন করতে পারেন৷ কিছু দেশে পড়াশোনার টিউশন ফি নেই, আছে বৃত্তির সুযোগও৷ এছাড়াও খরচ মেটানোর জন্য শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা কাজের সুযোগ রয়েছে৷ পড়াশোনা বা গবেষণা শেষে কর্মসংস্থানের জন্য মেলে নয় মাস সময়৷
ছবি: Getty Images/J. Juinen
দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্স
ইউরোপের কোনো দেশে টানা পাঁচ বছর অবস্থানের পর নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অভিবাসীরা দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন৷ এর ফলে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সহায়তা এবং পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তির মতো কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপের নাগরিকদের মতোই অধিকার ভোগ করতে পারবেন৷ তবে এক্ষেত্রে আলাদা অভিবাসন ও আশ্রয় নীতি অনুসরণ করে আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress
আশ্রয়প্রার্থী
২০১৯ সালে প্রায় সাত লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷ প্রথমবারের মতো যারা এমন আবেদন করেছেন, তাদের ১২ ভাগই সিরিয়ার নাগরিক৷ আফগানিস্তানের আট দশমিক ছয় ভাগ, ভেনেজুয়েলার সাত দশমিক এক ভাগ, কলম্বিয়ার পাঁচ ভাগ, পাকিস্তানের ছিলেন প্রায় চার ভাগ৷ ঐ বছর দুই দশমিক এক ভাগ বা ১৩ হাজার ১৯০টি আবেদন পড়েছিল বাংলাদেশিদের৷ ২০২০ সালে প্রথম দশ মাসে ইউরোপে মোট তিন লাখ ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷
ছবি: AFP
অবৈধদের ফেরত
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১৪ হাজার ৩০০ জন অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন৷ এটি তার আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে ১০ ভাগ কম৷ যারা এভাবে আসেন, তাদের একটি বড় অংশকে এক পর্যায়ে ফেরত পাঠানো হয়৷ ২০১৯ সালে চার লাখ ৯১ হাজার জনকে ইউরোপ ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷ এক লাখ ৪২ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G. Papaniko
9 ছবি1 | 9
দালাল আগেই বলে দিয়েছিল, নরওয়ে পৌঁছেই পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে দিতে৷ তাই করেছিলেন৷ ফলে ইমিগ্রেশনে গেলে পুলিশ ধরে জেলে নিয়ে যায়৷ দালাল লোকটি বলে দিয়েছিল মুখ দিয়ে একটাও শব্দ করা যাবে না৷ অর্থাৎ, পুলিশ যাতে বুঝতে না পারে কোন দেশি৷ বিভিন্ন দোভাষী এনেও তরুণদার মুখ থেকে একটা শব্দ উদ্ধার করতে পারলো না তারা৷ কিন্তু রতনের মুখ ফস্কে ইংরেজি ভাষা বের হয়ে গেল৷ এরপর তাদের আলাদা রাখা হলো৷ তখন থেকে রতনের আর খবর জানেন না তিনি৷ প্রায় বছর খানেক সেখানকার জেলে রেখে একসময় তাকে একটা বিশেষ কাগজ ধরিয়ে দেশে পাঠানোর সব ব্যবস্থা পাকা করা হয়৷ কিন্তু তিনি দেশে ফিরতে রাজি ছিলেন না৷ সড়কপথে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান ডেনমার্ক৷ এরপর নানা দেশ ঘুরে ১৮ বছর পর পর্তুগালে গিয়ে অবশেষে বৈধ কাগজপত্র করতে পারেন৷ এর তিনবছর পর সুইজারল্যান্ডে এসে থিতু হন৷ বর্তমানে একটা হোটেলে কাজ করছেন৷
তিনি যখন আমাদের কাছে এই গল্প করছিলেন, তখন কখনো তার মুখে আনন্দ কখনো বা বিষাদ খেলা করছিল, চোখের কোণে কখনো ঝিলিক দিচ্ছিল জল৷ বলছিলেন বিস্তারিত বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে, আর আমাদের হাতে এত সময়ও ছিল না৷ বললেন, তার জীবনে যেসব ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তা সিনেমাকে হার মানায়৷ তবে এ কথা স্বীকার করলেন, এভাবে না এসে যদি বৈধ পথে আসতেন, তাহলে বাবা-মাকে অন্তত শেষ দেখাটা দেখতে পেতেন৷ এতদিন দেশে না গিয়ে থাকতে হতো না৷
এটা গেল মাত্র একজন বাংলাদেশির কথা৷ এমন কত শত বাংলাদেশি পুরো ইউরোপ জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন একটি দেশে আশ্রয়ের আশায়৷ বসনিয়ার কথা আপনারা সবাই জানেন৷ এইসব অভিবাসন-প্রত্যাশী কিন্তু বেশ শিক্ষিত৷ ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা খরচ করে দালাল ধরে ইউরোপ পাড়ি দিয়েছেন৷ অথচ চাইলেই এর চেয়ে কম টাকায় ভাষা শিখে কোনো একটি বিশেষ কাজে প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈধ পথে ইউরোপের কোনো দেশে আসা সম্ভব ছিল তাদের পক্ষে৷ হয়ত বলবেন ভাষা শেখাটা সহজ নয়৷ তাহলে আমি বলবো, এখন তারা যে পরিস্থিতিতে আছেন সেটা কি সহজ! আর ইটালিতে ঘুরতে গিয়ে আমি দেখেছি অনেক স্বল্প শিক্ষিত বাংলাদেশিরা কয়েক বছরেই চমৎকার সেদেশের ভাষায় কথা বলেন৷ অর্থাৎ, আপনি যে কাজটা এখানে আসার পর করতে বাধ্য, সেটা আগে থেকে করলে ঝঞ্ঝাটমুক্তভাবে সম্মানের সাথে থাকার সুযোগ পাবেন৷
জার্মানিতে বাংলাদেশিদের পরিসংখ্যান
জার্মানির পরিসংখ্যান অফিস ‘ডেস্টাটিস’ বলছে, ২০১৯ সালে ২২৫ জন বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন৷ জার্মানিতে বাংলাদেশিদের বসবাসের সংখ্যাও জানিয়েছে তারা৷
ছবি: DW/A. Mita
রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশি
জার্মানির পরিসংখ্যান অফিস ‘ডেস্টাটিস’ বলছে, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ১৫ হাজার ৭১০ জন জার্মানিতে ছিলেন, যা যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷ ছবিতে কেমনিৎস প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Privat
২০১৫ থেকে দুই অংকে
ডেস্টাটিসের কাছে ১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশিদের হিসাব রয়েছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো জার্মানিতে থাকা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীর সংখ্যা ১০ হাজারের মাত্রা অতিক্রম করে৷ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সংখ্যাটি ছিল ১১ হাজার ৪৮৯ জন৷ এরপর প্রতিবছর সংখ্যাটি বেড়েছে৷ ছবিতে গ্যোটিঙ্গেন শহরে বাংলাদেশিদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন৷
ছবি: Azizur Rahman
দক্ষিণ এশিয়ার হিসাব
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর জার্মানিতে বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৭১০৷ ঐদিন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ দুই লাখ ৬৩ হাজার ৪২০ জন জার্মানিতে ছিলেন৷ এছাড়া ভারতের ছিলেন এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৫ জন, পাকিস্তানের ৭৫ হাজার ৪৯৫ ও নেপালের আট হাজার ১২০ জন৷
ছবি: DW/Ravi Ranjan
নাগরিকত্বের হিসাব
২০১৯ সালে ২২৫ জন বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন৷ নাগরিকত্ব বিষয়ে ডেস্টাটিসের কাছে ২০০০ সাল থেকে হিসাব পাওয়া যায়৷ এতে দেখা যাচ্ছে, ২০০৮ সালে ১০১ জন বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন, যা সর্বনিম্ন৷ আর সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিক হয়েছেন ২০০১ সালে (২৭০ জন)৷
ছবি: DW/A. Mita
দক্ষিণ এশীয়দের নাগরিকত্ব গ্রহণ
২০১৯ সালে আফগানিস্তানের দুই হাজার ৬৭৫ জন জার্মানির নাগরিকত্ব নেন, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ৷ এরপরে আছে ভারত, দুই হাজার ১৩০ জন৷ এছাড়া পাকিস্তানের এক হাজার ৭৯০, শ্রীলঙ্কার ৬৬০ ও নেপালের ১০৫ জন জার্মানির নাগরিকত্ব নিয়েছেন৷ ছবিতে স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবের একটি দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/V. Kumar
বিশ্বের হিসাব
২০১৯ সালে ১৮৩ দেশের এক লাখ ২৮ হাজার ৯০৫ জন জার্মানির নাগরিকত্ব নেন, যা ২০০৩ সালের পর সর্বোচ্চ৷ ঐ বছর এক লাখ ৪০ হাজার ৭০০ জন জার্মানির নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন৷
ছবি: Imago/STPP
সবচেয়ে বেশি তুরস্কের
২০১৯ সালে তুরস্কের ১৬ হাজার ২০০ জন জার্মানির নাগরিক হয়েছেন, যা সর্বোচ্চ৷ এরপরেই আছে ব্রিটেন (১৪ হাজার ৬০০), পোল্যান্ড (ছয় হাজার) ও রোমানিয়া (পাঁচ হাজার ৮০০)৷
ছবি: Getty Images/C. Koall
7 ছবি1 | 7
এই যেমন ধরুন জার্মানিতে গত বছর অভিবাসনের যে নতুন আইন করা হয়েছে, তাতে কত সুবিধা আছে৷ এদেশে ৮ কোটি মানুষের মধ্যে দুই কোটি ৮০ লাখ মানুষ ষাটোর্ধ্ব৷ ফলে এখানে তরুণ জনশক্তির অভাব রয়েছে৷ জার্মানিতে ১০ লাখের বেশি দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে৷ এই ঘাটতি পূরণে নতুন অভিবাসন আইন করা হয়, যা ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছে৷
নতুন আইনে যা আছে
১. নতুন আইনে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ডিগ্রিধারীদের পাশাপাশি কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের জন্যও আবেদনের সুযোগ আছে৷ তবে এই প্রশিক্ষণের মেয়াদ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে এবং এই ডিগ্রি জার্মান ডিগ্রির সমান বলে অনুমোদিত হতে হবে৷
২. সার্টিফিকেট ঠিক আছে কিনা তা জার্মান শ্রম মন্ত্রণালয়ের ইনফরমেশন পোর্টালে গিয়ে যাচাই করে দেখা যাবে৷ কীভাবে যাচাই করা যাবে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে ‘মেক ইট ইন জার্মানি’ ওয়েবসাইটে৷
৪. ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে বসবাসকারীরাও জার্মানিতে চাকরির আবেদন করতে পারবেন৷
৫. কারিগরিশিক্ষার যে লেভেল ঠিক করা হয়েছে, তার চেয়ে কম যোগ্যরা চাকরির আবেদন করতে না পারলেও অভিবাসনের চেষ্টা করতে পারবেন৷ তবে শর্ত হচ্ছে, জার্মানির কোনো চাকরিদাতার কাছ থেকে তাদের চাকরির প্রস্তাব পেতে হবে৷ সেক্ষেত্রে চাকরিদাতাকে আবেদনকারীর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং দুই বছরের মধ্যে তিনি যেন পেশাদার পর্যায়ের সার্টিফিকেট পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে৷
৬. যারা চাকরির সুযোগ পাবেন, তাদের চার বছর কিংবা চাকরির মেয়াদ পর্যন্ত ভিসা দেওয়া হবে৷ চার বছর পর তারা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারবেন৷
৭. জার্মান ভাষায় বি২ লেভেল পর্যন্ত দক্ষতা ও নিজের খরচ বহনের সামর্থ্য থাকলে জার্মানিতে এসে চাকরি খোঁজার অনুমতিও পাওয়া যাবে৷
৮. ৪৫ বছরের বেশি বয়সি আবেদনকারীদের মাসে কমপক্ষে ৩,৬৮৫ ইউরো আয় করতে হবে৷
৯. জার্মানিতে যেসব খাতে দক্ষ জনশক্তির অভাব প্রকট, যেমন চিকিৎসা, তথ্যপ্রযুক্তি, নার্সিং, সেসব ক্ষেত্রে আইন একটু শিথিল করা হয়েছে৷ অর্থাৎ, আবেদনকারীর যদি অন্তত পাঁচবছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে জার্মান কর্তৃপক্ষের দ্বারা সার্টিফিকেট যাচাইয়ের যে শর্ত, তার আর প্রয়োজন পড়বে না৷
১০. যারা চাকরি পাবেন, তারা স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের জার্মানি নিয়ে আসতে পারবেন৷ অবশ্য সেক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের খরচ চালানোর সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে হবে৷
জার্মানিতে প্রায় সাত বছর থাকার পর এটা সহজেই বুঝতে পারি বৈধভাবে বিদেশে থাকাটা কত সম্মানের৷ বৈধভাবে অর্থ উপার্জন করছি, জার্মান সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছি, ফলে দুই বছরের মধ্যে পারমানেন্ট রেসিডেন্ট কার্ড পেয়ে গেছি৷ বি-২ পর্যায়ে ভাষা শেখা শেষ৷ এখন চাইলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারি৷ তাই রাস্তায় যখন দু-একজন বাংলাদেশিকে দেখি বোতল কুড়াতে, তখন সত্যিই কষ্ট লাগে৷ নিজেদের সর্বস্ব বিক্রি করে সুন্দর জীবনের আশায় ইউরোপ পাড়ি দিয়ে এ কেমন জীবন কাটাচ্ছেন তারা!